আমাদের দেশে তথা সারা পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা প্রতিদিন ঠিকমতো খাবার পান না। আর দীর্ঘদিন অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে থাকা মানুষগুলো ভোগেন অপুষ্টিতে। এই কারণে তাদের অনেকের শরীরে বাসা বাঁধে নানারকম রোগ। তাই, যারা এই সমস্যা দূর করার জন্য এগিয়ে আসেন এবং অসহায়, অন্নকষ্টে ভোগা মানুষগুলোর মুখে অন্ন তুলে দেন, তাদের মহত্বকে স্যালুট করতেই হবে।

‘দ্য হাঙ্গার-ফ্রি ওয়ার্ল্ড-এর আওতায়, মালাবার গ্রুপ ভারত এবং জাম্বিয়ায় সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে প্রতিদিন ৭০,০০০ খাবারের প্যাকেট বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। যার ফলে ২০২৫-২৬ সালে মোট ২.৫০ কোটি খাবার পরিবেশিত হবে। এটি সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের জন্য খাদ্য-নিরাপত্তা দেবে আশা করা যায়। পূর্বাঞ্চলে এই গ্রুপ প্রতিদিন ২৭০৪ জনকে খাবার পরিবেশনের লক্ষ্য নিয়ে উদ্যোগটি শুরু করেছে। ‘হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড’ প্রকল্পটি বর্তমানে ভারত এবং জাম্বিয়া জুড়ে প্রতিদিন ৭০,০০০ খাবারের প্যাকেট বিতরণ করে। প্রশিক্ষিত রন্ধন বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যবিধি-সচেতন কর্মীদের দ্বারা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।

‘ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার-ফ্রি ডে’ উপলক্ষ্যে নতুন দিল্লির জনপথে অবস্থিত ড. আম্বেদকর আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও এবং জি-২০ শেরপা ড. অমিতাভ কান্ত গ্রুপের সিএসআর কর্মসূচির পরবর্তী পর্যায়ের সূচনা করেন। অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মালাবার গ্রুপের চেয়ারম্যান এমপি আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান কেপি আব্দুল সালাম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিস্টার আশের।

এই উদ্যোগ সম্পর্কে মালাবার গ্রুপের চেয়ারম্যান এমপি আহমেদ জানিয়েছেন, ‘সিএসআর আমাদের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আমরা সমাজকে হাঙ্গার-ফ্রি করতে চাই। ২৮ মে-কে আমাদের বার্ষিক সিএসআর দিবস হিসেবে উৎসর্গ করি এবং আমরা কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করি। আমাদের সিএসআর উদ্যোগগুলি সেই স্থায়ী প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও, আরও বেশি সংস্থা এই মিশনে যোগ দিলে আরও বেশি সুফল পাওয়া সম্ভব। বিশ্বজুড়ে (জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে) ২৯৫ মিলিয়ন মানুষ তীব্র ক্ষুধার মুখোমুখি হওয়ায়, জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এই প্রয়োজনীয়তা হাঙ্গার-ফ্রি ওয়ার্ল্ড উদ্যোগের অধীনে আমাদের খাবার বিতরণ প্রচেষ্টাকে চালিত করে।’

শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক উদ্যোগের অধীনে, এই গ্রুপ ভারত জুড়ে ৭১৬টি ক্ষুদ্রশিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করেছে, যা পথশিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা এবং পুষ্টি প্রদান করে। ৩২,০০০-এরও বেশি শিশু ভর্তি হয়েছে, যার মধ্যে ৯,০০০ ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক স্কুলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। থানালের সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও, ১,১৪,০০০ মেয়েকে তাদের শিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। গ্রুপটি গ্র্যান্ডমা হোমস নামে একটি উদ্যোগও চালু করেছে যার অধীনে দুঃস্থ মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে আবাসন গড়ে দিয়েছে। বর্তমানে বেঙ্গালুরু, কেরালা এবং হায়দ্রাবাদে এটি চালু রয়েছে। চেন্নাই, কলকাতা, দিল্লি এবং মুম্বইতে এই উদ্যোগটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা চলছে।

স্বাস্থ্যসেবা এবং দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে, গ্রুপটি কেরালার ১৪০টি স্থানে অলাভজনক মেডিকেল স্টোর স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে, যেখানে ভর্তুকি মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হবে। রাজ্যের ২৭টি স্থানে ইতিমধ্যেই এই ধরনের স্টোর চালু রয়েছে। গত বছরের ওয়ানাডে ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের উচ্চশিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে, যা ১৩৪ জন শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। উল্লেখ্য, এই গ্রুপ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে। এরই পাশাপাশি, এই সংস্থা তাদের সিএসআর উদ্যোগগুলিকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২০২৫-২৬ সালে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অনাহারে থাকা মানুষগুলোর মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য এভাবেই আরও অনেক মানুষের এগিয়ে আসা উচিত।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...