দিল্লির মতো শহরগুলিকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে, রাজ্য সরকার এবং পৌরসভাগুলি উদ্ভট সমাধান খুঁজে বের করে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিজেল চালিত সমস্ত যানবাহনগুলিকে বাইলেন-এ চলার অনুমতি দেওয়া, পার্কিং স্পেসগুলিতে ভারী চার্জ আরোপ করা এবং শহরে প্রবেশকারী যানবাহনের উপর ট্যাক্স নেওয়া।
শহরগুলিতে দূষণ অনেক কারণে ঘটে এবং যানজট শুধুমাত্র সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্ভট সিদ্ধান্তের কারণে হয়। প্রতিটি শহরে সরকারি কর্মকর্তারা শহরের ময়লা পরিষ্কারের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করার হিসাব দেখালেও, সেই টাকার অর্ধেক তাদের পকেটে যায়।
প্রতিটি শহরে আসলে কিছু মানুষের মন-মানসিকতায় পচন ধরেছে। যার প্রতিফলন ঘটছে পরিবেশে, দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে বায়ুও।
এটি একটি বিভ্রম যে, শহরগুলিতে পার্কিং ফি বাড়ানো হলে গাড়ির সংখ্যা হ্রাস পাবে। আসলে যা হবে তা হল— লোকেরা তাদের গাড়ি আরও দূরে পার্ক করবে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়বে। যেখানে ফি নেওয়া হয় না, সেখানে লোকেরা তাদের গাড়ি পার্কিং শুরু করবে এবং এর ফলে বাড়ির মালিক, দোকানদার, বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী এবং পুলিশের সঙ্গে প্রতিদিন ঝগড়া হবে।
যদি শহরগুলিতে ধোঁয়া দূষণ কমাতে হয়, তাহলে প্রথম প্রয়োজন সঠিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা কিন্তু কেউ এটি করতে প্রস্তুত নয়। কারণ, এতে কাজটি সরকারী কর্মকর্তা এবং পরিদর্শকদের করতে হবে, যারা বেশি উপার্জন করতে আগ্রহী কিন্তু শহর চালানোর ইচ্ছে নেই। ফুটপাথ-এ দোকানপাট না থাকলে, অর্ধেক যানজট স্বয়ংক্রিয় ভাবে ঠিক হয়ে যাবে। যানজটের কারণে সাধারণ মানুষের সময় নষ্ট হয় এবং দৃশ্যদূষণও হয়, যা বিরক্তিকর।
সরকার কিংবা পুলিশ কোথাও পর্যাপ্ত সংখ্যায় ট্যাক্সি, অটো, ই-রিক্সা চালানোর অনুমতি দিতে চায় না যানজটের অজুহাত দেখিয়ে কিন্তু তা সত্ত্বেও যানজট এড়ানো সম্ভব হয়েছে কি? আসলে এসব করা হয় পারমিট দিয়ে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার জন্য।
পার্কিং ফি বাড়ানোর আগে বিকল্প সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবতেও পারে না সরকার। আগে মুম্বইতে শেয়ার ক্যাবের সুন্দর ব্যবস্থা ছিল, যা এখন প্রায় নেই। অথচ শেয়ার ক্যাবের মতো সুবিধা পেলে সাধারণ মানুষের অনেকটাই আর্থিক সাশ্রয় হতে পারে। অবশ্য পৌরসভার কর্মকর্তারা কেন এ নিয়ে মাথা ঘামাবেন? তাঁরা তো টাকা তুলতে চান, সেবা দিতে চান না। পার্কিং ফি বাড়ানো মানে সাধারণ মানুষ আরও আর্থিক সমস্যায় পড়বেন। কারণ, ক্যাব পার্কিংয়ের ফিজও যাত্রীকেই বহন করতে হবে।
গণপরিবহন বাড়লে ভালো কিন্তু যে-সব মহিলারা ভিড় বাসে যাতায়াত করতে অস্বস্তি বোধ করেন, তাদের জন্যও তো বিকল্প উপায় করে দেওয়া উচিত। যাইহোক, বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ রইল। কারণ, পার্কিং ফি বাড়ানোর অর্থ হল, কোনও বাড়তি সুবিধা না দিয়ে, অফিসে যাওয়া, কেনাকাটা করতে যাওয়া, স্কুল-কলেজে যাওয়া কিংবা রেস্তোরাঁয় যেতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হওয়া।