সব সম্পর্কের ভাষা উচ্চারণে প্রকাশ পায় না। কিছু অনুভব শুধু নীরবতার ভিতরেই বাঁচে। পান্নালাল, এককালের ফুটবল খেলোয়াড়, এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত। একা থাকেন মফস্বলের পুরনো বাড়িতে। তার ছেলে পলাশ, শহরের এক কর্পোরেট কোম্পানিতে সেলস ম্যানেজার, রোজ লড়ছে চাকরি বাঁচিয়ে রাখার জন্য। জীবনের দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এই দুই পুরুষ, আকস্মিক এক ঘটনার কারণে এসে পড়েন এক ছাদের তলায়। কিন্তু কী ঘটবে এরপর? – এমনই এক কৌতূহল জাগিয়ে রেখে ‘নন্দী মুভিজ’-এর ব্যানারে তৈরি হতে চলেছে ‘ফেরা’ শিরোনামের একটি ছবি।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, ‘ফেরা’ কোনও দ্বন্দ্বের গল্প নয়। এ এক নীরব সহাবস্থানের ছবি—যেখানে কথা কম, অস্বস্তি বেশি কিন্তু তবুও একটা বোঝাপড়া ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। তবে সবকিছুর পরেও কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি করে—সফলতা মানে ঠিক কী? আমরা কতটা রেখে যেতে চাই আর তার কতটা আসলে জরুরি? ফিরে আসা মানে কি পুরনো জীবনে ফেরা, নাকি নতুন করে উপলব্ধি করা যে, মাঝারি হওয়া, সাধারণ হওয়া, নিজেকে মেনে নেওয়াও একধরনের সফলতা? আসলে সব ফেরার ঠিকানা হয় না— আবার নিঃশব্দ পাশে বসে থাকাও অনেক সময় সুখে ভরিয়ে দেয় অন্তরমহল।
প্রদীপ কুমার নন্দী প্রযোজিত, ‘ফেরা’ ছবিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন পৃথা চক্রবর্তী। এই ছবির মাধ্যমে প্রথমবার বাংলায় অভিনয় করতে চলেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সঞ্জয় মিশ্র, যিনি ভারতীয় সিনেমায় তাঁর অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সমাদৃত। তাঁর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করবেন টলিউডের ঋত্বিক চক্রবর্তী ও সোহিনী সরকার।
প্রযোজক প্রদীপ কুমার নন্দী-র মতে, ‘‘দক্ষ অভিনেতা এবং হৃদয়স্পর্শী কাহিনির মেলবন্ধনে, ‘ফেরা’ হতে চলেছে এক গভীর আবেগপূর্ণ ও মননশীল সিনেমা। আসলে, ‘ফেরা’ আমাদের একটি বিশেষ প্রচেষ্টা । প্রথিতযশা অভিনেতা সঞ্জয় মিশ্র তাঁর প্রথম বাংলা ফিচার ফিল্মের সফর শুরু করছেন আমাদের ব্যানারে, এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তাই, আমার বিশ্বাস, এই ছবি দর্শকদের হৃদয়ে গভীর ভাবে প্রভাব ফেলবে এবং দীর্ঘদিন মনে থেকে যাবে।’’
‘‘ফেরা’-র পরিচালক পৃথা জানিয়েছেন, ‘এ এমন এক গল্প, যেটা বড়ো করে কিছু বলে না—বরং যেটা বলা হয় না, তাকেই জায়গা দেয়। এই ছবি আমার কাছে অনেকটা নিজের ভিতরে ফিরে তাকানোর চেষ্টা। আমার নিজের বড়ো হয়ে ওঠা যেহেতু মফস্বলের ছোট্ট শহরে, তাই এই ছবির প্রতিটা চরিত্রকেই আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি এবং খানিকটা বেঁচেছি। মফস্বল ছেড়ে বড়ো শহরের রোজনামচাতে বহুবার মনে হয়েছে, আমরা কতটা ছুটছি, কেন ছুটছি আর সেই দৌড়ের শেষে আদৌ কিছু বদলায় কি না—এই সব প্রশ্ন। এই ছবি মধ্যবিত্তের এবং সম্পর্কের সেই দিকগুলো তুলে ধরবে, যেগুলো খুব সাধারণ এবং সত্যি। তাই, ‘ফেরা’ কোনও চূড়ান্ত উত্তরে উত্তীর্ণ করবে না। কিন্তু কিছুটা থেমে, কিছুটা উপলব্ধির সুযোগ তৈরি করবে।’’
ঋত্বিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘‘আমি ভীষণ উৎসাহিত ‘ফেরা’ ছবির অংশ হতে পেরে । পরিচালক পৃথা যেভাবে ভাবেন এবং তাঁর গল্পগুলোকে পর্দায় তুলে ধরেন — সেই সংবেদনশীলতা আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গির আমি সবসময়ই প্রশংসা করেছি। কিংবদন্তি অভিনেতা সঞ্জয় মিশ্রর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা আমার কাছে এক বিরাট সম্মানের বিষয় হতে চলেছে, তাই আমি ভীষণভাবে মুখিয়ে আছি।’’
সোহিনী সরকার-এর বক্তব্য, ‘‘আমার চরিত্রটি যদিও সংক্ষিপ্ত, তবু, ‘ফেরা’-র গল্পের প্রেক্ষিতে এর গভীর প্রভাব রয়েছে। অনেক সময় চরিত্রের দৈর্ঘ্যের চেয়ে প্রভাবটাই বড়ো হয়ে ওঠে। এই সিনেমাটির অংশ হতে পেরে আমিই খুবই খুশি।’’
প্রযোজক প্রদীপ কুমার নন্দী প্রসঙ্গত আরও জানিয়েছেন, খুব শিগগির শুরু হবে ‘ফেরা’ ছবির শুটিং। ছবিটির সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।