আম খাওয়ার আশ্চর্যজনক বিপাকীয় উপকার পাওয়া গেছে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার প্রমাণও পাওয়া গেছে– সাম্প্রতিক দুটি গবেষণায় পর এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা।
ইউরোপীয় জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন (প্রকাশনার জন্য গৃহীত) এবং জার্নাল অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডারস-এ ( অনলাইন ৬ আগস্ট, ‘২৫-এ ) প্রকাশিত হয়েছে, ডায়েটে আম অন্তর্ভুক্ত করার প্রমাণ-ভিত্তিক উপকার পাওয়া গেছে টাইপ-টু ডায়াবেটিস-এর ক্ষেত্রে।
নয়াদিল্লির ফোর্টিস C-DOC হাসপাতাল ফর ডায়াবেটিস অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস এবং নয়াদিল্লির ন্যাশনাল ডায়াবেটিস, ওবেসিটি অ্যান্ড কোলেস্টেরল ফাউন্ডেশন (এন-ডক) দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক ক্লিনিকাল গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাদ্য-তালিকার আম রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ এবং বিপাকীয় স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
প্রধান গবেষক এবং ফোর্টিস সি-ডক হসপিটাল ফর ডায়াবেটিস অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস-এর ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর ডা. অনুপ মিশ্র এবং গবেষণার অন্যতম লেখিকা ডা. সুগন্ধা কেহার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই বিষয়ে জানিয়েছেন বিস্তারিত।
ডা. অনুপ মিশ্র জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো দুটি গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছি যে, সকালের খাবারে কার্বোহাইড্রেট (রুটি) এর পরিবর্তে অল্প পরিমাণে আম খেলে উপকার পাওয়া যাচ্ছে। যা এর ব্যবহারের প্রতিকূল বিপাকীয় প্রভাব সম্পর্কে সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছে। তবে, খাদ্য-তালিকায় আম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত পুষ্টিবিদদের তত্ত্বাবধানে এবং নির্ধারিত সীমার মধ্যে, অতিরিক্ত নয়।’
ডা. সুগন্ধা কেহর জানিয়েছেন, ‘আম একটি অত্যন্ত প্রিয় ফল এবং আম নিয়ে করা গবেষণাগুলি দেখায় যে, আম খাওয়া রক্তের গ্লুকোজের জন্য ক্ষতিকারক নয়, এমনকি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারীও হতে পারে।’
স্টাডি ১: ইউরোপীয় জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন– স্টাডি উইথ কন্টিনিউয়াস গ্লুকোজ মনিটরিং অ্যান্ড ওরাল টলারেন্স টেস্ট (প্রকাশনার জন্য গৃহীত)—
গবেষণার ফলাফল:
• ডায়াবেটিস এবং অ-ডায়াবেটিস উভয় ক্ষেত্রেই রুটির মতোই আম একই রকম বা কম (অ-উল্লেখযোগ্য) গ্লাইসেমিক (রক্তে শর্করার) প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
• আম খাওয়ার পরে (রুটির তুলনায়) গ্লাইসেমিক প্রতিক্রিয়া (MAGE, ক্ষতিকারক গ্লুকোজ পরিবর্তনশীলতার একটি পরিমাপ) উল্লেখযোগ্য ভাবে কম ছিল, যা বৃহত্তর গ্লাইসেমিক স্থিতিশীলতা (একটি উপকারী প্রতিক্রিয়া) নির্দেশ করে।
পদ্ধতি:
EJCN-এ প্রকাশিত এই গবেষণায়, গবেষকরা ৯৫ জন অংশগ্রহণকারীর (৪৫ জন T2D এবং ৫০ জন অ-ডায়াবেটিস ব্যাক্তি) মধ্যে পরীক্ষা (২৫০ গ্রাম আম বা অনুরূপ ক্যালোরির রুটি খাওয়ার পরে দু’ ঘন্টার পরীক্ষা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা সহ) এবং ক্রমাগত গ্লুকোজ পর্যবেক্ষণ ( তিন দিনের একটানা সেন্সর ভিত্তিক সুগার অবজার্ভেশন) করে মূল্যায়ন করেছেন, যাতে তিনটি সাধারণ ভারতীয় আমের জাত– সফেদা, দশেরি এবং ল্যাংড়ার প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়।
স্টাডি ২: জার্নাল অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডারস– ৮-সপ্তাহের র্যান্ডামাইজড ট্রায়াল (অনলাইনে ৬ আগস্ট, ২০২৫, https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/40761695/)
স্টাডি-র ফলাফল:
• আম রক্তে গ্লুকোজ (গড় গ্লুকোজের দীর্ঘমেয়াদী পরিমাপ) উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
• আম খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন, কোমরের পরিধি (অস্বাস্থ্যকর পেটের চর্বি ) এবং ত্বকের ভাঁজের ঘনত্ব (ত্বকের নীচে বিপাকীয় ভাবে অস্বাস্থ্যকর চর্বি) হ্রাস পেয়েছে।
• এইচডিএল-এর (ভালো কোলেস্টেরল) মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নত হয় আম খাওয়ার পর।
পদ্ধতি:
এটি এমন একটি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা ছিল, যা প্রাপ্তবয়স্কের উপর করা হয় এবং (যারা T2D-তে আক্রান্ত) যারা ৮ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম সফেদা আম, দশেরি আম অথবা ল্যাংড়া আম খেয়েছিলেন।
আসলে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক T2D রোগী রয়েছে ভারতে এবং তাদের জন্য আম একটি উপকারী ফল। তাই, আম এখন পরিমিত, ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ খাবার পরিকল্পনার একটি কার্যকর উপাদান হিসাবে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে, বিশেষকরে যখন রুটির মতো পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট প্রতিস্থাপন করা হয়।