প্রান্তিক অঞ্চলের শত শত শিশুর কাছে ডিজিটাল জগৎ একসময় স্বপ্ন ছিল। অনেকেই কখনও কম্পিউটার স্পর্শ করেনি। আজ, সবকিছু বদলে যাচ্ছে। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন সংস্থা। এই যেমন তাজ বেঙ্গল কলকাতা, IHCL-এর অধীনে, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত কুলতলি ব্লকের ‘বিবেকানন্দ আদর্শ বিদ্যালয়’-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে স্কুলের প্রথম সম্পূর্ণ সজ্জিত আইটি ল্যাব উন্মোচন করেছে, যা প্রায় ৩০০ সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীর জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
অনেকের কাছে, এটি কম্পিউটার এবং ডিজিটাল শিক্ষার সঙ্গে তাদের প্রথম সরাসরি পরিচিতি, যা তাদের শিক্ষাগত এবং আধুনিক জীবনযাপনের স্বপ্নপূরণ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং অনু চৌধুরী মেমোরিয়াল এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত, ‘বিবেকানন্দ আদর্শ বিদ্যালয়’-টি নার্সারি থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষা প্রদান করে, যাদের বেশিরভাগই দিনমজুর, অভিবাসী শ্রমিক এবং জেলে পরিবারের সন্তান। স্কুলটিতে পর্যাপ্ত জায়গা এবং ইচ্ছাশক্তি ছিল কিন্তু একটি আইটি ল্যাব তৈরি করার মতো অর্থের অভাব ছিল, যার ফলে মেধাবী এবং আগ্রহী শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
‘আজকের বিশ্বে, ডিজিটাল সাক্ষরতা ঐচ্ছিক নয় – এটি একটি প্রয়োজনীয়তা’, ‘অনু চৌধুরী মেমোরিয়াল এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন’-এর প্রধান অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার চৌধুরী আরও জানিয়েছেন, ‘আমাদের শিশুরা মেধাবী এবং প্রতিভাবান, কিন্তু প্রযুক্তির অ্যাক্সেস ছাড়া তারা পিছিয়ে থাকে। আমরা এমন একটি ল্যাবের স্বপ্ন দেখেছিলাম, যা তাদের জন্য বিশ্বের জানালা খুলে দিতে পারে। তাজ বেঙ্গল কলকাতা সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। ২০টি কম্পিউটার দান করেছে এবং শ্রেণীকক্ষকে একটি প্রাণবন্ত, আধুনিক আইটি ল্যাবে রূপান্তরিত করেছে। ল্যাবটি সম্পূর্ণরূপে নতুন রং, নতুন মেঝে এবং কার্পেট দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে, যা একটি অনুপ্রেরণামূলক পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে শিশুরা নতুন কিছু শিখতে এবং স্বপ্ন দেখতে পারবে।’
শিক্ষার্থীরাও সমান ভাবে রোমাঞ্চিত। ২০২৩ সালের সেরা ছাত্রী এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মন্দিরা দাস তার উত্তেজনা ভাগ করে নিয়ে জানিয়েছে, ‘আমরা অত্যন্ত খুশি যে আমরা স্কুলেই কম্পিউটার শিখতে পারি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে সাধারণত কম্পিউটার থাকে না। সম্ভবত কাছাকাছি সমস্ত গ্রামে একই অবস্থা। আজ আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা আমাদের স্কুলে শেখার জন্য কম্পিউটার এনেছেন এবং উপহার দিয়েছেন।’ ২০২৪ সালের সেরা ছাত্রী এবং ৭ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তিথি সরদার জানিয়েছে, ‘আমি কম্পিউটারে ডিজিটাল আর্ট শিখতে চাই।’
‘যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেখানে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে আমরা গভীর ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ জানিয়েছেন তাজ বেঙ্গল কলকাতা-র জেনারেল ম্যানেজার অর্ণব চট্টোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘প্রথমবার লগ ইন করার সময় এই শিক্ষার্থীদের মুখে উত্তেজনা দেখাই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। এই আইটি ল্যাব তাদের স্বপ্নপূরণ করবে, তাদের ডিজিটাল অ্যাক্সেস প্রদান করবে। আসলে, আমরা তাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলার দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস দিলাম। এটি সুন্দরবনের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।’