পৃথিবীর সমস্ত দেশের মধ্যে ভারতবর্ষ এমন এক দেশ, যেখানে ছেঁড়াফাটা নোট কিংবা খুচরো টাকার জন্য চলে ঝগড়া, কথা কাটাকাটি, এমনকী মারামারিও। এই বিষয়ে সরকারের বিশেষ কোনও হেলদোল নেই। কিন্তু যাদের দৈনিক আয় খুবই সামান্য, তাদের হাতে যদি ছেঁড়াফাটা নোট এসে যায় এবং সেই নোট যদি বাজারে অচল হয়— তাহলে তার তো সংসার চালানো মুশকিল হবে।
ছেঁড়াফাটা নোট যে-কোনও ব্যাংক-এ গিয়ে হয়তো চেঞ্জ করা যায় কিন্তু একটা-দুটো ছেঁড়াফাটা নোট বদলানোর জন্য অফিস আওয়ার্স-এ ব্যাংক-এ গিয়ে, লাইনে দাঁড়িয়ে নোট চেঞ্জ করতে গেলে গরিব মানুষ কাজ করে আয় করবে কখন? অথচ ভেবে দেখুন, এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের সহজ পথ আছে ব্যাংক- এরই হাতে। ব্যাংক যদি ছেঁড়াফাটা নোট দেওয়া বন্ধ করে, তাহলে বাজারে ছেঁড়াফাটা নোট কমে যাবে এবং সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে অনেকটাই। রিজার্ভ ব্যাংক-এ নোট বদলানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকলেও, গাড়িভাড়া খরচ করে রিজার্ভ ব্যাংক-এ পৌঁছে, ১০, ২০, ৫০ কিংবা ১০০ টাকার নোট বদলাতে যাওয়া কি খুব বাস্তব উপায়?
অবশ্য শুধু ছেঁড়াফাটা নোটের সমস্যাই নয়, খুচরো টাকা বাজারে কমে যাওয়াও এক বড়ো সমস্যা। বাসে, অটোতে কিংবা বাজারে খুচরো টাকা না দিতে পারা নিয়ে প্রায়ই কথা কাটাকাটি, বচসা, এমনকী মারামারিও হতে দেখা যায় অনেক সময়। ১০, ২০, ৫০ এবং ১০০ টাকার নোটের এতটা অমিল হলে, বাসে, অটোতে যাতায়াত কিংবা সবজির বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করা খুবই সমস্যার হয়ে উঠছে। এখন এটিএম থেকে টাকা তুললে বেশিরভাগ এটিএম-এই ৫০০ টাকার নোট পাওয়া যায়। খুব কম এটিএম আছে, যেখানে কিছু ১০০ টাকার নোট পাওয়া যায়। আর ১০, ২০ কিংবা ৫০ টাকার নোট তো ব্যাংক-এ গিয়ে অনুরোধ না করলে পাওয়াই যায় না।

বাজারে খুচরো টাকার নোট কমে যাওয়ার জন্য কিছু অসাধু লোকও দায়ী। যেটুকু খুচরো টাকা বাজারে আছে, তাও অসাধু লোকেরা সংগ্রহ করে ব্যাবসা করছে। অর্থাৎ, এইসব ধান্দাবাজ লোকেরা প্রতি ১০০ টাকার খুচরো নোট দিয়ে ২০ টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছে।
আসলে, বাজার থেকে খুচরো টাকা কমিয়ে দেওয়ার পিছনে অন্য এক বড়ো উদ্দেশ্য রয়েছে। এর ফলে ইউপিআই ট্রানজাকশন বাড়ছে। কিন্তু সব মানুষ তো আর ইউপিআই ট্রানজাকশন করতে পারেন না কিংবা সর্বত্র ইউপিআই ট্রানজাকশনের সুবিধেও নেই। অনেক জায়গায় তো নগদ অর্থ দিতে বাধ্য করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে— সরকার যদি জনগণের স্বার্থে এইসব বাস্তব সমস্যার সমাধানের বিষয়ে না ভাবে, তাহলে সাধারণ মানুষের জীবন চলবে কী করে?





