সমস্ত সুযোগ-সুবিধে পেয়েও অনেকে জীবনযাপন করতে চান রাজা-মহারাজাদের মতো। ইউরোপে চারদিনের সপ্তাহ অর্থাৎ, সপ্তাহে চারদিনের কাজ এবং বাকি দিনগুলো ছুটিতে থাকতে চাওয়া হচ্ছে বারবার। শুধু তাই নয়, ওই চারদিনও বাড়ি থেকে কাজ করার দাবি তোলা হচ্ছে।

সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের বিষয়টি হয়তো অযৌক্তিক হতে পারে কিন্তু যারা কর্মক্ষেত্রে আরও সুযোগ- সুবিধে চাইছেন— তা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? এক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসংস্থার কর্ণধাররা জানিয়েছেন, যারা সপ্তাহে মাত্র চারদিন কাজ করতে চান, তাদের প্রতিদিনের কাজের সময় আরও বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।

কর্মক্ষেত্রে সংস্থার মালিক এবং কর্মীদের মধ্যে পরস্পর সহযোগিতার পরিবেশ কাম্য। এই বোঝাপড়াই আসলে ভারসাম্য বজায় রাখে এবং এই ভারসাম্য-ই কর্মক্ষেত্রে ভালো আবহ তৈরি করে।

চিনে বিগত ৪০ বছরে অর্থনৈতিক সাফল্য এসেছে শুধু কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের কারণে। আসলে, চিনে কাজের সময় হিসেব না করেই শ্রম দেন কর্মীরা। কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা নিয়েও খুব বেশি মাথা ঘামান না। আবার ইউকে-তে চিনের ঠিক বিপরীত পরিস্থিতি। কর্মীরা সেখানে কাজের থেকে বেশি সুযোগ- সুবিধে চাইছেন।

আমেরিকায় কিন্তু সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। এভাবেই অর্থনৈতিক সাফল্য পেয়ে আসছে আমেরিকা। বাস্তবে দেখা গেছে, কর্মীরা যে দেশে ফাঁকিবাজির রাস্তা ধরেন, সেই দেশের অর্থনীতিতেও ধস নেমেছে। এর ফলে মালিক এবং কর্মী উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ভারতীয় কর্মক্ষেত্র এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আবার কিছুটা আলাদা। যারা ধর্ম এবং ঈশ্বর নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন, তপস্যা করেন, তাদেরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন, পৌরাণিক যুগে মুনিঋষিরা কোনও কাজ না করেও, মহান হয়ে আছেন। রাজা-মহারাজারাও হয় যুদ্ধ করতেন, নয়তো বিলাসিতার জীবনযাপন করতেন। কোনও-কোনও রাজা আবার ব্যস্ত থাকতেন পূজাপাঠ নিয়ে।

আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা- র (এআই) যুগেও, কিছু রাজাদের মতো জনগণকে ধর্মকর্মে ব্যস্ত রাখার প্রয়াস চালানো হচ্ছে এখন আমাদের দেশে। জলে একটা ডুব দিয়ে পূণ্যার্জন করার আশায়, কষ্ট করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট করছেন কোটি কোটি মানুষ! কিন্তু এই এরাই আবার কর্মক্ষেত্রে একটু বেশি সময় কাজ করতে নারাজ।

ভারতবর্ষের মহিলারা আবার কর্মক্ষেত্রে এবং সংসারে সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টার বেশি কাজ করার ধৈর্য রাখলেও, পুরুষরা কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এবং সংসারে এতটা উদার মানসিকতা দেখাতে পারেন না। অথচ, মুখ বুজে অত্যাচারও সহ্য করেন অনেক মহিলা। আর পুরুষরা কর্মক্ষেত্রেও সংসারের মতো অনৈতিক ভাবে দাবি করে চলেছেন সমস্ত সুযোগ-সুবিধা। তাই, এই মনোভাবের পরিবর্তন চাই। নিজের স্বার্থে, সংস্থার মালিকের স্বার্থে এবং এমনকী দেশের স্বার্থে আরও বেশি সময় দিতে হবে কর্মক্ষেত্রে। এটাই সামগ্রিক সাফল্যের একমাত্র পথ৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...