কথায় বলে চোখ নাকি আপনার মনের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে চোখ কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যেরও খবর দেয়। অর্থাৎ শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনও সমস্যা থাকলে, আগে চোখে তা স্পষ্ট হয়। আপনার জীবনশৈলীর প্রভাব সবচেয়ে আগে চোখের নীচের নরম ত্বকে পড়ে। ঘুম কম হওয়া কিংবা পানীয় গ্রহণ করার কুফল সবচেয়ে বেশি প্রকট হয় চোখের নীচের ত্বকে।
তাই যতই সাজগোজ করুন ক্লান্তির ছাপ এড়ানো যাবে না আপনার চোখের ভাষায়। দীঘদিনের ক্লান্তির ছাপ Dark Circles তৈরি করবে। এছাড়া কোনও গভীর অসুস্থতাও চোখের নীচে ব্যাগ্স ও কালচে ভাবের জন্য দায়ী। এটা একটা সিগনাল ধরে নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কেন হয় Dark Circles
ডার্ক সার্কল্স হবার অনেক কারণ থাকতে পারে। ব্যস্ত জীবনশৈলীর কারণে বিশ্রামের অভাব, অপর্যাপ্ত ঘুম, হরমোনের পরিবর্তন, বংশানুক্রমিক সমস্যা, টেনশন প্রভৃতি অনেক কারণেই ডার্কসার্কল্স হতে পারে।
ক্লান্তি ও স্ট্রেস
মহিলারা তেমন স্বাস্থ্যসচেতন নন। সারাদিন ঘরে বাইরের কাজ সামলান কিন্তু নিজের খাওয়াদাওয়া ও ঘুমের ব্যাপারে মোটেই যত্নশীল নন। কর্মরতাদের ক্ষেত্রে অফিসের স্ট্রেসটাও একটা বড়ো কারণ। এছাড়া বাচ্চা ছোটো থাকলে মায়েদের ঘুম ও বিশ্রামের অভাব ঘটে। এমন নানা কারণে চোখের নীচে কালচে ছোপ পড়ে যায়।
রোগও কারণ
অ্যানিমিয়া, কিডনির সমস্যা, টিবি, টাইফয়েড প্রভৃতি অসুখের কারণেও চোখের নীচে কালি পড়তে পারে।
জলের অভাব
জল কম খাওয়া হলে শরীরে জলের ঘাটতি তৈরি হয়। এর ফলে ব্লাড সার্কুলেশন সুষ্ঠু ভাবে হয় না। চোখের নীচে কালচে ছোপ পড়ে কারণ চোখের নীচের অংশের শিরাগুলোয় সঠিক পরিমাণে রক্ত চলাচল করে না।
নেশার কুফল
অতিরিক্ত ধুমপান, মদ্যপান, ক্যাফিন প্রভৃতি গ্রহণ করার ফলেও কালচে ছোপ পড়তে পারে চোখের নীচের
সংবেদনশীল ত্বকে।
পিগমেন্টেশন
চড়া রোদে নিয়মিত বেশিক্ষণ কাজ করলে ডার্ক সার্কল্স হতে পারে।
মেক-আপ
চোখের নীচের অংশ যেহেতু অতি সংবেদনশীল, তাই নিম্ন মানের মেক-আপ প্রোডাক্টস্ ব্যবহার করার ফলে এই অংশে কালচে ছোপ পড়ে যেতে পারে।
সোডিয়াম-পটাসিয়াম বৃদ্ধি
নিয়মিত ভাবে খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে সোডিয়াম পটাসিয়াম অধিক মাত্রায় প্রবেশ করলেও ডার্ক সার্কলস-এর সমস্যা হতে পারে। বিন্স, পিনাট বাটার, ইয়োগার্ট, দুধ, টম্যাটো, কমলালেবু, আলু প্রভৃতিতে অধিক পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে। নুন বেশি খেলে শরীরে প্রবেশ করে অতিরিক্ত সোডিয়াম।
অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী খাদ্য
কোনও বিশেষ খাবারে আপনি অ্যালার্জিক হলেও, সেই খাবার খেলে ডার্ক সার্কল্স বৃদ্ধি পেতে পারে। অনেক সময় চকোলেট, মটর, ইস্ট, টক ফল, চিনিও হতে পারে এই ধরনের অ্যালার্জির কারণ।
নিরাময়ের উপায়
- ব্যালেন্সড্ ডায়েট জরুরি ৷ চেষ্টা করুন রোজকার খাবারে ভিটামিন ও আয়রন-যুক্ত খাদ্যপদার্থ রাখতে। অর্থাৎ সবুজপাতা-যুক্ত সবজি, শাক, ফল, মাছ ডিম নিয়মিত খান
- প্রতিদিন ৬-৭ ঘন্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি। চেষ্টা করুন যাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যেতে পারেন
- রোদ এড়ান এবং বাইরে বেরোলে রোদের প্রকোপ থেকে চোখের নীচের ত্বককে বাঁচাতে সানগ্লাস ব্যবহার করুন
- ভিটামিন সাপ্লিমেন্টস ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন এ, কে, ই, বা ডি কিংবা ফলিক অ্যাসিডের অভাবে যাতে ডার্ক সার্কল্স না হয়, তাই রোজ একটা করে মাল্টি ভিটামিন ক্যাপসুল খান
- ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে প্রচুর পরিমাণে জল বা জলীয় পদার্থ গ্রহণ করুন। জুস, সুপ হেল্থ
- ড্রিংকস পান করুন দিনের নানা সময়ে। দুধ পান করুন। এর ফলে পর্যাপ্ত ল্যাকটিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড, এনজাইম, প্রোটিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করবে
- মেক-আপ করার সময় ডার্ক সার্কল্স ঢাকতে ভালো ব্র্যান্ডের কনসিলার ব্যবহার করুন। এর ফলে ত্বকের টেক্সচারেও একটা সামঞ্জস্য আসবে। খুঁত কভার করে তারপর বেস মেক-আপ করুন
- স্কিন প্যাচ টেস্ট প্রয়োজন৷ ত্বকের উপর প্রদাহ তৈরি করে, এমন প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে একজন ভালো ডার্মাটোলজিস্ট-এর সাহায্যে একটা টেস্ট করিয়ে নিন।