জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়– বিয়ে। তাই, বিয়ের অধ্যায়কে স্মরণীয় করে রাখতেই হবে। কিন্তু এরজন্য সঠিক প্ল্যানিং চাই। কীভাবে সবার নজর কাড়বে ওয়েডিং পার্টির ডেকর, কীভাবে সবার মন জয় করেও বাজেট হবে পকেট-ফ্রেন্ডলি, গুরুত্ব দিতে হবে সমস্ত বিষয়ে।

আজকাল ছেলে এবং মেয়ের বাড়ির রিশেপশন পার্টি আলাদা হয় খুব কম। বেশিরভাগ মানুষ-ই এখন কম বাজেটে বেশি আনন্দলাভ করতে চান। তাই পাত্র এবং কন্যাপক্ষের লোকেরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উভয়পক্ষের পছন্দমতো ওয়েডিং-পার্টির ভেনু ঠিক করেন। শুধু তাই নয়, কীভাবে সাজানো হবে, কতজন খাবেন, কী খাবেন সমস্তটাই সবার সম্মতিক্রমে নির্ধারিত হয়। তবে যাবতীয় কাজের দায়িত্ব কোনও পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে ঝামেলামুক্ত থাকতে চাইলেও সেই সুবিধা পাবেন। কিন্তু সবকিছুকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য কিছু পরিকল্পনা এবং প্রয়োগ কৗশল জেনে নিতে হবে।

ওয়েডিং ডেস্টিনেশন

বাজেট অনুযায়ী ঠিক করুন ওয়েডিং ডেস্টিনেশন। ছোটোবড়ো অনুষ্ঠান-বাড়ি ছাড়াও বিয়ের জন্য সর্বত্র রয়েছে কিছু বাগানবাড়ি। এ ছাড়া ভাড়া করতে পারেন সাজানো লঞ্চ। গঙ্গাবক্ষে ভাসমান লঞ্চ-এ ওয়েডিং পার্টি দারুণ জমবে। ভাড়া করতে পারেন পাঁচতারা হোটেলও। আর যারা একটু বেশি টাকা খরচ করে বিলাসী ওয়েডিং পার্টির আয়োজন করতে চান, তারা চলে যেতে পারেন রাজস্থান। ওখানে ভাড়া করতে পারেন গোটা একটা ট্রেন। মরুভূমির বুকে চলমান ‘প্যালেস অন হুইলস’ কিংবা ‘রাজস্থান রয়্যালস অন হুইলস’ ট্রেন-এ বিয়ের রিসেপশন পার্টি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ডেকোরেশন

ম্যারেজ হল-এর ডেকোরেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সাজসজ্জায় চমক থাকলে বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিরা খুশি হবেন এবং সেই খুশি আর্শীবাদ হয়ে বর্ষিত হবে বর-কনের মাথায়। কিন্তু কীভাবে সাজাবেন ওয়েডিং ডেস্টিনেশন, তা জেনে নেওয়া জরুরি।

সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে ওয়েডিং প্রবেশদ্বার-কে। এর জন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সঙ্গে আর্থিক চুক্তির মাধ্যমে কাজ করাতে পারেন। আপনার ইচ্ছের কথা জানিয়ে সেইমতো সাজাতে পারেন প্রবেশদ্বার। এক্ষেত্রে সংস্থার লোকেরা আপনাকে সাজানো গেটের কিছু ছবি দেখিয়ে আপনার পছন্দের দায়িত্ব নিতে পারে। কাঠ এবং প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে তৈরি রাজকীয় স্তম্ভ ব্যবহার করতে পারেন। সেইসঙ্গে তালগাছ কিংবা নারকেল গাছের কান্ডের (গুঁড়ি) উপর থাকা জালযুক্ত আস্তরণ, বিভিন্ন গাছের সুদৃশ্য পাতা, বহু-রঙা ফুল প্রভৃতিকে গেট সাজানোর উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। টাকা বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন কিছু প্লাস্টিক ফুলও। তবে প্লাস্টিক কিংবা প্রাকৃতিক যে-ফুল-ই ব্যবহার করুন না কেন, লাল, নীল, হলুদরঙা ফুলের সঙ্গে কিছু সাদা ফুল মিশিয়ে ব্যবহার করবেন, তাহলে তা বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

প্রবেশদ্বার ছাড়াও প্রবেশ পথের পুরোটা সাজিয়ে তুলুন বাহারি ফুলের গাছ সারিবদ্ধ ভাবে রেখে। ছাদনাতলা সাজাতে পারেন বাঁশ, বেত প্রভৃতির কারুকার্যে এবং তার সঙ্গে টাটকা ফুল ব্যবহার করে। রজনীগন্ধার মতো সুগন্ধি ফুল অবশ্যই ব্যবহার করবেন, কারণ ফুলের সুগন্ধ মন মাতিয়ে রাখবে।

বিয়ের বাসর সাজানোর জন্য লাল ওড়নাও ব্যবহার করতে পারেন ফুলের সঙ্গে। আর যদি লঞ্চ কিংবা বিলাসবহুল ট্রেনকে বেছে নেন ওয়েডিং পার্টির জন্য, তাহলে ওইসব ডিস্টেনেশনও সাজিয়ে তুলুন ফুল, পাতা দিয়ে। অবশ্য এসব সাজানোর জন্য পেশাদার লোকের সাহায্য নেওয়া উচিত।

পাতা, ফুল, কাঠ, বাঁশ, বেত, প্লাস্টার অফ প্যারিস প্রভৃতির মিশ্রণে সাজিয়ে তোলার পর-ই এসে যায় আলো দিয়ে সাজানোর বিষয়টি। কারণ, বিয়ে মানেই দিন-রাতের ব্যাপার। তাই বৈদ্যুতিক আলো দিয়ে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা দরকার। এরজন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ভাড়া করে তা দিয়ে সাজিয়ে তুলুন। আলো দিয়ে সাজানোর পেশাদার লোক পাওয়া যায় এখন। ওরাই আপনার পছন্দমতো আলোর ব্যবস্থা করে দেবে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে। যেমন পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগর আলোর জন্য বিখ্যাত। শুধু পুজোর উৎসব নয়, বিয়ের অনুষ্ঠানকেও বৈদ্যুতিক আলো দিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছেন চন্দননগরের আলোর ব্যবসায়ীরা।

অতিথিদের বসার জন্য ব্যবস্থা করুন কভারড্ চেয়ার এবং টেবিল। প্রতিটি টেবিলের মাঝখানে রাখুন ফুলের বোকে।

ছোটো কৃত্রিম ফোয়ারাও ভাড়া পাওয়া যায় এখন। ওয়েডিং ডেস্টিনেশন-এর বিভিন্ন জায়গায় ফোয়ারার ব্যবস্থা করুন বিদ্যুৎ এবং জলের সাহায্য নিয়ে। আর ফোয়ারার চারিদিকে লাল, নীল বৈদ্যুতিক আলো বসিয়ে দিন, রাতে দারুণ লাগবে দেখতে।

বুফের ডেকোরেশন

ওয়েডিং পার্টিতে প্রীতিভোজের জন্য এখন বুফে-ই পছন্দ করেন বেশিরভাগ লোক। তাই সাজিয়ে তুলতে হবে বুফে-র জায়গাও। এক্ষেত্রে খাবারের পদ অনুযায়ী ডেকোরেট করুন। যেমন, ফুচকা কাউন্টার-এ কিছু শালপাতার বাটি এবং ফুচকা ঝুলিয়ে দিন। পাস্তা কাউন্টারে সাজিয়ে রাখুন গাজর ক্যাপ্সিকাম, মাশরুম প্রভৃতি। তরমুজ, শসা, বিট, গাজর, মুলো, লেবু, আপেল প্রভৃতি ডেকোরেট করে রাখুন স্যালাড কাউন্টার-এ। বাকি কাউন্টারগুলিকে সাজান নিজের মনের মতো করে। মৃদু আলোর ব্যবস্থা করুন সমস্ত কাউন্টার-এ।

 

যদি গান-বাজনার আসর বসাতে চান তাহলে রাখুন একটা ছোট্টো মঞ্চ। আর ওই মঞ্চটিকে সাজিয়ে তুলুন ফুল-পাতা এবং রঙিন আলো দিয়ে। মোটকথা, ওয়েডিং পার্টির ডেকোরেশন যেন আপনার উন্নত রুচির পরিচয় বহন করে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...