আমাদের চারপাশে এমন বহু মহিলাই রয়েছেন ,যারা প্রায় পঞ্চাশের কোঠায় পা রাখতে চলেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই জীবনের প্রতি উদাসীন। তারা মনে করেন জীবনে আনন্দ করার দিনগুলি তারা পিছনে ফেলে এসেছেন।সংসারের দায়দায়িত্ব সামলাতে সামলাতে তাদের আর নিজের দিকে তাকানোর অবকাশই হয় না৷ যখন খেয়াল হয়, দেখা যায় অনেকটা সময় গড়িয়ে গিয়েছে৷কিন্তু এই পরিস্থিতি হলেও একটা কথা ভুলবেন না যে, বয়স বেশি হোক কিংবা কম, সকলেরই নিজের ইচ্ছেমতো জীবন উপভোগ করার অধিকার রয়েছে। বয়স চল্লিশের কোঠা পার হলেই স্বাস্থ্যের উপর খেয়াল রাখাটাও খুব জরুরি। এই সময়টায় শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক পরিবর্তনও হতে থাকে। সুতরাং কয়েকটি ব্যাপারে খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়।

কী খাচ্ছেন খেয়াল রাখুন

এমন খাবার খান যাতে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন রয়েছে। ৪০ বছর বয়সের পর সাধারণত হজমশক্তি কম হতে থাকে। শরীরের মাংসপেশি ৪৫ শতাংশ কম হয়ে পড়ে যার ফলে শরীরে মেদ বাড়তে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মেটাবলিজম স্লো হয়ে যেতে থাকে, ফলে আগের তুলনায় কম ক্যালোরি ইনটেক-এর প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং যাই খান ক্যালোরি ইনটেক কতটা করছেন অবশ্যই খেয়াল রাখুন।

রেগুলার ব্যায়াম করুন

 ব্যায়াম করলে শরীরও সুস্থ থাকবে এবং বয়সও অনেকটা কমে গেছে বলে মনে হবে। মাংসপেশির শক্তি ফিরে পাবেন, ঘুম ভালো হবে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং অনেক বেশি অ্যাক্টিভ থাকতে পারবেন। ৪০-এর পর অনেক সময় জয়েন্ট পেন শুরু হয়ে যায় এবং সেই কারণে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। হাঁটতেও অসুবিধা হয়। এই অবস্থায় ওয়াটার এক্সারসাইজ খুবই লাভজনক। যে-কোনও ভাবেই আপনি ব্যায়াম করতে পারেন যেমন মর্নিং ওয়াক, অ্যারোবিক্স, নাচ, সুইমিং ইত্যাদি। এছাড়াও একত্রে জুম্বা ডান্স-ও করতে পারেন অথবা মিউজিকের সঙ্গে বন্ধুদের নিয়ে নৃত্যের আনন্দও নিতে পারেন।

হরমোন-এ পরিবর্তন

 ৪০ বছর বয়সের পর মেনোপজ শুরু হওয়ার ফলে হরমোনাল চেঞ্জ আসাটা স্বাভাবিক। ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু হরমোনের উপর অতটা মনোনিবেশ না করে ফিটনেসের খেয়াল রাখুন যাতে শরীরে হওয়া হরমোনাল চেঞ্জেস-কে ব্যালেন্স করতে পারেন।

প্রোটিন-যুক্ত ভোজন

 বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নখ খারাপ হতে থাকে, চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়, ত্বকে বলিরেখার প্রভাব পড়া শুরু হয়ে যায়। এই সময় খাবারে বেশি করে প্রোটিন রাখা উচিত যাতে করে মাংসপেশি, চুল, ত্বক এবং কানেকটিভ টিশু ভালো থাকে। অনেকক্ষণ পর্যন্ত খিদেও পায় না। প্রোটিন যুক্ত খাবারে আপনি দুধ, দই, ডাল, ছোলা, পালংশাক, রাজমা, স্প্রাউট্‌স, সোয়াবিন, ডিম, চিকেন, মটন, বাদাম, আখরোট এই সবকিছুই খেতে পারেন।

সোশ্যাল হওয়া জরুরি

যারা ফ্যামিলির সঙ্গে থাকেন তারা তাও লোকজনের সংস্পর্শে থাকেন কারণ বাড়িতে অতিথিদের আসা-যাওয়া লেগে থাকে। কিন্তু যে মহিলারা একাকী থাকেন তাদের জন্য মেলামেশা করাটা অনেক সময় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অফিসে কিংবা অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে কথা বলার সঙ্গী হয় কিন্তু যারা বাড়িতে একাই থাকেন এবং বাইরে কাজেও ঘোরেন না তাদের উচিত পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা করা, পাড়ার  যে-কোনও কাজ বা অনুষ্ঠানে নিজে থেকে এগিয়ে এসে যুক্ত হওয়া। এতে অনুষ্ঠান সফল করতে যেমন আপনার যোগদান থাকবে তেমনি পাড়াতেও আপনার পরিচিতি বাড়বে। আপনার ইন্টারেস্ট দেখে অন্যান্য জায়গা থেকেও আপনি আমন্ত্রণ পাওয়া শুরু করবেন। এতে করে অনেকের সঙ্গে আপনার পরিচয় বাড়বে। আপনার একাকিত্ব দূর হবে।

অফিসে কর্মরতারা পিকনিকের আয়োজন করতে পারেন এবং কোনও একটা গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারেন। পাড়ার মহিলাদের নিয়ে ক্লাব খুলতে পারেন। প্রতি মাসে সকলে বাড়িতেই, ঘুরে ঘুরে মিটিং ফিক্স করতে পারেন এবং নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করতে পারেন। এর ফলে সকলেই নিজের় নিজের ট্যালেন্ট জনসমক্ষে দেখাবার সুযোগ পাবে। অফিসের সহকর্মী এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় বাড়ালে ভবিষ্যতে উপকার পাবেন আপনিই। এগুলো ছাড়াও নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে নিজেকেই জাজ করতে হবে যে আপনি অবসাদের শিকার হয়ে পড়ছেন না তো? সুতরাং সোশ্যাল সার্কেল বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। আনন্দে বাঁচুন, ফিট থাকুন ।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...