নেশা শব্দটি শুনলেই, প্রথমে চোখের সামনে ভেসে ওঠে মদ বা মাদকজাত দ্রব্য পান বা সেবনের বিষয়টি। কিন্তু শুধু তাই তো নয়, নেশা শব্দটি ব্যবহৃত্ হয় একাধিক অর্থে। সে যাইহোক, নেশা আমাদের শরীর এবং মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

প্রথমেই মনে রাখা দরকার, কোনও কিছুর প্রতি আসক্তিই হল নেশা। অর্থাৎ, যার থেকে সহজে বিরত হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে, তাকেই আমরা আসক্তি বা নেশা বলে থাকি। তবে, মাদকাসক্তি ছাড়া, অন্য আসক্তি বা নেশার কিছু ভালো দিক আছে। যেমন বই পড়ার নেশা, লেখার নেশা, আকার নেশা, খেলার নেশা, নাচ-গান-বাজনার নেশা, অভিনয়ে নেশা, বেড়ানো প্রভতি নেশার বেশির ভাগটাই সুফল ভোগ করে থাকি আমরা।

কিন্তু সব ক্ষেত্রেই মনে রাখতে হবে, কোনও কিছুই মাত্রাতিরিক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ, কোনও একটি বিষয়ে অতিরিক্ত টান থাকলে, অন্যান্য অত্যাবশকীয় বিষয় অবহেলিত হতে পারে। এরফলে আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতির শিকার হতে পারেন আপনি নিজে। আপনজনের সঙ্গে মনোমালিন্য, ঝামেলা প্রভতিও হতে পারে। কারণ, একটি বিষয়ে অতিরিক্ত আসক্তি থাকলে, আপনি আপনার দাযিত্ব-কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হতে পারেন। যেমন ধরুন, বারবার প্রেমে পড়ার নেশা, অতিরিক্ত যৌনাশক্তির কারণে বহুগামিতা প্রভতি সিংহ ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে ফেলে দেয়। কারণ, এর জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয়, অর্থ ব্যয়, বাড়তি মানসিক চাপ প্রভতির শিকার হতে হয়।

এবার আসা যাক মাদকাশক্তির বিষয়ে প্রথমে কৌতূহলবশত কিংবা সাধ করে ধূমপান, মদ্যপান কিংবা অন্যান্য মাদক দ্রব্য পান বা সেবনের ইচ্ছে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে নেশাখোর বন্ধু বা পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শুরু হয় নিষিদ্ধ জিনিস পান বা সেবন। তারপর মস্তিষ্ক যখন আচ্ছন্ন হয়, তখন নিয়মিত পান বা সেবনের ইচ্ছে কিংবা চাহিদা তৈরি হয় এবং একসময় সেই অভ্যেস আসক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

অবশ্য শুধু মাদকাশক্তিই নয়, জুয়া বা লটারি খেলার নেশা, ব্লু-ফিল্ম দেখার নেশা, এমনকী সারাক্ষণ ফেসবুক-এ ব্যস্ত থাকাও অত্যন্ত ক্ষতিকারক নেশার মধ্যে পড়ে। এসব শরীর এবং মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ভুলে যাওয়া, বুদ্ধি লোপ পাওয়া, অলসতা, ঘুমের সমস্যা, মাথা ব্যথা, সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা, খিটখিটে মেজাজ, স্নাযু বিকল প্রভতি সমস্যা ছাড়াও, আরও অনেক বড়ো রোগের শিকার হতে পারেন এইরকম ক্ষতিকারক নেশার কবলে পড়ে।

নেশামুক্তির উপায়ঃ

অতএব, এসব নেশা থেকে বিরত থাকতেই হবে। আর বিরত থাকার জন্য প্রথমেই মনকে আয়ত্তে রাখতে হবে। এর জন্য কঠিন জেদ দরকার। কারণ, নেশা ছাড়ব ছাড়ব করলে ছাড়া যায় না। ছাড়তে হবে হঠাত্ই। আর তা যদি না পারেন, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের (মনোরোগ) সাহায্য নিন। প্রযোজনে, হাসপাতালে কিছুদিন ভর্তি থেকে নেশামুক্তি ঘটান। কারণ, হাসপাতালে ভর্তি থাকলে নেশার সামগ্রী পাবেন না সহজে এবং কিছুদিন নেশা থেকে দূরে থাকলে নেশামুক্তি ঘটবেই।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...