আমাদের ভারতবর্ষের সরকার করোনার ক্রমাগত বাড়তে থাকা প্রকোপ কে গুরুত্ব না দিয়ে বরং বিহারে সরকার গড়তে, পশ্চিম বাংলায় সরকার ফেলতে, লভ জিহাদের উপর নতুন আইন কায়েম করতে, রাম মন্দির নির্মাণে এবং কিছু না পেলে পাকিস্তানের আলোচনা সামনে এনে সাধারণ জনসাধারণের কণ্ঠরোধ করতে নতুন উদ্যমে উঠে পড়ে লেগেছে। সরকারের একমাত্র অভিন্ন হৃদয় বন্ধুর জন্য গুজরাতে বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে,সমস্বরে সবাইকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘ফির এক বার ট্রাম্প সরকার’। অথচ ট্রাম্পের মাথায় তখন একটাই চিন্তা, ভোটে হেরে যাওয়া টাকে কোনও ভাবে জিতে বদলাতে হবে।
ভারতীয় নেতা মন্ত্রীদের মতো ট্রাম্পও নিজের দেশ নিয়ে কতটা চিন্তা করেছিলেন সন্দেহ হয়। তাঁর মতে পুরো পৃথিবীটাই হল পাশা খেলার ময়দান। ভারত এই ধারণা টাকে একটু বদলে নিয়ে এটাকেই পৌরাণিক আকার দিতে চেয়েছে এই বলে যে, সব জন্মেই সুখ দুঃখ রয়েছে। পাপ যে করবে পরের জন্মে সে তাঁর ফল পাবে। আর এখন কষ্ট পাচ্ছ মানে আগের জন্মে পাপ করেছিলে যার প্রায়োশ্চিত্ত করা বাকি রয়ে গিয়েছিল।
কোভিড-১৯ এ যদি কারও মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে এর দায় সরকারের নয়, নিশ্চই এটা তার কর্মফল। আসছে জন্মে যাতে নিজেকে শুধরে নেওয়া যায় তার জন্য তো সরকার মন্দির বানিয়ে দিচ্ছে, যারা সরকারের বিরোধিতা করার কথা ভাবছে তাঁদের জেলে পুরে দিচ্ছে। মন্দিরে আরতি, পূজাপাঠের এলাহি ব্যবস্থা করা হয়েছে, এর থেকে বেশি সরকার আর কীই বা করতে পারে?
দেশের রাজধানী শহর দিল্লিতে করোনার সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকায় এটা পরিষ্কার সকলের কাছে যে, কেন্দ্র সরকার নতুন কোনও হাসপাতাল বানায়নি যেখানে গরিব ধনী সকলেই সমান সমান মেডিকেল হেল্প পাবে। আসলে যে সব রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের রোব এখনও তেমন জমে উঠতে পারেনি, সে সব রাজ্যের সরকার আইনত এতটাই পঙ্গু যে তার করার ক্ষমতা খুবই সীমিত। সব কিছুতেই কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতি নেওয়ার প্রয়োজন। লোকেদের রোজগারের পথ বন্ধ হচ্ছে, চাকরি যাচ্ছে, ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যা কিছু জমানো ছিল তা প্রায় শেষের পথে। হাসপাতালে একটা বেড পাওয়ার জন্য লোক পাগলের মতো হাসপাতালের চক্কর কাটছে। আর সরকারকে দ্যাখো, বড়ো বড়ো স্বপ্ন দেখাচ্ছে মানুষকে যার একটাও আজ পর্যন্ত পূরণ হতে কেউ দেখল না।
এখনও সময় আছে, মন্দির নির্মাণের জায়গায় হাসপাতাল বানানো হোক। বর্ডারে গুলিবর্ষন করার পরিবর্তে ভ্যাকসিন তৈরিতে বেশি করে মস্তিষ্ক লাগানো হোক। কোভিড যোদ্ধাদের অর্থ এবং সুবিধে দেওয়া হোক যারা নিজেদের প্রাণের মায়া না করে, স্ত্রী সন্তান, মা-বাবার কথা না ভেবে রাতদিন অপরিচিত মানুষদের সেবায় নিজেদের প্রাণপাত করছে।
দেশের নেতা মন্ত্রী, পান্ডা-পুরোহিত সকলেই নিজের নিজের শরীর স্বাস্থ্য, ভালো মন্দের যথেষ্ট খেয়াল রেখে চলছে, অথচ আর কারও চিন্তা তাদের মাথায় নেই। সাধারণ মানুষ , যাদের পরিবারের কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছে তাদের সকলেরই একটাই চিন্তা, প্রিয়জন যাতে সুস্থ হয়ে ওঠে, সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরে। কিন্তু নেতাদের এই মানুষগুলোর কোনও চিন্তা আছে কি? তারা নিজেদের ভালোমন্দ নিয়েই ব্যস্ত। তাই সাধারণ মানুষ ভরসা করাই ছেড়ে দিয়েছে। আজ শুধু রয়ে গেছে মনের মধ্যে একটা ভয়। সরকারের অকর্মণ্যতাই মানুষের মনে এই ভয় তৈরি করেছে। এর জন্য দায়ী সরকার।