ইন্টারনেটে খানাতল্লাশি চালিয়ে খুঁজে পেলাম ঝান্ডিগাঁও, ইচ্ছেগাঁও, সিলারিগাঁও, রামধুরা, নেওরা উপত্যকার কোলাখাম ইত্যাদি। ভ্রমণপিয়াসিদের কাছে দার্জিলিং গ্যাংটক জলভাত হয়ে গেছে। সবাই খোঁজে ‘অফ বিট’ কিছু। এই অন্যরকমের ভিড়ে লাভা, লোলেগাঁও ও রিশপও এখন খুব পরিচিত নাম।
যে -জায়গাগুলোর নাম করলাম সেগুলিও লাভা, লোলেগাঁও ও রিশপের কাছাকাছিই, তবে আরও কিছুটা প্রত্যন্ত গ্রাম, যেখানে হোটেল রিসর্ট সুলভ নয়, বরং পাওয়া যায় হোম-স্টে– অর্থাৎ দু-চার দিনের জন্য পেয়িং গেস্টের ব্যবস্থা। কন্যার বার্ষিক পরীক্ষা ও ফলাফলের দিনক্ষণ জানা মাত্র শিলিগুড়ি যাওয়া আসার টিকিট কেটে রেখেছিলাম। তাও ওয়েটিং লিস্টের অনিশ্চয়তা ভোগ করতে হয়েছিল যাত্রার দু দিন আগে অবধি। কোনও জায়গা ভ্রমণের খুঁটিনাটি জানিয়ে পরামর্শ দেওয়া যায়, কিন্তু ছুটিছাটার মরশুমে রেলের টিকিট পাওয়ার উপায় বাতলানো দুঃসাধ্য।
কলকাতা থেকেই বিস্তর খোঁজাখুঁজির পর বুকিং পেলাম রামধুরায়, কালিম্পং থেকে ১৫ কিলোমিটার আর শিলিগুড়ি শহর থেকে ৮৪ কিলোমিটারের মতো দূরত্বে। একাধিক জায়গা বুড়ি ছোঁয়ার বদলে একটি জায়গা ভালো করে দেখার ও বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নিয়েই যাত্রা।
রামধুরা
আমার তৎকালীন আবাস সেবক মিলিটারি স্টেশন, আসলে শিলিগুড়ি শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে শালুগড়ায়। জায়গাটা নিজেই যথেষ্ট রূপসী হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা একটু অসুবিধার। অনুমতি ছাড়া বাইরের গাড়ি বা ব্যক্তি ঢুকতে পারে না। সেই অটো করে যেতে হল পানিটাঙ্কির মোড় যেখান থেকে দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, গ্যাংটক ইত্যাদির বাস ও অন্যান্য গাড়ি ছাড়ে। রামধুরার যে হোম-স্টে-তে বুকিং ছিল তাদের শিলিগুড়ি, এনজেপি স্টেশন, এমনকী বাগডোগরা থেকেও কার পিক-আপ-এর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তা অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যেত, কমপক্ষে ৩৫০০ টাকা। তার বদলে কালিম্পং গিয়ে সেখান থেকে ৭৫০ টাকা দিয়ে নরগিমা হোম-স্টে-র পাঠানো গাড়িতে রামধুরা যাব ঠিক করলাম।
আগের রাতে তুমুল বৃষ্টি পড়েছে। সকালটাও মেঘাচ্ছন্ন, ঝিরঝিরে। গোটা দার্জিলিং সিকিম পর্যটনের অন্যতম ইউএসপি তথা আকর্ষণ হল কাঞ্চনজঙঘা। আমরা পেলিং-এ গিয়েও মেঘ আর কুয়াশার কারণে তার দর্শন পাইনি। দার্জিলিং গ্যাংটক থেকে যা দেখেছি তা সূর্যোদয়ের পরের রূপ। আর এবার তো বৃষ্টি বাদলা নিয়েই বেরোলাম। কপালটাই মন্দ। মন খারাপ করে কালিম্পং পর্যন্ত সারাটা রাস্তা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম। এই রাস্তা দিয়ে বহুবার গিয়েছি। পাহাড়, পাকদণ্ডি, বন কিংবা তিস্তার বর্ণনা আর কতবার দেওয়া যায়?
বাস তথা গাড়ি স্ট্যান্ডটা যথেষ্ট অপরিচ্ছন্ন ও ঘিঞ্জি। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় আরও বিশ্রী লাগছিল। ফোনে চালকের সঙ্গে কথা বলে রাখা ছিল। কালিম্পং-এ নেমেই নরগিমার গাড়ি পেয়ে গেলাম। ঘিঞ্জি শহরের ভেতর দিয়ে কুয়াশা কেটে পৌঁছোলাম ছোট্ট গ্রাম রামধুরায়। মার্চ মাসের শুরু , তাই প্রচণ্ড ঠান্ডা। মন মেজাজ খারাপ করা আবহাওয়ায় যেটা একমাত্র ভালো লাগল, তা হল থাকার ঘর ও স্নানঘরখানা। বুকিং করার সময়ই আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এসে দেখলাম একটুও বাড়িয়ে বলেনি।
যাওয়া মাত্র কফি করে দেওয়া হল, যদিও তখন বারোটা বেজে গেছে এবং দুপুরের খাওয়ার তোড়জোড় চলেছে। দার্জিলিং-কালিম্পং যেখানে জলকষ্টের জন্য সুবিদিত, সেখানে আমাদের বাথরুমের প্রতিটি কলেই জল পাওয়া যাচ্ছে দেখে অবাক লাগল। আমাদের ঘর সংলগ্ন ব্যালকনি থেকে বাইরে তাকালে মনে হয় এরোপ্লেনের জানলা দিয়ে দেখছি। নীচটায় ঘন মেঘের আস্তরণ। তিস্তা নদী দেখা যায় বলে শুনলাম,যদিও মেঘের আস্তরণ ভেদ করে দেখতে পেলাম না।
দর্শনীয় জায়গাগুলোর তালিকা নিয়ে গিয়েছিলাম। কালিম্পং-টাও দেখে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল, যেটা দার্জিলিং বার তিনেক গিয়েও ঠিকভাবে দেখা হয়নি এক ডেলো ছাড়া। তাই দুপুরে খেয়েই বেরোনোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য গাড়ির চালক আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে গেল।
আশেপাশে কিছুই নেই, জনবসতিও বিরল। কেবল অনতিদূরে পাহাড়ের গায়ে কয়েকটা কাঠের বাড়ি আবছা চোখে পড়ল। ওইটাই নাকি ইচ্ছেগাঁও। আকাশে রোদ একটু উঁকি মারতেই অগত্যা পদব্রজে চড়াই পথে ইচ্ছেগাঁওয়ের দিকে হাঁটা দিলাম। সঙ্গে ছাতা ছিল। ঠিক করলাম বৃষ্টির আভাস পাওয়ামাত্র ফিরব।
সিঙ্কোনা প্লান্টেশনকে বাগান বলা যায় কিনা জানি না, তবে সৌন্দর্যে চা বাগানের ধারে কাছে লাগে না। তারই মধ্যে দিয়ে রাস্তা উঠেছে ওপরে। সিঙ্কোনা ছাড়াও দু পাশে পাইন বৃক্ষের সমাহার। আধ ঘন্টা হাঁটার পর দেখলাম আকাশের আলো কমে আসছে। মেঘের জন্য সূর্য অস্ত যাবে কিনা বোঝা গেল না। সদ্য শিলিগুড়ি থেকে পৌঁছে আর এগোনোর তেমন ইচ্ছা বোধ করলাম না, সময়ও ছিল না। উপরন্তু আমার ঠান্ডা লেগে হাঁচি হচ্ছিল, সঙ্গে গলায় কষ্ট। কিন্তু ত্রিসীমানায় ওষুধের দোকান কেন, কোনও দোকানপাটই চোখে পড়েনি। তাই মাঝপথ থেকেই ফিরে এলাম। ঠান্ডার মধ্যে তখন পরিষ্কার হয়ে কম্বলে ঢুকে বিশ্রাম নিতেই ইচ্ছা করছিল।
দুটি খাটে পরিষ্কার বিছানা ও দুটি করে বালিশ আর কম্বল। আমি আর আমার মেয়ের এক বিছানায় শীতের মধ্যে অসুবিধা হল না। ঘুমটা ভালোই এসেছিল। ভাঙল সান্ধ্য কফি ও পেঁয়াজ পকোড়ার ডাকে। তারপর আবার আলসেমি। উঠলাম রাতের খাওয়া আসাতে। মালকিনের ঘর ও রান্নাঘর থেকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে আমাদের ঘর। আমরা শীতে জবুথবু। কিন্তু ভদ্রমহিলা হাসি মুখে আমাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিলেন তিনবারই।
পরের দিন রামধুরা, ইচ্ছেগাঁও, সিলেরিগাঁও, পেডং-সহ পুরো বার্মিক অঞ্চলটা ঘুরে দেখার পরিকল্পনা। কিন্তু বেরোনোর আগ্রহটাই মাটি হয়ে গেছে, কাঞ্চনজঙঘায় সূর্যোদয় দেখা আমাদের কাছে কি মিথ হয়েই থাকবে? এমন হতভাগ্য যে পেলিং-এ গিয়েও বঞ্চিত থাকতে হয়েছিল। মার্চ মাসে কোথা থেকে এত মেঘ আসে আর বৃষ্টিপাত হয়, আমার সামান্য ভূগোল ও বিজ্ঞানের বিদ্যা দিয়ে বুঝে পাই না।
পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙল শয্যা-চা পাওয়ার ডাকে। ব্যাজার হয়ে ঠান্ডার মধ্যে কম্বলের ওম ফেলে বেরিয়ে এসে আকাশের উত্তর-পশ্চিম কোণায় তাকিয়ে চোখ ভরে গেল। অবশেষে! ঠিক সূর্যোদয়ের সময় কিনা বুঝতে পারলাম না, তবে তুষারাবৃত পাহাড় চূড়াকে অগ্নিবর্ণাই মনে হচ্ছিল। যে-কোনও বরফ চূড়াই সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের আলোয় হয়তো স্বর্ণবর্ণই লাগে। তবু যা দেখলাম তারই নাম ‘কাঞ্চনজঙঘা’। কিছুটা মেঘের অন্তরালে থাকলেও দৈর্ঘ্য বরাবর অনেকটা দেখা যাচ্ছে। বেশ কয়েকটা চূড়া, প্রত্যেকের আলাদা নামও আছে। আমার মেয়েকে জোর করে তুলে দিলাম। সে বাইরে এক ঝলক দেখেই বাবাকে ছবি তোলার নির্দেশ দিয়ে আবার গিয়ে কম্বলের তলায় ঢুকে পড়ল। তুষার শৃঙ্গের চালচিত্রে কাঁপতে কাঁপতে সকালের লিকার চা সারলাম।
রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মেঘ এসে জড়ো হলেও কুয়াশা হালকা হয়ে ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে আরও স্পষ্ট করে দিল। আগের দিনের মন খারাপটা দূর হয়ে চনমনে লাগল। নাহ্! এসেছি যখন যতটা পারি দেখেই যাই।
অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় যেমন হোটেল থেকে সাইট সিন-এর জন্য খদ্দের ধরার চেষ্টা দেখা যায়, এখানে তেমন নয়। আমরাই ওই একই গাড়িকে ফোন করে আগের দিন বলে রেখেছিলাম বেরোনোর কথা। সকাল নটায় ওই গাড়িটাই হাজির। স্থানীয় দ্রষ্টব্য স্থানগুলো দেখাবে। ন্যূনতম হাজার টাকা থেকে শুরু, তারপর যে যতদূর ঘুরবে তার ওপর নির্ভর করছে দর। আমরা যে জায়গাগুলো গেলাম তাতে পড়ল ১৮০০ টাকা। প্রাতরাশ সেরে রওনা হলাম।
মহাদেব ধাম মন্দির
রাস্তায় প্রথমে পড়ল একটি শিব মন্দিরের প্রবেশ পথ। কিছুটা ওপরে উঠে মন্দির। মন্দিরে তেমন জনসমাগম নেই। ওপর থেকে অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখা যায়। তবে বহুবার পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে এই দৃশ্যগুলোয় নতুনত্ব কিছু পাই না।
জলসা বাংলো
১৯৩০ সালে ব্রিটিশদের তৈরি এই বাংলো এখন সরকারি রিসর্ট। একটা ছোটো পাহাড়ের মাথায় ছিমছাম বাংলো। থাকার পক্ষে কেমন, সেই অভিজ্ঞতা নেই, তবে দেখার পক্ষে খুব কিছু আকর্ষণীয় মনে হল না। এখান থেকেও তিস্তা নদী অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। কাঞ্চনজঙ্ঘাও দেখা যায়।
মঙ্গরজান
রামধুরা থেকে কিছুটা নীচে আছে মঙ্গরজান, যেখান থেকে তিস্তা অববাহিকার অনেকটা দীর্ঘ পথ দেখা যায়। আমাদের আস্তানা থেকে যা অনেক দূরবর্তী, এখান থেকে তা অনেক স্পষ্ট। তাছাড়া আকাশও পরিষ্কার। মঙ্গরজানেও বেশ কিছু সাজানো গোছানো হোম-স্টে আছে। একটা ওয়াচ টাওয়ার নির্মীয়মান। পর্যটকের ভিড় চোখে পড়ল না। ওখান থেকে আমাদের হোম-স্টে দেখা যাচ্ছিল। দেখা গেল ডেলো পাহাড়ের চূড়ায় লাগানো টাওয়ার। আর চোখে পড়ল একটা চাতাল মতো সুদৃশ্য জায়গা। ওটা কোন দ্রষ্টব্য প্রশ্ন করে জানা গেল দ্রষ্টব্য স্থান নয়, ওটা দেওরালি সেনা ছাউনি।
ইচ্ছেগাঁও
৫৮০০ ফুট উচ্চতায় ছোটো পাহাড়ি গ্রাম। রামধুরায় যেখানে ছিলাম, সেখান থেকে পাইন বন ও সিঙ্কোনা বাগানের মধ্যে দিয়ে দু কিলোমিটার চড়াই রাস্তায় ঘণ্টাখানেকের ট্রেক। সেই চেষ্টাই করেছিলাম আগের দিন, গন্তব্যে পৗঁছোতে পারিনি। এদিন গাড়ি করেই পৌঁছে গেলাম। ইচ্ছেগাঁও থেকেও রামধুরার সুন্দর নিসর্গ দেখা যায়। এখানে কিছু পর্যটক ও বলা বাহুল্য বাঙালি পর্যটক দেখলাম। ইচ্ছেগাঁওতেও পাহাড়ের গায়ে ঘনঘন কিছু হোম-স্টে। সব মিলিয়ে ভালো লাগলেও কাঞ্চনজঙঘা ও তিস্তা একসাথে দেখার জন্য রামধুরায় আমাদের আবাসটিই আদর্শ মনে হল।
রমিতেধারা
ইচ্ছেগাঁওয়ের কাছে একটা ভিউ পয়েন্ট বলা যায়। এখান থেকে কাঞ্চনজঙঘা আর তিস্তার সবচেয়ে লম্বা গতিপথ চোখে পড়ে। ১৪টি বাঁক নাকি দেখা যায়। কিন্তু আকাশ কিছুটা ফিকে হলেও তলার দিকে আবার খানিকটা মেঘ জমে থাকায় স্পষ্ট করে বিশেষ কিছু বোঝা গেল না। আর একটি ভিউ পয়েন্ট তিনচুলে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করলাম না, কারণ দ্রষ্টব্য সেই একই।
সিলেরি গাঁও
এই গ্রামটা বেশ কিছুটা উঁচুতে। ওখানে আমাদের মারুতি ওয়াগনার যেতে পারবে না, বড়ো চাকার গাড়ি চাই, রাস্তা খুব খারাপ। চালক কথাটা এমন সময় বলল, যখন বিকল্প গাড়ি নেওয়ার উপায় নেই। অবশ্য নরগিমা হোম-স্টে থেকে অন্য গাড়ির ব্যবস্থা হতো কিনা তাও জানি না। সিলেরি গাঁও কাঞ্চনজঙঘা দেখার পক্ষে নাকি আরও প্রশস্ত, যদি অবশ্য আকাশ পরিষ্কার থাকে। ইচ্ছেগাঁও থেকে হেঁটেও যাওয়া যায়।
ড্যামসাং ফোর্ট
এই নামে একটি ঐতিহাসিক কেল্লাও আছে ৬ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে। কিন্তু ড্রাইভার যেতে রাজি নয়। তাছাড়া নেটে পড়েছি শুধু ধবংসাবশেষ পড়ে আছে। সেটা দেখার জন্য আমরাও বাড়তি সময় খরচে আগ্রহ বোধ করলাম না। পরিবর্তে আরও দূরের একটি মনাস্ট্রি দেখতে ছুটলাম।
সাংচেন দোরজি মনেস্ট্রি
ভুটানে বসবাস কালে অনেক বৌদ্ধমন্দির ও মনেস্ট্রি দেখেছি। তবু পেডং-এর কাছে এই বৌদ্ধমঠে গেলাম। তিনশো বছরের পুরোনো। যখন পেডং ভুটান রাজের অধীনে ছিল তখনকার নির্মাণ। দেয়াল চিত্রে বৌদ্ধধর্মে তন্ত্রসাধনার ছবি বিবৃত। এই নাস্তিক্য দর্শনে তন্ত্রসাধনা কীভাবে ঢুকল সেটা আমার কাছে এক রহস্য। কিন্তু তন্ত্রচর্চার কথা আমি ভুটানে গিয়েও শুনেছি। আসলে বৈদিক আনুষ্ঠানিকতা থেকে বিদ্রোহ করে পৃথক হয়ে যাওয়া এই বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্মের সঙ্গে নাড়ির যোগ কখনওই ছিন্ন করতে পারেনি। বৌদ্ধতন্ত্র আসলে হিন্দুতন্ত্রেরই বিবর্তিত রূপ। বিহারটির মূল আকর্ষণ অবশ্য এক ভুটানি পুরোহিতের মমিকৃত দেহ। এপ্রিল-মে মাসে বার্ষিক ‘চিয়াম’ উৎসবে বর্ণাঢ্য নাচগান হয়।
দুপুরে একটু দেরি হল খেতে। আর রুমে নয়, ওদের রান্নাঘরে পেতে রাখা চেয়ার টেবিলেই। পাশে রেস্তোরাঁ লেখা ঘরটা বন্ধই পড়েছিল। আমরা ছাড়া আর কোনও পর্যটক ছিল না। থাকলে হয়তো খুলবে। ভেতরটা যতটুকু চোখে পড়ল সাজানো গোছানো চালু পানাহারের ঠেক বলেই মনে হল।
আমি ওই দিনই ডেলো যাওয়া যায় কিনা জানতে চাইলাম। ড্রাইভার বলল, দুপুর বেলা প্রবল হাওয়া বইবে । কথা হল পরের দিন কালিম্পং হয়েই যেহেতু ফিরতে হবে, তাই কালিম্পং-এর খানিকটা ঘুরিয়ে গাড়ি স্ট্যান্ডে ছেড়ে দেবে বাড়তি ভাড়ার বিনিময়ে। সুতরাং খেয়েদেয়ে আবার বিশ্রাম। আশেপাশে দোকান বাজার না থাকায় ঘুরপাক খাওয়ার তেমন ইচ্ছা জাগল না। বরং রোদ পড়ে যাওয়ার আগে কাঞ্চনজঙঘার সাথে আর এক প্রস্থ মোলাকাত করে বিছানায় সিঁধোলাম। বিকেলে এদিন পেঁয়াজির বদলে আলুর চপ জাতীয় কিছু দেওয়া হল চায়ের সঙ্গে। রাতের খাবার এরা আটটায় ঘরে পৗঁছে দিয়ে তড়িঘড়ি শুয়ে পড়ে।
পরদিন ফেরার পালা। এদিনও সকালে কাঞ্চনজঙঘার অবগুণ্ঠনহীন দর্শন। সামনে খানিকটা সিকিম পাহাড়ের আড়াল। আমরা ওই পাহাড় পেরিয়ে পেলিং-এ গিয়েও হতাশ হয়েছি। কিন্তু ছোট্ট পাহাড়ি গাঁ রামধুরা সাধ্যমতো উজাড় করে দিল।