এনএইচ৬ ধরে ছুটে চলেছে গাড়ি। ল্যান্ডস্কেপে বন্ধুর প্রকৃতি। ধুলোওড়া রুখু-শুখু পরিবেশ। সামনে ছোট্ট এক জনপদ। কুশলপুর। হাত নেড়ে জানায় যেন সে কুশলবার্তা। আসলে লম্বা দৌড়ের কাউন্টডাউন শুরু রায়পুর থেকে। চলেছি মন্দিরতীর্থ রাজিম। সন্তোষী চক থেকে গাড়ি ছেড়ে দিল, উঠল জাতীয় সড়কে। এবার লিঙ্ক রোড। মিনিট সাতেক পরই দেবপুরী। আবার জাতীয় সড়ক। তবে এবার এনএইচ৩০। এই রাস্তাটা চলে গেছে বস্তারের জগদলপুর। এক ফসলি চাষজমি রাস্তার দুদিকে। শীতে ফসলহীন জমি খাঁ খাঁ করছে। যেন তেপান্তরের মাঠ! ভেজলিন না লাগানো পা-ঠোঁটের মতো ভমিরূপ। ফাটা-চটা। এপথে বলার মতো বড়োসড়ো গাছ বাবলা আর খেজুর। বাদবাকি ছোটো-খাটো ঝোপ-ঝাড়। যেন কমা, পূর্ণচ্ছেদ।
সেই তেপান্তরের মাঠ ছুঁয়ে চলে গেছে রেলপথ। মিটার গেজ। গতি মন্থর। যেন হাওড়া-শিয়াখালা মার্টিন রেলের প্রত্ননিদর্শন। দৌড় তার রায়পুর থেকে বাঘবেহেড়া। ওয়াই আকৃতির বামহাতি বাঁক ঢুকেছে চম্পারনে। এখান থেকে দৌড়টা পাক্কা সাতাশ কিমি। অন্যপথ ধরে একটু এগোলেই আমনপুর। বাজার আমনপুরের পরই আবার বামহাতি পথ। আর পড়ে মেরে-কেটে মাত্র ১৪ কিমি। রাজ্য-জয়ের হাসি নিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজিম রাজ্যে প্রবেশ। মহানদীর মহাব্রিজের এপারটাই নবাপাড়া। ওপারে কাঙ্ক্ষিত রাজিম। রাজিম স্টেশন-ও নদীর এপারে। মিটার গেজের ছোট্ট স্টেশন। ৪৯ কিলোমিটার দৌড়ঝাঁপের পর এবার গাড়ি দৌড়ের ইতি। পার্কিং তার তেঁতুলবটের নিঝুম ছায়ায়।
মহানদী, পৈরি এবং সেন্দুর এই ত্রিবেণী নদী সঙ্গম পাড়েই রাজিম নগরী। যা আসলে ছত্তিশগড়ের প্রয়াগ তীর্থ। ফিবছরই চলে এখানে পূণ্যার্থীদের জনসমাবেশ। সময়টা মাঘি পূর্ণিমা থেকে মহাশিবরাত্রি। এক পক্ষকাল ধরে চলে এখানে উত্সবের আমেজ। চলে তর্পণ ও পূণ্যস্নান। সমবেত হয় দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য পূণ্যার্থী। প্রতি বারো বছর অন্তর এখানে অনুষ্ঠিত হয় রাজিম মহাকুম্ভ। পুরী বার বার গেলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু পুরো কোটা পূরণে রাজিম অন্তত একবার আসতেই হবে। তাই পুরীর জগন্নাথ দর্শনের পূর্ণতার জন্য রাজিমলোচন মন্দির দর্শন একান্তই পালনীয়। তাই তো রাজিমের আর এক নাম কমলাক্ষেত্র পদ্মাবতী পুরী।
চলে এলাম অষ্টম শতাব্দীতে তৈরি রাজিবলোচন মন্দির কমপ্লেক্সে। সিংহভাগ মন্দিরের অবস্থানই এই ঘেরাটোপের অন্দরে। তবে সঙ্গম ঘাট ও নদীর অন্য পারেও বেশ কযেটি মন্দির। জুতো খুলে চলে আসি মন্দির চত্বরে। এখানকার মধ্যমণি রাজিবলোচন মন্দির। ইটশৈলীর এই মন্দির উঁচু প্ল্যাটফর্মের উপর সুগঠিত। গঠনশৈলীতে সম্পূর্ণ আঞ্চলিকতার ছাপ। শ্বেতশুভ্র দেবগৃহের মাথায় উড়ছে লাল ধ্বজা। ধাপ সিঁড়ি উঠেছে মন্দির প্রকোষ্ঠে। মন্দিরের তিনটি ধাপ গর্ভগৃহ, অন্তরাল ও মণ্ডপ। গর্ভগৃহে অবস্থান করছেন রাজিবলোচন। অর্থাত্ ভগবান শ্রীবিষ্ণু। কালো কষ্টি পাথরের মূর্তি। চতুর্ভুজে তাঁর শঙ্খ, চক্র, গদা পদ্ম। এইরূপ মোটেই রুদ্র নয়। বরং শান্ত, সৌম্য, তথাগত টাইপের। মনে করা হয় যুদ্ধ পরবর্তী শান্ত রূপই এই রাজিবলোচন।
গর্ভগৃহের দ্বার সম্মুখের দেওয়া ভাস্কর্য অসাধারণ। যে-শিল্প নিপুণতা সহজেই চোখ টানে। দেওয়ালজুড়ে পৌরাণিক গল্পকথার পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্রায়ণ অনবদ্য। মণ্ডপ অংশের স্তম্ভস্থাপত্য শৈলীও এককথায় অসাধারণ। যা খাজুরাহো শিল্পরীতির সঙ্গে অনায়াসেই তুলনা করা যায়। স্তম্ভস্থাপত্য পৌরাণিক চরিত্র চিত্রণের সঙ্গে মিথুন চিত্রের মেলবন্ধন ঘটেছে। তাই নরসিংহ, বরাহ,
রাম-লক্ষণ, গঙ্গা-যমুনার সঙ্গে সহাবস্থান করছে অপরূপ অপ্সরাবৃন্দের অনবদ্য ভঙ্গিমামূর্তি। একটু লক্ষ্য করলেই অনুমেয় যে, এখানে ভাস্কর্য শিল্প তিনটি পর্যাযে। যার প্রথমভাগে আছে কল্পলতার চারুচিত্র। দ্বিতীয়তে বিভিন্ন মুদ্রা ও ভঙ্গিমায় মিথুন মূর্তি। আর শেষভাগে মেলে অর্ধমানবী রূপ ও নাগনাগিনী মূর্তি।
মণ্ডপ অংশের সম্মুখ ভাগেই চোখেপড়ে এক গরুড়মূর্তি। ললাট বিম্বের উপর এই শিলামূর্তির অবস্থান। মনে করা হয় গরুড় অপ্রতিম শক্তি ও শৌর্যের প্রতীক। মন্দিরের নিয়মনিষ্ঠা সম্পর্কে জানছিলাম মন্দিরের পুরোহিত বিজয়শর্মার কাছে। মন্দির খোলা হয় ভোর সাড়ে চারটায়। ভোগ পর্বের পর বেলা বারোটায় মন্দির বন্ধ হয়। বেলা তিনটায় খুলে রাত পর্যন্ত চলে ভক্তদের পূর্জার্চনা। মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে শুনছিলাম শর্মাবাবুর কাছে, মন্দির চাতালে বসে।
এক দরিদ্র তেলিনী ভোজ্য তেল বিক্রি করে সংসার প্রতিপালন করতেন। অন্যদিনের মতো সে দিনও তিনি রাস্তায় বার হয়েছেন। কিন্তু সেদিন ঘটলো এক অঘটন। এক প্রশস্ত পাথরখণ্ডে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। ফলে তাঁর পাত্রের সমস্ত তেলই মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়। সেই পাথরের উপরই খালি পাত্রটি রেখে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। অগত্যা সেদিনের মতো গৃহে ফিরে যাবেন মনস্থির করেন। কথা মতো খালিপাত্র তুলতেই আশ্চর্য এক ঘটনা ঘটে যায়। দেখেন আগের মতোই, তেলে পরিপূর্ণ রয়েছে পাত্রটি! মহানন্দে তেল বিক্রি করে তিনি গৃহে ফিরলেন।
রাতে স্বামীকে বললেন, এই অত্যাশ্চর্য ঘটনা প্রবাহের কথা।
স্বামী-স্ত্রী মিলে শেষে এক সিদ্ধান্ত নিলেন ওই শিলাখণ্ডকে লোকচক্ষুর অন্তরালে বাড়িতে আনবেন। আর যাদুশিলার স্পর্শে পাত্র ভর্তি তেল বিক্রয় করে দরিদ্রতা মোচন করবেন। কথা মতো সেই শিলাখণ্ড মাটি থেকে সরাতেই ঘটল আরও একটা অত্যাশ্চর্য ঘটনা! তার তলদেশেই বিরাজ করছে কষ্টি পাথরের এক বিষ্ণু মূর্তি। মূর্তি ও শিলাখণ্ড নিজবাটিতে নিয়ে গেলেন রাজিম তেলিন পরিবার। কিন্তু নিম্ন সম্প্রদায়ভক্ত বলে মন্দির প্রতিষ্ঠায় দ্বিধান্বিত হলেন।
সেই সময় কালচুরি বংশের সামন্ত রাজা ছিলেন জগত্ পাল। তিনি এক নতুন বিষ্ণু মন্দির তৈরি করেন। বিষ্ণুমূর্তি নিয়ে তিনি বিড়ম্বনায় পড়েন। নানান বাধা আসে মূর্তি তৈরিতে। এই সময় জগত্ পাল স্বপ্নে এক বিষ্ণু মূর্তির দর্শন পান। ইতিমধ্যে রাজিম তেলিনের মূর্তিপ্রাপ্তি লোকমুখে রাষ্ট্র হয়েছে। একদিন স্বযং রাজা রাজিম তেলিনের বাটিতে উপস্থিত হন। আর আশ্চর্য হয়ে যান বিষ্ণুমূর্তি দেখে। স্বপ্নের সঙ্গে অবিকল মিলে যাচ্ছে। রাজা এই মূর্তিটি তাঁকে দান করার কথা বললে, রাজিম অরাজি হন। এই অমূল্য সম্পদ তিনি হারাতে চান না। পরে অবশ্য শর্তসাপেক্ষে রাজাকে মূর্তিটি দান করেন। শর্তানুয়াযী বিষ্ণুমূর্তির নাম হয় রাবিজলোচন। রাজার প্রতিশ্রুতি অনুযাযী সস্ত্রীক রাজিম তেলিনের প্রস্তর মূর্তি আর এক মন্দিরে প্রতিস্থাপিত হয়।
চলে এলাম সেই রাজিম তেলিন মন্দিরে। রাজিবলোচন মন্দিরের সামনে ও মহাদেব মন্দিরের পিছনে এই মন্দির। মন্দিরের অভ্যন্তরে এক পুরুষ ও এক নারীর মূর্তি। করজোড়ে ধ্যানরত। এই মূর্তিই সস্ত্রীক রাজিম তেলিনের বলে মনে করা হয়। মূর্তির দুই দিকে রয়েছে দুই পরিচারিকাও। মন্দির কমিটির অফিস ঘুরে চলে এলাম এবার জগন্নাথ মন্দিরে। মন্দিরটি আবার আর এক আয়তকার ঘেরা জায়গার মধ্যে। সে চত্বরে যাওয়ার দ্বার চতুর্পার্শ্বের দেওয়া ভাস্কর্য থেকে চোখ ফেরানো অসম্ভব। জগন্নাথ মন্দিরের চত্বরে আবার সাধু-সন্তদের আখড়া। ফালি জমিতে সবজি চাষ। ছড়িযে ছিটিয়ে গৃহস্থালির টুকিটাকি।
ওখান থেকে ঘুরে এবার রামচন্দ্র মন্দির। এই মন্দিরের মণ্ডপ অংশের স্তম্ভ ভাস্কর্যেও পৌরাণিক কাহিনীর চরিত্র চিত্রায়ণের নৈপুণ্যতা অনবদ্য। এছাড়া দেখে নিলাম রাজেশ্বর মন্দির, দানেশ্বর মন্দির, বরাহ মন্দির, নরসিংহ মন্দির, বদ্রিনাথ মন্দির, বামন মন্দির ইত্যাদি। জগত্ পাল দেবের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সকল মন্দির শ্রেণি তৈরি হয়েিল বলে মনে করা হয়। এর সত্যতা মেলে রাজিবলোচন মন্দিরের মহামণ্ডপের পাশে রাখা এক শিলাখণ্ডে। সেখানে উল্লেখ আছে রতনপুরের কলচুরি রাজার অধীনস্থ সামন্ত রাজা ছিলেন জগত্ পাল। প্রতিষ্ঠাকাল হিসাবে ১১৪৫ খ্রিষ্টাব্দের উল্লেখ আছে।
চলে এলাম সঙ্গম ঘাটে। ঘাট পথের ডানহাতি উঁচু ঢিপিতে ভতেশ্বরনাথ মন্দির। নাম লেখা পুরাতত্ত্ব বিভাগের বোর্ড ঝুলছে। তবে মন্দির সংস্কারের কাজে হাত পড়েনি আদৌ। ভাঙাচোরা মন্দির। দেয়াল ও স্তম্ভ জুড়ে সর্পের ছবি অাঁকা। তবে মন্দিরের আশপাশ খুঁজলে, মহাদেবের জ্যান্ত বাহনদের দুএকটা দেখা মেলা অস্বাভাবিক নয়। তার পাশেই পঞ্চেশ্বর মহাদেব মন্দির। সে মন্দিরের পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ঘটেছে অনেকদিন আগেই। ইট শৈলীর মন্দির এখন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। ঘাটপাড়ে অবশ্য অজস্র মন্দির। যেন মন্দিরমালা। আছে মহাদেব মন্দির,
দত্তাত্রেয়-মন্দির, মহামায়া মন্দির, লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির, শীতলা মন্দির, ভৈরব মন্দির, বিশ্বকর্মা মন্দির, গরিবনাথ মন্দির, ইত্যাদি। এর মধ্যে মহাদেব মন্দির অভ্যন্তরে শেষনাগের মূর্তিটি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।
নেমে গেলাম নদীবক্ষে, ত্রিবেণী সঙ্গমে। ফল্গুর মতো করুণ অবস্থা মহানদীরও। নদীবক্ষে শুধু বালি আর বালি। পৈরি, সেন্দুরের বিভাজনও চোখে ধরা পড়ে না। ক্ষীণ বিভাজিত কযেটি জলধারায় নদী অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। সেই জলধারাতে স্থানীয় মানুষজন কাপজ-চোপড় কাচছে। অতি কষ্টে করছে স্নান। এই বিস্তৃত বালু সমুদ্র ও হাঁটু জল পেরিযে দলে-দলে চলেছে ভক্তের দল। কুলেশ্বর মহাদেব মন্দিরে। যে মন্দির নদীর অপরপাড়া। আনুমানিক অষ্টম থেকে নবম শতকের। নির্মাতা সামন্ত রাজা জগত্পাল।
এই মন্দিরের আর এক নাম উত্পলেশ্বর মহাদেব মন্দির। রাম-সীতা ও লক্ষণ বনবাসকালে এই স্থানেই বিশ্রাম নিয়েিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। শোনা যায় সীতা নিজহাতে সঙ্গমের বালি দিয়ে শিবালিঙ্গ বানিয়েিলেন। এবং নিষ্ঠাসহ পুজোপাঠ করছিলেন। এই পৌরাণিক প্রেক্ষাপটেই এই মন্দির। ভাবা হয় শৃঙ্খলা ও মহত্বের প্রতীক এই মন্দির। লোমশ ঋষির আশ্রম ছিল এরই সন্নিকটে। এখানকার এক শিলালেখে তা উল্লেখ আছে।
গাড়ি ছুটছে। ফেলে আসা পথ ধরে রুদ্ধশ্বাসে। পিছনে পড়ে মহানদী। আর নদী তীরে সমৃদ্ধ নগরীর অতীত কথা। না-ছোড় মন কিন্তু পড়ে আছে অতীতে। সঙ্গম ঘাটে। অথবা পোড়া মন্দিরের প্রকোষ্ঠে। চুন-সুরকির গন্ধমাখা মন্দিরগাত্রের অবাক ছবিতে। হাতে গাছশুদ্ধ কাঁচা ছোলা। রাজিম বাজার থেকে কেনা। এক-একটা ছিঁড়ে খাচ্ছি। যেন ভাবনায় ভর করে আরও চাইছি পিছুতে। মাত্র দশ কিলোমিটার গাড়ি দৌড় শেষে গন্তব্য। বৈষ্ণবতীর্থ চম্পারণে। চম্পারন ঢুকতেই রাস্তার ধারে ধর্মশালা। তাতে গুজরাতি মানুষজনেরই আনা-গোনা। এখানে সাধক বল্লভাচার্যের জন্মস্থান। চোখে পড়া
উত্সাহ-উদ্দিপনার নজির মেলে শ্রীচৈতন্যদেবকে নিয়ে নবদ্বীপ ধামে। তার চেযে কম উন্মাদনার নজির মিলল না, বল্লভাচার্যকে নিয়ে এখানকার শিষ্যদের। পার্কিং জোনে গাড়ি রেখে এগিযে যাই।
চম্পারনের প্রাচীন নাম ছিল চম্পাকার। শোনা যায় এক তেলুগু ব্রাহ্মণ সস্ত্রীক দাক্ষিণাত্য থেকে যাত্রা শুরু করেন। পদব্রজে তাঁরা চলেছেন গুজরাত। পথ মধ্যে পরে চম্পাকার নগরী সেই সময় এই অঞ্চল ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ। ব্রাহ্মণ সেই সময় এক সমস্যার সম্মুখিন হন। অন্তঃস্বত্তা ব্রাহ্মণীর প্রসব বেদনা ওঠে। লোকালয় না মেলায় ব্রাহ্মণী এই জঙ্গল মাঝেই প্রসব করেন, এক পুত্র সন্তান। সেই পুত্রই বল্লভাচার্য। পরবর্তীতে জঙ্গল কেটে জনপদ গড়ে ওঠে, এই এলাকায়।
বল্লভাচার্য-পন্থীরা নির্মাণ করেন বিশাল এক মন্দির। নাম তার সুদামাপুরি।
পাযে পাযে চলে আসি সুদামাপুরিতে। সাধক বল্লভাচার্যের নামে উত্সীর্গীকৃত মন্দির প্রাঙ্গণে। দুদিকে একাধিক সুদৃশ্য কালারফুল অট্টালিকা। সবই ধর্মশালা, অথবা ওই সংক্রান্ত কার্যালয়। জুতো খুলে এগিযে যাই বাঁধানো মোজাযেের অলিন্দ ধরে। যেন দক্ষিণের রামেশ্বরম মন্দিরের প্রশস্ত অলিন্দপথ। অন্তরালে ঘেরাটোপে সুদামাধাম। মূল গর্ভগৃহের দ্বার রুদ্ধ। নিয়ম মেনে বিকাল পাঁচটার আগে খুলবে না। শুনলাম এর ভিতরে আছে বল্লভাচার্যের ব্যবহৃত খড়ম, বস্ত্র, উত্তরীয়, পুজোর সামগ্রী ইত্যাদি। এখন বেলা তিনটে। দুঘন্টা অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই ফেরার পথ ধরি।
শুনলাম বৈশাখ মাসে বল্লভাচার্যের জন্মতিথি উপলক্ষ্যে ফি-বছর বিশাল ভক্ত সমাবেশ হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেও হয় উত্সব। এই সময় মেলা বসে মন্দিরকে কেন্দ্র করে। পার্কিং জোনের কাছে দেখি আবার হনুমানের দৌরাত্ম। হোল ফ্যামিলি রাস্তায় নেমে ফলাহার করছে। আসলে ভক্তদের উত্সর্গীকৃত দানেই কপিকুলের উদরপূর্তি। গাড়ির চাকা গড়ায়। চম্পকেশ্বর মহাদেব মন্দির দেখে এবার রায়পুরের পথে ছুটব। আজকের রাতের ট্রেনেই যে কলকাতা ফিরতে হবে।
ছবিঃ লেখক
কীভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে ৮৩১ কিলোমিটার দূরে রায়পুর। ট্রেন পথে যেতে কম-বেশি ১২-১৩ ঘন্টার পথ। ট্রেন যাচ্ছে ১২৮৩৪ হাওড়া-আমেদাবাদ এক্সপ্রেস, ১২৮১০ হাওড়া-মুম্বই মেল, ১২১৩০ হাওড়া-পুণে আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেস, ১২১৫২ হাওড়া-লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেস, ইত্যাদি। আকাশ পথে গেলে নামতে হবে রায়পুর বিমানবন্দরে। রায়পুর থেকে গাড়ি নিয়ে রাজিম ও চম্পারন দিনে দিনে দেখে নেওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন : রেলস্টেশন বা বাস টার্মিনাসের কাছাকাছি বেশকিছু হোটেল মিলবে। এর মধ্যে থেকেই একটু দেখে-শুনে বেছে নিন একটি। রয়েছে ছত্তিশগড় টু্য়রিজম বোর্ড পরিচালিত হোটেল – ছত্তিশগড় (ফোন : ৪২২৪৩৩৩, ০৯৩০০৬-৫২৫৪৮) ২০০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকার মধ্যে। রায়পুরের এসটিডি কোড : ০৭৭১।
অতিরিক্ত : এই সম্বন্ধে আরও জানতে ও রুম বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ করুন : ছত্তিশগড় টুরিজম বোর্ড, ২৩০এ, এজেসি বোস রোড, রুম নম্বর-২৫, চিত্রকোট বিল্ডিং, কলকাতা-৭০০ ০২০।ফোন : (০৩৩) ৪০৬৬-২০৮১ / ৯৪৩৩৩-৭০০১১।ওয়েবসাইট : www.chhattisgarhtourism.net