কথায় বলে, বুদ্ধিমান লোকেদের জন্য সামান্য ইশারা-ই যথেষ্ট। তবে এরজন্য চাই একটা অনুভবি মন। কারণ, যে যত বেশি অনুভবি, সে তত বেশি বিচক্ষণ।

ভালোলাগা, মন দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে ওই ইঙ্গিত। তবে সমাজটা পুরুষশাসিত হলেও, ছেলেরাই যে সবসময় প্রথম নিজের ভালোলাগা ব্যক্ত করে মেয়েদের, এমনটা নয়। সাহিত্য এবং সিনেমায় এ ব্যাপারে ছেলেদের ‘ওভার স্মার্ট করে তুলে ধরা হলেও, বাস্তব কিন্তু অন্য বার্তা দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, মেয়েরাই প্রথম কোনও পুরুষকে ভালোলাগার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মজার বিষয়, যে সব পুরুষ মেয়েদের ওই বিশেষ ইশারা-ইঙ্গিত বুঝে এগিয়ে গেছে, তারাই লাভবান হয়েছে।

এখন বেশিরভাগ বিজ্ঞানী-ই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ফ্লার্টিং-এ পুরুষদের তুলনায় মহিলারা-ই এগিয়ে। এক বায়ওলজিস্টও তাঁর রিসার্চ-এ প্রমাণ পেয়েছেন যে, মহিলারাই বেশি ফ্লার্টিং করেন।

হেলেন ফিশার নামের এক সায়েন্টিস্ট তাঁর নতুন বই ‘অ্যানাটমি লভ’ -এ তুলে ধরেছেন যে, কোনও পুরুষের প্রতি আগ্রহী কিনা, তা ইশারাতেই বুঝিয়ে দেন মহিলারা। আর এই ইশারার বিষয়টি বোঝা যাবে মহিলার হাসি এবং চোখ দেখে। এই বিষয়ে রহস্য উন্মোচনের জন্য ওয়াশিংটন-এর এক অ্যানথ্রোপলজিস্ট ডেভিড গিভেন্স এবং সেক্সোলজিস্ট টিমোথি পর্পর, বিভিন্ন পানশালা এবং ক্লাব-এ ঘুরে বহুদিন নজর-সন্ধান রেখেছিলেন। তাঁরাও দেখেছেন, ফ্লার্টিং-এ এগিয়ে মহিলারাই।

এই পুরো সমীক্ষার যে ফল পাওয়া গেছে, তা খুবই চমকপ্রদ। দেখা গেছে, প্রায় সব ক্ষেত্রে মহিলারাই এগিয়ে ফ্লার্টিং-এ। হেলেন ফিশার পঁচিশ হাজার সিঙ্গল ছেলেমেয়ের উপর স্টাডি করে জানিয়েছেন, সব বয়সের মহিলারাই এই ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছেন, শুধু ছেলেরা হাত বাড়ানোর অপেক্ষায়।

একট সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় পঞ্চাশ হাজার পুরুষ জানিয়েছেন, ৯৫ শতাংশ মহিলাই প্রথমে বাইরে দেখা করার প্রস্তাব দেন। তবে একথা ঠিক যে, সম্পর্ক গড়তে গেলে যে-ই আগে আসুক, নারী-পুরুষ উভয়কেই সক্রিয় থাকতে হবে।

ফ্লার্টিং-এর সংকেত

যে-সমস্ত ইশারা-ইঙ্গিত মহিলারা ব্যবহার করেন ফ্লার্টিং-এর ক্ষেত্রে, তা পুরুষদের জেনে রাখা জরুরি। কারণ, ওই নীরব মনের কথা-ই সূচনা করতে পারে একটি সম্পর্কের।

কোনও মহিলা যখন কথাবার্তার অজুহাতে পুরুষের কাছে আসার চেষ্টা করেন, তখন বুঝতে হবে, ওই পুরুষকে পছন্দ করেন ওই মহিলা

কোনও পুরুষকে পছন্দ হলেই, তার স্পর্শ চান মহিলারা। যদি দেখা যায় কারণে অকারণে মহিলাটি স্পর্শ করছেন পুরুষটিকে, তাহলে বুঝতে হবে মহিলাটি সম্পর্ক গড়তে চাইছেন পুরুষটির সঙ্গে

কোনও পুরুষের সামনে কোনও মহিলা যদি হাতের আঙুল দিয়ে বারবার মাথার চুল কানের পিছনে নিয়ে যান, তাহলে বুঝতে হবে, ওই মহিলা আকর্ষণ করতে চাইছেন পুরুষটিকে

যদি এক হাতের আঙুল অন্য হাতের তালুর মধ্যে রেখে ঘষতে থাকেন কোনও মহিলা, তাহলে বুঝে নিতে হবে, তিনি আহ্বান করছেন পুরষটিকে

নানা কাজের মধ্যে থেকেও যদি কোনও মহিলা বারবার আড় চোখে দেখতে থাকেন পুরুষটিকে,তাহলে বুঝতে হবে, পুরুষটির প্রতি অনুরক্ত ওই নারী

যদি চোখের চাহনির মধ্যে নরম, চিকচিকে ভাব রেখে মহিলাটি একদৃষ্টে পুরুষটির দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাহলে পুরুষটি নির্দ্বিধায় বন্ধুত্বের হাত বাড়াতেই পারেন

প্রথম দর্শনে যদি নির্ভেজাল হাসি থাকে ঠোঁটে এবং চোখেও সেই হাসির প্রতিফলন ঘটে মহিলাটির, তাহলে বুঝতে হবে তিনি ফ্লার্ট করছেন

পুরুষটির মুখোমুখি হওয়ার পর যদি মহিলাটি কিছুটা চঞ্চল হয়ে পড়েন, কী করবেন ভেবে না পান, অর্থাৎ কিছুটা আনইজি ফিল করেন, তাহলে বুঝতে হবে, তিনি পুরুষটির প্রেমে পড়েছেন

সাধারণ কথাবার্তার মধ্যেও যদি পুরুষটির সম্পর্কে আরও বেশি কিছু জানতে আগ্রহী হন মহিলাটি, তাহলে পুরুষটি সম্পর্ক স্থাপনে এগোতে পারেন

মহিলার শরীরী ভাষায় যদি কামভাব থাকে, তাহলে তা বুঝে নিয়েও বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে পারেন পুরুষবন্ধুটি

মহিলাদের ভাবনা

সমাজের বিভিন্ন স্তরের মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের ভাবনা এবং ইচ্ছে-অনিচ্ছের ব্যাপারে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এই তথ্য ফ্লার্টিং-এর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তবে, মনে রাখবেন, ফ্লার্টিং করা মানেই কিন্তু কোনও দীর্ঘ মেয়াদি সম্পর্ক গড়া নয়।

অনেক মহিলার মতে, ফ্লার্টিং একটা আর্ট। শুধু খুশি নয়, মহানন্দে বাঁচতে সাহায্য করে ফ্লার্টিং। তবে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ফ্লার্টিং-এর ধরন আলাদা

ফ্লার্টিং মানেই মনটাকে রোমান্টিক করে রাখা যায় এবং সবসময় শরীরকে সতেজ রাখা যায় বলে মনে করেন মহিলারা

পুরুষেরা যদি সরাসরি মেয়েদের মুখের দিকে তাকায়, রূপ-গুণের প্রশংসা করে, তাহলে মেয়েরা খুশি হয় এবং ফ্লার্টিং শুরু করে

ফ্লার্টিং-এর ক্ষেত্রে মেয়েরা চায়, উলটো দিকের পুরুষটির মধ্যেও যেন ফিলগুড ফ্যাক্টর কাজ করে

সেই পুরুষের সঙ্গে ফ্লার্টিং করতে চান মেয়েরা, যাকে দেখে বোঝেন যে, এর সঙ্গে সম্পর্ক গড়লে তিনি নিরাপদ

কোনও পুরুষকে ‘কেয়ারিং’ দেখলে তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে বেশি আগ্রহী হন মেয়েরা

ওপেন মাইন্ডেড পুরুষদেরই বেশি পছন্দ করেন মহিলারা

যে-সব পুরুষ মহিলাদের আহ্বানের ইশারা বুঝে সাড়া দেন বিচক্ষণতার সঙ্গে, তার সঙ্গেই সম্পর্ক মজবুত করতে চান মহিলারা

সরল এবং স্বচ্ছ মনের মানুষই বেশি পছন্দ করেন মহিলারা

ফ্লার্টিং-এর নেতিবাচক দিক

সবকিছুরই ভালোমন্দ দুটি দিক-ই আছে। ফ্লার্টিং-এর ক্ষেত্রেও তাই। ভেবেচিন্তে না এগোলে কুফল পেতে পারেন। অতএব, সতর্কতা জরুরি।

প্রাইভেসি বজায় রেখে ফ্লার্টিং করা উচিত মহিলাদের। কারণ, মেয়েরা ফ্লার্টিং-এ এগিয়ে আসছে, এই বিষয়টা আমাদের সমাজ আজও সহজ ভাবে নিতে পারে না। তাই, পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে তবেই এগোনো উচিত

কতটা এগোবেন, কীভাবে এগোবেন, প্রত্যাখ্যাত হলে নিজেকে সামলাবেন কীভাবে, এসব ভেবে উপায় বের করে তবেই ফ্লার্টিং করা উচিত

কিছু পুরুষ আছেন, যারা মেয়েদের শুধু ‘ভোগ্যপণ্য’  ভাবেন, তাদের থেকে সাবধান থাকা উচিত মহিলাদের। যদি এই কুরুচির প্রতিফলন ঘটে প্রথমে, তাহলে আর এগোবেন না

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...