একাকী একজন মায়ের পক্ষে সঠিক ভাবে সন্তানের ভরণ-পোষণের জন্য নিজেকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখা এবং নিজের সামাজিক সীমা বাড়ানো খুবই জরুরি। একা সবসময় থাকার বদলে যত বেশি সামাজিক স্তরে মেলামেশা বাড়াবেন, ততই মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন এবং সন্তানকেও সুন্দর সুস্থ পরিবেশে বড়ো হওয়ার সুযোগ দিতে পারবেন।
মনে রাখবেন, সিংগল মাদার হওয়ার সিদ্ধান্তটা আপনার নিজস্ব। সুতরাং এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কারও কিছু বলার নেই। নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন যাতে কেউ আপনার পরিস্থিতির সুযোগ না নিতে পারে। তা সত্ত্বেও কোনও সমস্যায় পড়লে আইনি ব্যবস্থা নিন। আপনি সিংগল মাদার হলেও অসহায় নন এটা ভেবে জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নিন। সামাজিক মেলামেশা বজায় রাখুন এবং সন্তানের সঙ্গে একে অপরের নৈকট্য এনজয় করুন।
সোশ্যাল লিমিট বা সামাজিক সীমা কতটা হওয়া বাঞ্ছনীয়?
- সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সামাজিক স্তরে ব্যক্তিকে বহু মানুষের সাথে একসঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করে। একে অপরের সুখ-দুঃখে শামিল হোন। প্রযোজনে উপদেশ বা সাহায্য নিন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর মাধ্যমে বাড়ি বসেই সকলের সান্নিধ্য উপভোগ করার সুযোগ পাবেন
- পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে টাচে না থাকলেও চেষ্টা করুন তাদের কনট্যাক্ট নাম্বার জোগাড় করতে। পরিচিতদের সঙ্গে ফোনে হলেও কিছুটা সময় কথা বলুন। এতে আশেপাশের খবর যেমন আপনার কাছে থাকবে, তেমনি বিপদে আপনি তাদেরও সাহায্য পাবেন। নিজের ইমোশনাল আউটলেটের জন্য বন্ধু, প্রতিবেশী সকলের সঙ্গে কথা বলা দরকার। নতুন বন্ধু বানাবারও চেষ্টা করতে পারেন
- নিজের পরিবারের গণ্ডি ছাড়িযে অপরিচিতদের সঙ্গে মিশতে দ্বিধা করবেন না। যেমন পরিবারে বোন, জা, ননদ এরা ছাড়াও এদের পরিচিত বন্ধু-বান্ধব বা এঁদের পরিবারের অন্য লোকেদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করুন। প্রযোজনে এঁদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান
- অফিসের কাজকর্ম-কে সোশ্যাল লাইফ থেকে আলাদা করে রাখবেন না। উইক এন্ড-এ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো-টাও এক ধরনের সামাজিকতা। অফিসেও সকলের সঙ্গে মেলামেশা করুন, হাসিমুখে মন খুলে কথা বলুন। আপনার ব্যবহার এমন হওয়া উচিত যাতে অফিসে একদিন আপনি না আসতে পারলে সবাই যেন আপনাকে মিস করে
- নিজের পার্সোনালিটি এমন রাখুন যাতে সকলে আপনার সঙ্গে মিশতে চায়। কাজের সময় কোনও ফাঁকি নয় কিন্তু অবসর সমযে কথা বলতে দ্বিধা করবেন না
- সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে যোগদান করুন, নয়তো আন-সোশ্যাল হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করবেন। অফিসের যে-কোনও অনুষ্ঠানে নিজে থেকে এগিযে এসে পার্টিসিপেট করুন এবং অনুষ্ঠান পুরোপুরি এনজয় করুন
- সকলের কাছেই এখন সমযের অভাব। কিন্তু যারা বন্ধু, আত্মীয়স্বজনদের জন্য সময় দিতে চায় না, একটা সময় তারা নিজেরাই একাকিত্বের শিকার হযে পড়ে। সুতরাং সকলের সঙ্গে কথা বলুন, পরিচিতদের খবরাখবর রাখুন। এতে তাদেরও মনে হবে, আপনার কাছে তাদের গুরুত্ব আছে
- সামাজিক স্তরে সক্রিয়তা বজায় রাখলে মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে অসুবিধা হয় না। নানা পরীক্ষায় এটা বারবার প্রমাণিত হযেছে যে, সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক আপনাকে ভালো স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ আযু দিতে সক্ষম। সকলের সাথে মেলামেশা করলে নিজের ও অপরের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিলে, মানসিক শান্তি পাওয়া যায়
- আমাদের ফাস্ট লাইফ মেইনটেন করতে গিযে আমরা সামাজিক সীমা সংকুচিত করে ফেলছি। আপনজনের সঙ্গে কথা বলার সময় পাই না। দুঃখ, সমস্যা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি না। ফলে অবসাদ, ব্লাডপ্রেশার, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এই সমস্যাগুলোর শিকার হযে পড়ি।
কীভাবে বাড়াবেন সোশ্যাল লিমিট
- জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিযোগ করা বন্ধ করুন এতে সোশ্যাল ইন্ট্যারঅ্যাকশন বাড়বে। বন্ধু দুঃখ শেযার করতে সাহায্য করে ঠিকই কিন্তু সবসময় সব অবস্থাতেই যদি অভিযোগ তুলে কাঁদতে শুরু করেন, তাহলে নিতান্ত চেনা-পরিচিতরাও আপনাকে এড়িযে যেতে শুরু করবে
- কেউ আপনাকে নিমন্ত্রণ করলে সেটা রক্ষা করার চেষ্টা করুন। মুখের উপর না বলবেন না বা না-যাওয়ার বাহানা বানাবেন না। এটাও মনের মধ্যে আনবেন না যে, নিমন্ত্রণকারী ব্যক্তিটি আপনার অপছন্দের সুতরাং ওখানে না গেলেও চলবে। একবার গিযে দেখুন, পরিবেশ দেখে হয়তো বারবার যাওয়ার ইচ্ছে হবে। অনেক পরিচিতি বাড়বে। এছাড়াও নিমন্ত্রণ বারবার অস্বীকার করতে থাকলে অন্যদের মনেও আপনার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে
- আপনার যদি কোনও হবি থাকে বা কোনও বিশেষ জিনিসের প্রতি ভালোবাসা থাকে তাহলে আপনার এলাকার আশেপাশে এ ধরনের কোনও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন, যেখানে আপনার মতো একই রুচির মানুষদের সান্নিধ্য আপনি পাবেন। স্পোর্টস ক্লাব, বুক ক্লাব, লাইব্রেরি, হাইকিং গ্রুপের মেম্বার হতে পারেন। এগুলো কোনওটাই যদি ভালো না লাগে তাহলে নতুন হবি খুঁজুন। কিন্তু মনে রাখবেন গ্রুপের মধ্যে থেকেই যেন সেই হবি পূরণ করতে পারেন
- যেসব সংস্থা সমাজসেবার কাজে ব্রতী, তেমন কোনও সংস্থাতে যোগ দিতে পারেন। সপ্তাহে একটা দিন আপনার মহামূল্য সময় সেখানে ব্যয় করতে পারেন। গরিব বাচ্চাদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়াবার দায়িত্ব নিজের উপর তুলে নিন, এতে মনে শান্তি বোধ করবেন। প্রযোজনে অপরকে সাহায্য করুন। এতে লোক আপনাকে জানবে এবং তারাও আপনাকে সাহায্য করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।
সন্তানের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গী
সিংগল মাদার হিসেবে স্বভাবতই একক ভাবে আপনার দাযিত্ব অনেকটা বেড়ে যায়। সন্তানকে তার বাবার অভাববোধ অনুভব করতে দেওয়া চলে না। তাই কিছু জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখুন।
সন্তানকে অবজ্ঞা করবেন না : সোশ্যাল সার্কল বাড়ান কিন্তু একটা লিমিট অবশ্যই রাখুন। বাচ্চাকে বাড়িতে একা, অভুক্ত রেখে সামাজিক মেলামেশায় ব্যস্ত হযে পড়াটা বাঞ্ছনীয় নয়। বাচ্চার পড়াশোনা থেকে শুরু করে তাকে আরামে রাখা, তার প্রযোজন মেটানো আপনার দাযিত্ব। সুতরাং বাড়ি সামলে তবে অন্যকিছুতে সময় দিন।
সমস্যায় সঙ্গে থাকুন : সময় কাটাবার জন্য শুধুমাত্র কোনও অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে জুড়ে থাকাটা সঠিক পন্থা নয়। সকলের সুখ-দুঃখও শেযার করার চেষ্টা করুন। কেউ সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য করতে পিছপা হবেন না। একই ভাবে নিজের সন্তানের কোনও সমস্যা হলে অন্যের সাহায্য নিন।
অপরকে অনুসরণ করবেন না : আপনার আশেপাশের অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে কিছু করার প্রচেষ্টা করবেন না। তাদের মতো ব্র্যান্ডেড পোশাক কেন আপনার কাছে নেই বা আপনার স্ট্যাটাস কেন তাদের মতো নয়, এরকম অযথা চিন্তায় নিজেকে জড়িযে ফেলবেন না। নিজের সীমার মধ্যে থাকবার চেষ্টা করবেন। নিজের সন্তানকেও সেই শিক্ষাই দেবেন।
কু-অভ্যাস ত্যাগ করুন : হাই স্ট্যাটাস মহিলাদের অনুকরণ করতে গিযে ধূমপান, মদ্যপানে আসক্ত হযে পড়বেন না। আপনি যতই এসবের থেকে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করুন না কেন, জানতেও পারবেন না, এই ধরনের নেশা কখন আপনাকে গ্রাস করতে উদ্যত হচ্ছে। সুতরাং এই ধরনের সঙ্গ পরিত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন আপনার দেখানো পথই, আপনার সন্তান অনুসরণ করবে।