গার্হস্থ্য হিংসার জেরে ভারতে বাড়ছে স্বামীকে খুন করার মতো ঘটনা। এই ধরনের খবর প্রকাশিত হলে, প্রাথমিক ভাবে একটু আশ্চর্য লাগে ঠিকই কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিবাদের জেরে এখন এমন ঘটনাই মুহূর্মুহূ ঘটছে। সমীক্ষা বলছে লকডাউনের সময়টাতে এবং করোনা পরবর্তী এই অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কয়েক গুনে বেড়ে গিয়েছে। একদিকে এটাও যেমন সত্যি, তেমনি আশঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি হল, মেয়েরা নির্যাতন সহ্য করার বদলে এখন অনেক বেশি খুনের মতো মারাত্মক অপরাধ  করে ফেলছে এর জেরে।

সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ, হায়দরাবাদের ডক্টর লেফটেন্যান্ট জেনারেল-এর মৃত্যুও এমনই একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। দাম্পত্য বিবাদের জেরে রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে তাঁকে হত্যা করেন তাঁর স্ত্রী। এই খুন কিন্তু সহজসাধ্য ছিল না। রান্নাঘরের ছুরির মতো একটি হাতিয়ার দিয়ে এমন ঘটনা ঘটাতে যে বিপুল শক্তি লাগে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। মৃত্যু নিশ্চিত করতে নিশচয়ই তাকে একাধিক বার ছুরিকাঘাত করতে স্বামীর শরীরে। পরে পুলিশের কাছে খুনের খবরটি পৌঁছে দেন তাঁদের ২৩ বছরের মেয়ে।

স্ত্রীয়ের অভিযোগ ছিল স্বামী তাঁর উপর দীর্ঘদিন ধরে অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে গেছেন। শেষে ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এই নারকীয় ঘটনাটি ঘটে যায়।সাধারণত পুরুষরা মহিলাদের গায়ে হাত তোলেন না, এই ভেবে যে এর ফলে বাচ্চাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রাকৃতিক ভাবেই মায়েরা বাচ্চাদের খেয়াল অনেক বেশি রাখেন বাবাদের তুলনায়। মা সন্তান কে ছেড়ে থাকতে পারবেন না, এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই, বহু নারীকে যুগের পর যুগ নির্যাতন করে এসেছেন পুরুষরা।

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়টি হল, নারীর উপর বাইরে হওয়া অত্যাচারের তুলনায়, গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনার কথা লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় না বলেই, ঘটনাগুলো প্রকাশ্যেই আসে না। অচেনা পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা যত না ঘটে, দাম্পত্যে তার চেয়ে বহুগুন বেশি ধর্ষনের শিকার হয় মেয়েরা। আর সন্তানের মুখ চেয়ে তারা সরব হতেও পারে না।প্রতিবাদে লাভও হয় না, কারণ একদিকে যেমন কন্যার বিবাহ দিয়ে পিতা তাঁর দায় এড়িয়েছেন, অন্যদিকে মেয়েটির মা একইরকম ভাবে বিনা প্রতিবাদে যুগের পর যুগ জুলুম সইতে বাধ্য থেকেছেন।

স্বামি হত্যার ঘটনায় সমাজ মেয়েটির পাশে দাঁড়াবে না। জেলে যাওয়ার নিয়তিকে যেমন স্বীকার করে নিতে দবে মেয়েটিকে। চরম লাঞ্ছনা আর অপমানের জীবন বহন করতে হবে তাঁর সন্তানকেও, যে- সন্তান কখনোই মেনে নিতে পারবে না এই হত্যার যৌক্তিকতা, সে যতই কেন না সে মায়ের উপর হওয়া অত্যাচারের সাক্ষী হোক। এরপরও মেয়েটির হেনস্থার শেষ নেই কারণ সে কোর্ট- এ তার পক্ষ নেওয়ার মতো ভাল উকিল পাবে না।তবু ভালো দিক একটিই, প্রতিবাদের একটি দৃষ্টান্ত অন্তত তৈরি হবে এই রকম ঘটনায়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...