করোনা-র প্রভাবে সারা পৃথিবীর মানুষের জীবনের সংজ্ঞাটাই বদলে গেছে। কত মানুষকে আমরা হারিয়েছি,আবার করোনামুক্ত হয়েও অনেকে এখনও নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। আবার সংক্রমণের ভয়ে এখনও আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। কর্মহীনতা আর আর্থিক মন্দা কুরে কুরে খাচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। স্বাভাবিক স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে এখনও আমরা বঞ্চিত। কিন্তু করোনা মোকাবিলার উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো না থাকার সত্ত্বেও, যাঁরা নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষকে বাঁচানোর প্রয়াস জারি রেখেছেন, সেইসব যোদ্ধাদের মধ্যে নাসরিন নাজমা অন্যতম। তাঁকে কুর্নিশ জানাতেই হচ্ছে। কারণ, নাসরিন নাজমা-ও এক কোভিড-যোদ্ধা। পেশায় তিনি নার্স। অবশ্য শুধু এইটুকুতে তাঁকে আলাদা ভাবে তুলে ধরা যাবে না। এই অতিমারীর সংকটপূর্ণ আবহে, নানা ভাবে এমন কর্তব্য পালনে হয়তো এখনও অনেকেই যুক্ত আছেন। কিন্তু নাসরিন নাজমা কিছুটা ব্যতিক্রমী। কারণ, কর্তব্য পালনকালীন তাঁর সংবেদনশীল মনের অনুভব,অনুযোগ এসব তিনি আমাদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন ‘কথা হারানোর জার্নাল’ বইটির মাধ্যমে। রাজারহাট কোয়ারেন্টিন সেন্টার-এ কর্মরত থাকাকালীন যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন, তা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন এই বইটিতে। আরও বিশদে বললে— প্রিয়জনকে ছেড়ে দিনরাত রোগীর সেবা করতে গিয়ে তিনি কী মানসিক পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছিলেন, আবার রুগিদের শারীরিক-মানসিক পরিস্থিতি কেমন ছিল, সেইসব মর্মস্পর্শী মুহূর্ত তাঁর লেখার প্রতিটি শব্দে বর্ণিত হয়েছে। মাঝেমধ্যে তিনি তুলে ধরেছেন সমাজ,কবিতা,গান,এমনকি রবীন্দ্রনাথকেও। অনেক মনছোঁয়া স্মৃতি আজও তাঁকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বইটি সম্প্রতি প্রকাশিত হল কলকাতা প্রেস ক্লাব-এ। লেখিকা ছাড়াও,বইটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন কবি ও শিল্পকলা বিশেষজ্ঞ দেবাশীষ চন্দ, কবি ও বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের প্রধান প্রেস সচিব মোফাক খারুল ইকবাল প্রমুখ।আর এই বইটির মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে নাসরিন নাজমা জানিয়েছেন,তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা-র বালুটুঙ্গি গ্রামে। পেশার বাইরে ভালোবাসেন গান গাইতে,লিখতে এবং আবৃত্তি করতে। বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন সেইসব সহযোদ্ধাদের,যাঁরা সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে তাঁর-ই মতো মানবিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন প্রতি মুহূর্তে। নাসরিন নাজমা-র লেখা, ‘কথা হারানোর জার্নাল’ শীর্ষক এই বইটির প্রকাশক ‘বইতরণী ট্রাস্ট’।