বন্যার বিয়ে হয়েছে চারমাস আগে। সে ব্যাংক কর্মী। আগে সে যৌথ পরিবারে ছিল। এই সুবাদে বন্যার কাজের চাপ ছিল কম। কিন্তু বিয়ের দু’মাস পর ট্রান্সফার হয়ে অন্য শহরে চলে যেতে হয় বন্যার স্বামীকে। নিরুপায় হয়ে বন্যাও বদলি নিয়ে চলে যায় স্বামীর সঙ্গে।
এখন দু’জনে (স্বামী-স্ত্রী) একসঙ্গে থাকলেও, পরিবারের অন্যদের থেকে অনেক দূরে। তাই বাড়ির কাজে সাহায্য করার কেউ নেই। বন্যার একার উপর এখন দ্বিগুণ চাপ। অফিস করার পরও বাড়ির সমস্ত কাজ করতে হচ্ছে। অভ্যাস নেই, তাই বিপর্যস্ত অবস্থা। টাইম ম্যানেজমেন্ট-ও রপ্ত নেই, অতএব করুণ পরিণতির শিকার।
একদিন অফিসেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে বন্যা। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। চিকিৎসক জানান, অতিরিক্ত কাজের চাপেই এই অবস্থা। অতএব, বিশ্রাম চাই।
বাড়িতে এক সপ্তাহ বিশ্রাম নিল বন্যা। এই সময় অনেক আত্মীয়স্বজন এসে হইহুল্লোড় করে গেলেন। একদিন বন্যার এক বন্ধু এল। ওই বন্ধু এক মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত। সে জানাল, ‘ওয়ার্কিং উয়োম্যানদের টাইম ম্যানেজমেন্ট জরুরি। যদি সুস্থ থাকতে চাও, তাহলে অফিস এবং বাড়ির কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখো।’
শুধু বন্যা নয়, আসলে কর্মরতা মাত্রেই, প্রায় দ্বিগুন কাজের দায়িত্ব নিতে হয়। আর যদি অফিস এবং বাড়ির কাজ সিস্টেম্যাটিক না করা হয়, তাহলে শরীরের উপর চাপ পড়বে এবং অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে।
আসলে অনেকেই আছেন যারা সবাইকে খুশি করতে চান। তাই যে কাজ না করলেও চলে, যে কাজ অন্যরা করে নিতে পারে, তাও নিজে করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। জীবনে একঘেয়েমি চলে আসে। মন খারাপ হয়। স্বামী-সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিতে পারেন না। রক্ষা করতে পারেন না সামাজিকতা। অফিসে গিয়ে বাড়ির চিন্তা আর বাড়িতে ফিরে অফিসের চিন্তা করেন। ‘সুপার উয়োম্যান’ হতে গিয়ে সবকিছু এলোমেলো করে ফেলেন। এভাবেই সুস্থ-শান্ত জীবনে ‘অতি ব্যস্ততা’ ঢুকে গিয়ে বাঁচার আনন্দটাই চলে যায়। তাই, সবকিছু ম্যানেজ করার কৌশল রপ্ত করা চাই।
ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল
সময়টা ‘বিউটি উইদ ব্রেন’-এর। অতএব, সৌন্দর্যের পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তারও প্রয়োজন। তাই সবসময় পজিটিভ থিঙ্কিং রাখতে হবে। নেগেটিভ থিঙ্কিং মনে যেন জায়গা না পায়। এমন ভাবেই কাজের তালিকা তৈরি করুন, যা আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনকে আরও মসৃণ করবে।
প্রথমে নিজের ব্যক্তিত্বের বিষয়ে সচেতন হোন। ঘাটতিগুলো দূর করুন। কারণ, নেগেটিভ পয়েন্টস ব্যক্তিত্ব বিকাশের অন্যতম অন্তরায় হতে পারে। তাই, আত্মবিশ্লেষণ জরুরি। বন্ধু এবং শুভাকাঙক্ষীদের পরামর্শও নেওয়া আবশ্যক। সেইসঙ্গে প্রয়োজন টাইম ম্যানেজমেন্ট-এর। অফিসে কিংবা বাড়িতে অহেতুক সময় নষ্ট না করে, ভালো কাজে সময় ব্যয় করুন। কোন কাজ কখন করতে হবে, কতটা সময় লাগবে তা মাথায় ছকে নিন অথবা কাজের তালিকা তৈরি করে রাখুন। বাড়ির ছোটো-বড়ো সব সদস্যের থেকে কাজের সাহায্য নিন যতটা সম্ভব। যদি কোনও সমস্যা কিংবা মানসিক চাপে থাকেন, তাহলে বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
অফিসে যদি আপনাকে নিয়ে অকারণে নিন্দুকরা কু-কথা বলে কিংবা আপনার নেগেটিভ সমালোচনা করে, তাহলে বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নেবেন না। বরং নিজের কাজ মনযোগ দিয়ে করুন এবং সততা, আদর্শ বজায় রাখুন– দেখবেন নিন্দুকদের মুখ একদিন বন্ধ হবেই। তবে অফিসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বোঝা কাঁধে তুলে নেবেন না।
উইক এন্ড-এ পরিবারের জন্য নিজেকে ফ্রি রাখুন। সবাইকে নিয়ে হইহুল্লোড় করুন, আনন্দে থাকুন। ছুটির দিনে মোবাইল ফোন থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন নিজেকে। মনে রাখবেন, ছুটির দিনগুলিতে নিজেকে যতটা চাপমুক্ত রাখবেন, আনন্দে থাকবেন, কাজের দিনগুলিতে ততটাই ফ্রেশ থাকবেন এবং কাজে উৎসাহ বাড়বে।
অফিসে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন। এর সুফল পাবেন। সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে সহকর্মীরাও ভালো ব্যবহার করবে। আর অফিস-এর সমস্যা অফিসেই মেটানোর চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব। কারণ অফিসের সমস্যা বাড়ি বয়ে নিয়ে গেলে আপনার ব্যক্তিজীবনের সুখশান্তি বিঘ্নিত হতে পারে।
টিভি কিংবা মোবাইল ফোন-এ অপ্রয়োজনে বেশি সময় নষ্ট না করে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়তি সময় কাটান। এতে সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় হবে এবং আপনিও খুশি থাকবেন।
বাড়ির সমস্ত কাজ করতে গিয়ে যদি ক্লান্তি কিংবা বিরক্তি আসে, তাহলে অন্য সদস্যদের সাহায্য চান অথবা কাজ করার লোক ঠিক করুন।নিজের জন্য কিছুটা সময় বাঁচিয়ে রাখুন। ওই একান্ত সময়টুকুতে নিজের মতো করে রিল্যাক্স করুন। রূপচর্চা, বইপড়া, গান শোনা, সমাজসেবা প্রভৃতি যা আপনার মন চায়, তাই করুন।