পণ্ডিত এ কানন আর গুরুমা মালবিকা কাননের সুযোগ্যা ছাত্রী চন্দ্রা চক্রবর্তী। বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী চন্দ্রার সঙ্গীতশিক্ষা কলকাতার সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমিতে। গুরুর জন্ম-শতবার্ষিকী উদযাপনের আয়োজনেও তাই কোনো ত্রুটি ছিল না।
চন্দ্রার ডাকে সাড়া দিয়ে হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতের মহা তারকারা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের গুরু পরম্পরার অভিজ্ঞতার কথা হাজার হাজার দর্শকের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানের গুণগত মান,পরিবেশনা ও পরিচালনার গুণে এতটাই মনোগ্রাহী হয়েছিল যে, এক একটা অনুষ্ঠানে দর্শক-সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। সেইসঙ্গে, ‘কলাকার আর্টস—ইউকে’র নাম পৌঁছে গেছে পৃথিবীর কোণায়-কোণায় সমস্ত সঙ্গীতপিপাসু মানুষের কাছে। পণ্ডিত এ কাননের জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল উস্তাদ রাশিদ খানের গান আর এ কানন বিজড়িত স্মৃতিকথা দিয়ে।
৫০ পর্বের পর গুরু-শিষ্য পরম্পরা সিরিজের অনুষ্ঠানের শেষ হল গত ২৭শে ডিসেম্বর গুরুমা বিদুষী মালবিকা কাননের ৯০ তম জন্মদিবস উদযাপন দিয়ে। এই অনুষ্ঠানে ছিলেন পৃথিবী বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী বিদুষী শাশ্বতী সেন ও তার ছাত্র-ছাত্রীরা। গত বছর এপ্রিল থেকে শুরু করে একটানা এতদিন ধরে তারকা সমাবেশে এমন উচ্চমার্গের অনলাইন অনুষ্ঠান সত্যিই নজর কেড়েছিল।
এই প্রসঙ্গে চন্দ্রা জানালেন, ‘প্রতিবার অনুষ্ঠান শুরু করার পর দেখতে-দেখতে কখন যে এক ঘন্টা,দু’ ঘন্টা কিংবা তিন ঘন্টা পার হয়ে গেছে, আমরা কেউই টের পাইনি। এ যেন শুধু আমার বা কলাকারের অনুষ্ঠান নয়, এই অনুষ্ঠান গুলো হয়ে উঠেছে সমস্ত দর্শকের নিজের। তাই দর্শকরা নিজেরাই আরও কত জায়গায় তাঁদের নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়াতে এই অনুষ্ঠানের কথা অন্যদের জানিয়েছেন। আজ তাই সারা পৃথিবী জুড়ে ‘কলাকার আর্টস—ইউকে’ এক বিশাল পরিবার! গুরুজী তো এমনটাই চাইতেন, সবাই এক সঙ্গে থেকে ভালো কাজ করে যাবে, শুদ্ধ সংগীতের প্রচার করে যাবে।’
কোভিডের জন্য লন্ডনে যে লক ডাউন শুরু হয়েছিল গত বছর মার্চে, নতুন বছরের শুরুতেও সেই বদ্ধ অবস্থা থেকে বেরোনো যায়নি। কলকাতায় এখন দর্শক সমাবেশে সঙ্গীতানুষ্ঠান শুরু হলেও, লন্ডনে তা কত দিনে সম্ভব হবে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এই অবস্থায়, চন্দ্রা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘যত দিন পর্যন্ত সবকিছু পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় না পৌঁছাচ্ছে, তত দিন অন্তত মাসে দু’-বার কলাকারের ফেসবুক অনলাইন অনুষ্ঠান চলতে থাকবে। সারা পৃথিবী থেকে খুঁজে আনা হবে সম্ভাবনাময় নতুন শিল্পীদের। সঙ্গে থাকবেন এক সময়ের প্রবীণ শিল্পীরাও, যারা এক সময় সঙ্গীত জগতের সর্বোচ্চ স্থানে থাকলেও সময় আর বার্ধক্য তাঁদের লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে গেছে। যাদের নাম এখনও অনেকের কাছে পৌঁছায়নি, তেমন শিল্পীদের গান বাজনা পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেবে কলাকার। এও এক গুরু দক্ষিণা। সিরিজের নাম দেওয়া হয়েছে— মেহফিল।’