দ্বিতীয় সন্তানের আগমনে বাড়িতে যেমন খুশির প্লাবন বয়ে যায়, তেমনি কিছু দায়িত্বও বহন করে আনে বাড়ির বড়োদের জন্য। দ্বিতীয় সন্তান আসাতে, বাড়ির প্রথম সন্তানের জীবনে কী পরিবর্তন আসতে চলেছে, সেগুলি দ্বিতীয় শিশুর জন্মের আগে থেকেই প্রথমজনকে ধীরে ধীরে বোঝাতে হবে। যদিও দ্বিতীয়টি আসাতে প্রথম বাচ্চার একাকিত্ব বোধটা অনেকটাই কমবে, তবুও সেই খেলার সঙ্গীটির সঙ্গেই তাকে মা-বাবার ভালোবাসাটা হঠাৎ-ই ভাগাভাগি করে নিতে হবে। মা-বাবার অ্যাটেনশনও ছোটোটাই বেশি পাবে, নিজের সময়টাও ভাগ করে নিতে হবে –এমনই ছোটো ছোটো কিছু বিষয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রথম সন্তানকে তৈরি করাটা পুরোটাই মা-বাবার দায়িত্ব হয়ে যায়।
এখানে কিছু টিপ্স দেওয়া হল যেগুলো মেনে চললে এই দায়িত্ব আরও ভালো ভাবে পালন করার সুবিধে হবে।
সম্পর্কের শুরুর দিনগুলি – অনেক সময় ছোটো বাচ্চারা মানসিক ভাবে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না যে, এতদিন যেখানে সে একাই মা-বাবার পুরো অ্যাটেনশন পাচ্ছিল, হঠাৎ-ই অন্য কেউ এসে সেটাতে ভাগ বসাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তাকে ইমোশনালি ডিল করতে হবে কারণ যদি মানসিক ভাবে তাকে তৈরি করা না হয় তাহলে শিশুর কোমল মনে এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। নবজাতকের প্রতি তার ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে অথবা মনে মনে তার আগমনকে সে কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারে না। এমনকী মা-বাবার উপরেও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ করার পর থেকেই প্রথম সন্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক যাতে দৃঢ় এবং মধুর হতে পারে সেই চেষ্টা শুরু করে দেওয়া উচিত। এর ফলে আপনার প্রথম সন্তানের ভাই বা বোন যাই হোক না কেন, তার সঙ্গে ইমোশনালি অ্যাটাচ হতে তার সুবিধা হবে এবং তার আগমনকেও সে স্বাগত জানাবে।
প্রথম সন্তানকে বেশি অ্যাটেনশন দিন – এটা সত্যিই যে দ্বিতীয় সন্তান জন্মাবার পর তার প্রতি অ্যাটেনশন দেওয়াটা বেশি দরকার। কিন্তু যাতে দ্বিতীয় বাচ্চাটির সঙ্গে প্রথমটির বন্ডিং যথার্থ হয় তার জন্য প্রথম সন্তানকে বেশি অ্যাটেনশন দেওয়া দরকার। সাধারণত প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য খুব বেশি হয় না, তবুও প্রথম সন্তান ম্যাচিয়োর হলেও শুরুতে ইমোশনাল থাকে খুব। সুতরাং দ্বিতীয় সন্তানকে যাতে সে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী না ভাবে এবং তার সঙ্গে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট বাড়তে পারে, সেইজন্য প্রয়োজন প্রথমজনকে বেশি গুরুত্ব এবং অ্যাটেনশন দেওয়া। এমনিতেও গর্ভাবস্থা চলাকালীন এবং ডেলিভারি হয়ে যাওয়ার পর, প্রথম সন্তান সবকিছুই খুব মনোযোগ সহকারে অবজার্ভ করে, সুতরাং তাকে সর্বক্ষণ নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করুন। ভাই-বোনের কথা বলার সময়ও তাকেই পুরো অ্যাটেনশন দেওয়ার চেষ্টা করুন।
গর্ভাবস্থায় অনাগত সন্তানের জন্য শপিং করার সময় প্রথম সন্তানকে জিজ্ঞেস করে তার পছন্দমতো পুরো শপিং করুন। এতে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং তার মনেও আপনার অনাগত সন্তানের প্রতি ঈর্শার মনোভাব জন্মাবে না। আসন্ন সন্তানের় প্রতি তার টানও মজবুত হবে।
বাচ্চার জন্মের পর
১) ছোটোটার ডায়াপার বদলাবার সময়, ওকে স্নান করাবার সময় জ্যেষ্ঠ সন্তানের সাহায্য নিন। এর ফলে ও সবসময় আপনার এবং কনিষ্ঠটির সঙ্গে থাকতে পারবে এবং একাকিত্ব বোধও করবে না। এছাড়াও বড়ো ভাই বা বোন হিসেবেও ছোটোটার প্রতি তার দায়িত্ববোধ বিকশিত হতে পারবে
২) যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, বড়োটার সমস্ত অ্যাকটিভিটি-তে আগের মতোই অংশ নিন
৩) মা যদি কনিষ্ঠটিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তাহলে বাবাকে দায়িত্ব নিতে হবে জ্যৈষ্ঠ সন্তানের। তাকে পুরো মনোযোগ দিতে হবে, তার সঙ্গে খেলা করতে হবে এবং তাকে নিয়ে ঘুরতেও যেতে হবে
৪) বড়ো সন্তানটিকে, ছোটোটার কাছে আসার থেকে আটকাবেন না বরং ছোটো ভাই বা বোনের কাছে ওকে থাকতে দিন। মাঝেমধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান একটু বড়ো হলে ওকে বসিয়ে ছোটোটিকে ওর কোলে দিন এবং আপনিও সামনে থাকুন। বড়োকে বলুন, সেও যখন ছোটো ছিল ঠিক এমনটাই ছিল। সুতরাং যখন ছোটোটা বড়ো হবে তখন বড়ো ভাই বা বোনের সঙ্গেই খেলা করবে, তার হাত ধরেই প্রথম স্কুলে যাবে। এরকম বললে, বড়োটারও ছোটো ভাই-বোনের প্রতি ইমোশনাল বন্ডিং বাড়বে।
যখন বাড়ির জ্যেষ্ঠ সন্তানকে জানানো হয় যে তার ভাই বা বোন হতে চলেছে তখন অনেক সময় তাদের মনে হয়, ভাই বা বোন আসার কী দরকার? এও মনে হয় এতদিন সে-ই বাড়ির মধ্যমণি হয়ে সকলের অ্যাটেনশন পেয়ে এসেছে আজ হঠাৎ করে আর একজন নতুন সদস্য এসেই তার প্রাপ্য ভালোবাসায় ভাগ বসাবে, সেটা সে কেমন করে মেনে নেবে? আগত সন্তানের প্রতি অগ্রজের এই মনোভাব পরিবর্তন করার জন্য তাকে বোঝানো দরকার, বাড়িতে ছোটো ভাই বা বোন থাকা খুব দরকার যে কিনা বন্ধু, খেলার সঙ্গী হতে পারবে। কনিষ্ঠটি আসাতে বড়োর প্রাপ্য ভালোবাসায় কোনও অভাব হবে না এই আশ্বাস দেওয়া খুব জরুরি। অন্য বাচ্চাদের উদাহরণের সাহায্যে তার মনে বিশ্বাসবোধ জাগানো দরকার যে, সে-ও ছোটো ভাই বা বোনের সঙ্গে খুব মজায়, আনন্দে থাকতে পারবে। তার একাকিত্ব দূর হবে।
উক্ত উপায়গুলি অবলম্বন করে জ্যেষ্ঠ সন্তানের মন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব, নিরাপত্তাহীনতার বোধ দূর করে কনিষ্ঠটির প্রতি প্রেম ও ভালোবাসার মনোভাব গড়ে তুলুন।