শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটতে থাকে প্রতিদিন। তাই এই সময় তার প্রতি বিশেষ নজর রাখা এবং যত্ন নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে, বেড়ে ওঠার সময় শিশুর চোখের কেয়ার নেওয়া মা-বাবার প্রাথমিক দায়িত্ব। কারণ, চোখ অমূল্য সম্পদ। অবহেলার কারণে শৈশবেই যদি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার মূল্য দিতে হবে জীবনভর। তাই, আপনার সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কিনা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা আই চেক-আপ-এর মাধ্যমে জেনে নিয়ে চিকিৎসা করা জরুরি। এ বিষয়ে সম্প্রতি বিশদে জানালেন কন্সালট্যান্ট অপটোমেট্রিস্ট সুমন অঞ্জয়।
কীভাবে শিশুদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে আপনার মনে হয়?
নানারকম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শিশুদের চোখ। কখনও ওদের শিশুসুলভ লাগামছাড়া দুষ্টুমি এবং অজ্ঞতার কারণে, আবার কখনও অভিভাবকদের অযত্ন এবং অসতর্কতার কারণে ক্ষতি হতে পারে শিশুদের চোখ। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করছি– দুপুরে খেলতে-খেলতে রাস্তার গর্তে থাকা পিচগলা গরম জল এক শিশুর চোখে ছিটিয়ে দেয় অন্য শিশু। এরপর ওই শিশুর চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা করলেও, আই স্পেশালিস্ট-এর কাছে না গিয়ে শুধু চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরে যখন শিশুটি পিচের জল পড়া চোখটিতে ঝাপসা দেখে এবং চোখ ফুলে ওঠে, তখন আই স্পেশালিস্ট-এর কাছে নিয়ে যান অভিভাবকরা। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। শিশুটি সারাজীবনের মতো ওই চোখটির দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।
অসতর্কতার কারণে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যায়। তবে এইরকম বড়ো বিপর্যয় ছাড়াও, অযত্ন এবং অসতর্কতায় শিশুদের চোখ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চোখে চশমা ওঠে। যেমন– খুব কাছ থেকে টিভির অনুষ্ঠান দেখলে, দীর্ঘসময় মোবাইলে কিছু দেখলে, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে একটানা বেশিক্ষণ কাজ করলে চোখে চাপ পড়তে পারে এবং দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে পারে। প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে কিংবা দীর্ঘ সময় প্রোটেকশন ছাড়া রোদে ঘুরলেও ক্ষতি হবে চোখের। শুধু তাই নয়, ছোটোবেলায় অপুষ্টিতে ভুগলেও হতে পারে চোখের সমস্যা।
সাধারণ ভাবে দৈনন্দিন জীবনে চোখের যত্ন নেওয়ার সঠিক উপায় কী?
- গরমে ঘেমে গেলে অপরিচ্ছন্ন হাত কিংবা রুমাল দিয়ে চোখ-মুখ না মুছে, পরিষ্কার রুমাল কিংবা টিস্যুপেপার ব্যবহার করার ব্যবস্থা করে দিন শিশুকে
- বৃষ্টির জলে ভিজে এলে, পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে দিন শিশুর চোখ। এরপর পরিষ্কার শুকনো তোয়ালে দিয়ে চোখ মুছে দিন
- সুইমিং পুল-এ সাঁতার কেটে এলে, শিশুকে পরিষ্কার জলে আবার স্নান করিয়ে মুছে দিন। কারণ, সুইমিং পুলের জল জীবাণুমুক্ত না-ও থাকতে পারে, তাই চোখের ক্ষতি হতে পারে
- রোদে বেরোলে মাথায় টুপি এবং চোখে সানগ্লাস দিয়ে শিশুর চোখকে প্রোটেক্ট করুন
- নামি ব্র্যান্ড-এর বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। কারণ, বাজে শ্যাম্পু ছোটোদের চোখের ক্ষতি করতে পারে
কখন আই চেক-আপ করা জরুরি মনে করেন আপনি?
চোখের কোনও সমস্যা কিংবা রোগের উপসর্গ দেখা দিলে, দেরি না করে তখনই আই স্পেশালিস্ট-এর পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে আই চেক-আপ করান। আর যদি ছোটোদের চোখের কোনও সমস্যা আপাত দৃষ্টিতে বোঝা না-ও যায়, তাহলেও বাচ্চার যখন ১৩ বছর বয়স হবে, তখন অবশ্যই একবার আই চেক-আপ করাবেন। কারণ, বয়ঃসন্ধির সময় নানা কারণে অপুষ্টির সমস্যা হতে পারে এবং ওই সময় আই চেক-আপ জরুরি।
ছোটোদের চশমা নির্বাচনে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
ছোটোরা সাধারণত চশমা পরতে চায় না। কিন্তু চোখ ঠিক রাখার জন্য যদি সত্যিই চশমা পরাতে হয় কোনও বাচ্চাকে, তাহলে টেকসই সুন্দর ফ্রেম এবং আল্ট্রা ভায়োলেট রে প্রোটেকটেড আই গ্লাস সিলেক্ট করা প্রয়োজন। প্লাস্টিক ফ্রেম-এ অনেকসময় অ্যালার্জি হয় বাচ্চাদের, তাই ব্যবহার করুন মেটাল ফ্রেম। হালকা এবং ভাঙবে না এমন মেটাল ফ্রেম এখন বাজারে এসে গেছে। লেন্স-এর ক্ষেত্রে পলি কার্বোনেটেড মেটিরিয়াল লেন্স ব্যবহার করা উচিত। এই লেন্স সহজে ভাঙবে না এবং দাগ পড়বে না। তাছাড়া, এই মেটিরিয়াল লেন্স সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করবে। সহজে পরিষ্কারও করা যাবে এই লেন্স। আর এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, যে-সব বাচ্চারা চশমা পরতে চায় না, তাদের নির্দ্বিধায় ভালো মানের কনট্যাক্ট লেন্স পরাতে পারেন। তবে, প্রেসক্রাইব করা পাওয়ার যেন সঠিক থাকে চশমার গ্লাস-এ অথবা কনট্যাক্ট লেন্স-এ। এরজন্য ভালো অপ্টোমেট্রিস্ট-এর সাহায্য নিন।