গত এক দশকে পারফেক্ট ফিগার ও পারফেক্ট সৌন্দর্যের প্রতি মেয়েদের ক্রেজ অনেকগুনে বেড়ে গেছে। বিয়ন্ড বিউটি নতুন করে নিজেকে উপস্থাপিত করার জন্য আধুনিকতম সৌন্দর্যচর্চার সাহায্য নিচ্ছেন তারা। শুধু মুখের সৌন্দর্য বজায় রাখাই এখন আর একমাত্র লক্ষ্য নয়, বডি শেপ-এ পারফেকশন এখন সৌন্দর্যের অঙ্গ। একসময় এই ধরনের সৌন্দর্যচর্চার সাহায্য নিতেন শুধু রুপোলি পর্দার নায়িকারা, বা হাই-এন্ড মডেলস্ ও সোশ্যালাইটসরা। এখন কিন্তু চিত্রটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। সুন্দর হয়ে ওঠার অধিকার সবার আছে। তাই নতুন টেকনোলজির সাহায্যে বিউটি ট্রিটমেন্টস্ করাচ্ছেন সাধারণ পরিবারের মেয়েরাও।
সর্বাধিক প্রচলিত টেকনিক
হালফিল সময়ে লুকস্ ডিজাইন করার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি এসথেটিক ট্রিটমেন্টস্। লাইপোসাকশন বা বডি কন্ট্যুরিং, বোটোক্স, ফিলার্স এবং লেজার –এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
লাইপোসাকশন
লাইপোসাকশন বস্তুত বডি কন্ট্যুরিং সার্জারি। এটা এক ধরনের কসমেটিক সার্জারি। অতিরিক্ত মেদ থেকে মুক্তি পাওয়ার এ-এক অব্যর্থ পন্থা। মেদ কমিয়ে শরীরের গঠনকে পারফেক্ট করাই এই সার্জারির উদ্দেশ্য। যে -অবাঞ্ছিত ফ্যাট, এক্সারসাইজ বা ডায়েটেও নির্মূল হয় না, তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য করা হয় সার্জারি। নিতম্ব, পেট, জঙঘা প্রভৃতি অংশে জমা এই ফ্যাট শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয় এই সার্জারির মাধ্যমে। শরীরের এই ফ্যাট তরলীকরণ করার পর তা শরীর থেকে বাদ দেওয়া হয় লাইপোসাকশনের দ্বারা।
এই সার্জারি অ্যানাস্থেসিয়া করার পর করা হয়ে থাকে। অল্প একটু অংশ কেটে সাকশন পাম্প বা একটা বড়ো সিরিঞ্জ-এর সাহায্যে ওই বাড়তি ফ্যাট বের করে নেওয়া হয়। এই সার্জারিতে ঠিক কতটা সময় লাগবে, সেটা নির্ভর করে কতটা ফ্যাট বের করা হবে, তার উপর। এই সার্জারিতে যন্ত্রণার অনুভব হয় না।লাইপোসাকশনের জন্য কোনও বয়সের সীমা নেই। ৬০ বছর বয়সের মহিলাদের উপর এটা প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে। এর জন্য শুধু ফিজিক্যাল ফিটনেসের প্রয়োজন। লাইপোসাকশন-এর পর অবশ্য আপনার নতুন ওজনটা মেনটেন করে যাওয়া জরুরি। এর জন্য উপযুক্ত ডায়েট ও এক্সারসাইজ প্রয়োজন।
কাদের জন্য প্রয়োজন
- গর্ভাবস্থার পর শরীরকে স্বাভাবিক শেপ-এ ফেরানো দরকার
- শরীরের সেইসব অংশ যেমন ঘাড়, চিবুক, গাল, নিতম্ব প্রভৃতি –যেখান থেকে মেদ কমানো কঠিন, এসব ক্ষেত্রে জরুরি
- আর্মপিট যাদের অতিরিক্ত ঘামে তাদের জন্য প্রয়োজন
- তলপেটের বাড়তি মেদ বা হাতের উপরের অংশে জমা মেদের জন্য
যে-পুরুষদের স্তনের আকার বড়ো, তাদের জন্য
আইব্রো লিফ্ট
বোটোক্স-এর সাহায্যে বয়সের কারণে ঝুলে পড়া আইব্রো-কে কিছুটা লিফ্ট করা যায়। এর ফলে মুখটা আর ততটা বয়স্ক দেখায় না।
বোটোক্স
বোটোক্স এক ধরনের নিউরোটক্সিন। এটি শুধু রোগের উপশমেই নয়, সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজেও ব্যবহৃত হয়। দামি ক্রিম ত্বককে কোমল করে, টানটান করে ঠিকই কিন্তু রিংকল্স সারাতে কাজে লাগে না। এসব ক্ষেত্রে বোটোক্স অব্যর্থ। ব্যবহার করার মাত্র ৪ দিন পর থেকেই, এর সুফল চোখে পড়ে। শরীরের যে-অংশে ইনজেক্ট করা হয় সেখানকার মাংসপেশি প্যারালাইজ হয়ে যায়। এর ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে নতুন নতুন বলিরেখার ছাপ দেখা দেওয়ার কথা, তা আর হয় না।
বোটোক্স মুখের উপরই বেশি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। প্রথম বোটোক্স ট্রিটমেন্টের প্রভাব ৪ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকে। পরের বারের ট্রিটমেন্টের প্রভাব থাকে ৯ থেকে ১২ মাস অবধি। এই ট্রিটমেন্টের খরচা, প্রতি ইউনিট বোটোক্স অনুযায়ী ধার্য হয়।
ফোরহেড ট্রিটমেন্ট
কপালে ফাইন লাইনস্, চোখের পাশে গর্ত হয়ে চোখ ঢুকে যাওয়া এগুলিই আধুনিক ট্রিটমেন্টের দ্বারা রোধ করা সম্ভব। এটাকে টেম্পোলার হিলিয়স ট্রিটমেন্ট বলা হয়। ডার্মাল ফিলার্স ইনজেক্ট করেও এই ট্রিটমেন্ট করা হয়।
ক্রোজ ফিট
চোখের চারপাশের ফাইন লাইন্সগুলি আপনার সৌন্দর্যকে অনেকটাই খর্ব করে। বয়স বাড়া ছাড়াও রোদের প্রকোপ এবং অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে এই ক্রোজ ফিট দেখা যায় চোখের আশপাশে। বোটোক্সে এই মাংশপেশিকেও রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে।
স্মাইল কারেকশন
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হাসলে উপরের মাড়ির খানিকটা অংশ দেখা যায়। এই বিসদৃশ পরিস্থিতি থেকে বোটোক্স মুক্তি দিতে পারে। এই ইঞ্জেকশন ঠোঁটের উপরের কিছু অংশে ফিলার দেওয়ার ফলে, পার্শিয়াল প্যারালিসিস-এর জন্য হাসলেও ঠোঁট আর আগের মতো অতটা প্রসারিত হতে পারে না। ফলে মাড়ি দেখা যায় না।
ঘাম থেকে মুক্তি
আর্মপিট ও হাতের উপরের অংশ ঘামার সমস্যা অনেকেরই থাকে। এর ফলে শরীর থেকে দুর্গন্ধও নির্গত হয়। হাত ও বগলে অল্প মাত্রায় বোটোক্স ইনজেক্ট করলে ঘাম নির্গমন কিছুটা রোধ করা যায়। এর প্রভাব ১০ মাস পর্যন্ত থাকে।
লেজার থেরাপি
লেজার বা হিলিয়স-এর উদ্দেশ্যই হল ত্বকের টান ভাব ফিরিয়ে আনা, পিগমেন্টেশন ও ব্রণ ও অ্যাক্নে, বা মেলাজমা প্রভৃতি দাগ ছোপ নির্মূল করা। ত্বক উজ্জ্বল করতে ও স্থায়ী ভাবে ত্বকের অবাঞ্ছিত রোম দূর করতে এই ট্রিটমেন্ট অব্যর্থ। চোখের সংবেদনশীল ত্বক বাদ দিয়ে শরীরের যে-কোনও অংশের অবাঞ্ছিত রোম দূর করতে লেজারের জুড়ি নেই। এর দ্বারা হেয়ার ফলিকলগুলোকে নষ্ট করে দেওয়া হয় ফলে পুনরায় অবাঞ্ছিত রোম দেখা দেয় না।
আজকাল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকেই লেজার থেরাপি করান।
সকলেই চাইছেন নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে। ফলে হাত-পায়ের অতিরিক্ত রোম নির্মূল করতে-ও এর সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। কোমর, বগল, ছাতি, ঠোঁটের উপরের অংশ প্রভৃতি সমস্ত জায়গার রোম নির্মূল করতে এটি অত্যন্ত কার্যকর ও সুরক্ষিত একটি উপায়। এর দ্বারা ৮০-৯০ শতাংশ রোম নির্মূল হয়ে যায়।
এই ট্রিটমেন্ট যদি পিগমেন্টেশন বা ব্রণর জন্য করে থাকেন, তাহলে আফটার ট্রিটমেন্ট কেয়ার অবশ্যই নেবেন। বেশি করে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন ও রোদে বেরোনোর সময় শরীর ঢেকে বেরোনো আবশ্যক।
ঠোঁট
পুরু ঠোঁট দেখতে খুব আকর্ষক লাগে। ঠোঁট পাতলা হলে ফিলারের সাহায্যে তা পুরন্ত করা সম্ভব। আবার ঠোঁট বিসদৃশ রকমের মোটা হলেও, তা কারেকশন করা যায়। এই ট্রিটমেন্টের পর যদি আপনি ঠোঁটের নতুন আকারে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে পুনরায় আগের অবস্থায় তা ফেরানো সম্ভব।
ফিলার্স
হ্যালুরনিক অ্যাসিড আমাদের শরীরে জলীয় আকারে চোখে ও অস্থিসন্ধিতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিমাণে ঘাটতি হয়। এর ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যায়। ত্বকে রিংকল্স দেখা দেয়। তাই ডার্মাল ফিলার্স-এর সাহায্যে যদি এই হ্যালুরনিক অ্যাসিড পুনরায় শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায়, তাহলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে পারে না।
টিয়ার ট্রফ
বসা চোখ, ডার্ক সার্কল্স বা চোখের নীচে ব্যাগস হলে খুব অসুস্থ দেখতে লাগে। শুধু বয়স বাড়াই এর কারণ নয় –পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, ত্বকের শুদ্ধতাও এর অন্যতম কারণ। চোখের চারপাশের সংবেদনশীল ত্বকে এই ট্রিটমেন্টকে টিয়ার ট্রফ বলা হয়। সফট্ ফিলার্স-এর সাহায্যে এই জায়গাগুলোকে ভরে দেওয়া হয়। এর ফলে চোখ পুনরায় ভাসা ভাসা দেখতে লাগে। আপনাকে ইয়ং দেখতে লাগে।
অ্যাপলস অফ চিক
আমাদের গালের উপরেও বয়সের ছাপ পড়ে। যদি মুখের তৈল গ্রন্থিগুলোকে পুনরায় রিজুভিনেট করা যায়, ত্বকে যৌবনের ছোঁয়া লাগে। বেশি ঘনত্ব-য্ক্তু ফিলার-এর সাহায্যে চিক ইমপ্লান্ট আপনার গালে হারানো লাবণ্য ফিরিয়ে দেবে। হাসার ফলে যে-লাইনস্ পড়ে গালে, এই ট্রিটমেন্টের পর আর তা অতটা প্রকট হয় না।