বাবা-মায়ের কাছে সন্তান অমূল্য ধন। একজন মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন হল সন্তান। সন্তান আর মায়ের সম্পর্ক জন্মের আগে থেকে শুরু হয় আর এটি পূর্ণতা পায় সন্তান বড়ো হওয়ার সাথে সাথে। কিন্তু মায়ের কিছু ভুল আর অসাবধানতার কারণে সন্তানের নানা শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে৷নবজাতকের দেখাশোনায় কীভাবে যত্ন নিতে হয় মা-বাবাকে, তারই কয়েকটি টিপ্স এখানে দেওয়া হল।

  • হাত ধুয়ে বাচ্চাকে কোলে নিন
  • নবজাতকদের ইমিউন সিস্টেম খুব স্ট্রং হয় না তাই সংক্রমণের ভয় থাকে সব সময়। সুতরাং বাচ্চাকে স্পর্শ করার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন এবং অপরিষ্কার হাতে বাচ্চাকে ধরতে কাউকেই অনুমতি দেবেন না।
  • নবজাতকের মাথা এবং ঘাড়ে সাপোর্ট দিন। যখনই বাচ্চাকে কোলে নেবেন, ঘাড়ে এবং মাথার নীচে হাত রাখুন যাতে ঘাড় এবং মাথার পিছনে সাপোর্ট থাকে। বাচ্চাকে শোয়াবার সময়ও একই নিয়ম মেনে চলুন।
  • বাইরে বেরোবার সময় গাড়ি বা প্র্যামে ভালো করে বাচ্চাকে সিট বেল্ট-এর সাহায্যে সিকিওর করুন। বাচ্চাকে নিয়ে আসা যাওয়া করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে যাতে যাত্রাপথ খুব রাফ বা বাউন্সি না হয়।
  • বাচ্চাকে খুব বেশি নাড়াবেন না, রেগে গিয়ে অথবা খেলার ছলেও না। অনেক সময় খেলার ছলে অথবা বাচ্চা সমানে কাঁদতে থাকলে কেউ কেউ ভোলাবার জন্য বাচ্চাকে শূন্যে ছুড়ে, চুপ করাবার বা হাসাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাচ্চাকে অতিরিক্ত ঝাঁকানো একেবারেই অনুচিত। এতে শিশুর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলতে তাকে ঝাঁকাবার দরকার নেই বরং পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিন বা গালে আঙুল দিয়ে আলতো করে টোকা দিন।
  • শিশুর সঙ্গে বন্ডিং বাড়ানো। নবজাতকের যত্নে, মা-বাবার সঙ্গে বন্ডিং হওয়াটা খুব জরুরি। বাচ্চার সঙ্গে ফিজিক্যাল ক্লোজনেস, ইমোশনাল কানেকশন বাড়ায়। বাবা-মায়ের সঙ্গে অ্যাটাচ্মেন্ট, বাচ্চার ইমোশনাল গ্রোথ হতে সাহায্য করে এবং শারীরিক ডেভেলপমেন্ট হতেও সাহায্য করে। বন্ডিং-এর শুরু হয় বাচ্চাকে যেই নিজের কোলে নিচ্ছেন এবং ধীরে ধীরে তার সারা গায়ে হাত বুলোচ্ছেন। ব্রেস্ট ফিড করাবার সময়ও মা ও সন্তানের ত্বকের সংস্পর্শে বাচ্চা এবং মা উভয়ের মনেই আনকন্ডিশনাল ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়। বাচ্চারা গলার স্বর শুনতে ভালোবাসে, সুতরাং বাচ্চার সঙ্গে সমানে কথা বলুন, গান শোনান।
  • বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার যে, ডায়াপার ব্যবহার করবেন নাকি কাপড়ের ন্যাপি। যাই ব্যবহার করুন না কেন, দিনে অন্তত দশবার ন্যাপি বদলাবার দরকার পড়ে। সুতরাং মজুত রাখা দরকার পরিষ্কার ডায়াপার। কাপড় ব্যবহার করলে ডায়াপার পিনস, ডায়াপার ক্রিম এবং একটি পাত্রে হালকা গরমজল এবং মোছার নরম সুতির পরিষ্কার কাপড় এবং তুলো রাখা দরকার। বাচ্চাদের প্রায়ই ডায়াপার র্যাশ হতে দেখা যায়। সেই ক্ষেত্রে হালকা গরমজলে বাচ্চাকে পরিষ্কার করে ভালো করে সেখানে ক্রিম লাগিয়ে রাখতে হবে এবং ডায়াপার ছাড়া বাচ্চাকে কিছুটা সময় রাখতে হবে। ৩ দিনের বেশি র্যাশ না সারলে, ডাক্তার দেখাতে হবে কারণ ফাংগাল সংক্রমণের কারণেও এমনটা হতে পারে।
  • স্নানের নিয়মঃ নবজাতককে স্পঞ্জ বাথ দেওয়া বাঞ্ছনীয় যতদিন না আমবিলিকাল কর্ডটা পড়ে যায় এবং নাভি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার বাচ্চাকে স্নান করালেই যথেষ্ট কারণ বারবার স্নান করালে বাচ্চার ত্বক ড্রাই হয়ে যায়। বাকি দিনে স্পঞ্জ বাথ দিন বাচ্চাকে।
  • খাওয়ানো এবং ঢেঁকুর তোলানোঃ সাধারণত বাচ্চাকে খিদে পেলেই খাওয়ানো উচিত। খিদে পেলে বাচ্চা নয় কাঁদবে বা মুখে হাত ঢুকিয়ে চুষতে থাকবে। বাচ্চাকে ফিডিং করাবার সময় অনেকবার হাওয়া গিলে নেয় বাচ্চা ফলে পেটে ব্যথা হয় এবং বাচ্চা সমানে কাঁদতে থাকে। এই সমস্যা যাতে না হয় তার জন্য মাঝেমধ্যেই খাওয়াবার মাঝে বাচ্চাকে পিঠের উপর ফেলে ঢেঁকুর তোলানো খুব জরুরি।
  • ঘুমের অভ্যাসঃ  নবজাতক সাধারণত ১৬ ঘন্টা বা তার বেশি ঘুমোয়। কিন্তু টানা এক ভাবে নয়। ২ থেকে ৪ ঘন্টা টানা ঘুমোয় বাচ্চা। ৪ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা ঘুম থেকে না উঠলে, বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলে ফিড করানো দরকার। বাচ্চারা নিজেরাই একটা ঘুমের প্যাটার্ন তৈরি করে নেয়। সাধারণত ৩ মাস বয়স থেকে বাচ্চা ৬ থেকে ৮ ঘন্টা টানা ঘুমোয়। যদি সেটা নাও হয়, ভয় পাবার কোনও দরকার নেই। যদি দেখেন বাচ্চার ওজন বাড়ছে এবং দেখে মনে হয় সুস্থ, তাহলে ৩ মাস বয়সে পুরো রাত না ঘুমোলেও চিন্তার কোনও কারণ নেই।

সব মিলিয়ে নবজাতকের দেখাশোনার জন্য মা-বাবা এবং বিশেষ করে মা-কে সবসময় সজাগ থাকতে হয়। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক নিয়মেই শিশু বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পারিপার্শিক পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখতে থাকে এবং তার জীবনযাত্রা ছন্দে ফিরতে আরম্ভ করে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত শিশুকে সাবধানে রাখা মা-বাবার কর্তব্য।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...