কোভিড ১৯-এর ভ্যাকসিন এসেছে ঠিকই, কিন্তু তাও স্বাস্থ্য পরিষেবা নিযে ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন আছে। কারণ, ভ্যাকসিন প্রযোগের পর, সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হলেও আমরা আবারও আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারি । তাই তখনও হাসপাতালে ভর্তি কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজন কমবে না। সাধারনত যে-কোনও মহামারির ক্ষেত্রে একটা সেকেন্ড ওয়েভের আশঙ্কা সব সময়ই থেকে যায়৷ইউরোপকে যেমন সেই ধাক্কায় সামিল হতে দেখলাম আমরা৷
সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, শহর, মফসস্বল কিংবা গ্রাম– সর্বত্র হাসপাতাল থাকা অত্যন্ত জরুরি। আর এই কোভিড আবহে আগের থেকে হাসপাতালের প্রয়োজন আরও বেড়েছে। সরকার যেমন থানা বা পুলিশ চৌকির সংখ্যা বাড়িয়েছে সমাজের সুরক্ষার দিকটি বিবেচনা করে, সেই হারেই বাড়ানো দরকার হাসপাতালের সংখ্যাও।
সেকেন্ড ওয়েভ আসুক বা না আসুক, এখন প্রত্যেক অঞ্চলের প্রতিটি কলোনিতে এবং সমস্ত গ্রামে উন্নত ক্লিনিক তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, ক্লিনিক বাড়লে, অর্থাৎ চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ হাতের কাছে থাকলে,এবং পরিষেবা পাওয়ার প্রক্রিয়া জটিল না হলে,বাড়ির মহিলারা একা গিয়েই নির্দ্বিধায় নিতে পারবেন চিকিৎসার সুযোগ। আর এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, দিল্লিতে যেমন বিদ্যুৎ এবং জল সস্তায় পাওয়া যায়, চিকিৎসা পরিষেবাও তেমনই সস্তায় পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিষযে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং সবাই যাতে সুলভে ওষুধ পান, সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা জরুরি। এমনকী প্রতিটি বড়ো হোটেল, বাজার, সিনেমা হলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটা করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র করে দিতে হবে সরকারকেই।
সবে পেরিয়ে আসা কোভিড পরিস্থিতির কারণে, সারা পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ এখন চরম আর্থিক সংকটে রয়েছেন। এই অবস্থায় পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে আর্থিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে বাধ্য।কোভিড মহামারির সময়ে অবশ্য, চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেকেই প্রতিদিন আন্তরিক পরিষেবা দিয়েছেন। প্রায় জীবন বাজি রেখেই তাঁরা এই সেবা দান করেছেন। তাই, তাদের প্রতিও সহানুভতি প্রদর্শন করা আবশ্যক।
এটা উপলব্ধি করতেই হবে যে, মন্দির, মসজিদ, গির্জা কিংবা গুরুদ্বার নয়, চাই আরও হাসপাতাল। এতে সবারই মঙ্গল হবে, বাঁচবেন গরিব সাধারণ মানুষেরাও। আর চিকিৎসার সুবিধে বাড়লে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ বাড়বে এবং আমরা সুস্থজীবন পাব। এই কোভিড পরিস্থিতিতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য রুটিন চেক-আপ সঠিক ভাবে পেলেও আমরা লাভবান হব।
এখন আমাদের ভাবতে হবে যে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে, নতুন-নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে প্রতিদিন। তাই, রাম মন্দির, প্যাটেলের মূর্তি কিংবা নতুন সংসদ ভবন নিযে মাতামাতি কমিযে চিকিৎসা-কেন্দ্র বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কোভিডকালীন জরুরি অবস্থায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল যেমন স্বাস্থ্য পরিষেবা বাড়ানোর প্রয়াস জারি রেখেছিলেন, ঠিক তেমনই সমস্ত জায়গায় একইরকম উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। ৫ থেকে ৬টি শয্যা এবং তিন-চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করে, ছোটো ছোটো স্বাস্থ্যকেন্দ্র সর্বত্র গড়ে তোলার এখন ভীষণ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে, মেডিকেল অ্যাম্বুল্যান্স-এর সংখ্যাও আরও বাড়ানো দরকার। আর এই পরিষেবার জন্য ট্যাক্সের টাকা থেকে অর্থের জোগান দেওয়া উচিত। কারণ, চিকিৎসার বিষয়ে আর কোনও অবহেলা চলবে না। যাতে আগামী দিনে, শুধু বিত্তবানরাই নয়, সবার চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার অধিকার সুনিশ্চিত করা যায়।