কথায় বলে— মাছে-ভাতে বাঙালি। খাবারের থালায় মাছ না থাকলে যেন বাঙালির মন ভরে না। তাই, প্রতিদিন মধ্যাহ্নভোজ সম্পূর্ণ হোক মাছ সহযোগে। কখনও সামুদ্রিক মাছ, আবার কখনও মিষ্টি জলের মাছ এনে বাড়িতেই বানিয়ে নিন মাছের নানারকম সুস্বাদু পদ। খুব বেশি ঝামেলাও হবে না, আবার বেশি সময়ও ব্যয় হবে না, এমনই কিছু মাছের রেসিপি এবার আমরা শেয়ার করছি মাছ-প্রেমীদের জন্য।
পুর ভরা পমফ্রেট
উপকরণ: ১টি বড়ো সাইজের পমফ্রেট মাছ, ১ কাপ কোরানো নারকেল, ১ টেবিল চামচ কুচোনো ধনেপাতা, ১/২ চা চামচ রসুনবাটা, ১ চা চামচ আদাবাটা, ১ টেবিল চামচ তেঁতুলের কাই, ২টি কুচোনো কাঁচালংকা, ১ চা চামচ চিনি, ১/২ চা চামচ গোলমরিচগুঁড়ো, নুন ও তেল আন্দাজমতো।
প্রণালী: আস্ত পমফ্রেট মাছ মাঝখান থেকে এমন ভাবে চিরে দিতে হবে যাতে মাথার দিক ও ল্যাজা জোড়া থাকে। এবার পুরের জন্য মিশ্রণ তৈরি করুন। নারকেলকোরা, রসুনবাটা, আদাবাটা, কাঁচালংকা, গোলমরিচগুঁড়ো, তেঁতুলের কাই, ধনেপাতা, চিনি— সব মিশিয়ে পিষে নিয়ে নুন মেশাবেন।
মাছের ভিতরে পুর সমান ভাবে চারিয়ে দিয়ে সুতো বেঁধে দিন টাইট করে, যাতে ভাজতে গেলে পুর বেরিয়ে না যায়। এবার ফ্লাইং প্যান-এ তেল গরম করে দু’পিঠ ভালো করে ভেজে নিন। লেবু, ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
মশলা পমফ্রেট
উপকরণ: ৪টি ছোটো সাইজের আস্ত পমফ্রেট, (দুটো পিঠ অল্প চিরে নেওয়া), ১টি পেঁয়াজ, ৪ কোয়া রসুন ও ২টি কাঁচালংকা একসঙ্গে বেটে নিন, স্বাদমতো লংকাগুঁড়ো, ২টি কাঁচালংকা ও ২ চা-চামচ সরষে একসঙ্গে বেটে নেওয়া, নুন, হলুদ এবং সরষের তেল আন্দাজমতো, ২টি কুচোনো টম্যাটো, ২টি পেঁয়াজ কুচো করা, নুন স্বাদমতো।
প্রণালী: মাছে পেঁয়াজ, রসুন ও লংকাবাটা মাখিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিন। কড়াইতে তেল দিয়ে মশলা মাখা মাছ ভেজে রাখুন। কড়াইতে আরও একটু তেল দিয়ে কুচোনো পেঁয়াজ একটু ভেজে লংকার গুঁড়ো, নুন, হলুদ ও ১টি কুচোনো টম্যাটো দিন। কম আঁচে মশলা কষে নিন। রসুন-পেঁয়াজের বাটা মশলা এবং সরষে-লংকার বাটা মশলা একসঙ্গে কড়াইতে দিয়ে কষে নিন এবং মাছগুলি ওতে ছাড়ুন। মশলা ভালো করে গা-মাখা হয়ে গেলে ও ফুটতে থাকলে নামিয়ে নিয়ে উপরে কুচোনো টম্যাটো ও ধনেপাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
রুই–পোস্ত
উপকরণ: ৪ টুকরো রুইমাছ, ৪ টেবিল চামচ পোস্তবাটা, ২টি টম্যাটো (পাতলা করে কাটা), ৫ টেবিল চামচ সরষের তেল, ১ চা-চামচ কালোজিরে, ১ চা-চামচ হলুদগুঁড়ো, ২-৩টি কাঁচালংকা, নুন স্বাদমতো, ১ কাপ জল।
প্রণালী: রুইমাছ ভালো করে ধুয়ে নিয়ে নুন এবং হলুদগুঁড়ো দিয়ে এবং সামান্য সরষের তেল মাখিয়ে ১৫-২০ মিনিট ম্যারিনেট করুন। প্যানে তেল গরম করে মাছগুলি হালকা ভেজে নিন। মাছ ভাজার তেল সরিয়ে রেখে প্যানে ফ্রেশ তেল ঢালুন। তেল গরম হলে কালোজিরে এবং ২টি কাঁচালংকা তেলে দিন। একটু বাদে টম্যাটো-টা তেলে দিয়ে দিন। টম্যাটো নরম হয়ে গেলে, পোস্তবাটা ওতে দিয়ে দিন এবং ভালো করে নাড়াচাড়া করে নিন। হলুদ, নুন মিশিয়ে, জল দিন। গ্রেভি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলি ঝোলে দিয়ে দিন। আন্দাজমতো গ্রেভির ঘনত্ব বুঝে রান্না হতে দিন এবং আঁচ বন্ধ করুন। উপর থেকে কাঁচা সরষের তেল ও কাঁচালংকা দিয়ে পাত্রের মুখ ঢেকে দিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।
চিংড়ির মালাইকারি
উপকরণ: ৫০০ গ্রাম বাগদা বা গলদা চিংড়ি পিঠের কালো সুতো ছাড়িয়ে পরিষ্কার করা, ১/২ কাপ কুচোনো পেঁয়াজ, ১/৪ টেবিল চামচ পেঁয়াজবাটা, ১/২ চা-চামচ রসুনবাটা, ১ চা-চামচ আদাবাটা, ১ চা-চামচ জিরেগুঁড়ো, ১ চা-চামচ চিনি, ২টি তেজপাতা, ১চা-চামচ লংকাগুঁড়ো, ১/২ চা-চামচ গরমমশলার গুঁড়ো, ২ কাপ কোরানো নারকেল (ওর মধ্যে গরমজল ঢেলে ঢেকে রাখুন ও একটু পরে চিপে দুধ বার করে নিন), ২টি করে লবঙ্গ ও ছোটো এলাচ, বাদাম তেল, নুন, মিষ্টি আন্দাজমতো।
প্রণালী: কড়াইতে তেল গরম করে চিংড়িমাছ ভেজে তুলে রাখুন। সেই তেলে তেজপাতা, লবঙ্গ ও ছোটো এলাচ অল্প থেঁতো করে ফোড়ন দিন। চিনি দিয়ে লাল করে ভাজা হলে কুচোনো পেঁয়াজ দিন। পেঁয়াজ লালচে হয়ে এলে বাটামশলা, নুন, হলুদ, জিরে ও লংকাগুঁড়ো দিয়ে কম আঁচে পুরো মশলা কষতে হবে। কষা হয়ে গেলে ভাজা চিংড়ি এবং নারকেলের দুধ দিতে হবে। ফুটে উঠলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে গেলে গাওয়া ঘি ও গরমমশলার গুঁড়ো ছড়িয়ে আঁচ থেকে নামিয়ে নিতে হবে। রান্নার সময় পাত্রের মুখে ঢাকা দেবেন না, নারকেল তেলের গন্ধ হয়ে যাবে।