যে-কোনও উৎসব-অনুষ্ঠান সকলের জন্যই সমান আনন্দের আবহ তৈরি করে। পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে নানাবিধ ব্যঞ্জন উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া যায়। রাস্তাঘাটে লোভনীয় খাবার চেখে দেখার তখন কোনও বাধা থাকে না। কিন্তু সেই সব খাবার বেশিরভাগই তৈলাক্ত এবং শর্করা-যুক্ত। এই খাবারগুলি সাধারণত স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে থাকে।
এগুলিতে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইডের স্তর এবং কোলেস্টেরলের বাড়াবাড়ি পরিমাণ, হৃদরোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। পরিবারের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ সকলেই উপভোগ করুন কিন্তু বিশেষ কয়েকটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার। কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড-এর স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখা একান্ত জরুরি।
অধিক শর্করায় শরীরের ক্ষতি
ফ্রুক্টোজ শর্করার একটি বিশেষ রুপ। এতে শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড-এর স্তর বৃদ্ধি পায়। উৎসবের সময় বাইরে বেরিয়ে ভাজাভুজি, ক্যান্ডি, বেকড খাবার, আইসক্রিম এবং অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার না খাওয়াই ভালো। সুগার ফ্রি মিষ্টিতে ফ্রুক্টোজ থাকে। এতে ফ্যাট বাড়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। সবসময় মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত শর্করা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
রিফাইন্ড খাদ্যপদার্থ এড়িয়ে চলুন
নর্মাল সাদা পাউরুটি, নুডলস, পাস্তা, ভাত ইত্যাদি যেগুলি খুব সহজেই ফুড কাউন্টারে এবং রাস্তার ধারে গজিয়ে ওঠা ফুড স্টলগুলিতে পাওয়া যায়— সেগুলি খুব সহজেই শর্করায় পরিবর্তিত হয়। এই খাবারগুলি এড়িয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। আনাজ-যুক্ত খাবার জিনিস বাছুন যেগুলি আপনার ট্রাইগ্লিসারাইড-এর স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখবে।
ফাইবার-যুক্ত খাবার খান
উৎসবের সময় বাড়িতে ফাইবার-যুক্ত খাবার খান। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ফাইবার-যুক্ত খাবারে জটিল কার্বোহাইড্রেট উপাদান থাকে যা শরীরের জন্য লাভজনক। ট্রাইগ্লিসারাইড-এর স্তর যাতে না বাড়ে, সেটিও নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ যে-কোনও খাবার খাওয়ার পরেই ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়তে থাকে। ডায়েটে স্যালাড এবং শাকসবজি থাকাটা অত্যন্ত আবশ্যক। আনাজ এবং পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর খাদ্যপদার্থ যেমন, ফল এবং সবজিতে ফাইবার সবথেকে বেশি পাওয়া যায়।
সঠিক ফ্যাট-যুক্ত খাবার
ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে স্যালমন, অলিভ অয়েল, ডায়েটারি প্রোডাক্ট ইত্যাদির উপর আস্থা রাখুন। এগুলি সাপ্লিমেন্ট-এর মতো যার মধ্যে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এছাড়াও স্যাচুরেটেড ফ্যাট যা কিনা মাংস এবং অন্যান্য খাদ্যপদার্থের মধ্যে থাকে যেমন আইসক্রিম, পনির ইত্যাদির মাত্রা সারাদিনে ৫ থেকে ৬ শতাংশ ক্যালোরির বেশি হওয়া উচিত নয়। কোলেস্টেরল-এর দৈনিক মাত্রা হওয়া উচিত ৩০০ মিলিগ্রাম-এর মধ্যে। এর থেকে বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। এগুলো ছাড়াও একবার যে- তেলে কিছু ভাজা হয়েছে সেই বেঁচে যাওয়া তেল পুনরায় ব্যবহার না করাই ভালো।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
সকলেরই ব্যায়াম করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, বিশেষকরে যাদের ট্রাইগ্লিসারাইড ৫-এর মাত্রা খুব বেশি। এতে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে এনার্জি এবং শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরে থাকা শর্করা যেটি কিনা ট্রাইগ্লিসারাইড-এর মাত্রায় পরিবর্তন আনে, সেটিও কম করতে সহায়তা করে। অ্যারোবিক ব্যায়াম হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কারণ এতে ট্রাইগ্লিসারাইড-এর মাত্রা কমানো সম্ভব হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সকলের জন্য জরুরি। তবে অনেকেই মনে করেন স্থূলতার কারণে যদি শরীরে কোনও অসুবিধা না হয়, তাহলে শুধু শুধু ওজন কমানোর কী দরকার? কম বয়সে হয়তো এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নজরে পড়ে না কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরে শর্করার পরিমাণ বাড়তে আরম্ভ করে। একই সঙ্গে শরীরের মেটাবলিক প্রক্রিয়ার কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এর ফলে ট্রাইগ্লিসারাইড- এর মাত্র বৃদ্ধি পায়।
হেলদি ক্যালোরি ইনটেক করে ওজন কন্ট্রোলে রাখুন এবং ট্রাইগ্লিসারাইড- ৫-এর মাত্রা কমিয়ে আনুন। উৎসবের মরশুমে না খেয়ে থাকার থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানে অল্প করে কিছু খান। এতে শরীরের ওজনও আয়ত্তের মধ্যে থাকবে এবং আপনি অনেক সুস্থ অনুভব করবেন।





