দূরত্ব বাড়ার জন্য দায়ি যখন মা (শেষ পর্ব)

সম্পর্ক ভাঙার অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে বিশেষ করে মেয়ের বাপের বাড়ির হস্তক্ষেপ মেয়ের সংসারের প্রতিটি ব্যাপারে। আজ এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় এসে গেছে। মেয়ে জামাইয়ের সংসারে মেয়ের বাড়ির অতিরিক্ত নাক গলানো ভেঙে দিচ্ছে মেয়ের বৈবাহিক সম্পর্ক।

বুঝতে কেউ যদি অপারক হয়  

দুর্গাপুরের মেয়ে শ্রমণার ৬ মাস আগে খুব ধুমধাম করে কলকাতার ছেলে পলাশের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু এই ক’মাসেই তাদের ঝগড়া কোর্টরুম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কারণ বিশেষ কিছু নয়। কাউন্সিলিং-এর সময় জানা গেল শ্রমণার কাকার ছেলের বিয়ে ছিল। বিয়ের জন্য শ্রমণার বউদি এক জোড়া সোনার বালা কিনেছিল পরবে বলে। সেই দেখে শ্রমণা জেদ ধরে, ওর নতুন একটা গয়না চাই। যা পলাশ শুনতেই নাকচ করে দেয়। বলে, শ্রমণার নিজেরই তো বিয়ের এত গয়না রয়েছে, চাইলে তার মধ্যে থেকেই কিছু পরতে পারে। এই থেকেই দ্বন্দ্ব শুরু। শেষপর্যন্ত শ্রমণা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায় এবং উকিলের পরামর্শমতো পলাশের উপর একটার পর একটা মিথ্যা দোষ আরোপ করা শুরু করে।

নিজের দোষ ঢাকতে আইনের ব্যবহার

সোমা আর রঞ্জন দু’জনেই উচ্চশিক্ষিত, ওদের লভ ম্যারেজ। ১ বছর সুখে সংসার করার পর হঠাৎ-ই অন্যের হস্তক্ষেপে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। সামান্য একদিন কথা কাটাকাটি হওয়ার সময় স্ত্রীকে থামাতে রঞ্জন সোমার হাতটা একটু জোরের সঙ্গে ধরে ফেলে। ব্যস, এতেই সোমার বাপের বাড়ি থেকে গার্হস্থ্য হিংসার কেস চাপিয়ে দেওয়া হয় রঞ্জনের উপর। অথচ সোমা কাউন্সিলর-কে বলে রঞ্জন ওকে খুবই ভালোবাসে এবং কোনওদিন তার গায়ে হাত তোলেনি রঞ্জন। বরং সারাদিন সোমাকে বাড়িতে কাজ করতে হয় দেখে, রঞ্জন জোর করেই সবসময়ের পরিচারিকা রেখে দেয়, যাতে সোমা আরামে থাকতে পারে।

ফলে ধীরে ধীরে সব কাজ করাই সোমা বন্ধ করে দেয়। যার থেকে বাড়িতে অব্যবস্থা, ঝগড়া, অবসাদ শুরু হয়। অথচ রঞ্জনকে কেউ একজন বলেছিল— বাড়িতে সবসময়ের কাজের লোক থাকলে সোমা অনেক ভালো থাকবে এবং দুজনের ভালোবাসা আরও সুদৃঢ় হবে। উলটে রঞ্জনের সংসার ভাঙার উপক্রম হল!

রাহুলের ব্যপারটা একটু অন্যরকম। সকালে অফিস যাওয়ার সময় শার্টের বোতাম না থাকায় স্ত্রী রূপার খোঁজ করতে গিয়ে দেখে, স্ত্রী ফোনে ব্যস্ত রয়েছে। কিছু না ভেবেই রাহুল বলে ওঠে, ‘সকাল সকাল ফোনে এত কী কথা? আমার শার্টের বোতামটাও লাগাওনি। আমি এখন কী পরে অফিস যাব?’

রূপা নিজের অফিসের এক কলিগের সঙ্গে কথা বলছিল। রাগে ফোন ছেড়ে দিয়ে রূপাও চেঁচিয়ে ওঠে, “কতবার তোমাকে বলেছি, ফোনে যখন থাকব চেঁচিয়ে কথা বলবে না। নিজের শার্টের ব্যবস্থা নিজেই করো।”

এদিকে রাহুল যখন অফিস বেরোল তখনও খুব রেগে ছিল ওদিকে রূপাও সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করার জন্য অফিসের কাজে মন বসাতে পারল না। দু’জনের কেউ একজন দোষ স্বীকার করে নিলেই ঝামেলা মিটে যেত কিন্তু এর পর থেকে রাহুল কিছু করতে বললেই রূপা ওকে নিজেকে করে নিতে বলা শুরু করল। ধীরে ধীরে সম্পর্কে তিক্ততা বাড়তে লাগল। রাহুলেরও বোঝা উচিত ছিল স্ত্রী ফোনে ব্যস্ত মানে নিশ্চই জরুরি কোনও ফোন হবে।

মেয়ের কষ্টে অপরের দুঃখ পাওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু শ্বশুরবাড়ির ছোটো ছোটো জিনিসে নিজের মেয়ের পক্ষ টেনে সবসময় আগ বাড়িয়ে কথা বললে সম্পর্ক তিক্ত হতে বেশি সময় লাগবে না।

নতুন সমস্যা

মেয়ে মানেই বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে তাই মেয়ের মায়েরা চান, মেয়েকে যেখানে অপরের বাড়ি গিয়ে সারা জীবন কাজ করতেই হবে, সেখানে যতদিন না বিয়ে হচ্ছে বাপের বাড়িতে একটু আরাম করুক।

আজকালকার মেয়েরা কিন্তু এর থেকে দায়িত্ববোধের শিক্ষা নিচ্ছে না বরং বিয়েকে নিজের নিজের স্বপ্নপূরণ করার একটা পথ মনে করছে। কিন্তু বাস্তবে যখন স্বপ্ন, সংসারের দায়িত্বের নীচে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে তখনই দাম্পত্যে ফাটল ধরছে এবং শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেক সদস্যই চক্ষুশূল হয়ে উঠছে। তিক্ত মানসিকতার প্রধান শিকার হতে হচ্ছে শাশুড়িকে আর নয়তো স্বামীকে। কারণ এই দুজনের সঙ্গে মেয়ের সময় বেশি কাটে।

মেয়েরা বিয়ে হয়ে এসেই স্বামী এবং সংসারের উপর নিজের অধিকার ফলাতে চায়। যদি সংসারে স্বামী নিজের মা-বোন বা ভাই কাউকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করে বা আর্থিক সাহায্য করে, তাহলে মেয়েদের সমস্যা আরও বাড়ে। ছোটো ছোটো জিনিস নিয়ে অশান্তি করা শুরু করে। বিয়ে মানেই দায়িত্ব সকলের সঙ্গে মানিয়ে চলা। সুতরাং স্বামী যদি তার নিজের পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলে সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে পারে তাহলে সেটাতে নতুন বউ-এর খুশিই হওয়া উচিত, সেটাকে সমস্যা ভেবে নেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

আমার স্বামীর সাথে প্রতারণা করা কি উচিত?

প্রশ্ন-

আমি একজন ৩২ বছর বয়সি বিবাহিত মহিলা। আমার স্বামী বেডরুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমাকে Rapist-এর মতো আক্রমণ করেন। আমি সারাদিন ঘরের কাজ করতে এবং আমার বাচ্চাদের যত্ন নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং বিশ্রাম নিতে চাই, কিন্তু সে কখনওই আমার ইচ্ছার কদর করেনি।  আমার প্রতিবেশী একটি ছেলের প্রতি আমি খুব আকর্ষণ বোধ করি। আমি তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই এবং তার সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে চাই। সে কি আমার প্রস্তাব গ্রহণ করবে? স্বামীর সঙ্গে এটা করা কি ঠিক হবে?

 উত্তর-

আপনি যদি আপনার স্বামীর অভ্যাস জানেন, তবে নিজেকে সেই মতো প্রস্তুত করুন যাতে আপনাদের দুই জনের সম্মতি নিয়েই সব কিছু ঘটে। এটি করার মাধ্যমে আপনিও সহবাস উপভোগ করবেন। আপনি রাতে ক্লান্ত হন বা না হন, আপনার যৌনতা উপভোগ করার পরিকল্পনা করা উচিত। নতুন বন্ধু তৈরি করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা এবং প্রতিবেশী ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া সহজ বা বাঞ্ছনীয় একেবারেই নয়।

প্রতারণা একটি মানুষের স্বভাব, সেটা ছোটো হোক বা বড়ো। অনেক সময় একজন মানুষকে প্রেমে প্রতারণা করতে দেখা যায়। কিন্তু আজকাল বিয়ের পরও প্রতারণার প্রবণতা দেখা যায়। বিয়ের পর মানুষ নানা কারণে প্রতারণা করে। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে, কখনও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই প্রতারণা করা হয়। শুধু তাই নয়, বিয়ের পর অনেক সময প্রতারণার কারণ হয়ে দাঁড়ায় অসন্তুষ্টি এবং ডিভোর্সের মূল কারণ প্রতারণা। তবে বিয়ের পর প্রতারণা করা কতটা সঠিক, বিয়ের পর প্রতারণার পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবেন, আপনার সঙ্গী যখন আপনার সঙ্গে প্রতারণা করছেন তখন কী করবেন সেটাও জেনে রাখা জরুরি।

বিয়ের পর প্রতারণার কারণ

১. অসন্তুষ্টি- অনেক সময় একজন পুরুষ সহবাসের সময় তার স্ত্রী সঙ্গীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়, যার কারণে সে বাইরে যেতে বাধ্য হয় এবং শীঘ্রই সে অন্য মহিলাদের কাছাকাছি চলে আসে, ফলস্বরূপ, সে অনিচ্ছাকৃতভাবে তার মহিলা সঙ্গীর সাথে প্রতারণা শুরু করে।

২. উন্মুক্ততা- সমাজে উন্মুক্ততার কারণে পুরুষরা তাদের নারী সঙ্গীকে ধোঁকা দেয়। আসলে ডেমোক্রেটিক সমাজে মানুষ উন্মুক্ত মনের হয়ে উঠেছে, যার কারণে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রাখতে তাদের কোনও সমস্যা হয় না এবং এখনকার নারীরাও খুব সাহসী মানসিকতার হয়ে উঠেছে।

৩. সম্ভাবনার কারণে- আজকাল বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, অর্থাৎ সহজেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যার কারণে পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের সাথে প্রতারণা শুরু করে, এই ভেবে যে তারা কিছুই জানতে পারবে না।

 

 

 

 

 

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্কের গুরুত্ব (শেষ পর্ব)

শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থীর শুভাকাঙ্ক্ষী, তেমনি শিক্ষক প্রত্যাশা করেন তাঁর ছাত্ররাও তাঁকে ভালোবাসবে এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকবে। একজন আদর্শ শিক্ষক হবেন ছাত্রদের পথপ্রদর্শক। Teacher শিক্ষার্থীর বন্ধু হবেন ঠিকই কিন্তু শিক্ষার্থীরা যা খুশি তা করবে সেটা কোনও শিক্ষকই মেনে নেবেন না। ছাত্ররা তাদের মনের কথা খুলে বলতে পারবে এবং শিক্ষক তা শুনে বন্ধুর মতো সুপরামর্শ দেবেন। শিক্ষককে, ছাত্র সম্মান না করলে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারবে না।

শিক্ষককে সবসময় শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বাইরে কথা বলার সময় দিতে হবে। বর্তমানে প্রতিটি পরিবারেই কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন অপরিহার্য উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক। খেয়াল রাখতে হবে, এগুলোর প্রতি যেন শিক্ষার্থীদের আসক্তি তৈরি না হয়। জন্মের পর একটি শিশুর শিক্ষা গ্রহণের প্রথম পাঠ শুরু হয় তার পরিবারে। অতঃপর তার শিক্ষাদানের মহান দায়িত্ব অর্পিত হয় শিক্ষকের ওপর। এই শিক্ষাদান ও গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ওঠে সম্পর্কের এক অটুট বন্ধন। শিশুদের সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক অত্যন্ত, সম্মানজনক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও আনন্দদায়ক হওয়া আবশ্যক।

বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের মর্যাদার জায়গাটা আগের তুলনায় অনেকটাই হারিয়ে গেছে তার অন্যতম প্রধান কারণ হল— মানুষের সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। Teacher এবং ছাত্রের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা কমে গেছে। শিক্ষা এখন আর জ্ঞান আহরণের বিষয় নেই। শিক্ষা হয়ে গেছে ভালো চাকরি পাওয়ার সিঁড়ি। শিক্ষা নিয়েও হচ্ছে বাণিজ্যিকীকরণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় শিক্ষা বিতরণ না করে শিক্ষকরা প্রাইভেটে কোচিং ক্লাস নিতে অনেক বেশি আগ্রহী এর কারণ দ্বিগুন অর্থলোভ।

আগের ছাত্র-Teacher সম্পর্ক আর বর্তমান সময়ের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মধ্যে ব্যবধান অনেক। শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়, ব্রতও বটে। উপদেশদাতা যদি নিজেই বিশ্বস্ততার মধ্যে না থাকেন অর্থাৎ শিক্ষক যা উপদেশ দেন তা যদি তিনি নিজেই পালন না করেন বা নির্ভুল না পড়ান তাহলে তাঁর শিক্ষাদান কার্যকর হয় না। শিক্ষকরাই পারেন বিশ্বমানের অর্জিত শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে শিক্ষার্থীকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে। তাই ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হওয়া উচিত অভিভাবকতুল্য ও বন্ধুসুলভ। শিক্ষক হবেন ছাত্রের গর্ব আর ছাত্র হবে শিক্ষকের অহংকার।

শিক্ষকতা পেশা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দাবি রাখলেও অবহেলা, অযত্ন ও অবজ্ঞার ফলে এই পেশা ক্রমেই মেধাবীদের আকর্ষণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। একজন ভালো শিক্ষক, একজন ছাত্র ও তার অভিভাবকই পারে সামাজিক জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে। তাই ছাত্র-Teacher সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত ও দৃঢ় হওয়া আবশ্যক। স্নেহ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা-সম্মানে যে-সম্পর্ক তৈরি হয় সেই সম্পর্ক যেন সবসময় অটুট থাকে। ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকের পবিত্র সম্পর্ক অটুট রাখা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একান্তই মঙ্গলজনক।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্কের গুরুত্ব (১-পর্ব)

আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তাদের মধ্য থেকেই তৈরি হবে বিজ্ঞানী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র, ব্যবসায়ী, দেশপ্রেমিক, রাজনীতিবিদ, দক্ষ প্রশাসক, উদ্যোক্তা, খেলোয়াড়, সমাজকর্মী, শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক ইত্যাদি। তারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে এবং বিশ্বকল্যাণের কাজ করবে। এই গুরুদায়িত্বের ভার কিন্তু বর্তায় অবিভাবক এবং শিক্ষক উভয়ের উপরই।

প্রাচীনকালে জ্ঞান আহরণই ছিল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই Teacher শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান দান করতেন। বর্তমান সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যও ব্যাপক ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকের প্রধান কাজ, জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসাবে তৈরি করা এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সুষ্ঠু সম্পর্ক গড়ে তোলা। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য এখন চাকরিমুখি, এ ছাড়া এখন শিক্ষার আর যেন কোনও উদ্দেশ্য নেই।

শিক্ষক মানুষকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিয়ে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াবার উপযুক্ত করে তোলেন। শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক যত ভালো হবে, বন্ধুত্বপূর্ণ হবে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে তত ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষক যেমন সম্মানীয়, তেমনি শিক্ষকের কাছে তার শিক্ষার্থীরা সন্তানের মতো প্রিয়। নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি ও শ্রম দিয়ে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলেন।

শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা জীবন এমনকী ব্যক্তি জীবনেও তাদের সাফল্য ও ব্যর্থতায় শিক্ষককে স্মরণ করে। তাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হল সাফল্য- ব্যর্থতা, গ্লানি কিংবা গবের সমান অংশীদারিত্বের সম্পর্ক। শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসে শিক্ষার্থীরা জীবনকে জানতে, চিনতে ও বুঝতে শেখে।

শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে যান জ্ঞানের পথে, আলোর পথে বিচার বুদ্ধি দিয়ে কাজ করার জন্য। Teacher যে-দর্শন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন, তার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের ব্রত ঠিক করে। একজন ভালো শিক্ষক বিপথে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীকেও সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারেন এবং তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। ছাত্র ও শিক্ষকের এই সম্পর্ক খুবই সাবলীল, মধুর, আবার গাম্ভীর্যপূর্ণ।

শিক্ষক প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর ওপর অবিভাবকসুলভ কঠোরতা ও শাসন আরোপ করেন। আবার কখনও বন্ধুর মতো ভালোবাসেন, পরামর্শ দেন, উৎসাহ যোগান, সব সময়ই পাশে থাকেন। শিক্ষকের সাথে ছাত্রের সম্পর্ক পথ প্রদর্শক আর পথিকের সম্পর্কের মতো। Teacher শিক্ষার্থীকে পথ দেখান, ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনা দেন। শিক্ষকের কাছে একমাত্র প্রত্যাশা হল তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের ভালোমানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চান।

একজন শিক্ষক তখনই সফল হবেন যখন তিনি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষিত করতে পারেন। Teacher জ্ঞান বিতরণ করেন ঠিকই কিন্তু তিনি কেবল দিয়েই যাবেন তা হয় না। বরং শিক্ষার্থীর কাছে তাঁরাও কিছু প্রত্যাশা করেন। শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষকের সব চেয়ে বড়ো প্রত্যাশা হল শিক্ষার্থীরা তাঁর দেওয়া শিক্ষায় প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত হবে। তাঁকে সম্মান করবে, শ্রদ্ধা করবে, উপযুক্ত মর্যাদা দেবে।

বিয়ের আগে সেক্স ঠিক নাকি ভুল? (শেষ পর্ব)

প্রি-ম্যারিটাল সেক্স-এর অন্য একটি দিকও আছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েসঙ্গী শারীরিক সুখ দিয়ে ছেলেটির প্রতি তার প্রগাঢ় ভালোবাসা জাহির করতে চায়। আর পুরুষসঙ্গীটি প্রমাণ করতে চায় তার পৌরুষত্ব। এটা কোনও খারাপ বিষয় হয়তো নয়। কিন্তু বিবাহপূর্ব দীর্ঘ এই শারীরিক মিলনের পর যদি কোনও কারণে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে, সমূহ বিপদ মেয়েটির।

প্রথমত, যার সঙ্গে সে এতদিন শরীরী সুখ পেয়েছে, তাকে ভুলে থাকা খুব কঠিন। দ্বিতীয়ত, এই শারীরিক ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি যদি জানাজানি হয়ে যায়, তাহলে অন্য কোনও ছেলে সহজে বিয়ে করতে চাইবে না ‘ভার্জিন’ নয় বলে। এক্ষেত্রে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটানোয় ছেলেটির খুব একটা ক্ষতি হবে না । কারণ, যে যাই বলুক, বাস্তব হল, প্রেমিক-প্রেমিকার শারীরিক মিলনের বিষয়টি লোকে জেনে গেলে, পুরুষসঙ্গীর ভার্জিনিটি নিয়ে কেউ তেমন প্রশ্ন তোলেন না। দোষারোপের আঙুল ওটে মেয়েটির উপরই বেশি। যেন গর্হিত অপরাধটা মেয়েটি একাই করেছে। সমাজ প্রাক বৈবাহিক যৌনতাকে এখনও অনুমোদন করে না।

বিবাহ-পূর্ব যৌনতার প্রতারণার বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে। ছেলে এবং মেয়ে যে-কেউ প্রতারণার শিকার হতে পারেন। কীভাবে? দু’ভাবে। এক— অনেক পুরুষ আছে যারা শরীরী সুখ পাওয়ার জন্য ভালোবাসার ভান করে মেয়েটির সঙ্গে। তারপর সাধ মিটে গেলে কিংবা বিয়ের চাপ দিলেই নিজেকে সরিয়ে নেয় কিংবা ঝগড়া ঝামেলা অথবা মেয়েটিকে দোষারোপ করে সম্পর্কের ইতি টানে। দুই, কোনও ছেলে যদি মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার পর মেয়েটিকে একাধিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে দেখে কিংবা কোনও অপছন্দের কারণে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তাহলে তখন তা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, মেয়েটির মনে কুমতলব থাকলে সে হাতিয়ার করতে পারে যৌনমিলনকে। গুরুতর অভিযোগ আনতে পারে পুরুষ সঙ্গীটির বিরুদ্ধে। ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস’-এর অভিযোগ আনলে ছেলেটি গুরুতর শাস্তি পেতে পারে। দোষ প্রমাণিত হলে জেল এবং জরিমানা দুই-ই হতে পারে ছেলেটির। এরকম ঘটনার খবর মাঝেমধ্যেই হইচই ফেলে দেয়। টলিউডের এক অভিনেতা ঠিক এই অভিযোগে জেলও খেটেছেন কিছুদিন। অনেক রাজনৈতিক নেতাও এই অভিযোগে আইনি সমস্যায় জড়িয়েছেন।

প্রেম ও যৌনতার অবস্থান খুবই কাছাকাছি। প্রেম এলে যৌনতা পিছু নেবেই। বয়ঃসন্ধিকালে যৌন আকাঙ্ক্ষা থাকে তীব্র। তাই ওই সময়ের প্রেমে বিয়ের আগে সেক্স ঢুকে পড়ে সহজেই। যদি উভয়ে সম্পর্কে সৎ এবং দায়বদ্ধ থাকেন, তাহলে সুরক্ষিত যৌন সম্পর্কে হয়তো তেমন কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু বিয়ের আগে দীর্ঘদিন যদি শারীরিক মিলন ঘটে, তাহলে তা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিয়ের পরে পরস্পরকে নতুন করে আর আবিষ্কার করার থাকে না এবং একঘেয়েমিতে তৃতীয় সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার চান্স থাকে প্রবল ৷ তাছাড়া, এমন অনেক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে, সম্পর্কের অন্ধ আবেগে কিংবা অল্প বয়সের অজ্ঞতার কারণে অনেকে ভুল করে বসেন। কেউ বিয়ের আগেই ‘মা’ হয়ে যান, কেউ বা আবার সঙ্গীর সম্পর্কে বিশদে খোঁজখবর না নিয়ে প্রতারিত হন। অতএব যাই করুন না কেন, সতর্কতা জরুরি।

বিয়ের আগে সেক্স ঠিক নাকি ভুল? (পর্ব ০১)

সব সম্পর্কই কি বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়? গড়ায় না। কিন্তু বেশির ভাগ প্রেমিক-প্রেমিকাই বিয়ের স্বপ্ন দেখেন। যে আবেগ নিয়ে ভালবাসাবাসি শুরু হয়, সেই আবেগের বশেই হয়ে যায় প্রি-ম্যারিটাল সেক্স। অভিভাবকরাও বুঝতে পারেন না তরুণ প্রজন্মের এই যৌন স্বাধীনতার বিষয়টিতে ঠিক কতটা অভিভাবকত্ব দেখাবেন কিংবা কী ভূমিকা নেবেন। কিন্তু, বাস্তব এটাই যে, প্রি-ম্যারিটাল সেক্স-এর প্রবণতা বাড়ছে।

আসলে, সেক্স বিষয়টিকে খুব সাধারণ ভাবে দেখা ভুল হবে। বয়ঃসন্ধি থেকে শরীরে যে-হরমোনাল পরিবর্তন আসে, তার ফলে অবধারিত ভাবে তৈরি হয় যৌন চাহিদা। তাই, সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রেও মনের পাশাপাশি প্রচ্ছন্ন শরীরের টানও থাকে অনিবার্য ভাবে। কেউ হয়তো সংযম মেনে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকে, কেউ আবার তা পারে না। আবার কেউ হয়তো সামাজিক অনুশাসনের কথা মাথায় রেখে কিংবা ভয়ে নিজেকে সংযত রাখে। আসলে প্রি-ম্যারিটাল সেক্স-এর বিষয়টির ভালো-মন্দ নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষে।

তরুণ-তরুণীর সম্পর্কের ভিত কতটা মজবুত তার উপরও প্রি-ম্যারিটাল সেক্স-এর ভালো-মন্দ অনেকাংশে নির্ভরশীল। দু’জন-দু’জনকে ভালো ভাবে জানা, বোঝার পর উভয়ের সম্মতিতে প্রি-ম্যারিটাল সেক্স হলে তার ভবিষ্যৎ খুব খারাপ হয়তো হবে না। তবে বিষয়টি এত সহজ নয়, এর অনেক জটিল দিক আছে। যেমন, একবার শারীরিক তৃপ্তির স্বাদ পেয়ে গেলে, পরস্পরকে ছেড়ে থাকা প্রায় অসম্ভব। তখন, ওই উঠতি বয়সে বারবার যৌনসুখ লাভের ইচ্ছে হবে। যদি কেরিয়ার গড়ার জন্য কিংবা অন্য কোনও কারণে বিয়ে করতে দেরি হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তৈরি হওয়া সেক্স-এর চাহিদা ঘনঘন মেটাতে পারলে ভালো, নয়তো সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে নানারকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই সময় হবু বউ কিংবা বর যদি একজন অন্যজনকে না পায় তাহলে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে তৃতীয় কারওর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ারও একটি দ্বিতীয় সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা সুখকর নয়।

প্রি-ম্যারিটাল সেক্স-এর অন্য একটি দিকও আছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েসঙ্গী শারীরিক সুখ দিয়ে ছেলেটির প্রতি তার প্রগাঢ় ভালোবাসা জাহির করতে চায়। আর পুরুষসঙ্গীটি প্রমাণ করতে চায় তার পৌরুষত্ব। এটা কোনও খারাপ বিষয় হয়তো নয়। কিন্তু বিবাহপূর্ব দীর্ঘ এই শারীরিক মিলনের পর যদি কোনও কারণে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে, সমূহ বিপদ মেয়েটির।

অভিভাবকের দায়িত্ব একমাত্র সন্তানের উপর (শেষ পর্ব)

একমাত্র সন্তান হলে কেরিয়ার গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবার দেখাশোনা করাটাও একটা বড়ো Responsibility। এর জন্য অনেক সময় সন্তানকে কিছু স্যাক্রিফাইসও করতে হতে পারে কারণ বৃদ্ধ মা-বাবা তাকে ছাড়া অসহায় হয়ে পড়েন। সুতরাং কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে মা-বাবার দেখাশোনা করা যেতে পারে আসুন জেনে নেওয়া যাক।

বৃদ্ধ মা-বাবার যখন আর কোনও অবলম্বন নেই

বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জীবনসঙ্গী হয়ে ওঠেন। সুখে-দুঃখে একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে থাকেন। এই কাজে শুধু যে স্ত্রী, স্বামীর সঙ্গ দেন তা নয় বাবাকে (শাশুড়ি-শ্বশুর) দেখাশোনার দায়িত্বও কর্তব্যজ্ঞানে নিজের কাঁধে তুলে নেন। ছেলের – স্বামীর মা-মা-বাবারও কর্তব্য ছেলেকে বোঝানো যে, বউমার বৃদ্ধ মা-বাবার Responsibility-ও জামাইকেই নিতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে সবকিছু মনের মতো হয় না।

আমাদের দেশে মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তার বাড়িতে গিয়ে থাকা খাওয়া কোনওটাই করা সমীচীন মনে করা হয়। না। কিন্তু মেয়ে যদি একমাত্র সন্তান হয় এবং তাকে ছাড়া মা-বাবার আর কোনও নির্ভর করার কেউ না থেকে থাকে, তাহলে মেয়ের মনে প্রশ্ন উঠবেই কেন সে বুড়ো মা-বাবার অবলম্বন হতে পারবে না? বিশেষ করে বাবা বা মায়ের মধ্যে কেউ একজন যদি একলা হয়ে যায়, তাহলে মেয়ে চায় তাকে নিজের বাড়ি এনে রাখতে। কিন্তু বেশিরভাগ মেয়ের শ্বশুরবাড়ি এবং তার স্বামী এর বিরোধিতাই করে।

অভিভাবকের সম্মান করা কর্তব্য

সমস্যায় পড়লে বৃদ্ধ মা-বাবা যদি মেয়ের কাছে থাকে তাহলে অন্যায় কোথায়? বড়ো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – – জামাই এবং জামাইয়ের আত্মীয়স্বজনের উচিত তাদের সঙ্গে সম্মানজনক ব্যবহার করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মেয়ের বাবা-মা মেয়ের বাড়ি এসে থাকলে কিছুদিন বেয়ানবাড়ির সম্মান পান, তারপর ধীরে ধীরে ব্যবহারে পরিবর্তন আসতে থাকে। এর ফলে মেয়ের বাবা-মায়ের মনেও হীনম্মন্যতা জন্ম নেয়।

ছেলে যখন অন্য শহরে বা বিদেশে থাকে

সাধারণত পড়াশোনা বা চাকরির জন্য সন্তানকে নিজের শহর ছেড়ে যেতে হয়। পরে মেট্রো শহরে চাকরি হয়ে গেলে সেখানেই বিয়ে করে সেটল হয়ে যায় অনেকেই। মা-বাবা পড়ে থাকে পুরোনো ফেলে আসা শহরে। কেরিয়ার গড়ার আকাঙ্ক্ষায় বাচ্চারা মা-বাবার কাছে ফিরে আসার ঝুঁকি নিতে চায় না। কিন্তু বৃদ্ধ মা-বাবার Responsibility-ও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কখনও তো মা কিংবা বাবা একা হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামলাতে এরকম কিছু করা যেতে পারে।

  • মা-বাবা যেখানে থাকেন সেই বাড়ির কাছাকাছি কোনও বন্ধু থাকলে তাকে অনুরোধ করতে পারেন সন্ধেবেলা, অফিস ফেরার পথে আপনার মা-বাবার সঙ্গে একবার যেন দেখা করে যায়। যাতে শরীর নিয়ে যদি কোনও সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে তৎক্ষণাৎ যেন আপনি খবর পেতে পারেন। যদি অবস্থার আর্জেন্সি বেশি থাকে, আপনার বন্ধুও তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে দিতে পারবেন। এর বদলে আপনিও আপনার বন্ধুকে কোনও ভাবে সাহায্য করতেই পারবেন।
  • মা-বাবার কাছে একজন সবসময়ের বিশ্বস্ত পরিচারক বা পরিচারিকার ব্যবস্থা করে দিন। বাড়ির প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজ করা থেকে সময়ে সময়ে তাদের ওষুধ খাওয়ানো, মালিশ করে দেওয়া, হাঁটতে নিয়ে যাওয়া, খাবার দেওয়া ইত্যাদি ছোটো ছোটো কাজগুলি করতে সাহায্য করবে।
  • ঠিক সময় ওনাদের স্বাস্থ্যবিমা(মেডিক্লেম) অবশ্যই করিয়ে দিন।

আইন কী বলছে

ভারত সরকার বয়স্ক ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য মেনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট ২০০৭ কার্যকর করেছে, যাতে দেশের বয়ঃজ্যেষ্ঠ নাগরিকরা আত্মসম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারেন। এই আইন অনুযায়ী সন্তান এবং আত্মীয়স্বজনকে এই আইনি গুরুদাযিত্ব সামলাতে হবে। যে অভিভাবকেরা নিজেদের দেখাশোনা করতে অক্ষম তারা মেনটেন্যান্স-এর জন্য নিজের বয়ঃপ্রাপ্ত সন্তানকে অনুরোধ করতে পারেন। এই মেনটেন্যান্স-এ প্রয়োজনীয় আহার, মাথার উপর ছাদ, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চিকিত্সা শামিল রয়েছে। বয়স্ক ব্যক্তি যার কোনও সন্তান নেই এবং বয়স ৬০ কিংবা তার ঊর্ধ্বে, এমন ব্যক্তিরও মেনটেন্যান্স চাইবার অধিকার আছে। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে মেনটেন্যান্স পাওয়ার জন্য অ্যাপিল করতে পারেন, বিশেষ করে যে-ব্যক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে সেই বয়স্ক ব্যক্তির সম্পত্তি পাওয়ার দাবিদার।

 

অভিভাবকের দায়িত্ব যখন একমাত্র সন্তানের উপর (১-পর্ব)

বর্তমানে পরিসংখ্যান অনুযায়ী মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। দেশে বয়ঃজ্যেষ্ঠ জনগণের সংখ্যা ২০২১-এ ১৩.৮ কোটি ছাপিয়ে গেছে এবং ২০৩১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১৯.৩৮ কোটি হওয়ার আশা রয়েছে। ‘ন্যাশনাল স্ট্যাটিক্স অফিস’-এর একটি স্টাডিতে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় একটি সমস্যা নতুন করে দেখা দিয়েছে।

আজকাল বেশিরভাগ পরিবারেই একটি করে সন্তান। সন্তানের Responsibility এবং তাদের হায়ার স্টাডি করানো এতটাই খরচাসাপেক্ষ হয়ে পড়েছে যে, একটি সন্তানের বেশি মানুষ করে তোলা বেশিরভাগই অ্যাফোর্ড করতে পারছে না। এছাড়াও কর্মরত মহিলা এবং নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হওয়ার দরুন বহু মানুষই এখন একটির বেশি সন্তানের কথা চিন্তা করেন না। এই ক্ষেত্র্ক একটাই সমস্যা হয়— যখন সন্তান বড়ো হয়ে যায় এবং মা-বাবার বয়স বার্ধক্যে এসে ঠেকে।

বার্ধক্যে এসে মা-বাবার প্রয়োজন হয় সন্তানকে। কিন্তু তখন মা-বাবার খেয়াল রাখার জন্যে বাড়িতে কেউই থাকে না কারণ পড়াশোনার জন্য অথবা চাকরির সূত্রে সন্তানকে বাড়ি থেকে দূরে হয়তো অন্য শহরে বা অন্য কোনও দেশে চলে যেতে হয়। মেয়ে হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাকে শ্বশুরবাড়ি চলে যেতে হয়। একমাত্র নিজের শহরে চাকরি পেলে কিংবা নিজের ব্যাবসা হলে ছেলের, মা-বাবার সঙ্গে থাকার একটা সম্ভাবনা থাকে। বয়স্ক দম্পতির মধ্যে কোনও একজনের আগে যখন মৃত্যু হয়, তখন অপরজন আরও বেশি একাকী হয়ে পড়েন।

বড়ো দায়িত্ব

একমাত্র সন্তান হলে কেরিয়ার গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবার দেখাশোনা করাটাও একটা বড়ো Responsibility হয়ে দাঁড়ায়। এর জন্য অনেক সময় সন্তানকে কিছু স্যাক্রিফাইসও করতে হতে পারে কারণ বৃদ্ধ মা-বাবা তাকে ছাড়া অসহায় হয়ে পড়েন। অভিভাবকেরা নিজেদের অর্জিত সঞ্চয়, নিজেদের ভালোবাসা একমাত্র সন্তানকে উজাড় করে দেন। সুতরাং সন্তানেরও উচিত বয়ঃজ্যেষ্ঠ মা-বাবাকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব নেওয়া। অনেক সময় সন্তান মা-বাবার দায়িত্ব নিতে চাইলেও পরিস্থিতি অনুকূল থাকে না। সুতরাং কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে মা-বাবার দেখাশোনা করা যেতে পারে আসুন জেনে নেওয়া যাক।

যখন আপনার মেয়েই একমাত্র সন্তান

হিয়া বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ওর বয়স এখন ৩৪ বছর। ওর নিজের দুটি সন্তান এবং পেশায় ও শিক্ষিকা। স্বামী বিকাশ খুবই ভালো মানুষ এবং হিয়ার প্রতিও যথেষ্ট যত্নশীল কিন্তু ওর একটাই দোষ শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা তার পছন্দ নয়। এর ফলে হিয়াও নিজের বয়স্ক মা-বাবাকে নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকে।

হিয়ার বাবার দু’বার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে, মা-ও বয়সের ভারে নিজের স্বামীর খুব ভালো করে দেখাশোনা করে উঠতে পারেন না। স্বামীর পেনশনই একমাত্র তাদের আর্থিক সম্বল। সঞ্চিত অর্থ মেয়ের পড়াশোনা এবং বিয়েতে খরচ হয়ে গেছে। বাড়িতে আর্থিক টানাটানি রয়েছে। হিয়া মাঝেমধ্যে মা-বাবাকে আর্থিক সাহায্য করে ঠিকই কিন্তু বিকাশের সেটা পছন্দ নয়।

হিয়ার মা-বাবা ওর বাড়িতে বেড়াতে এলেও বিকাশ স্বাভাবিক ভাবে ওনাদের সঙ্গে মেশে না, যেটা হিয়াকে খুব কষ্ট দেয়। ও সবসময় মা-বাবার কীভাবে খেয়াল রাখবে ভেবে পায় না। বৃদ্ধ মা-বাবার ওই এক মেয়ে ছাড়া আর কোনও অবলম্বন নেই। হিয়াও নিজের Responsibility খুব ভালো করেই জানে। কিন্তু বিকাশ শ্বশুর-শাশুড়ির দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নয়। এই কারণে হিয়াও মাঝেমধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের কথা ভাবে! তবে ও জানে মা-বাবার এতে একদমই মত থাকবে না। এছাড়া বাচ্চাদের কথা ভেবেও হিয়া পিছিয়ে যায়।

একদিন ধৈর্য হারিয়ে হিয়া বিকাশকে প্রশ্ন করল, “যদি আমার মা-বাবার জায়গায় তোমার মা-বাবা হতো তাহলেও কি তুমি এই ব্যবহার করতে? তোমার বৃদ্ধ মা-বাবা থাকলে যেমন তাঁদের দেখাশোনা করা আমাদের দু’জনেরই দায়িত্ব হতো, তেমনি আমার মা-বাবার খেয়ালও তো আমাদের দু’জনেরই রাখা উচিত। ওনাদের আমি ছাড়া আর তো কেউ নেই। আমাকে পড়াশোনা করাতে এবং বিয়ে দিতে ওনারা নিজেদের সঞ্চয়টুকুও শেষ করে ফেলেছেন। এখন তারা বৃদ্ধ হয়েছেন, তাহলে তাদের ডাক্তার দেখানোতে বা আর্থিক সাহায্য করতে কেন তুমি বিরক্তি বোধ করো?”

সেই মুহূর্তে বিকাশ উত্তর না দিলেও হিয়ার কথাগুলোর গুরুত্ব দেরি করে হলেও বিকাশ বুঝতে পেরেছিল। তার প্রমাণ হিয়া পেল যখন সে বাবাকে ডাক্তারের কাছে চেক-আপে নিয়ে যাচ্ছিল, বিকাশ নিজে থেকেই হিয়ার সঙ্গে শ্বশুরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল।

 

অহংকারে সংসার ভাঙে (পর্ব ০১)

প্রাচীন রীতিনীতি অনুযায়ী, মেয়ের বিয়ের পর মা-বাবার দায়িত্ব অনেকটাই কমে যেত। বলা যায়, তারা দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতেন। আসলে এছাড়া তাদের আর কোনও রাস্তাও ছিল না। কারণ, মেয়ের বিয়ের পর মা-বাবার অধিকারও খর্ব হতো। মেয়েকে মেনে চলতে হতো শ্বশুরবাড়ির রীতিনীতি এবং শাসন। তাই, মেয়ের বাবা-মা চাইলেও মেয়ের সংসারে নাক গলাতে পারতেন না। কিন্তু বর্তমানে অনেক কিছুর বদল ঘটেছে। বেশিরভাগ সংসারে এখন স্বামীর থেকে স্ত্রী-র কথা-ই বেশি চলে। আর এই জন্য, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সমস্ত ছোটোবড়ো ঘটনায়ও এখন হস্তক্ষেপ করেন মেয়ের মা।

এখন মেয়ে তার সংসারের সবকিছু শেয়ার করে নিজের মায়ের সঙ্গে। স্বামী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ছোটোখাটো ঝগড়া অথবা মনোমালিন্য হলেও সেই খবর চলে যায় মেয়ের মায়ের কানে। এর ফলে, যে-ঝগড়া বা মনোমালিন্য খানিক পরেই হয়তো মিটে যেত, তা মেয়ের মায়ের ইন্ধনে জটিল রূপ নেয় অনেকসময়।

মেয়েকে বোঝানোর পরিবর্তে যখন মেয়ের মা তার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে ঝগড়া-বিবাদের বিষয়ে কৈফিয়ত চান, তখন ঝগড়া-মনোমালিন্যের বিষয়টি আর সাধারণ স্তরে থাকে না। শুরু হয় বাগবিতণ্ডা এবং অবশেষে হার-জিতের অবধারিত লড়াই। আর ঠিক এই অবস্থায় সবথেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় জামাই। সে তখন তার মা-বাবাকেও কিছু বোঝাতে পারে না, আবার স্ত্রী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়িকেও কিছু বলার সাহস পায় না। এই সাংসারিক কূটকচালির জেরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে চিড় ধরা শুরু হয়। আর এসব জটিলতার অন্তরালে থাকে ইগো বা হার না মানার মতো এক ধরনের অহংবোধ।

হার না মানার জেদ

বিয়ের পর প্রথমদিকে যতদিন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে আবেগ থাকে, ততদিন ঝগড়া-মনোমালিন্য শুরু হলেও তা স্থায়িত্ব পায় না। কিন্তু আবেগ যখন কমতে থাকে, তখন শুরু হয় হার না মানার জেদ। কেউ সামান্য ভুল কিছু বলে ফেললে কিংবা ভুল করলে তখন আর মানিয়ে নেওয়া কিংবা ভুল শোধরানোর সময় কেউ কাউকে দেয় না। আসলে এ এক ধরনের অহংবোধ। যার ইগো যত প্রকট, সে তত বেশি জেদি। আর এই ধরনের জেদ ধীরে-ধীরে সংসারে ঘুণ ধরিয়ে দেয়।

হয়তো মেয়ের মা-বাবাও চান না মেয়ের সংসারে অশান্তি হোক। কিন্তু বারবার মেয়ের কাছ থেকে তার শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিষয়ে অভিযোগ শুনতে শুনতে, মেয়ের মা-বাবাও অনেক সময় ধৈর্য হারিয়ে এবং আশঙ্কিত হয়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন। আবার অনেকসময় অদূরদর্শিতার কারণেও ছোটোখাটো সমস্যায় আতঙ্কিত হয়ে অতি সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে নেন মেয়ের মা-বাবা এবং মেয়েটি নিজেও।

কেউ ভুল বললে কিংবা ভুল করলে অবশ্যই তার বিরোধিতা করা যায়। কিন্তু শুধু অহংকারের বশবর্তী হয়ে হঠকারী পদক্ষেপ নেওয়াও এক ধরনের মুখতা এটা— মাথায় রাখেন না অনেকে।

পছন্দঅপছন্দের বিষয়

কারও স্বভাব, চলন-বলন আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে কিন্তু তাই বলে তাকে বোঝানোর পরিবর্তে সবসময় অপমান করাও শোভা পায় না। মনে রাখবেন, আপনি যেমন অন্যের কিছু বিষয় পছন্দ করেন না কিংবা মানতে পারেন না, ঠিক তেমনই আপনার কোনও বিষয় অন্যের কাছেও অপছন্দের হতে পারে। যেমন কেউ হয়তো জোরেজোরে কথা বললে আপনার অস্বস্তি হয়, ঠিক তেমনই আপনি হয়তো খাবার চিবোনোর সময় অস্বাভাবিক আওয়াজ করেন— যা অন্যের কাছে অস্বস্তিকর হতে পারে। অতএব, ক্ষমার মনোভাব রাখা জরুরি সংসারে সুখশান্তি বজায় রাখার জন্য।

বরফ-ঠান্ডা দাম্পত্যে উষ্ণতার ছোঁয়া

কথায় বলে, শিলনোড়া একসঙ্গে থাকলে ঠোকাঠুকি লাগবেই। অর্থাৎ, বৈবাহিক জীবনে ঝগড়া, মনোমালিন্য এসব চলতেই থাকে। এতে সম্পর্ক ভেঙে যায় না। কিন্তু ঝগড়া-অশান্তি মাত্রাছাড়া হলেই বিপত্তি। একই ছাদের তলায়, একই বিছানায় রাত কাটালেও শারীরিক কিংবা মানসিক ভাবে স্বামী-স্ত্রী দুই মেরুতে অবস্থান করেন। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় বরফ-শীতল সম্পর্ক।

এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। দুই বন্ধুর মধ্যে এক বন্ধুকে বলতে শোনা গেল, ‘রেস্তোরাঁয় ফিরে চল, বাড়ি যেতে ভালো লাগছে না।’

– ‘কেন?’

‘বিকজ, নোবডি ইজ ওয়েটিং ফর মি দেয়ার।’

অর্থাৎ, কোনও দাম্পত্য সমস্যা থেকেই জনৈক বন্ধুর ওই আক্ষেপ-পূর্ণ সংলাপ। অবশ্য শুধু ওই ব্যক্তি একা নন, খোঁজখবর নিলে এমন আরও অনেকের কাছ থেকেই দাম্পত্য-অসুখের কথা শোনা যাবে। হয়তো এই অসুখী দম্পতির সংখ্যাটা পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তবে, অসুখী দাম্পত্যের পরিণতি যে সবার ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়, এমন নয়। কিন্তু অশান্তি চরম পর্যায়ে যাওয়া মানেই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ক্ষতি।

আসলে, পরিপূর্ণ সুখ না পেলেও, প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে শান্তিতে বেঁচে থাকাটাই কাম্য। কারণ, জীবন বহমান। মানসিক চাপ নিতে- নিতে কখন যে যৌবন উবে গিয়ে বার্ধক্য স্বাগত জানাবে, তা টেরও পাওয়া যাবে না। অথচ, জন্ম থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের মধ্যে, বিবাহিত জীবনের মেয়াদ-ই বেশি। তাই এই বিবাহিত জীবনে অসুখী হওয়া মানে, জীবনটাই বৃথা হয়ে যায়। অতএব, দাম্পত্য জীবনে সমস্যামুক্ত থাকতে হবে।

দাম্পত্যে অসুখী থাকার পিছনে নানারকম সমস্যা থাকে। কারও আর্থিক, কারও মানসিক, কারও শারীরিক, কারও-বা আবার থাকে সাংসারিক ঝামেলা। অনেকের দাম্পত্যে আবার সমস্যা তৈরি হয় নিজেদের ভুলের জন্য। কীভাবে দাম্পত্য-জীবনকে সুখী করতে হয়, সেই আদবকৌশল জানেন না অনেকে কিংবা অনেকে বেশি আত্মকেন্দ্রিক কিংবা কেরিয়ারিস্ট হওয়ার কারণে, জীবনসঙ্গীকে অবহেলা করেন এবং এর মাশুল গোনেন, বঞ্চিত হন সঠিক দাম্পত্যসুখ থেকে।

উষ্ণতা ফেরানোর পরামর্শ

  • শুধু সোশ্যাল স্টেটাস বজায় রাখার জন্য বিয়ে করবেন না। সঙ্গীকে আন্তরিক ভাবে ভালোবাসতে না পারলে কিংবা পছন্দ না করলে বিয়ে করা উচিত নয়। আর যদি তাই ঘটে থাকে, তাহলে সঙ্গীর ভালো গুণগুলির কথা ভেবে নতুন ভাবে ভালোবাসতে শুরু করুন এবং দাম্পত্যে উষ্ণতা উদ্ধার করুন।
  • সম্পর্কের অবনতি ঘটলে, এর কারণ অনুসন্ধান করুন। কারণ খুঁজে পেলে, হয় নিজে সমস্যার সমাধান করুন অথবা মনস্তাত্ত্বিকের পরামর্শ নিন।
  • আর্থিক কারণে যদি দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি ঘটে, তাহলে হয় দুজনে আলোচনার মাধ্যমে আয় এবং খরচের মধ্যে ভারসাম্য রেখে সমস্যা দূর করুন, নয়তো আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজুন।
  • শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ কিংবা পরিবারের অন্য কারওর সঙ্গে যদি মানিয়ে না নিতে পারার কারণে মানসিক সমস্যা হয়, তাহলে জীবনসঙ্গীর উপর অভিমানে মুখ ভার না করে, বরং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যামুক্ত হোন।
  • একে-অপরকে স্পেস দিন, সম্মান দিন এবং দোষ-ত্রুটি শুধরে নিয়ে ভালোবাসার চেষ্টা করুন।
  • রাগ, জেদ কমান। ধৈর্য রেখে সমস্যার সমাধান করুন। সমস্যা যতই গভীর হোক, ভেঙে না পড়ে ঠান্ডা মাথায় সমস্যা কাটাবার চেষ্টা করুন।
  • অহেতুক সন্দেহ করবেন না, পরস্পরের উপর বিশ্বাস রাখুন।
  • কোনও অনুষ্ঠান-উপলক্ষ্য ছাড়াই সঙ্গীকে উপহার দিন তার পছন্দের সামগ্রী।
  • দৈনন্দিন একঘেয়েমি কাটানোর জন্য মাঝেমধ্যে দুজনে রেস্তোরাঁয় খান এবং দূরে কোথাও বেড়াতে যান।
  • সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখার জন্য সেক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, শারীরিক তৃপ্তিলাভের চেষ্টা করুন। এরজন্য শারীরিক-মানসিক সুস্থতা জরুরি। যদি দুজনের কারও স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে, তাহলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগমুক্ত হোন। আর যৌনসঙ্গমের আগে সঠিক তৃপ্তিলাভের জন্য ফোরপ্লে জরুরি। তবে সঙ্গীর পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে জেনে-বুঝে নিয়ে তারপর শারীরিক মিলনে লিপ্ত হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, কোনওরকম হঠকারী পদক্ষেপ শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। সঙ্গীর অপছন্দের কোনও কিছু থাকলে, সেই বিষয়ে জোর খাটাবেন না। এতে, সঙ্গী মানসিক আঘাত পেতে পারেন এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।

সম্পর্কে উষ্ণতা বজায় রাখার জন্য সবদিক বিচার-বিবেচনা করে চলা উচিত। বিশেষ করে, দৈনন্দিন একঘেয়েমি কাটানোর জন্য বয়সের কথা ভুলে শরীরে-মনে তারুণ্য বজায় রাখতে হবে। ইমেজ চেঞ্জ করতে হবে এবং প্রতিদিনই পরস্পরকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিয়ে এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাটাও একটা শিল্প (আর্ট)। কারণ, বিয়ের প্রথম দিকে ভালোবাসা যতই নিবিড় থাকুক না কেন, সম্পর্কের বাঁধন একটি সরু সুতোর উপর দাঁড়িয়ে থাকে। অতএব, বোধ-বুদ্ধিকে পুঁজি করে, আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সচল থেকে উষ্ণতা ফিরিয়ে আনতে হবে কিংবা উষ্ণতা ধরে রাখতে হবে দাম্পত্য সম্পর্কে।

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব