পরিচ্ছন্নতার পাঠ

উমার একটা বড়ো সমস্যা হল, তার ১০ বছরের ছেলে কনিষ্ক তার কথা শোনে না। অন্যান্য বাচ্চাদের মতো কনিষ্কও খেলাধুলা করতে ভালোবাসে। ঘরে একেবারেই তার মন বসে না, যার কারণে দিনের বেশিরভাগ সময়েই তাকে পাড়ার পার্ক-এ লাফালাফি-ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। ঘরে ফিরে হাত না ধুয়ে, সেই নোংরা হাতেই বিস্কুট নয়তো অন্য কিছু খেতে থাকে সে। মায়ের বারবার মানা করা সত্ত্বেও সে শোনে না।

এই সমস্যা শুধুমাত্র উমার নয়, আমাদের আশেপাশে থাকা বেশিরভাগ বাচ্চাই কনিষ্কর মতো। তাদের মায়ের অথবা বাড়ির অন্যদের ‘হাইজিন’ সংক্রান্ত কথা না শুনে,  বাড়ির সকলকে চিন্তায় ফেলে দেয়। খেলনা, ভিডিয়ো গেমস থেকে শুরু করে জুতোয় পর্যন্ত জীবাণু থাকে। বাড়িতে হাইজিনিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য স্প্রে, অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল সাবান, ফিনাইল ইত্যাদি ব্যবহার করুন, যাতে পোকামাকড় মুক্ত হয়। এটাই সঠিক উপায় কিন্তু আপনাদের কি মনে হয় না যে, বাচ্চাকে সুস্থ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য হাইজিন সম্পর্কিত সঠিক পথগুলি বাতলে দেওয়া উচিত তাদের।

শিক্ষা জরুরি

যখন আপনার আদরের সোনা ছোটো ছিল, তখন তার ঘামের গন্ধও নাকে বড়ো মিষ্টি লাগত। সে যখন হাতে রুটির টুকরো নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ত, তখন তার এই হেন আচরণও খুব ভালোলাগতো। গোটা গালে যখন জ্যাম মেখে আপনার সামনে হাজির হতো, তখন আপনি সেটিকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখতেন। কিন্তু এখন আপনার আদরের সেই শিশুটি আগের তুলনায় বড়ো হয়েছে, বেড়েছে দুরন্তপনাও। এই রকম দুরন্ত বাচ্চাকে পরিষ্কার করানো ও স্নান করানো মায়েদের কাছে প্রায় যুদ্ধের-ই সমান।

‘হাইজিন’-এর মানে, আপনার বাচ্চাকে পরিষ্কার কাপড়জামায় সুন্দর আর ভালো দেখানোই নয়, রোগ থেকেও দূরে রাখা। স্কুল-এর বাচ্চাদের সঠিক হাইজিন হ্যাবিট তৈরি করা ভীষণ প্রয়োজন কারণ স্কুল যাওয়ার পর ওদের নাক, মুখ এবং হাত থেকে ছড়ায় জীবাণু। যদি শুরুতেই বাচ্চাদের হাইজিন সম্বন্ধে ধারণা দেওয়া যায় তাহলে বাচ্চারা সুস্থ, সবল থাকার চেষ্টাটা অন্তত করতে পারবে।

যখন আপনার বাচ্চা কৈশোরে পা রাখে তখন হরমোনাল কারণে ঘামের গন্ধ তীব্র হয় এবং ত্বক তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় হাইজিন মেনটেন করাটা খুব জরুরি।

সুন্দর হাসি

প্রত্যেকদিন বাচ্চাদের ব্রাশ করার অভ্যাস করান। যদি বাচ্চা ছোটো হয়, সেক্ষেত্রে আপনি নিজে দিনে একবার টুথব্রাশ দিয়ে বাচ্চার দাঁত পরিষ্কার করে দিন। ভালো কোম্পানির, মাথা ছোটো এবং নরম ব্রাশ দিয়েই দাঁত পরিষ্কার করা উচিত। তবেই সেটি দাঁতের কোনায় কোনায় পৌঁছে, ক্যাভিটিজ দূর করবে। বাচ্চা যখন আর একটু বড়ো হয়ে যাবে তখন তাকে দাঁতের পাশাপাশি জিভও পরিষ্কার করতে শেখাতে ভুলবেন না। ওদের বলুন, জিভ পরিষ্কার না করলে মুখে গন্ধ হবে, বন্ধুরা কেউ তোমার সঙ্গে মিশবে না। মুখের দুর্গন্ধ তাড়ানোর জন্য বাচ্চাদের কখনও মাউথওয়াশ কিনে দেবেন না। মাউথওয়াশ ব্যবহার করার জন্য নির্দিষ্ট বয়স থাকে, যেটা একজন দন্তচিকিৎসকই সঠিকভাবে বলতে পারেন।

হাত পরিষ্কার রাখা

জীবাণু সবথেকে বেশি ছড়ায় হাত থেকে। এইজন্য ঘরের প্রত্যেক সদস্যের হাত ধোয়ার গুরুত্ব জানা উচিত। কাশি হলে বাচ্চারা মুখে হাত দিয়েই কাশি আটকাবার চেষ্টা করে এবং সেই হাতই বিস্কুটের কৌটোয় ঢোকায়। খাওয়ার আগে এবং পরে, বাইরে থেকে এসে, বাথরুমের কাজ সেরে, পোষ্যদের সঙ্গে খেলার পর এবং নাক পরিষ্কার করার পর হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক।

এর মানে এই নয় যে, আপনি আপনার বাচ্চাকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে দেবেন অথবা সবসময় অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল সাবান দিয়ে হাত ধুতে বলবেন। সাধারণ সাবান আর গরম জল হলেই হবে। হাত ধোয়ার সময় এইটুকু খেয়াল রাখতে হবে যেন হাতে সাবান না লেগে থাকে। এরপরেই বাচ্চাকে পরিষ্কার ও শুকনো তোয়ালেতে হাত মুছে নিতে শেখান। বাথরুমে টিশু পেপারও লাগিয়ে রাখতে পারেন। মুখ ও নাকে হাত দিতে মানা করুন। নখ খাওয়া এবং নাকে আঙুল দেওয়া দৃষ্টিকটু তো বটেই, এটি হাইজিন-এরও সমস্যা ঘটায়।

অন্তর্বাস

গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে বাচ্চারা যখন বাইরে খেলতে যায়, তখন তার অন্তর্বাস থেকেও দুর্গন্ধ বের হয়। কিছু মায়েরা বাচ্চাদের উপরের জামা বদলে দেন। কিন্তু অন্তর্বাসের দিকে নজর দেন না। বাচ্চাদের ভিতরের পোশাকও বদলানোর অভ্যাস করান।

চুলের পরিচর্যা

চার বছরের অহনা চুল আঁচড়াতে একদম পছন্দ করে না। সেই জন্য তার চুল সবসময় জটে ভর্তি থাকে। একদিন অহনার মা অহনাকে শ্যাম্পু করানোর সময় দেখলেন তার ত্বকের উপর সাদা রঙের একটি আস্তরণ জমেছে। ডাক্তার দেখানোর পরে অহনার মা জানতে পারে, চুল না আঁচড়ানোর ফলে তার মাথার ত্বকে সংক্রমণ হয়েছে।

অহনার মতো অবস্থা যাতে আপনার বাচ্চার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। রোজ চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে দিন আপনার বাচ্চার। রোজ চুল আঁচড়ালে বাচ্চার ত্বকে কোনও মৃত কোশ জমবে না, সঙ্গে  চুলও জটমুক্ত ও সুন্দর দেখাবে।

যদি আপনি, আপনার বাচ্চাকে এটা রপ্ত করাতে পারেন তাহলে সপ্তাহে একদিন ভালো করে চুল ধুলেই হবে। বাচ্চাদের মাথায় মাইল্ড শ্যাম্পু-ই ব্যবহার করুন, যেটা স্পেশালি বাচ্চাদের জন্যই তৈরি। যেসব বাচ্চার কোঁকড়ানো চুল তাদের ক্ষেত্রে বাচ্চাদের কন্ডিশনারও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া নারকেল তেল অথবা বাদাম তেলও ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত চুল কাটাও জরুরি। এই প্রক্রিয়াটি ৩-৪ সপ্তাহ অন্তর চলতে পারে। মেয়েদের লম্বা চুলের ক্ষেত্রে মাসে একবার ট্রিমিং করানো উচিত। নিজের চিরুনি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার না করারও পরামর্শ দিন। অন্যথায় মাথায় উকুন চলে আসার ভয় থাকে। মাসে একবার চিরুনি পরিস্কার করাটাও বাঞ্ছনীয়।

স্নান একান্ত প্রয়োজন

বেশ কিছু বাচ্চা রোজ স্নান করা পছন্দ করে না। স্নান না করার সবথেকে বড়ো কারণ হল, খেলায় বিঘ্ন ঘটা অর্থাৎ চান করতে গেলে সেই সময়টায় খেলতে পারবে না। সেইসব বাচ্চার মায়েদের জন্যও আছে কিছু উপায় যার দ্বারা আপনার বাচ্চার কাছে স্নান করাটাও একটা আনন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

যেমন, বাচ্চাদের স্নান সংক্রান্ত সুন্দর অ্যাক্সেসরিজ বা খেলনা বাথরুমে রাখতে পারেন। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য তৈরি বিভিন্ন আকারের সাবান রাখতে পারেন, যেটা দেখে বাচ্চার খেলনাই মনে হবে। স্নানের সময় বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের গল্পে ব্যস্ত রাখুন, যাতে সে একদম ভয় না পায়।

এছাড়াও প্রত্যেকদিন ভালো করে পা ধুয়ে, মুছে পরিষ্কার করে দিন। গরমের সময় ট্যালকম পাউডার খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্নানের পর গায়ে পাউডার মাখলে বেশ ঠান্ডা অনুভূতিও হবে আর দুর্গন্ধের হাত থেকে বাঁচবে আপনার বাচ্চা। তবে, এইসব জিনিস ব্যবহার করার আগে জেনে নিন বাচ্চার কোনও কিছুতে অ্যালার্জি আছে কিনা।

খেলনা পরিস্কারও জরুরি

এমন কোনও বাচ্চা নেই,যে খেলনা পছন্দ করে না। কিন্তু এটা কি জানেন, যে– খেলনাটি নিয়ে আপনার বাচ্চা খেলাধুলা করছে তার মধ্যে জীবাণু আছে কিনা? যদি আপনি এখনও এটা নিয়ে ভেবে না থাকেন, তাহলে এখন ভাবুন। বেশিরভাগ জীবাণু সবথেকে আগে জিনিসপত্র এবং হাত থেকেই আসে। এগুলি থেকে বাচ্চাদের ফ্লু, হাঁপানি এবং বিভন্ন ধরনের অ্যালর্জি হওয়ার ভয় থাকে। এই রকম যাতে না হয়, তার জন্য কয়েকটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখুনঃ

  •   এমন খেলনা কিনুন, যেটা ধুতে পারবেন। যেসব খেলনা ধোয়া সম্ভব নয় সেগুলি ফেলে দিন। খেলনা মাঝে-মাঝে পরিষ্কার করুন, নয়তো আপনার বাচ্চার সর্দিকাশি ও জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাবে।
  •   যদি আপনার বাচ্চা খেলনা নিয়ে, কোনও অসুস্থ বাচ্চার আশেপাশেও যায়, সেক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি খেলনাটি ধুয়ে ফেলুন। জলের মধ্যে ডেটল-এর মতো কিছু অ্যান্টিসেপটিক মিশিয়ে নিন ধোয়ার আগে।

স্বহস্তে গৃহসজ্জা

সারাদিনের কর্মব্যস্তাতার পর বাড়ি ফিরে যেমন আরাম-আয়েশ চান সবাই, তেমনই চান মানসিক শান্তি। আর এই মানসিক শান্তির অন্যতম মাধ্যম অবশ্যই ঘরের অভ্যন্তরীণ নান্দনিকতা। যে নান্দনিকতা হয়ে উঠবে আপনার শিক্ষা এবং রুচির পরিচয় বহনকারী।

মনে রাখবেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকে একটা শিল্পী সত্তা। শুধু একটু কষ্ট করে জাগিয়ে তুলতে হবে সেই সত্তাকে। তাহলেই দেখবেন আপনি হঠাৎ-ই হয়ে উঠছেন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ সৃজনশীল মানুষ। ডু ইট ইয়োরসেল্ফ হোক আপনার জীবনের নতুন মন্ত্র। লেগে থাকুন কাজে। এরজন্য বেছে নিন বাড়িতে থাকা পুরোনো, পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। আর তাই দিয়ে নিজেই সাজিয়ে তুলুন নিজের ঘরবাড়ি। এক্ষেত্রে যদি টুকিটাকি জিনিসপত্র কেনাকাটাও করতে হয়, তাহলেও তা একজন পেশাদার ইন্টিরিয়র ডিজাইনারের পারিশ্রমিকের এক দশমাংশ অর্থের বেশি হবে না। অতএব জেনে নিন, কম খরচে নিজেই কীভাবে সাজাবেন আপনার বাড়িঘর।

পার্সনালাইজ্ড ওয়াল ক্লক

ফোটো ওয়াল ক্লক-এর সৌন্দর্যটাই আলাদা। তাই ঘরে ব্যবহৃৎ ওয়াল ক্লকটি খুলে, কভার আলাদা করে দিন। এবার একটি দু-ফুট বাই দু-ফুট কার্ডবোর্ড নিয়ে দেয়ালে আটকান। জীবনের বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্তের বারোটি ছবি বৃত্তাকারে সমান দূরত্বে আঠা দিয়ে আটকে দিন কার্ডবোর্ডে। মাঝখানের ফাঁকা অংশে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ– যে-কোনও একটি রং ব্যবহার করুন। অবশ্যই অয়েল পেইন্ট ব্যবহার করবেন। এরপর রং শুকিয়ে গেলে ঘড়ির সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টার কাঁটাযুক্ত মেশিন-এর অংশটুকু কার্ডবোর্ড-এর কেন্দ্রস্থলে ফেবিকুইক দিয়ে আটকে দিন। এবার, কার্ডবোর্ড-এর দুদিকে দুটো প্লাস্টিকের গোলাপফুল আটকে দিন ফেবিকুইক-এর সাহায্যে। ব্যস, রেডি হয়ে গেল আপনার পার্সনালাইজ্ড ওয়াল ক্লক।

শু বক্সেস

জুতো ছাড়া পথ চলা অসম্ভব। আর পথে পায়ের শোভাবর্ধনের জন্য কয়েকজোড়া জুতো চাই-ই চাই। কিন্তু বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের যদি কয়েকজোড়া জুতো থাকে, তাহলে পুরো পরিবারের মোট কতজোড়া জুতো হবে, তা আন্দাজ করা যেতে পারে। এরমধ্যে চটি, শু, স্যান্ডাল প্রভৃতির ছড়াছড়ি। আর এই এতজোড়া জুতো যদি ঠিকমতো গুছিয়ে না রাখতে পারেন, তাহলে আপনার ঘরের সৌন্দর্য যে বিনষ্ট হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই একটু বুদ্ধি খরচ করে জুতো রাখার ব্যবস্থা করুন।

জুতো কেনার পর বক্সগুলো ফেলে না দিয়ে, র‍্যাপিং পেপার দিয়ে মুড়ে রাখুন। দশটির মতো বক্স জমানোর পর একটির সঙ্গে অন্যটি জুড়ে দিন। এরপর টেবিল-এর নীচে অথবা দরজার পিছনে রাখুন ওই জোড়া দেওয়া বক্সেস। এবার প্রত্যেকটি খোপ-কে ব্যবহার করুন এক-এক জোড়া জুতো রাখার জন্য। দেখবেন, জুতো রাখার সমস্যা যেমন মিটেছে, ঠিক তেমন-ই ঘরের সৌন্দর্যও রক্ষা পেয়েছে।

ওয়াল আর্ট

ঘরের দেয়াল ঠিক যেন মনের আয়না। তাই আপনার শৈল্পিক-মনের প্রতিফলন ঘটান সমস্ত দেয়ালে। এরজন্য অয়েল পেইন্ট কিংবা ফেব্রিক কালার-এর সাহায্য নিন। যদি নিজে চিত্রকলায় পারদর্শী না-ও হন, তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। আপনার পছন্দমতো ছবি কিংবা নকশা গুগ্ল থেকে সার্চ করে ডাউনলোড করুন এবং পেনড্রাইভ-এ তুলে রাখুন। এরপর যে-কোনও স্ক্রিণ প্রিন্ট হাউস-এ গিয়ে স্ক্রিণ প্লেট বানিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরুন। এবার দেয়ালের যে-জায়গায় আর্ট ওয়ার্ক করতে চান, ওখানে স্ক্রিণ প্লেট বসিয়ে রং-এর প্রলেপ দিয়ে স্ক্রিণ প্লেট সরিয়ে রাখুন। কীভাবে ওয়ালে এই স্ক্রিণ প্রিন্টিং করবেন, সেই টেকনিক স্ক্রিণ প্রিন্ট হাউজ-এর থেকে জেনে নিন অথবা গুগ্ল সার্চ করেও দেখে নিতে পারেন। আর যদি এসব না করে আরও সহজে ওয়াল আর্ট করতে চান, তাহলে যে-সব গাছের পাতা দেখতে খুব সুন্দর, সেই গাছ থেকে পাতাসমেত ছোটো ডাল ভেঙে বাড়ি আনুন। এরপর বড়ো একটা থালায় রঙের প্রলেপ দিয়ে পাতাসমেত গাছের ডাল চেপে ধরুন এবং তা তুলে নিয়ে দেয়ালে চেপে ধরুন। দেখবেন, দারুণ ওয়াল আর্ট তৈরি হয়ে যাবে।

ওয়াল লাইট্স-আর্ট

কলকাতার অনেক প্রাইভেট বাসে উঠলে দেখতে পাবেন, সন্ধে নামলে বাসের ভেতরে জ্বলছে জোনাকির মতো আলো। দেখতেও লাগে বেশ! ইলেট্রিক্যাল শোরুম-এ গিয়ে কিনে আনুন ওই আলোর স্ট্রিপ। এরপর বাড়িতে ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান ডেকে ঘরের রুফ-লাগোয়া ওয়াল-এ লাগিয়ে দিন ওই স্ট্রিপ লাইট। এছাড়া বাচ্চাদের দুধের খালি কৌটো পছন্দমতো তেলরং করে ঘরের চারটি কোণে ব্যবহার করতে পারেন ঝুলন্ত আলোর মতো। এক্ষেত্রে কৌটোর ভেতরে থাকবে ছোট্ট একটা কম ওয়াট-এর বাল্ব।

ডিজাইনার কুশন

চাইলে আপনার বসার-ঘরের সোফা-কে শৈল্পিক রূপ দিতে পারেন। ঘরের দেয়ালের রঙের সঙ্গে মানানসই একরঙা কুশন কভার কিনে আনুন। যদি খুব বেশি ভালো কিছু আঁকতে না-ও পারেন, তা-ও চলবে। শুধু পছন্দের কোনও ফেব্রিক কালার নিন আর নিজের মতো করে কুশনের উপর ছোটো-বড়ো ডট্স দিয়ে ভরিয়ে দিন। অশ্বত্থ অথবা দেবদারু গাছের পাতায় রং লাগিয়েও কুশন কভারে ছাপ দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারেন।

মিক্সড আর্টওয়ার্ক

মাটির হাঁড়ি কিংবা কলশি কিনে এনে নিজের পছন্দমতো তেল রং করুন। ঘরের কোণে বসান। গোটাদশেক পাকা ভুট্টা কিনে এনে রোদে কয়েকদিন ফেলে রাখুন। ভুট্টা ভালো ভাবে শুকিয়ে গেলে পাঁচটি ভুট্টা পাঁচরকম রং করুন। এরপর রং করা মাটির হাঁড়ি কিংবা কলশির মুখে রাখুন ভুট্টাগুচ্ছ। এক্ষেত্রে রঙিন ভুট্টার মাঝেমাঝে একটি করে প্লেন ভুট্টা সাজিয়ে একসঙ্গে বেঁধে হাঁড়ি কিংবা কলশির মুখে বসাতে হবে সোজা ভাবে। এরফলে রঙিন কলশি এবং দৃশ্যমান ভুট্টার কম্বিনেশন ঘরের শোভা বাড়াবে। এছাড়া, বাজার থেকে ছোটো-বড়ো কিছু বেতের ঝুড়ি কিনে এনে ওর মধ্যে প্লাস্টিকের ফুলপাতা রেখে ঘরের চারটি কোণে ঝুলিয়ে রাখলেও দেখতে ভালো লাগবে। অবশ্য শুধু এই কয়েকটি জিনিস দিয়েই নয়, ঘরে পড়ে থাকা নানারকম সামগ্রী দিয়েই ঘর সাজাতে পারবেন নিজেই। এরজন্য প্রয়োজন শুধু ইচ্ছেশক্তিকে জাগিয়ে রাখা। খালি দেশলাই বাক্স থেকে শুরু করে গাছের শুকনো ডালপালা, সবকিছু দিয়েই সাজিয়ে তোলা যায় ঘরবাড়ি।

ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এ থাকুন মেন্টালি ফিট

করোনার আবহ আমরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।তাই এখনও আমরা এক অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আর এই পরিস্থিতি আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন সূচিত করেছে। কেউ এখন কর্মহীন, কেউ-বা আবার কোনও রকমে নিজের কাজ টিকিয়ে রেখেছেন। অনেক সংস্থা খরচ বাঁচানোর জন্য অফিস বন্ধ করে কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে নির্দেশ দিয়েছে। আবার বেতন কমে যাওয়ার কারণে অনেকক্ষেত্রে কর্মীরাও মালিকপক্ষকে আনুরোধ করে ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর ব্যবস্থা করেছেন। অর্থাৎ, আয় আনুযায়ী ব্যয়ের রাস্তা বেছে নিয়ে বেঁচে থাকার এক অঘোষিত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সব্বাই।

এই নতুন পথে চলতে গিয়ে কিছু বাধা-বিপত্তির মুখোমুখিও হতে হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি প্রধান সমস্যা হল শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা। আর এসবের মূল কারণ হল, অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং কিছু বেনিয়ম। তবে ভয় নেই। বিশেষজ্ঞের দেওয়া কিছু পরামর্শ মেনে চললেই, সমস্যামুক্ত হওয়া সম্ভব। এর জন্য যা যা করতে হবে, তারই বিবরণ রইল বিশদে।

রুটিন ঠিক রাখুন : বাড়িতে থেকে কাজ করছেন মানে এই নয় যে, আপনি সময়ে তোয়াক্কা না করে, যখন খুশি খাবেন, যখন খুশি শোবেন আর যখন খুশি কাজ করবেন! এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শরীর একটা মেশিনের মতো। মেশিনের যত্ন সঠিক ভাবে না নিলে যেমন মেশিন বিগড়ে যায়, তেমনই অবহেলা করলে শরীরও খারাপ হতে বাধ্য। অতএব, অফিস যখন যেতেন, তখন খাওয়া, ঘুমোনো কিংবা শরীরচর্চা যেমন করতেন, বাড়িতে থেকে কাজ করেও একই রুটিন মেনে চলুন।

ওয়ার্কআউট করুন নিয়মিত : মর্নিংওয়াক-এর চেয়ে ভালো এক্সারসাইজ আর হয় না। পারলে কুড়ি মিনিট জগিং করুন। সেইসঙ্গে, দশটা পুশ-আপ এবং কুড়িটা স্কোয়াট। এই পদ্ধতিতে শরীরের ওজন আয়ত্তে থাকবে। তবে ওভার ওয়ার্কআউট এড়িয়ে চলুন। এর ফলে চোট-আঘাত লাগতে পারে। এছাড়া আপনার শরীরের ব্যায়ামেরও যেমন প্রয়োজন আছে, বিশ্রামেরও ঠিক ততটাই দরকার। কিন্তু, খালি পেটে ব্যায়াম করবেন না। ব্যায়ামের জন্যও শরীরের পুষ্টির দরকার, তবেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবেন ওয়ার্কআউট করার জন্য।

মনে রাখবেন, পেটে যদি একেবারেই খাবার না থাকে এবং সেই অবস্থায় এক্সারসাইজ চালিয়ে যান, তাহলে অচিরেই পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে একই এক্সারসাইজ দীর্ঘদিন করবেন না। এর ফলে শরীর একই ফর্ম-এ অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তখন আর সুফল পাবেন না। আর ওয়ার্কআউট শেষ করার আগে, অবশ্যই কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন। এতে শরীর ধাতস্থ হওয়ার সুযোগ পাবে।

পোস্ট এক্সারসাইজ-এ আপনার হার্টবিট-ও স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সেইসঙ্গে, মাসলগুলি আগের অবস্থায় ফিরে এসে রিলাক্সড হবে।

ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটি কাটান : সকালে শরীরচর্চার পর হালকা মেলোডি গান শুনুন, সারাদিন মন ভালো থাকবে। আগের রাতে ঠিক করে রাখুন, পরের দিন কোন কাজটা কীভাবে এবং কখন করবেন। যতটুকু সময় কাজ করবেন, মনযোগ সহকারে করবেন। এর ফলে কাজে ভুল হবে না এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।

কাজের জায়গা এবং ব্রেক : অফিসের মতো বাড়িতেও কাজের জন্য চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করুন। এতে, শরীরে ব্যথা-যন্ত্রণা হবে না। আর, বাড়িতে হই-হট্টগোল এড়াতে, দরজা বন্ধ রাখতে পারেন কিন্তু জানলা খোলা রাখবেন। এতে আলো-হাওয়া পাবেন পর্যাপ্ত এবং মন হালকা থাকবে। কাজের মধ্যে ব্রেক নেওয়া জরুরি। কারণ, একটানা কাজ করলে একঘেয়েমি এবং বিরক্তি তৈরি হতে পারে। তাই, কাজ থেকে মাঝেমধ্যে বিরতি নিয়ে হাঁটাচলা করুন।

আপনজনের সঙ্গে কথা বলুন : বাড়িতে একা একা বসে একটানা কাজ করলে মানসিক অবসাদ তৈরি হতে পারে। তাই, সময় পেলেই পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলুন, হাসি-মজা করুন। দূরভাষে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলে মন হালকা রাখুন। তবে দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। এতে মস্তিষ্কে চাপ পড়তে পারে। তাই, কথা বলুন অল্প সময়ে জন্য।

খাদ্য এবং পানীয় : বাড়িতে থেকে কাজ করলে যেহেতু অনিবার্য ভাবে পরিশ্রম এবং হাঁটাচলা কিছুটা কমে যায়, তাই খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে এবং বেশি তেলমশলা-যুক্ত খাবার খাওয়া চলবে না। সেইসঙ্গে, খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে টাটকা শাকসবজি। স্যালাড এবং ফলও খেতে হবে নিয়মিত। খাবার খাওয়ার সময়টাও ঠিক রাখতে হবে।

ব্রেকফাস্ট স্কিপ করবেন না। চেষ্টা করুন ব্রেকফাস্ট ৩০০ ক্যালোরির মধ্যে রাখতে। এতে ফাইবার আর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। স্যান্ডউইচ বা টোস্ট-এ সাধারণ মাখনের বদলে পি-নাট বাটার ব্যবহার করুন। এটা খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকবে এবং বারবার খাওয়ার হ্যাবিট থেকে বেরোতে পারবেন। আর, প্রতিদিন অন্তত তিন থেকে চার লিটার জল পান করতে হবে। চা, কফি পানের পরিমাণ কমাতে হবে এবং বন্ধ করতে হবে ধূমপান ও মদ্যপান।

স্নান এবং ঘুম : শীতকাল হোক আর গরমকাল, স্নান করতে হবে সম্পূর্ণ। প্রয়োজনে হালকা গরম জল ব্যবহার করুন শীতকালে। সেইসঙ্গে, রাতে দশটার মধ্যে ঘুমোতে যেতে হবে এবং অন্তত আট ঘন্টা ঘুমোতে হবে প্রতিদিন। আর ঘুমোনোর এক ঘন্টা আগে থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।

 

রুচির প্রতিফলন ঘটায় ঘরবাড়ির পরিচ্ছন্নতা

ঘরদোরের পরিচ্ছন্নতার সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের শরীর ও মনে। তাই শুধু নিজেকে নয়, পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে নিজের বাসস্থানকেও। কারণ, Home hygiene বা পরিচ্ছন্নতাই সুস্থতার প্রধম ধাপ।

ভেবে দেখুন, সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর বাড়ি ফিরে আপনি নিজে যেমন আরামে থাকতে চাইবেন, আপনার পরিবারের সদস্যরাও তাই চাইবেন। কিন্তু যদি অগোছালো ঘর, নোনা ধরা, রং-চটা দেয়াল, ম্লান আলো, স্যাঁতসেঁতে মেঝে কিংবা মশা, আরশোলা, টিকটিকি, ইঁদুর প্রভৃতি চোখে পড়ে, তাহলে অবসাদ গ্রাস করার সম্ভাবনা প্রবল।

নিউরো স্পেশালিস্ট-এর মতে, ঘরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ যদি সৌন্দর্যহীন থাকে কিংবা Hygienic না হয়, তাহলে এর কুপ্রভাব পড়তে পারে ওই ঘরে বসবাসকারী সদস্যদের উপর। আর এই অপরিচ্ছন্নতার সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বাড়ির বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে বাধ্য।

মনে রাখবেন, আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বছরের কয়েটা মাস বাদ দিলে, বেশিরভাগ সময়ই আবহাওয়া থাকে ভ্যাপসা। বৃষ্টি এবং বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাড়িঘরে পোকামাকড়, জীবাণু প্রভৃতির উপদ্রব বাড়তে থাকে। আর এই পোকামাকড়ের উপস্থিতি যেমন বিরক্তিকর, ঠিক তেমনই হতে পারে স্বাস্থ্যহানির কারণ। অতএব, জেনে রাখুন পরিচ্ছন্নতার উপায়।

আলো-হাওয়ার ব্যবস্থা

প্রতিটি ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো-হাওয়া ঢোকে, তার ব্যবস্থা করা জরুরি। এর জন্য, প্রতিটি ঘরে একটি বা দুটি জানলা রাখা প্রয়োজন। দিনেরবেলা যতক্ষণ বাড়িতে থাকবেন, ততক্ষণ যতটা সম্ভব জানলা-দরজা খুলে রেখে আলো-হাওয়া ঢোকার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজন হলে, বক্স-টাইপ জানলা করে তাতে মশকুইটো নেট ব্যবহার করুন, যাতে জানলা খুলে রাখলেও পোকামাকড় ঢুকতে না পারে। অবশ্য শুধু শোওয়ার ঘর নয়, বসার ঘর, রান্নাঘর, শৌচালয় প্রভৃতি জায়গাতে একই ভাবে আলো-হাওয়া ঢোকার ব্যবস্থা রাখুন। প্রতিটি ঘরে জমে থাকা অস্বাস্থ্যকর হাওয়া বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য এগ্জস্ট ফ্যান-এর ব্যবস্থা করুন। যে-সব ঘরে প্রাকৃতিক আলো কম ঢোকে, সেইসব ঘরে উপযুক্ত বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখুন। খরচ বাঁচানোর জন্য সম্ভব হলে সোলার পাওয়ার লাইট ব্যবহার করতে পারেন।

পোকামাকড় আটকান

স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার কারণে ঘরে আরশোলা, উই, পিঁপড়ে, মশা, মাছি, ইঁদুর প্রভতির উপদ্রব বাড়ে। প্রথম থেকেই যদি এসব না আটকানো যায়, তাহলে জ্বর, অ্যাজমা, টিবি, ডায়ারিয়া প্রভৃতি অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, ঘরদোর যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং তিনমাস অন্তর একবার Pest control করান পেশাদার কর্মীদের সাহায্যে।

নর্দমা পরিষ্কার রাখুন

মাথার চুল কিংবা প্লাস্টিকজাতীয় কোনও কিছু নর্দমায় ফেলবেন না। এমনকী, আনাজের কোনও খোসাও নয়। ভাতের মাড় ফেলার আগে তা জল দিয়ে পাতলা করে ফেলুন। কারণ, নর্দমায় গাঢ় কিছু ফেললে জল নিকাশ হবে না ঠিকমতো এবং ময়লা জমে, পচে গন্ধ বেরোতে থাকবে। অতএব, নর্দমা পরিষ্কার রাখুন। তবে, এই তিনটি বিষয় ছাড়াও, আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা যত্ন সহকারে করলে তবেই বাড়িঘরে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যাবে।

যা যা করণীয় :

  • ঘরের দেয়ালে নোনা ধরতে দেবেন না। বাজারে এখন ড্যাম্প প্রুফ রং পাওয়া যায়, ওই রং ব্যবহার করুন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর
  • জানলা-দরজার ফ্রেম অথবা পাল্লায় ফাটল কিংবা গর্ত তৈরি হলে, তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুডিং দিয়ে আটকান। কারণ, ওইসব ফাটল কিংবা গর্তে কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধার প্রবল সম্ভাবনা আছে
  • জলের পাইপে কোনও ফাটল দেখলে তখনই তা গামটেপ দিয়ে আটকান। নয়তো জল চুঁইয়ে দেয়াল এবং পাইপে শ্যাওলা পড়তে পারে। আর এই স্যাঁতসেঁতে এবং শ্যাওলাযুক্ত জায়গায় বাসা বাঁধতে পারে জীবাণু
  • বাথরুম-এর টাইল্স-এ দাগছোপ এবং ধুলোময়লা জমতে দেবেন না। কারণ, এর ফলে জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। তাই, সপ্তাহে অন্তত একদিন লিকুইড সোপ দিয়ে টাইল্স পরিষ্কার করুন
  • মেঝে মোছার সময় সামান্য কেরোসিন ব্যবহার করুন, এতে দুর্গন্ধ দূর হবে এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব কমবে
  • রান্নাঘর এবং শৌচালয়ে নিকাশি পাইপ-এ মাঝেমধ্যে ড্রেনক্লিনার লিকুইড ঢেলে দিন। এতে ময়লা জমে থাকবে না এবং নিকাশি ব্যবস্থা উপযুক্ত থাকবে
  • ঘরদোরে যততত্র ধুলোময়লা জমিয়ে রাখবেন না। কারণ, ধুলোময়লা জমিয়ে রাখলে কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধবে
  • ঘরে এসি মেশিন ব্যবহার করলে, বিছানাপত্তর মাঝেমধ্যে কড়া রোদে রাখুন। নয়তো, ফাংগাস পড়ে জীবাণু তৈরি হতে পারে
  • ঘরে কিংবা বারান্দায় গাছ বসানো টব রাখলে, মাঝেমধ্যে কীটনাশক স্প্রে করুন। এতে গাছ এবং বাড়ির পরিবেশ দুই-ই সুরক্ষিত থাকবে
  • পচা খাবার, উচ্ছিষ্ট, সবজির খোসা প্রভৃতি একবেলার বেশি ঘরে জমিয়ে রাখবেন না। কারণ, এসব জমিয়ে রাখলে দুর্গন্ধ এবং জীবাণু দুটোই উত্পন্ন হতে পারে
  • ঘরের ভিতর ভেজা জামাকাপড় মেলে রাখবেন না। কারণ, জামাকাপড়ের জল থেকে ঘরের আবহাওয়া ভ্যাপসা হয়ে উঠবে
  • বাথরুম-এ একই জল দীর্ঘদিন জমিয়ে রাখবেন না। কারণ, পরিষ্কার জমা জলে মশা জন্মায়
  • দরজা-জানলার পর্দা প্রতি পনেরো দিন অন্তর কেচে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করুন। এতে ঘরে জীবাণু বাসা বাঁধবে না
  • মাকড়সা, আরশোলা, টিকটিকি এবং ইঁদুরের উপদ্রব আটকানোর জন্য স্ট্রং গামযুক্ত পেপারবোর্ড ব্যবহার করুন। ঘরের দেয়াল এবং অন্ধকার জায়গায় এই বোর্ড-এ টাচ করলেই আটকে থাকবে ইঁদুর, আরশোলা, টিকটিকি, মাকড়সা সবকিছু।

এইসব মেনে চললে যেমন ঘরদোর পরিষ্কার রাখা যাবে অনয়াসেই, ঠিক তেমনই নিজের এবং পরিবারের সবার শরীর এবং মনও সুস্থ থাকবে। আর সেইসঙ্গে, আপনার সুরুচির পরিচয়ও প্রতিফলিত হবে।

হোম অ্যাক্সিডেন্টস এড়াতে

নিশ্চিত আশ্রয়ের জায়গা হল বাড়ি। এমন ধারণা আমাদের বদ্ধমূল যে, বাড়ির চার দেয়ালের ভিতরে ঢুকে পড়তে পারলে আর কোনও বিপদের সম্ভাবনা থাকতে পারে না। কিন্তু জানেন কি, এমন বহু মারাত্মক অ্যাক্সিডেন্টস বাড়ির ভিতরেই হয় যার থেকে মানুষ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়তে পারে এমনকী মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। রাস্তাঘাটে তবুও আমরা সতর্ক থাকি কিন্তু বাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে সেই সময়, যখন আমরা খুব নিশ্চিন্ত হয়ে কোনও কাজ করছি তখন। এমন অসময়ে অঘটন ঘটতে পারে যে ডাক্তারি সাহায্যও পাওয়া অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে, ফলে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।

বাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট-এর ঘটনাগুলি বেশিরভাগই ঘটে শিশু, গৃহবধূ এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। আমরা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের মুখ থেকে প্রায়শই এরকম অনেক ঘটনাই শুনতে পাই এবং দুঃখপ্রকাশ ছাড়া কিছুই করার থাকে না। সকলেরই উচিত, বাড়িতে কী ধরনের অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে সেটা জেনে রাখা এবং পরিবারের আর সকলকেও এ ব্যাপারে সাবধান করা।

বাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট

  •  পিছল মেঝে এবং সিঁড়িতে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে
  • সিঁড়িতে কোথাও যদি অসমতল জায়গা থাকে অথবা ভাঙা থাকে তাহলেও হোঁচট খেয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে
  •  রান্না করার স্টোভ যদি মেঝেতে রেখে রান্না করা হয়
  • ঢিলেঢালা জামা অথবা শাড়ি পরলে ভয় থাকে জ্বলন্ত স্টোভ থেকে আগুন ধরে যাওয়ার
  • ধারালো ছুরি অথবা ব্লেড থেকে আঙুল কেটে যেতে পারে
  •  ভাঙা কাচের টুকরোয় হাত কাটতে পারে অথবা খালি পায়ের তলায় কাচ ফুটে যেতে পারে
  • বাথরুমে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
  • গ্রিল অথবা টেবিল চেয়ারের পায়ের সঙ্গে ধাক্বা লেগে বাচ্চারা অনেক সময় পড়ে যায়
  • ইলেকট্রিকের জিনিস অথবা সুইচবোর্ড থেকে শক্ খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • একটু অসাবধান হলেই, গরম ইস্তিরির ছ্যাঁকা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • পলিথিন কভার থেকে বাচ্চাদের সাবধানে রাখা উচিত। মুখে জড়িয়ে দমবন্ধ হয়ে যেতে পারে
  •  ফুটন্ত দুধ অথবা জল পড়ে পুড়ে যাওয়ার ভয়
  •  দরজা, জানলা বন্ধ করতে গিয়ে আঙুল চিপে যাওয়া
  •  বাড়িতে, হাতের নাগালের বাইরে থাকা জিনিসপত্র নামাবার জন্যে কাঠের অথবা অ্যালুমিনিয়াম-এর সিঁড়ি ব্যবহার করা হয় যার থেকে হঠাৎ পড়ে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে
  •  উপর থেকে কোনও জিনিস নামাবার সময়, ঘাড়ের উপর কিছু পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
  • পোকামাকড় কামড়ানো
  • বাচ্চারা একা নিজেদের অনেকসময় ঘরে বন্ধ করে নেয় অথবা অপরদের ঘরে বন্ধ করে লক্ করে দেয়
  • কোনও খেলার জিনিস নিয়ে খেলতে খেলতে বাচ্চারা অনেকসময় আঘাত পায় যেমন তিরধনুক, ছুঁচোলো কোনও খেলনা ইত্যাদি
  • জলভর্তি টাব্, সুইমিংপুল-এ বাচ্চাদের ডুবে যাওয়ার ভয় সবসময় থাকে
  • হাতের কাছে ওষুধ পড়ে থাকলে খাবার জিনিস মনে করে বাচ্চারা অনেক সময় খেয়ে নেয়
  • নাকের ভিতর ন্যাপথলিন জাতীয় বস্তু ঢুকিয়ে দিলে বিপদ ঘটতে পারে
  • কয়েন জাতীয় জিনিস হঠাৎ গলায় চলে যাওয়া
  • গরম পানীয় সার্ভ করার সময় গায়ে চলকে পড়া
  •  ভারী জিনিস হঠাৎ পায়ের উপর পড়ে যাওয়া
  •  টাইট করে লাগানো কাচের বোতলের ঢাকা খুলতে গেলে বোতল ভেঙে যাওয়া
  • ধোয়ার সময় কাচের জিনিস হঠাৎ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা
  • কুকিং গ্যাস সিলিন্ডার সংক্রান্ত অ্যাক্সিডেন্ট
  • পুজো করতে গিয়ে জামাকাপড়ে আগুন ধরে যাওয়া

উপরের তালিকাটি ছাড়াও, বাড়িতে আরও অনেক ধরনের অ্যাক্সিডেন্ট ঘটতে পারে। সুতরাং বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটবেই, এমন কথাটা বলা ঠিক নয় কিন্তু যে-কোনও অঘটনের এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকা ভালো।

রান্নার গ্যাস খুব সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। রেগুলেটর কীভাবে কাজ করে আগে থেকে জেনে নেওয়া দরকার। যে রাবার টিউব-এর সাহায্যে গ্যাস স্টোভ, সিলিন্ডারের সঙ্গে যুক্ত থাকে সেটা ভালো অবস্থায় থাকা বাঞ্ছনীয়। সেটাতে যেন কোনওরকম ফুটো না থাকে অথবা পাইপ-টা যেন কোথাও ফাটা না হয়। দেশলাই এর বদলে গ্যাস স্টোভ জ্বালাবার জন্য লাইটার (ইলেকট্রনিক) ব্যবহার করতে পারলে ভালো। সারাদিনের কাজের পর সিলিন্ডারের ভাল্ভ বন্ধ করে দেওয়া উচিত যাতে বার্নার-এ গ্যাস সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়। বহুদিন যদি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা না-হয় তাহলে রেগুলেটর খুলে, কোনও সুরক্ষিত জায়গায় রেখে দেওয়া উচিত।

পুজো করতে গিয়ে জামাকাপড়ে আগুন ধরে যাওয়া খুবই কমন একটা ঘটনা। মেয়েদেরই এই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। বাঙালিদের (হিন্দু) পুজোয় প্রদীপ, ধূপধুনো ইত্যাদি জ্বালাবার নিয়ম রয়েছে। দেশলাইয়ের সাহায্যে, এগুলি জ্বালানো হয় এবং এরথেকে বহু দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সুতরাং আগুন সংক্রান্ত সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষকরে বাচ্চারা এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা যখন বাড়িতে একা থাকে তখন বেশি করে খেয়াল রাখা উচিত। বাচ্চাদের খেলার সময়েও বিশেষভাবে তাদের উপর নজর দেওয়া প্রয়োজন যাতে তারা দেশলাই নিয়ে না খেলে।

বাচ্চাদের একদম একা বাড়িতে কখনওই রাখা উচিত নয়। বাচ্চা যখন হামাগুড়ি দেয় তখন তার সামনে কোনও ইলেকট্রিক বোর্ড অথবা সুইচ যেন না থাকে, আর থাকলেও মোটা টেপ দিয়ে সেটা ঢেকে দেওয়া উচিত। বাড়িতে সিঁড়ি থাকলে খেয়াল রাখা উচিত বাচ্চারা যেন সেটা দিয়ে ওঠা-নামা না-করতে পারে। ধারালো কোনও জিনিস যেন তাদের সামনে পড়ে না থাকে।

বাথরুম সবসময় কমপ্যাক্ট এবং শুকনো রাখা উচিত, যাতে বয়স্ক ব্যক্তিরা পা পিছলে মেঝেতে পড়ে না যায়। বাথরুমের দেয়ালে রেলিং লাগাতে পারলে ভালো। তাদের শোবার ঘরের সঙ্গে বাথরুম থাকলে তাদের অনেক সুবিধা হয়।

সাবধানতা অবলম্বন করলেও, দুর্ঘটনা ঘটবে না, এমনটা নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য নিজেকে সবসময় তৈরি রাখতে হয়। একটা ফার্স্ট এইড বক্স সবসময় বাড়িতে রেডি রাখতে হয়। তারমধ্যে সার্জিক্যাল কটন, অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম, ব্যান্ডেজ, পুড়ে যাওয়ার মলম, রক্ত বন্ধ করার ওষুধ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি থাকা উচিত। ছোটোখাটো কাটাছেঁড়া-তে যেখানে রক্তপাত খুব বেশি হয় না, সেখানে কাজে লাগে। অল্প কোথাও পুড়ে গেলেও পোড়ার জন্য রাখা মলম অনেক কাজ দেয়। অনেক জায়গায় ফার্স্ট এইড-এর ট্রেনিং-ও দেওয়া হয়, সেগুলোও শিখে রাখতে পারলে প্রয়োজনে উপকার পাওয়া যায়। নেট-এ গিয়ে ‘হোম অ্যাক্সিডেন্ট’-এ সার্চ মারলেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

সবসময় ফ্যামিলি ডাক্তার, কাছাকাছি হাসপাতাল এবং অ্যাম্বুলেন্স-এর নম্বর হাতের কাছে রাখা উচিত যাতে দরকারে খুঁজতে না হয়। প্রয়োজনে প্রতিবেশীর সাহায্য নিতেও দ্বিধা করবেন না।

বাড়ির জিনিস সারান নিজের হাতেই

বাড়ির জিনিসপত্রের প্রতি যত্নশীল হলে ও মাঝেমাঝেই সেগুলি পরিষ্কার বা ঝাড়পোঁছ ইত্যাদি করলে, মেকানিক ডাকার প্রয়োজন অনেক কমে যায়। তাই নিজের ঘরের মেনটেনেন্স নিজেই করুন। এই প্রাত্যহিক রক্ষণাবেক্ষণের ফলে অনেক মোটা খরচের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।

নিজেই শিখে নিন

বাড়িতে ব্যবহৃৎ অনেক মেশিনের নাটবোল্ট লুজ হয়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই নাটবোল্ট টাইট করাটা শিখে নিন। এজাতীয় রিপেয়ারিং নিজেই করে নিতে পারবেন। সব বাড়ির দেওয়ালেই পেরেকের গর্ত থাকে। এগুলো সব অ্যাডহেসিভ দিয়ে ভরাট করে দিন। জানলার ফাটল ভরাট করতে পুডিং ব্যবহার করুন।

বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র

বাড়ির নানা জায়গাতেই আলোর বাল্ব লাগানো থাকে। হঠাৎই কোনও বাল্ব কেটে যেতে পারে। সেটাও নিজেই পালটে নিন। মাঝেমাঝে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং চেক করুন। কোথাও যেন খোলা তার না থাকে। এতে শক লাগতে পারে ও স্পার্কিং হতে পারে। আগুন লাগাও অসম্ভব নয়। তাই এইরকম দেখলে, সঙ্গে সঙ্গে টেপ মেরে দিন। ওয়্যারিং ক্লিপ লুজ হয়ে গেছে দেখলে, তা টাইট করে দিন। এতে, তার ঝুলে থাকবে না ও ঘরের শোভা বর্ধনে অন্তরায় হবে না। লক্ষ্য রাখুন, ঘরে ইঁদুরের উৎপাত না হয়। ইঁদুর বৈদ্যুতিক তার কেটে দিতে পারে। ঘরের দামি জিনিসপত্রও নষ্ট করে।

নর্দমা পরিষ্কার করা

আমাদের নিজেদের দোষেই বাড়ির নর্দমায় ময়লা জমে। তারপর নর্দমা বুজে গেলে, নিকাশিকর্মীর ডাক পড়ে। এরকম হওয়ার আগে, স্বাস্থ্যকর পরিবেশরক্ষার জন্য মাঝেমাঝে নিজেই নর্দমা পরিষ্কার করুন।

ভাঙাচোরা সারানো

ঘরের কোনও জিনিস, ফার্নিচার বা দরজাজানলার কোনা ভেঙে গেলে, সিমেন্টিং-ক্লে জাতীয় কিছু কিনে নিজেই সেই অংশটুকু সারিয়ে ফেলুন। পরে বাড়িতে কখনও মিস্ত্রি লাগলে, স্থায়ীভাবে সেটা মেরামত করিয়ে নিতে পারবেন। তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে আর মিস্ত্রি ডাকতে হবে না।

লিকেজ থামানো

জল চুঁইয়ে বের হওয়ার সমস্যা খুবই সাধারণ। এটিকে গুরুত্ব না দিলে, একসময় এটি বৃহৎ আকার ধারণ করতে পারে। তাই কোনও পাইপ বা কলে যদি সামান্য লিকেজ দেখা দেয়, তবে নিজেই পুডিং দিয়ে তা বন্ধ করে দিন। বেশি পরিমাণে জল বের হলে অবশ্য কলের মিস্ত্রি ডাকতেই হবে।

বাথরুমের রক্ষণাবেক্ষণ

বাথরুম বা টয়লেটের টাইলসের প্রতি কেউ বেশি গুরুত্ব দেয় না। টাইলস্ যখন খুব নোংরা হয়ে যায়, তখন তা পরিষ্কার করতে গেলে বহু সময় লেগে যায়। এরচেয়ে সপ্তাহে একবার করে টাইলস, কাপড় দিয়ে ঘষে দেওয়াটা সহজ। বাথরুমের বাথটাব চকচকে করে তুলতে কেরোসিনের জবাব নেই। কেরোসিন তেলে, বাথটাবের জীবাণুও দূর হয়।

ফাটলে নজর দিন

বাড়ির দরজাজানলায় নানান ফাটল সৃষ্টি হয়। এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিন। কোনও অ্যাডহেসিভ দিয়ে চটপট এগুলো বন্ধ করে দিন। না হলে যে-কোনও ফাটলই কীটপতঙ্গের লুকোনোর জায়গা হয়ে ওঠে। এখানে তারা ডিম পাড়ে ও বংশবৃদ্ধিও করে। ফাটল, বাড়ির হিটিং ও কুলিং সিস্টেমকেও সঠিকভাবে কাজ করতে দেয় না। কারণ যে-কোনও ফাটল দিয়ে উত্তাপ লিক করে।

আসবাবের রক্ষণাবেক্ষণ

কাঠের ফার্নিচারে অল্প দাগ লাগলে কিংবা দীর্ঘদিন ফার্নিচারের শ্রী অক্ষুণ্ণ রাখতে তাতে পালিশ করতে থাকুন। দাগ তুলতে জুতোর পালিশ সবচেয়ে কার্যকরী। একটা খালি পাত্রে চ্-্ব ধরনের আলাদা রঙের পালিশ মিশিয়ে নিন। শুকনো কাপড় দিয়ে এই পালিশ আস্তে আস্তে ফার্নিচারে লাগান। দেখবেন আপনার আসবাব নতুনের রূপ ফিরে পাবে।

ধাতব বস্তুর যত্ন

দরজাজানলার তামা বা পেতলের হাতল বা রিং, বাসনকোশন বা ঘর সাজাবার জিনিস চকচকে করে তুলতে, লেবুর রস ও নুন অপরিহার্য।

কার্পেটের যত্ন

মেঝেতে কার্পেট পাতার আগে খবরের কাগজ পেতে দিন। এতে মেঝেতে ড্যাম্পভাব থাকলে, তা কার্পেটে লাগবে না। তাছাড়া কার্পেটের তলায় যে ধূলোময়লা জমে, সেগুলো সরাসরি মেঝেতে জমবে না। এর ফলে মেঝেতে দাগ হওয়া আটকানো যাবে। কার্পেটে সরাসরি কোনও দাগ ধরলে, তা কার্বন টেট্রাক্লোরাইড দিয়ে তোলা যাবে। কার্পেটকে প্রতিদিন ভ্যাকুয়াম ক্লিন করা উচিত।

বাড়ির বাইরের অংশের যত্ন

বাড়ির বাইরের লাইট বা উঁচু কার্নিশ, বছরে অন্তত একবার পরিষ্কার করুন। এতে পাখিরা সেখানে জঞ্জাল জমিয়ে নোংরা করতে পারবে না।

দরজাজানলা

কাঠের পাল্লার দরজা, বিশেষকরে বাথরুমের দরজা, নীচের দিক থেকে খারাপ হতে থাকে। তাই ছ’মাস অন্তর এই দরজায় রং করাতে থাকুন। অনেকসময় দরজাজানলার ছিটকিনি খারাপ হয়ে যায়। এদিকেও লক্ষ্য রাখুন। না হলে যখন কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন, তখন খেয়াল হবে দরজাজানলা নিরাপদভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না।

বাড়ির গাছপালার যত্ন

বাড়ির বাইরে ও ভিতরে টবের গাছ ও বাগানের পরিচ্ছন্নতা ও মেরামতির দিকে নজর রাখুন। বাড়ির ভিতরে রাখা কোনও টব পুরোনো হলে, তা পালটে দিন, নইলে তা হঠাৎ একদিন ভেঙে গেলে মাটি বা জল পড়ে, মেঝে নোংরা হবে। বাগানের গাছপালার ডালপালাও মাঝেমাঝে কেটে ছোটো করে দিন।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

বাড়ির টুলবক্সে স্ক্রু- ড্রাইভার, হাতুড়ি, প্লাস ইত্যাদি সাধারণ যন্ত্রপাতি জোগাড় করে রাখুন। নানান প্রয়োজনে এগুলো কাজে লাগবে। ছোটেখাটো দরকারে এগুলো না পেলে, আপনাকে মিস্ত্রি ডাকতে হবে।

অন্যান্য জিনিসপত্রের যত্ন

ওয়াটার ফিল্টার, এসি, শাওয়ার সিস্টেম ইত্যাদি সপ্তাহে একবার খুলে পরিষ্কার করুন। কোনও অংশ পালটানোর দরকার হলেও তা করুন।

বদলে দিন অন্দরসজ্জা

নিজের বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট-এর অন্দরসজ্জায় আনুন নতুনত্বের ছোঁয়া। অবশ্য সাজসজ্জায় এই পরিবর্তন আনতে হবে আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী।

সবরকম আর্থিক সামর্থ্যের ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে, বিপণিগুলি নিত্যনতুন পণ্যসম্ভারে বাজার ভরিয়ে তুলেছে। বাজেট অনুযায়ী, পছন্দসই ফার্নিশিংস আর আসবাবের কোনও অভাব নেই বাজারে। শুধু বাছাই করে নিতে পারলেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে।

কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং : কীরকম অন্দরসজ্জা চান আপনি, তা ঠিক করে নিন প্রথমে। গুরুত্ব দিন আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের পছন্দকেও। এবার ঠিক করুন, সবাই ট্র‌্যাডিশনাল লুক চান নাকি ফিউশন। এরপর গুরুত্ব দিন আলোর বিকল্প, আসবাব, ফ্লোরিং, বাড়ির বাইরের এবং ভিতরের রং অথবা ওয়ালপেপার-এর উপর। এই সবকিছুরই দাম জেনে নিয়ে কিছুটা দরদাম করে, বাজেটের মধ্যে যেটা নিতে পারবেন, সেই পছন্দের জিনিস দিয়ে সাজিয়ে তুলুন নিজের একান্ত আপন নীড়। অবশ্য বাড়ি সাজাবার আগে, যারা ওই বাড়িতে থাকবেন, রুচি এবং প্রযোজন প্রাধান্য পাওয়া উচিত।

প্রত্যেকটি শোওয়ার ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, বারান্দা প্রভতিতে কতটা স্পেস রয়েে, তা দেখে নিয়ে সাজে বদল আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং। এতে ব্যক্তির প্রযোজন, ঘরের রং, আসবাবের শেপ, ফ্যাব্রিক, মেটিরিয়াল, ডিজাইনিং প্রভতি একের সঙ্গে অপরের সামঞ্জস্য বজায় রেখে সোফা, কুশন, দেয়াল, সিলিং, পর্দা সবকিছুরই বিশেষ খেয়াল রাখা হয়।

বাজারে গিয়ে কিছু পছন্দসই জিনিস কিনলেন অথচ বাড়িতে নিয়ে এসে দেখলেন ঘরের আকার অনুযায়ী ঠিকমতো আঁটানো যাচ্ছে না, এমন ঝামেলায় পড়তে হয় অনেক সময়। যেটাই বাড়িতে নতুন তৈরি করা হবে, তা যেন বাড়ির অন্যান্য ডেকরের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে করানো হয় এবং বাজেটও আয়ত্তে থাকে।

লিভিং-রুমটি হয়তো আকারে ছোটো অথচ দোকানে গিয়ে পছন্দ হল বড়োসড়ো একটি সোফা। কখনওই সেটা মানানসই হবে না, উপরন্তু জায়গাতেও কম পড়বে। তার চেয়ে ভালো, ঘরের আকার অনুযায়ী কাস্টমাইজড সোফা বানিয়ে নেওয়া এবং সেইসঙ্গে ঘরের অন্যান্য আসবাবও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র হল বিভিন্ন রকমের ডিজাইন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা-র মাধ্যম। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বাড়ির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, জায়গা ইত্যাদি দেখে বানানো হয়। এতে গ্রাহকের নিজস্ব পছন্দের বিষয়টিও ঠিক থাকে। সারা বাড়ির ডেকর বদলে ফেলা সম্ভব এই পদ্ধতিতে।

লেদারের সঙ্গে সলিড কাঠের আসবাব মানানসই হলেও, একটু বেশি গরমের অনুভতি হয়। কিন্তু যদি কাঠ এবং মোটা তারের জাল ব্যবহার করে সোফা কিংবা খাট তৈরি করা হয়, তাহলে হাওয়া চলাচল সঠিক থাকবে এবং গরম হবে না। এরকম ডিজাইনার ফার্নিচারের প্রচুর বিকল্পও রয়েে আজকাল। এগুলিকে মডার্ন লুকও দেওয়া যায়, আবার ক্রেতা চাইলে ট্র‌্যাডিশনাল লুক দিয়ে তৈরি করে দেন ফার্নিচার বিপণির কর্মীরা।

পছন্দসই ডেকর : আমরা যে-রঙের পর্দা ব্যবহার করি, সেই রঙের কুশন কভার, বেড কভার ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজাবার চেষ্টা করি, যাতে রং ও স্টাইল-এ একটা মিলমিশ থাকে। পর্দার ঝালর লাগাতে চাইলে, দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লাগানো যেতে পারে।

ঘর আকারে ছোটো হলে, বড়ো যাতে লাগে, সেইজন্য দেয়ালে ওয়ালপেপার লাগানো যেতে পারে অথবা ওয়ালপেপারে পেন্ট করানো যেতে পারে। ওয়ালপেপার পছন্দ করার প্রথম কারণ হচ্ছে, ঘর দেখতে সুন্দর লাগে। তারপর রং করাবার হলে, ভালো রঙের মিস্ত্রি খুঁজে বার করা এবং হাতে সময় থাকাটাও জরুরি। সময় বাঁচাতে চটজলদি ওয়ালপেপার লাগিয়ে ঘরের অন্দরসজ্জা সেরে ফেলতে ক্ষতি কী?

বাড়ির সকলের আলাদা আলাদা পছন্দে এবং ওয়ালপেপার-এর বৈচিত্র‌্যে প্রত্যেকের ঘর সেজে উঠতে পারে সম্পূর্ণ ডিফারেন্ট লুক নিয়ে বাড়তি সুবিধা হল দেয়ালে অন্য আর কিছু টাঙাবারও প্রযোজন পড়ে না।

অনেকের মনেই এই ধারণা রয়েে যে, নিজের পছন্দমতো বাড়ি সাজাতে গেলেই অর্থব্যয় অনেক বেশি হবে। কিছুদিন আগে পর‌্যন্ত হয়তো এই ধারণাটা সত্যি ছিল কিন্তু এখন বাজারে ভ্যারাইটি এবং বিভিন্ন রকমের মেটিরিয়ালের প্রাচুর্য্য রয়েছে। কাঠের আসবাব কিনতে গেলে, কাঠের মধ্যেই নানা ভ্যারাইটি পাবেন। তাছাড়া, দামি, কমদামি সবই পেয়ে যাবেন একই ছাদের তলায়।

এরকমই ফ্যাব্রিক, কিচেন অ্যাকসেসরিজ, ডেকোরেশনের জিনিস, সবই ফ্ল্যাট অথবা অ্যাপার্টমেন্ট অনুযায়ী এবং বাজেটের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। প্রযোজন শুধু সঠিক খোঁজখবর নেওয়ার। সুতরাং, অন্যের কথায় কান না দিয়ে নিজের প্রয়োজন জানুন এবং উৎসবের দিনগুলিকে আনন্দময় করে তুলুন।

টুকিটাকি রদবদল : কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং-এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে হাতের কাছে থাকা বিভিন্ন জিনিসের সামান্য রদবদলেও, আপনার ফ্ল্যাটটি উৎসবের রঙে সেজে উঠতে পারে। হাতে সময় কম থাকলে অর্ডার প্লেস করা, জিনিস তৈরি হওয়ার সময় দেওয়া, কোনওটাই সম্ভব নয়। তাই বলে কি অন্দরসজ্জায় পরিবর্তন আনবেন না মাঝেমধ্যে?

মন খারাপের কিছু নেই। আসবাবপত্রের অবস্থান পরিবর্তন করেও ঘরের সাজ বদলে দেওয়া যায়। বারান্দায় অবহেলায় পড়ে থাকা ফুলের টবগুলিকে রাঙিয়ে তুলে ঘরের প্রতিটি কোণায় রাখুন ফুলের গাছ সহযোগে। ঘরের দেয়ালের রং এবং পর্দার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কুশন কভার, বেড কভার, বালিশ এবং পাশবালিশের কভার বদলে ফেলুন।

আজকাল মেঝেতে পাতার জন্য খুব সুন্দর ডিজাইনের হালকা, সিন্থেটিক কার্পেট কিনতে পাওয়া যায়। নতুন বছরে বসার ঘরে যদি একটা কার্পেট বিছিয়ে নেন, তাহলে ঘরের সৌন্দর্যও বাড়বে এবং শীতকালে মেঝে থেকে ওঠা ঠান্ডাও আর পায়ে লেগে সমস্যায় পড়তে হবে না। আর বাড়িতেই থাকা ফুলদানিতে টাটকা ফুল রেখেও ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানো যেতে পারে এবং ঘরকেও সুগন্ধময় করে রাখা যেতে পারে।

ফিফটি অ্যান্ড ফ্লার্টি

‘কী ব্যাপার, তুমি তো রিভার্স গিয়ারে রয়েছো দেখছি’, ‘লুকিং সো হট্’, ‘ফাটাফাটি দেখতে লাগছে তোমাকে’, ‘ইউ আর গ্লোয়িং ডে বাই ডে’ প্রভৃতি কম্প্লিমেন্টস শুধু তরুণীদেরই প্রাপ্য হবে কেন? পঞ্চাশোর্ধ মহিলারাও পেতে পারেন এমন কমপ্লিমেন্টস। তবে এরজন্য নিজেকে বদলাতে হবে। শরীর মনকে চাঙ্গা করে তুলতে হবে নতুন উদ্যমে।

আসলে পঞ্চাশ বছর বয়স পেরোলেই ‘জীবনের অর্ধেক সুখ বিসর্জন গেছে’ এমন এক বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়ে যায় মনে। সুন্দরভাবে সাজা, ফিটফাট থাকা প্রভৃতি প্রায় বন্ধ করে দেন অনেকে। কোন বইতে লেখা আছে যে, পঞ্চাশ পেরোলে আর ফ্লার্টি থাকা যায় না?

ব্রিটিশ মহিলারা সত্তর বছর বয়সেও নিজেকে প্রৌঢ়া ভাবেন না। সাম্প্রতিক সমীক্ষার ফলও প্রমাণ করেছে, এখন ৫৫ বছর বয়সের পর প্রৌঢ়ত্ব শুরু হয়। তাই সময়ের আগে মনে যেন প্রৌঢ়ত্ব না ছায়া ফেলে। অতএব, রপ্ত করুন পঞ্চাশেও তারুণ্য বজায় রাখার কৌশল।

মেক-আপ অ্যান্ড ড্রেস-আপ

বিউটি এক্সপার্ট এবং কস্মেটোলজিস্ট সংগীত সভরওয়ালের মতে, পঞ্চাশ বছর বয়সের মধ্যে যেহেতু মেনোপজ হয়ে যায়, তাই ত্বকের জেল্লা কিছুটা হারিয়ে যায়। অতএব, লোকের চোখে আপনার তারুণ্য ফিরিয়ে আনার জন্য হাল্কা (মানানসই) মেক-আপ এবং আকর্ষনীয় পোশাকের প্রয়োজন।

ঘরোয়া উপায়

অ্যালোভেরা জেলঃ ত্বককে রিজুভিনেট করার জন্য ব্যবহার করুন অ্যালোভেরা জেল। কারণ, ওতে মজুত থাকে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস।

আই জেলঃ পঞ্চাশ বছর বয়সের পরে চোখের চারিদিকে ফাইন লাইন্স এবং ব্ল্যাক শ্যাডো দেখা দেয়। আর এই সমস্যা দূর করার জন্য আই জেল ব্যবহার করা জরুরি।

নাইট ক্রিমঃ ত্বকের স্বাস্থ্য এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য নাইট ক্রিম-এর জুড়ি নেই। এই ক্রিম ভিটামিন ‘ই’ এবং ‘সি’ যুক্ত। ডার্ক স্পট্‌স থেকে মুক্তি দেয় এই ক্রিম।

স্কিন এক্সফোলিয়েশনঃ ডেড স্কিন দূর করে ত্বকের যৌবন ফিরিয়ে দেয় স্কিন এক্সফোলিয়েশন।

ময়শ্চারাইজিং ক্রিমঃ পঞ্চাশ বছর বয়সের পর ত্বকে রুক্ষতা আসবেই। তাই রুক্ষতা কাটাতে নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। আসলে ময়শ্চারাইজার-এর মধ্যে থাকে পেট্রোলিয়াম জেলি এবং হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, যা ত্বক নরম ও মোলায়েম রাখতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে বজায় রাখে তারুণ্য।

সার্জিক্যাল উপায়

বোটক্সঃ ত্বকের বয়স বেড়ে যাওয়া আটকায় বোটক্স। বলিরেখা (ফাইন লাইন্স) পড়তে দেয় না, ত্বককেও রাখে টানটান।

স্কিন পলিশিংঃ ত্বককে মৃত কোশ-মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন স্কিন পলিশিং। এই পদ্ধতিতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।

স্কিন লাইটিনিংঃ ত্বকের যাবতীয় খুঁত আটকানো যায় এই টেকনিক ব্যবহার করে। অনেকে ফাউন্ডেশন বেশি ব্যবহার করে মেক-আপ করেন, যা ত্বকের ক্ষতি করে। বলিরেখার জন্ম দেয়। তাই এই স্কিন লাইটিনিং প্রয়োগ করার পাশাপাশি, বেশি করে জল পান করুন। পর্যাপ্ত ঘুমোন এবং ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করে নির্মেদ থাকুন।

স্মার্ট ড্রেসিং

ফ্যাশন ডিজাইনার মীনাক্ষী খান্ডেলওয়ালের মতে, পঞ্চাশ বছর যদি ফিজিক্যালি ফিট থাকেন, তাহলে চলতে পারে ইন্দো-ওয়েস্টার্ন ড্রেস। যেমন– মিডি, গাউন, লংস্কার্ট প্রভৃতি। ব্যবহার করতে পারেন লাইক্রা ফেব্রিক। এর ব্যবহারে স্লিম এবং স্মার্টলুক পাবেন। তবে মোটা কাপড়ে তৈরি আনপ্রফেশনাল জিন্স পরবেন না, এতে বয়স বেশি মনে  হবে। মসৃণ কাপড়ে তৈরি ওয়েলফিটেড পোশাক পরুন।

হেয়ারস্টাইল

সৌন্দর্য বাড়াতে চুলের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই চুলের যত্ন নিন। ভাজাভুজি কম খাবেন, এতে লিভার খারাপ হবে এবং লিভার খারাপ হলে তার কুপ্রভাবে মাথার চুল ঝরে যেতে থাকবে। তাই চুলের যত্ন নিন এবং চেহারার সঙ্গে মানানসই হেয়ার স্টাইল করুন। শ্যাম্পু করার পর প্রয়োজনে চুল ছেড়ে রেখে নিজেকে সেক্সি করে তুলুন। মাঝেমধ্যে হেয়ার-কাট করে হেয়ার স্টাইল চেঞ্জ করুন।

ফ্লার্টিং-এর কৌশল

প্রথমেই নিজের কাছে পরিষ্কার হয়ে নিন যে ফ্লার্টিং বন্ধুত্বের-ই প্রকারভেদ মাত্র। তাই এটার জন্য অপরাধবোধ হওয়া উচিত নয়। একটা বাড়তি অ্যাটেনশন পেতে সকলেরই ভালো লাগে। ফ্লার্টিং-কে ওই উদ্দেশ্যেই কাজে লাগান।

  •   যাকে ফ্লার্ট করতে চাইছেন তার চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। মুখে মৃদু হাসি রাখুন। মনে রাখবেন, যার জন্য আপনি হাসছেন, তিনি যদি আপনার হাসির জবাব দেন হাসি দিয়ে, তাহলে ভাববেন আপনি সফল। অর্থাৎ আপনি ফ্লার্ট করতে পেরেছেন। এরপর সাধারণ কথাবার্তা থেকে সরে গিয়ে শুরু করুন ব্যক্তিগত কথাবার্তা। এতে আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে।
  •   পছন্দের মানুষটি যদি আপনার চুলের, মুখশ্রীর, পোশাকের কিংবা ব্যবহারের প্রশংসা করেন, তাহলে আপনি তা হাসিমুখে অ্যাকসেপ্ট করবেন ধন্যবাদ জানিয়ে।
  •   ডবল মিনিং কথা না বলে কিংবা ভালগার জোক্স শেয়ার না করে বরং বডি ল্যাংগোয়েজ দিয়ে আকর্ষণের চেষ্টা করুন।
  •   নিজেকে ভালোবাসুন। খুশি থাকুন। জীবনটাকে উপভোগ করার জন্য সময় বের করুন। যদি সত্যিই প্রেমে পড়ে থাকেন কারও, তাহলে বয়স পঞ্চাশ পেরোলেও আপনার মনের বয়স যে বাড়েনি, চাইলে এখনও যে আপনি শরীরী সুখ দিতে কিংবা নিতে পারেন, তা বুঝিয়ে দিন আপনার চোখের ভাষায়।

পঞ্চাশেও যাঁরা তরুণী

  •   ব্রিটিশ অভিনেত্রী জুলিয়ানা মুরঃ ৫৪ বছর বয়সেও এই অভিনেত্রী হটেস্ট সেলেবদের তালিকায় রয়েছেন।
  •   আমেরিকান অভিনেত্রী কর্টলি কোক্সঃ ৫১ বছর বয়সেও শরীর ফিট রাখার জন্য অ্যারোবিক্স এবং কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ করেন। তাই এখনও তিনি হট্।
  •   ড্রিম গার্ল হেমা মালিনীঃ ৬০ বছর বয়সেও হেমাকে দেখলে ভক্তদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। তাঁর লাবণ্যময়ী রূপ আর সেক্সি হাসি দেখলে এখনও অনুরণন তোলে মনে।
  •   রেখার কামালঃ কাঞ্জিভরম সিল্ক শাড়ি পরে যখন তিনি কোথাও উপস্থিত হন, তখন কে বলবে তাঁর বয়স ৬০-এর উপর ? এখনও তিনি হার্টথ্রব।

Carpet কিনুন দেখেশুনে

শান্তিতে বিশ্রাম যাপনের অন্যতম স্থান নিজের বাড়ি। তাই বাড়ির অন্দরমহলকে পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর রূপ দিতে চান সবাই। আর এই Interior Decoration -এর Beautification-এর অন্যতম মাধ্যম কার্পেট। আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং শৌখিন মানুষের রুচি এবং পছন্দের কথা ভেবে Carpet নির্মাতারাও তাই কার্পেটকে করে তুলেছেন আরও আকর্ষণীয়।

ডিজাইন, রং এবং বুননেও রকমফের রয়েছে কার্পেটের। কোন কার্পেট ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে এবং গুণমানেও ভালো হবে, তা জেনে নেওয়া জরুরি। কারণ, উপযুক্ত গুণমানের কার্পেট না চিনে কিনলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে অনেক কার্পেট দেখতে সুন্দর হলেও, কিছুদিনের মধ্যেঞ্জতার রং নষ্ট হয়ে যায় এবং ছিঁড়তে থাকে বিভিন্ন জায়গায়। অতএব, কার্পেট কিনুন দেখেশুনে।

কার্পেটের রোঁয়া

কার্পেটের ওপরের ছোটো ছোটো সুতো বা রোঁয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর উপর নির্ভর করে কার্পেটের আয়ু, সৌন্দর্য এবং আরাম। তাই দেখে নিতে হবে কি ধরনের মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কার্পেটের রোঁয়া। নাইলন, পলিয়েস্টার, পলিপ্রোপিলিন, কটন প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করা হয় এই রোঁয়া। তবে কটন এবং নাইলনের মিশ্রণে তৈরি রোঁয়া বা সুতোই বেশি টেকসই এবং আরামদায়ক হয়।

কার্পেটের ঘনত্ব

কার্পেটের রোঁয়ার বুনন কতটা ঘন তা দেখে নেওয়া জরুরি। কারণ, রোঁয়ার বুননে যতটা ঘনত্ব থাকবে, কার্পেটের সৌন্দর্য, আয়ু এবং আরাম ততই বাড়বে। ভালো ব্র্যান্ড-এর কার্পেটের বুননে ঘনত্ব বেশি থাকে, তাই মোলায়েম হয়। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য পা দুটো যখন আরাম খোঁজে, তখন বেশি ঘনত্বের রোঁয়াওয়ালা Carpet -ই চাই পায়ের নীচে।

কার্পেটের গদি

রোঁয়ার নীচের অংশে থাকে কার্পেটের গদি। এই গদি মোটা হওয়া জরুরি। বিশেষ করে শীতকালে ঘরের মেঝে থেকে ওঠা ঠান্ডা রোধ করার জন্য, পুরু গদিওয়ালা কার্পেট ব্যবহার করা উচিত। তাছাড়া, নীচ থেকে যাতে কার্পেট তাড়াতাড়ি ক্ষয় না হয়ে যায়, তারজন্যও ভালো গদিযুক্ত কার্পেট কেনা দরকার। অন্তত ড্রইংরুম-এর জন্য পুরু গদির কার্পেট নির্বাচন করুন।

কার্পেটের রং

কার্পেটের রং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যথার্থ রং সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে। তাই, কার্পেট কেনার সময় রং দেখে কিনুন। আপনার ঘরের দেয়ালের রং এবং ফার্নিচারের রং-এর সঙ্গে মানানসই রঙের কার্পেট কিনুন। এক্ষেত্রে কম্পিউটার-এ ফোটোশপ-এর সাহায্য নিতে পারেন। প্রথমে মোবাইল ক্যামেরায় ঘরের ছবি তুলুন। তারপর ফোটোশপ-এর মাধ্যমে নানারকম রং-যুক্ত কার্পেট মেঝের অংশে বসিয়ে দেখুন, কোন রং-টা মানানসই। তবে বাড়িতে যদি বাচ্চা থাকে তাহলে হালকা রং-এর কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, পেইন্ট কালার কিংবা এটা, ওটা ফেলে, হালকা রং-এর কার্পেটে দাগ করে দিতে পারে বাচ্চারা। অবশ্য যদি দাগ হওয়ার ভয় না থাকে, তাহলে স্টিল গ্রে কালার-এর কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, হালকা রং সবকিছুর সঙ্গে মানানসই। আর যদি চড়া রং-এর কার্পেট ব্যবহার করেন, তাহলে পাকা রং-এর কার্পেট কিনবেন অবশ্যই।

কার্পেটের আয়তন

ঘরের মাপ অনুযায়ী কার্পেট কিনুন। অর্থাৎ, ঘরের যে-অংশে কার্পেট ব্যবহার করবেন, সেই অংশের মাপ নিয়ে দোকানে যান। কারণ, একই ঘরের একাধিক কার্পেট জোড়া লাগিয়ে ব্যবহার করলে দেখতে ভালো লাগবে না, আবার নান্দনিকতাও নষ্ট হবে।

কার্পেটের দাম

কার্পেটের দাম হয় স্কোয়ারফিট অনুযায়ী। নামি দামি ব্র্যান্ড এবং গুণমানে ভালো কার্পেটের দাম বেশি হলেও সেই কার্পেট-ই কিনুন, কারণ, কার্পেট টেকসই হওয়া আবশ্যক। তবে একটু কম দামে কার্পেট কিনতে হলে গরমকালকে বেছে নিন। কারণ, শীতকালে কার্পেটের চাহিদা বেড়ে যায় বলে, দামও একটু বেশি হয় ওইসময়।

কার্পেটের রক্ষণাবেক্ষণ

যেহেতু অনেক দাম দিয়ে কার্পেট কিনতে হয়, তাই কার্পেটের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি।

  •  কার্পেটকে সরাসরি সূর্যের আলোয় রাখবেন না। কারণ, সূর্যের তীব্র আলো সরাসরি পড়লে, কার্পেটের রং হালকা হয়ে যেতে পারে। জীবাণুমুক্ত করার জন্য হালকা শেড-এর নীচে রাখুন।
  • কার্পেটের উপর একই জায়গায় দীর্ঘদিন ফার্নিচার রাখবেন না। কারণ, একই জায়গায় ফার্নিচার থাকলে চাপ পড়ে কার্পেট ছিঁড়ে যেতে পারে। তাই মাঝেমধ্যে ফার্নিচারের স্থান পরিবর্তন করুন
  • মেঝেতে পাতার সময় দেখবেন যেন কার্পেটে ভাঁজ না পড়ে। কারণ, ভাঁজ হওয়া জায়গায় পা রাখলে যেমন হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে বিপদ হতে পারে, ঠিক তেমনই কার্পেট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, দীর্ঘদিন একই ভাবে ভাঁজ হয়ে থাকলে, ওই ভাঁজ হওয়া জায়গা ছিঁড়ে যেতে পারে।
  • কার্পেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিয়মিত ভ্যাক্যুম করুন। এর জন্য ভালো ব্র্যান্ড-এর ভ্যাক্যুম ক্লিনার কিনুন। সিআরআই অনুমোদিত ভ্যাক্যুম ক্লিনার ব্যবহার করুন।
  • কার্পেটে দাগ পড়লে সাবান দিয়ে ধোবেন না। টিশুপেপার-এ অল্প জল দিয়ে আস্তে আস্তে ক্লিন করুন। এরপরও যদি দাগ না যায়, তাহলে কার্পেট ক্লিনার লিকুইড কিনে দাগ তুলুন।
  •   ঘরের বাইরে ব্যবহূত জুতো পরে কার্পেটে হাঁটবেন না। কারণ, জুতোর নীচের ধুলোময়লা, জীবাণু ইত্যাদি কার্পেটে এলে সমস্যা হবে। তাই, জুতো খুলে ঘরে ঢুকবেন।
  • কার্পেট ক্লিন করে এমন পেশাদার ব্যক্তিকে দিয়ে বছরে অন্তত একবার কার্পেট পরিষ্কার করান।

লাইফস্টাইল ডিজিজ দূরে রাখুন

আধুনিক সময় হয়তো অনেক কিছুকেই সহজ করে দিয়েছে। হাত বাড়ালেই গ্যাজেট, আর গ্যাজেটের সোনার কাঠিটি ছোঁয়ালেই জীবনযাপনে আসে একেবারে রাজকীয় আরাম। কিন্তু এই হাই স্ট্যান্ডার্ন্ড লিভিং-ই আসলে আমদের জীবনে বড়োসড়ো বিপদ ডেকে আনছে। বিলাসী বাসস্থান, আধুনিকতম গাড়িতে যাতায়াত, হাইটেক যন্ত্রপাতির নিত্য ব্যবহার, পর্যাপ্ত ক্যানড্ এবং রেডি টু কুক ফুড, অর্থ ও বিত্তের প্রতুলতা, পরিশ্রম বিমুখতার প্রবণতা– এসবই আসলে অভিশাপ নিয়ে আসছে আমাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনে। সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে উচ্চরক্তচাপ, মধুমেহ, হাইপারটেনশন, ওবেসিটি, উৎকণ্ঠা, ডিপ্রেশন, স্ট্রেস, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেলিয়োর, ব্রেন হেমারেজ, স্লিপ্ড ডিস্ক, জয়েন্ট পেইন, কিডনি স্টোন, গল ব্লাডারে স্টোন, নানা ধরনের ক্যানসার, টিউমার প্রভৃতি রোগের। প্রকোপ বাড়ছে সাধারণ হজমের গন্ডগোল ও পেটের সমস্যারও।

প্রশ্নটা হল এই সমস্যার কোনও সমাধান আছে কী? সমস্যার মূলে পৌঁছোতে পারলে সমাধানও করতে পারবেন। ভেবে দেখুন আপনার জীবনশৈলীতে হাল সময়ে আপনি কতটা পরিবর্তন এনেছেন। মূল সমস্যাটা হল কৃত্রিম এই স্বচ্ছলতায় ভেসে, আমরা প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমরা কায়িক পরিশ্রম বড়ো একটা করতে চাই না। ব্যায়াম, খেলাধূলা যা শরীর গঠনে কাজে লাগে, চল্লিশ পেরোনোর পর তাতেও আজকাল অনীহা। জেট গতির যুগে আমরা নিরন্তর ছুটছি, যদিও জীবনে শান্তি কীসে আসবে তা আমাদের অজানা। ব্যালেন্সড্ ডায়েট, ব্যায়াম, মেডিটেশন এবং সংযমী জীবনযাপনই একমাত্র সুস্থ জীবনের মন্ত্র। কিন্তু একথা অস্বীকার করে আমরা ইনডিসিপ্লিন্ড জীবনস্রোতে গা ভাসাই। ফলাফল, অসুস্থ হয়ে পড়া। চিকিৎসকরা বারবার সচেতন হতে বলা সত্ত্বেও আমরা বেপরোয়া জীবনযাপন করি এবং শেষ পর্যন্ত এমনই একটা পর্যায়ে পৌঁছোই যেখান থেকে নিরাময়ের সম্ভাবনা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈদ্যুতিন যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে আমাদের জীবনযাপনে। ফ্রিজ, এসি, কোটেড বাসনপত্র ছাড়াও, হাইটেক গ্যাজেট যেমন মোবাইল, ইন্টারনেট– এগুলির রেডিয়েশন আমাদের শরীর মনেরই শুধু না, পরিবেশেরও ক্ষতি করে।

আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা খাই তার প্রভাবও পড়ে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর। ফল, শস্য, ডাল– যে-কোনও কৃষিজাত সামগ্রী এখন পেস্টিসাইড ও সারের রাসায়নিকযুক্ত। সেইগুলোই খাদ্যের সঙ্গে আমাদের শরীরেও প্রবেশ করে। ফলে এই বিষ শরীরে ঢুকে নানা রকম রোগের জন্ম দেয়। অন্যদিকে বায়ুদূষণ, জলদূষণ ও পরিবেশ দূষণের সমস্যা তো রয়েছেই। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের প্রতিরোধক্ষমতা অনুযায়ী আমরা লড়ি। কিন্তু একসময় নতি স্বীকার করতেই হয়। তাই প্রথম থেকেই কিছু সতর্কতা মেনে চলা ভালো।

ব্লাড প্রেশার সামলাতে

  •   সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা জল পান করুন। মাটির বা তামার পাত্রে রাখা জলঞ্জএক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী
  •   খালি পায়ে ঘাসের উপর অন্ততপক্ষে ১ কিমি করে হাঁটুন রোজ সকালে
  •   প্রাণায়াম ও মেডিটেশন করার অভ্যাস করুন সকালে, প্রাতরাশ করার আগে এবং রাতে ঘুমোনোর আগে
  •   রোজের খাবার তিন দফায় খান, ব্রেকফাস্ট – লাঞ্চ – ডিনার। মাঝখানে খাবার অভ্যাস ত্যাগ করুন
  •   ব্রেকফাস্ট ভারী খান, লাঞ্চ হোক হালকা
  •   রোজকার খাবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ যেন রান্না করা খাবার থাকে আর বাকি ৫০ শতাংশ হবে রান্না না-করা খাবার অর্থাৎ স্যালাড, জুস প্রভৃতি
  •   বিকালেও হাঁটার অভ্যাস থাকা ভালো
  •   ভোরবেলায় খবরের কাগজ পড়ার বদলে গান শুনুন
  •   বেশি চা, কফি বা তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
  •   অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন
  •   যতক্ষণ না খিদে পাচ্ছে, না-খাওয়ার চেষ্টা করুন
  •   অতিরিক্ত উত্তেজিত কথাবার্তা, রাগ এড়িয়ে চলুন। পরিবারের অশান্তি বা বাইরের ঝামেলা, যা আপনার উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে, তা থেকে দূরে থাকুন
  •   ওভার রিঅ্যাকশনের জন্য স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ক্লান্তি ও অবসাদ বাড়িয়ে তোলে। এতে হার্ট ব্লকেজ পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং সেই পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই পৗঁছোবেন না, নিজের আগেবকে নিয়ন্ত্রণ করুন

ওবেসিটি যখন চোখ রাঙায়

বৈজ্ঞানিকদের মতে পেটে ১ মিলিমিটার পুরু মেদ মানেই ১০ রকম জটিলতা তৈরি হওয়ার পথ প্রশস্ত। ক্রমশ কি আপনার চেহারা অ্যাপেল শেপ নিচ্ছে? তাহলে এখনই সাবধান হোন। আপনি ওবেসিটির শিকার হতে শুরু করেছেন। এখনই কয়েকটি বিষয় মেনে চলুন।

  •   প্রত্যেকদিন সকালে বেশি করে জল পান করুন
  •   ১-২ কিমি রোজ সকালে হাঁটার অভ্যাস করুন
  •   প্রাতরাশে যেন অঙ্কুরিত মুগ, ভিটামিন সি ও ফাইবার-যুক্ত ফল থাকে। নিয়মিত শসা খাবেন
  •   প্রসেস্ড ফুড বা ফাস্ট ফুড যেমন পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, পকোড়া, সিঙারা, কচুরি, পরোটা এড়িয়ে চলুন
  •   লাঞ্চ-এ হোল গ্রেন বা মাল্টি গ্রেন আটার রুটি, সবজি ও রায়তা খান
  •   খাবার ঠিক আগে আর পরে জল খাবেন না
  •   লাঞ্চ বা ডিনারের সঙ্গে ফল খাবেন না
  •   ডিনারে ৪০ শতাংশ থাকবে রান্না করা খাবার, যেমন রুটি-শাকসবজি, বাকি ৬০ শতাংশ থাকবে স্যালাড

 

মাইগ্রেন থেকে বাঁচতে

  •   উপরে বলা হয়েছে যেমন, তেমনই ব্যালান্সড্ ডায়েট গ্রহণ করুন
  •   প্রতিদিন-ই হাঁটুন। ডিপ ব্রিদিং জরুরি। প্রাণায়াম করুন
  •   অন্তত ৩০ মিনিট মেডিটেশন করুন সূর্য ওঠার আগে
  •   ক্ল্যাসিকাল মিউজিক বা কোনও বাদ্যযন্ত্র চর্চা করুন
  • উদ্বেগ, উত্তেজনা ও ডিপ্রেশন এড়াতে
  •   প্রত্যেকদিন ১ ঘন্টা হাঁটা আবশ্যক। কাছাকাছি উদ্যান বা নিজের লনে হাঁটুন ভোরবেলায়
  •   খাদ্যপ্রক্রিয়া আগের অসুখগুলোতে যেমন বলা হয়েছে, সেভাবেই মেনে চলুন। ভিটামিন সি এবং ই-যুক্ত ফল খান
  •   প্রসেসড্ ফুড ও ফাস্ট ফুট এড়িয়ে চলুন। পিৎজা, বার্গার, পেস্ট্রি, স্যান্ডউইচ খাওয়ার লোভ সংবরণ করুন
  •   চা, কফি, অ্যালকোহল, কোল্ড ড্রিংকস্, প্যাকড্ জুস অ্যাভয়েড করুন
  •   গ্রিন টি, ফ্রেশ জুস চিনি ও নুন ছাড়া খাওয়াই সবচেয়ে ভালো

অ্যাসিডিটি, গ্যাসট্রিক ও আলসার থেকে বাঁচুন

  •   বেশি করে জল খান সকালে
  •   খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটুন
  •   আধঘন্টা মেডিটেশন করুন রোজ সকালে
  •   নানারকম ফল, অঙ্কুরিত মুগ (কাঁচা) খাওয়ার অভ্যাস করুন
  •   ব্যালান্সড্ ডায়েট গ্রহণ করুন
  •   মিক্স ভেজিটেবল, রায়তা ও নারকেলের শাঁস খান নিয়মিত
  •   সবুজ ও লাল লংকা, গোলমরিচ, আচার, মোরব্বা, কোল্ড ড্রিংকস্, প্যাক্ড জুস, ময়দার ভাজাভুজি এড়িয়ে চলুন
  •   মশলাদার ও তৈলাক্ত খাবার একেবারেই খাবেন না, পরোটা, পকোড়া, ভাজা মিষ্টি, দুধ ও দুগ্ধজাত জিনিস না খাওয়াই ভালো

ক্যানসার, টিউমার সমস্যা

সমস্ত ধরনের ক্যানসার, টিউমার বা ওই ধরনের রোগে, চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা। সোয়াইন ফ্লু, ডেঙ্গু, হার্ট ও লিভারের সমস্যার অনেকটাই সুরাহা করা সম্ভব সঠিক খাদ্যপ্রণালী মেনটেন করে। ডায়েট, মেন্টাল অ্যাটিটিউড-এ পরিবর্তন, হাই পাওয়ার নিউট্রিশন, ডিটক্সিফিকেশন, মেডিটেশন ও নিয়মিত ব্যায়াম, আপনাকে রোগমুক্তির দিশা দেখাবে। কেমো বা রেডিয়েশন থেরাপিরও প্রয়োজন হবে না যদি সঠিক সময়ে সচেতন হওয়া যায়।

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব