আপনি কি ডেটিং-এর প্রথম স্টেজে আছেন? সদ্য এনগেজ্ড হয়েছেন, কিংবা সদ্যবিবাহিত? নাকি ইতিমধ্যেই পার করে ফেলেছেন দাম্পত্যের ২০টি বসন্ত? যেমনই হোক আপনার সম্পর্কের ইকোয়েশন, প্রত্যেকটি সম্পর্কের থাকে একটি স্বতন্ত্র রসায়ন। রস ও রসায়ন, দুয়ে মিলে তৈরি হয় একটি পারফেক্ট সম্পর্কের ব্লেন্ড। তবেই সেই সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদি হয়। দুজনে একসঙ্গে চলার পথ মসৃণ হয়। পরস্পরের জন্য বাঁচার, জীবন-কে সুন্দর করে তোলার একটা তাগিদ থাকে।

আপনার উপযুক্ত সঙ্গী-কে? সে-ই যে আপনার আগ্রহের বিষয়গুলিতে আগ্রহী, আপনার স্বপ্ন দেখার শরিক, আপনার বিশ্বাস, আশা, ভরসার ক্ষেত্র। ভয় সরিয়ে যে আপনাকে দেয় নির্ভরতার আশ্বাস। কিন্তু সম্পর্ক তখনই সার্থক হবে যখন আপনারা পরস্পরকে ঠিক মতন বুঝতে পারবেন। পরস্পরের মতামত ও ভাবনা সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হতে পারবেন। দ্বিমত থাকলেও, অন্যের চিন্তার মূল্য দেবেন।

বাহ্যিক সৌন্দর্যও একসময় ম্লান হয়ে যায়, বয়স একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না কিন্তু সম্পর্ক চিরস্থায়ী করাটা সম্পূর্ণ আপনারই হাতে। সম্পর্কের মধ্যে নানা সময়ে নানা সংঘাত বা মতবিরোধ আসতে পারে। কিন্তু আপস কিংবা ত্যাগ স্বীকারের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সম্পর্ককে স্থায়ী করার রহস্য। কোনও সম্পর্ক সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে না, যদি আপনি যা নন তা হবার ভান করে চলেন। আপনি যা– সেভাবেই নিজেকে প্রকাশ করুন। দোষ-ত্রুটি মুক্ত নয় কোনও মানুষ। আপনার সঙ্গী যদি সত্যিই কমিটেড হন, তবে আপনি ‘আসলে যেমন’, আপনার সেই সত্তাটাকেই ভালোবাসবেন। কাজেই নিজের সত্যিকারের চরিত্রটাকে লুকোনোর চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ আপনার সঙ্গী যদি কখনও উপলব্ধি করেন এই মিথ্যেটা, তাহলে তার হতাশা আসতে বাধ্য এই ভেবে যে, যার জন্য তার এত কমিটমেন্ট, এত ভালোবাসা– সে আসলে একজন অসৎ মানুষ।

এখানে দেওয়া হল ২০-টি টিপ্স যা আপনার সম্পর্ককে সমধুর করে তুলবে। ২০২১ আপনার জন্য সুখকর হয়ে উঠুক এই ২০-টি পরামর্শের জোরে।

  • পরস্পরের বিশ্বাস কে গুরুত্ব দিনঃ  পরস্পরের ভাবনা চিন্তাকে গুরুত্ব দিন। এর ফলে ভবিষ্যৎ জীবনে যখন আপনারা সন্তানের মা-বাবা হবেন, তখন তাদের শিক্ষা, দীক্ষা, ভাবনার প্রসারতা দিতে পারবেন। নিজেদের মানসিকতা স্বচ্ছ হলে সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি উদার হয়। অনেক মা-বাবা সেই কারণেই তাদের সন্তান সমকামী হলে, অন্য জাতির পাত্র বা পাত্রীকে বিয়ের জন্য নির্বাচন করলে বা নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শকে অবলম্বন করলে, মা-বাবা তা মেনে নিতে পারেন। অর্থাৎ আপনার উদার মানসিকতাই ভবিষ্যতে আপনার জীবনের অনেক জট সহজে খুলে দিতে সাহায্য করবে।
  • বিয়ে করবেন নাকি করবেন নাঃ আপনাদের সম্পর্ককে সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে প্রথাগত ভাবে দম্পতি হবেন কিনা, প্রথমত সেটা ঠিক করে নেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আজকাল লিভ-ইন করার পথও নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন লিভ-ইন করার ফলে ট্যাক্স বেনিফিট, হেলথ বেনিফিট প্রভৃতি পার্কস্-এর সুযোগ এখন আইনসিদ্ধ ভাবে লিভ-ইন করা কাপলরা পেয়ে থাকেন সাধারণ দম্পতিদের মতোই। একটা কথা ভুলবেন না, ‘ম্যারেজ ইজ নট আ স্টোরি বুক রোম্যান্স’। কাজেই এর সঙ্গে কিছু দায়িত্বও এসে পড়ে। পরস্পরের জন্য আপনারা সেই দায়দায়িত্ব বহন করতে নিশ্চিত জেনে, তবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিন।
  • সন্তান চান নাকি চান নাঃ  এই ভাবনাটা আগেই ভেবে নেওয়া ভালো। এতে সন্তান জন্মানোর পর তার জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করার পরিস্থিতি হয় না। দুজনে দায়িত্বশীল অভিভাবক হবেন নাকি নিঃসন্তান থাকবেন, এটা সম্পূর্ণই আপনাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু সন্তানের জন্মের পর, ডিভোর্সের মতো কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়াই উচিত।
  •  মানি ম্যাটার্সঃ  টাকা যে-কোনও সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট করতে পারে। তাই প্রথম থেকেই পরস্পরের উপার্জন ও তার ব্যবহার কীভাবে হবে, সে ব্যাপারে স্বচ্ছ ভাবনা গ্রহণ করুন। যে-আয় দুজনে মিলে করছেন, তা একক ভাবে না রেখে, সংসারের সামগ্রিক আয় হিসাবে ভাবলে সুবিধে হবে। ক্রমে পরিবারে স্বচ্ছলতাও আসবে।
  •  কোথায় বাসা বাঁধবেনঃ  বিয়ের পর দুজনে কোথায় থাকবেন সেটাও অগ্রিম ভেবে নেওয়া ভালো। স্ত্রীর বাবা-মা বা আপনার বাবা-মা উভয়ের কাছেই একই পরিবারের সদস্য হয়ে থাকতে পারেন। আর একান্তই নিজেরা আলাদা থাকতে হলেও উভয়ের মা-বাবার দায়িত্ব এড়াবেন না।
  • ফিটনেস ও হেলথ্ গোলঃ  দুজনের বয়স কম থাকতে থাকতে এই জিনিসগুলোকে গুরুত্ব দিন। এতে অসুস্থ কম হবেন। সংসারের ভালো অনেকটাই আপনাদের ভালো থাকার উপর নির্ভরশীল। অতএব ফিটনেস-এর প্রতি যত্নশীল হোন।
  • বাকেট লিস্ট তৈরি করুনঃ  দুজনের মিলিত ইচ্ছে ও স্বপ্নের একটা বাকেট লিস্ট বানান। তারপর একে অপরকে সাহায্য করুন যাতে দুজনে মিলে সেই স্বপ্নকে ছুঁতে পারেন। সেটা যদি বিশ্বভ্রমণ হয় –তাহলে তার জন্য ফিন্যান্স প্ল্যান করুন। সেটা যদি গান-বাজনা বা ক্রিয়েটিভ কোনও কাজ হয়, তাহলে সেই হারিয়ে যাওয়া প্যাশন আবার শুরু করুন।
  • সারাদিন পর একটি ঘন্টা কোয়ালিটি টাইমঃ  প্রতিদিন সমস্ত কাজ সেরে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার জন্য অন্তত একঘন্টা সময় হাতে রাখুন। দুজনে টিভি দেখা, মিউজিক শোনা বা একসঙ্গে রান্না করার মধ্যে দিয়েও কোয়ালিটি টাইম কাটানো যায়। উইক এন্ড-এ শপিং বা ডাইন আউট বা সিনেমা দেখার প্ল্যান রাখলেও মন্দ হয় না।
  • ডিসিপ্লিনকে নিত্য সঙ্গী করুনঃ  সংসারের মধ্যেও কিছু ডিসিপ্লিন থাকা জরুরি। কাজের ফাঁকে পরস্পরের খোঁজ নেওয়া, সময় মতো বাড়িতে ঢোকা-বেরোনো, লোক-লৗকিকতা করা –সবই সেই ডিসিপ্লিনের অঙ্গ। বাড়িতে বাচ্চাদেরও একটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে রাখুন। সব জেদ মেটাবেন না, দোষ করলে শাস্তি দিন বা ভুলগুলো বুঝিয়ে সুধরে দিন।
  • নাইট ডেটঃ মাঝে মাঝে স্ত্রী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে নাইট ডেট করুন। পরস্পরের জন্য তার পছন্দের সাজ সাজুন। সারপ্রাইজ ফুরিয়ে যেতে দেবেন না জীবন থেকে। সেটা উপহারের মধ্যে দিয়ে হোক বা পছন্দের রান্না রেঁধে– উদ্দেশ্য পরস্পরকে আনন্দ দেওয়া।
  • কিছু গ্রুপ অ্যাক্টিভিটি করুনঃ  পরিবারের সকলে মিলে কিছু গ্রুপ অ্যাক্টিভিটি করুন। কোনও অ্যাক্টিং বা ড্রয়িং ওয়ার্কশপ করুন আপনার প্রতিবেশি বাচ্চাদের নিয়ে। উৎসবে একসঙ্গে নাটক করুন। চাইলে শীতে পিকনিক করুন। এতে শুধু নিজের পরিবারের মধ্যেই নয়– সম্পর্কের বাঁধন মজবুত হবে প্রতিবেশীদের সঙ্গেও।
  • পার্সোনাল স্পেস কে সম্মান করুনঃ  যতই কেন- না দুজনে দুজনের মননের সঙ্গী হোন– প্রত্যেক মানুষের কিছু প্রাইভেট স্পেস থাকে। সেই পার্সোনাল স্পেসটাকে সম্মান দিন। দিনের মধ্যে একঘন্টা সময় নিজের জন্যও রাখুন। নিজের শখ বা পছন্দের কাজে ইনভলভ্ড হোন।
  • অজুহাত বাদ দিনঃ  ভুল করলে স্বীকার করুন। অজুহাত সরিয়ে দিন। কোনও কমিটমেন্ট ফেইল করলে, সত্যি করে বলুন কেন সেটা পূরণ করতে পারবেন না। মনে রাখবেন ‘ব্রোকেন প্রমিসেস ব্রিড আনহ্যাপিনেস’। তাই কাউকে কোনও প্রতিশ্রুতি দিলে, কথা রাখার চেষ্টা করুন।
  •  রাগ করে ঘুমোতে যাবেন নাঃ  যে-কোনও সিরিয়াস সম্পর্কে রাগ-অভিমান হয়েই থাকে। যদি তা কলহের দিকে মোড় নেয়, তাহলে একটা সময়ের পর তর্ক করা বন্ধ করুন। নিজের ভুল হলে, ক্ষমা চান। অন্যজনের ভুল হলে সাময়িক ভাবে মেনে নিন। পরে রাগ পড়লে তার ভুলটা তাকে বুঝিয়ে শুধরে দিন। কিন্তু রাগ পুষে রেখে ঘুমোতে যাবেন না। এটা দু’ক্ষেত্রেই অস্বাস্থ্যকর– আপনার মনের এবং সম্পর্কের।
  • সঙ্গী ও পরিবার, ব্যালেন্স জরুরিঃ  আপনার পরিবার যদি আপনার সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে রুখে দাঁড়ায়, তখন একরোখা না হয়ে চেষ্টা করুন সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে পরিচয় করাতে। হতে পারে তার ব্যবহারে আপনার পরিবার হয়তো মত পালটাবে। বিয়ের পরেও যদি মনোমালিন্য লেগে থাকে, কোনও এক পক্ষকে সমর্থন না করে, চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ থাকার।
  • স্পষ্টবক্তা হোনঃ  আপনার পছন্দ-অপছন্দ স্পষ্ট ভাবে সঙ্গিনী বা সঙ্গীকে জানান। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার চেয়ে প্রাথমিক ভাবে কিছু অভ্যাস বদলে নেওয়া ভালো। এতে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক সুখকর হয়। নিজের বদ অভ্যাসও একই সঙ্গে বদলানোর চেষ্টা করুন, যাতে অন্যজন আপনার দিকে অভিযোগের আঙুল না তুলতে পারে।
  • পরস্পরের জন্য ভাবুনঃ  মনে রাখবেন একটা সম্পর্কে কিন্তু আপনি একা নেই। দুজনে আছেন। কাজেই দুজনেরই পক্ষে যা কল্যাণকর– তেমন সিদ্ধান্তই নিন। স্বার্থপরতার কোনও জায়গা নেই যৌথ জীবনে। তাই পরিকল্পনাগুলো যেন পরস্পরের জন্য হিতকর হয়। শারীরিক পরিশ্রম করার ক্ষেত্রেও অন্যজনকে মাঝেমাঝে রিলিফ দিন।
  • কমপ্লিমেন্ট দিনঃ  স্ত্রী বা স্বামী বহুদিন একসঙ্গে রয়েছেন বলেই যে পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা হারিয়ে ফেলবেন– সেটা অনুচিত। পরস্পরকে কমপ্লিমেন্ট দিতে ভুলবেন না। এতে পরস্পরের কাছে পরস্পরের গুরুত্ব ও ভালোবাসা বাড়বে। আজকের গতিহীন জীবনে ছোটো ছোটো অনুভূতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোকে আগলে রাখুন।
  • নতুন কিছু করুনঃ  দুজনে মিলে নতুন কিছু করার উদ্যম হারিয়ে ফেলবেন না। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস বা ট্রেক-এ যেতে পারেন। ছবি অাঁকা বা ছবি তোলা, যেটাই করুন, দুজনে দুজনের সঙ্গী হোন। শেখার কোনও বয়স হয় না। বাল্য বয়সে বা যৌবনে যা শিখতে চেয়েও শেখা হয়নি, সেটা নতুন করে শুরু করতে বাধা নেই।
  • পজিটিভ থাকুনঃ  বেঁচে থাকাটা মূল্যবান মনে করুন ছ  কথায় কথায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন না। জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো-কে দেখতে শিখুন। কাউন্ট ইয়োর ব্লেসিংস। অর্থাৎ এই জীবনটা খুব মূল্যবান। মনুষ্য জন্মটাকে আশীর্বাদ হিসাবে নিন। ভালো কাজের মধ্যে থাকুন। আক্ষেপ নিয়ে বাঁচবেন না। যা পাচ্ছেন, যা পেয়েছেন সেটাকে নিয়ে খুশি থাকার চেষ্টা করুন।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...