সব প্রেমের সম্পর্কই কি মধুর হয়? -এই প্রশ্নের উত্তরে নির্দ্বিধায় বলা যায় — হয় না। কিন্তু সম্পর্কে যারা সততা রাখেন, তারা সুখের স্বপ্নে বিভোর থাকেন। আসলে, যে আবেগ নিয়ে প্রেমের সম্পর্কের সূচনা হয়, সেই আবেগের বশেই কিছু ভুল করে বসেন অনেকে। তরুণ-তরুণীরা প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হলে বেশিরভাগ সময় যে ভুলটি করে বসেন, তা হল— প্রি-ম্যারিটাল সেক্স। অভিভাবকরাও বুঝতে পারেন না যে, তরুণ প্রজন্মের এই যৌন স্বাধীনতার বিষয়টিতে ঠিক কতটা অভিভাবকত্ব দেখাবেন কিংবা কী ভূমিকা নেবেন। কিন্তু, বাস্তব এটাই যে, প্রি-ম্যারিটাল সেক্স-এর প্রবণতা বাড়ছে।

আসলে, সেক্স বিষয়টিকে খুব সাধারণ ভাবে দেখা ভুল হবে। বয়ঃসন্ধি থেকে শরীরে যে হরমোনাল পরিবর্তন আসে, তার ফলে অবধারিত ভাবে তৈরি হয় যৌন চাহিদা। তাই, সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রেও মনের পাশাপাশি প্রচ্ছন্ন শরীরের টানও থাকে অনিবার্য ভাবে। কেউ হয়তো সংযম মেনে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকেন, কেউ আবার তা পারেন না। আবার কেউ হয়তো সামাজিক অনুশাসনের কথা মাথায় রেখে কিংবা ভয়ে নিজেকে সংযত রাখেন। আসলে প্রি-ম্যারিটাল সেক্স-এর বিষয়টির ভালো-মন্দ নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষে।

তরুণ-তরুণীর সম্পর্কের ভিত কতটা মজবুত তার উপরও প্রি-ম্যারিটাল সেক্স-এর ভালো-মন্দ অনেকাংশে নির্ভরশীল। দু’জন-দু’জনকে ভালো ভাবে জানা, বোঝার পর উভয়ের সম্মতিতে প্রি-ম্যারিটাল সেক্স হলে তার ভবিষ্যৎ খুব খারাপ হয়তো হবে না। তবে বিষয়টি এত সহজ নয়, এর অনেক জটিল দিক আছে। যেমন, একবার শারীরিক তৃপ্তির স্বাদ পেয়ে গেলে, পরস্পরকে ছেড়ে থাকা প্রায় অসম্ভব। তখন, ওই উঠতি বয়সে বারবার যৌনসুখ লাভের ইচ্ছে হবে।

যদি কেরিয়ার গড়ার জন্য কিংবা অন্য কোনও কারণে বিয়ে করতে দেরি হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তৈরি হওয়া সেক্স-এর চাহিদা ঘনঘন মেটাতে পারলে ভালো, নয়তো সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে নানারকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই সময় হবু বউ কিংবা বর যদি একজন অন্যজনকে শারীরিক ভাবে না পান, তাহলে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে তৃতীয় কারওর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ারও একটি দ্বিতীয় সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা সুখকর নয়।

প্রি-ম্যারিটাল সেক্স-এর অন্য একটি দিকও আছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েসঙ্গী শারীরিক সুখ দিয়ে ছেলেটির প্রতি তার প্রগাঢ় ভালোবাসা জাহির করতে চায়। আর পুরুষসঙ্গীটি প্রমাণ করতে চায় তার পৌরুষত্ব। এটা কোনও খারাপ বিষয় হয়তো নয়। কিন্তু বিবাহপূর্ব দীর্ঘ এই শারীরিক মিলনের পর যদি কোনও কারণে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে, সমূহ বিপদ মেয়েটির।

প্রথমত, যার সঙ্গে সে এতদিন শরীরী সুখ পেয়েছে, তাকে ভুলে থাকা খুব কঠিন। দ্বিতীয়ত, এই শারীরিক ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি যদি জানাজানি হয়ে যায়, তাহলে অন্য কোনও ছেলে সহজে বিয়ে করতে চাইবে না ‘ভার্জিন’ নয় বলে। এক্ষেত্রে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটানোয় ছেলেটির খুব একটা ক্ষতি হবে না। কারণ, যে যাই বলুক, বাস্তব হল, প্রেমিক-প্রেমিকার শারীরিক মিলনের বিষয়টি লোকে জেনে গেলে, পুরুষসঙ্গীর ভার্জিনিটি নিয়ে কেউ তেমন প্রশ্ন তোলেন না। দোষারোপের আঙুল ওঠে মেয়েটির উপরই বেশি। যেন গর্হিত অপরাধটা মেয়েটি একাই করেছে। সমাজ প্রাক বৈবাহিক যৌনতাকে এখনও অনুমোদন করে না।

বিবাহ-পূর্ব যৌনতার প্রতারণার বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে। ছেলে এবং মেয়ে যে-কেউ প্রতারণার শিকার হতে পারেন। কীভাবে? দু’ভাবে। এক- অনেক পুরুষ আছে যারা শরীরী সুখ পাওয়ার জন্য ভালোবাসার ভান করে মেয়েটির সঙ্গে। তারপর সাধ মিটে গেলে কিংবা বিয়ের চাপ দিলেই নিজেকে সরিয়ে নেয় কিংবা ঝগড়া ঝামেলা অথবা মেয়েটিকে দোষারোপ করে সম্পর্কের ইতি টানে। দুই- কোনও ছেলে যদি মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার পর মেয়েটিকে একাধিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে দেখে কিংবা কোনও অপছন্দের কারণে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তাহলে তখন তা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, মেয়েটির মনে কুমতলব থাকলে সে হাতিয়ার করতে পারে যৌনমিলনকে। গুরুতর অভিযোগ আনতে পারে পুরুষ সঙ্গীটির বিরুদ্ধে।

‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস’-এর অভিযোগ আনলে ছেলেটি গুরুতর শাস্তি পেতে পারে। দোষ প্রমাণিত হলে জেল এবং জরিমানা দুই-ই হতে পারে ছেলেটির। এরকম ঘটনার খবর মাঝেমধ্যেই হইচই ফেলে দেয়। টলিউডের এক অভিনেতা ঠিক এই অভিযোগে জেলও খেটেছেন কিছুদিন। এক বিশিষ্ট তরুণ রাজনৈতিক নেতাও এই অভিযোগে আইনি সমস্যায় জড়িয়েছিলেন কিছুদিন আগে।

আসলে, প্রেম ও যৌনতার অবস্থান খুবই কাছাকাছি। প্রেম এলে যৌনতা পিছু নেবেই। বয়ঃসন্ধিকালে যৌন আকাঙ্ক্ষা থাকে তীব্র। তাই ওই সময়ের প্রেমে বিয়ের আগে সেক্স ঢুকে পড়ে সহজেই। যদি উভয়ে সম্পর্কে সৎ এবং দায়বদ্ধ থাকেন, তাহলে সুরক্ষিত যৌন সম্পর্কে হয়তো তেমন কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু বিয়ের আগে দীর্ঘদিন যদি শারীরিক মিলন ঘটে, তাহলে তা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিয়ের পরে পরস্পরকে নতুন করে আর আবিষ্কার করার থাকে না এবং একঘেয়েমি থেকে তৃতীয় সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার চান্স থাকে প্রবল। তাছাড়া, এমন অনেক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে, সম্পর্কের অন্ধ আবেগে কিংবা অল্প বয়সের অজ্ঞতার কারণে অনেকে ভুল করে বসেন। কেউ বিয়ের আগেই ‘মা’ হয়ে যান, কেউ বা আবার সঙ্গীর সম্পর্কে বিশদে খোঁজখবর না নিয়ে প্রতারিত হন। অতএব যাই করুন না কেন, সতর্কতা জরুরি।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...