ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে ক্যাচ দেম ইয়ং, অর্থাৎ, ওদের ছোটো থেকেই প্রভাবিত করো। ধর্মের ক্ষেত্রে ঠিক এটাই করা হয়। বোধবুদ্ধি ঠিক মতো বিকশিত হওয়ার আগেই, শিশুদের মস্তিষ্কে নিজের ধর্মবিশ্বাস গেঁথে দেন অভিভাবকরা। যে-সময় শিশুরা তাদের ইচ্ছে-অনিচ্ছে প্রকাশ করতে পারে না, যে-সময় কোনও আপত্তি তুলতে পারে না, তখনই তাদের মগজ ধোলাই করতে সুবিধে হয় এবং এই সুযোগটাই নেওয়া হয় সিংহভাগ ক্ষেত্রে।
একটা সময় ছিল যখন শিক্ষায় সমানাধিকারও ছিল না, যা শোনা যেত, সেটাই বিশ্বাস করতে হতো। কিন্তু, ৫০০ বছরের পুরোনো ভ্রান্ত শিক্ষানীতি যখন অসহ্য হয়ে ওঠে, তখনই বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে। স্বেচ্ছাচারিতা যে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না, তাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সত্য-মিথ্যার ভেদাভেদ এবং ভ্রান্ত নীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা নিয়ে আসছে প্রকাশনা মাধ্যম। তাই, মানুষের বিচারবুদ্ধি, বিশ্লেষণ ইত্যাদির ক্ষমতা বেড়েছে এবং বিবেক জাগ্রত হয়ে শুভবুদ্ধির জন্ম নিয়েছে। আর ঠিক এই কারণেই ধর্মের কচকচানি যেমন সবাই মেনে নেন না এখন, ঠিক তেমনই স্বেচ্ছাচারিতাও এখন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এখন যেমন গণতন্ত্রের গুরুত্ব বেড়েছে, ঠিক তেমনই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্বও বেড়েছে।
এত সত্ত্বেও, ধর্মের খেলা বন্ধ হয়নি। চলছে, চলবে এমনই অবস্থা এখন। নীতি এবং ভালোমন্দের তোয়াক্কা না করে, স্বার্থান্বেষী কিছু লোক নিজেদের মতো করে ধর্মপ্রচার করে চলেছে আজও। জারি রয়েছে লুঠপাট এবং হিংসামূলক কার্যকলাপও।
ভারতীয় জনতা পার্টির রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে, উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষার মাধ্যমে প্রচলিত মূল্যায়নকে বন্ধ করে, তাদের ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ তো ২০০ বছর পিছিয়ে দেওয়ার মতোই ঘটনা ঘটল।
কত বছর, কত টাকার বিনিময়ে কত কষ্ট করে সন্তানকে শিক্ষাদান করতে হয় অবিভাবকদের, সেই বিষয়টি আর তেমন গুরুত্ব পাবে না এখন। বরং গুরুত্ব পাবে, কে পড়াবে আর কী পড়বে। তাহলে কি এই শিক্ষানীতিতে এটা স্পষ্ট যে, শিক্ষার্থীরা আবার পুরাকালের শিক্ষানীতিকে আপন করে নেবে? এখন শব্দজাল বিস্তার করে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, প্রকৃত জ্ঞান পাওয়া যেত বেদ, শাস্ত্র প্রভৃতির মাধ্যমে। তাহলে জীববিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান কিংবা সাহিত্য, কলা ইত্যাদির সামগ্রিক জ্ঞানলাভের গুরুত্ব আর রইল কি?