আজকাল ভোটে জিতে আসা নেতারাই শুধু শাসন চালান না, নেতাদের হয়ে কাজ করা অফিসারদের হাতেও এখন শাসন ক্ষমতা অনেকটাই চলে গেছে। আর এইসব অফিসাররা এখন এমন প্রাচীন পুরোহিতদের মতো কথা বলতে শুরু করেছেন, যে পুরোহিতরা এই একুশ শতকেও মহিলাদের শৃঙ্খল পরিয়ে রাখতে চান। শুধু তাই নয়, এইসব পুরোহিতরা আজও বলে চলেছেন, নারীপুরুষের মিলন ঈশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত এবং ঈশ্বর যদি চান নারীপুরুষের মধ্যে বিচ্ছেদও ঘটাতে পারেন।
প্রাচীন পুরোহিতরা আগের মতো আজও ব্রেনওয়াশ করে চলেছেন এই কথা বলে যে, আমজনতা তাদের উৎপাদন এবং উপার্জন পুরোহিতের পায়ে নিবেদন করলেই সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবে এবং পুণ্যলাভ হবে।
আধুনিক সমাজে হয়তো যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞান-মনস্করা কিছু ক্ষেত্রে প্রাচীন পুরোহিতদের মুখোশ খুলে দিতে পেরেছেন। কিন্তু এইসব ভণ্ড পুরোহিতদের হাত থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা পাননি সাধারণ মহিলারা। আজও ধর্মভীরু মহিলারা পুরোহিতদের ঈশ্বরের দূত ভাবেন এবং অর্থ ও শরীর সর্বস্ব নিবেদন করেন।
ধর্মের কিছু দোকানদার বলতে শুরু করেছেন যে, সামান্য লেখাপড়া করেই সরকারী চাকরির আশা করা উচিত নয় তরুণ-তরুণীদের। তাই তারা সরকারী চাকরির আশায় সময় ব্যয় না করে যেন ব্যাবসা করে এবং মুকেশ আম্বানির মতো বিশ্বখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করে।
আসলে এইসব ভণ্ডরা বোঝাতে চায় যে, পরিশ্রম করবেন আপনি, অর্থ উপার্জন করবেন আপনি কিন্তু আপনার সর্বস্ব দিয়ে পুরোহিতদের জন্য আনন্দ-আশ্রম গড়ে দেবেন ভক্তিভরে। কিছু ভণ্ড তো এমনও বোঝাতে চায় যে, শুধু নিজের পেট ভরালে মনুষ্য জীবন বৃথা, পূণ্যার্জন করতে হলে পাবলিক কিচেন তৈরি করে জনসেবা করুন। তাদের বক্তব্য, ভোগে নয়, ত্যাগের মাধ্যমেই জীবন সার্থক হয় প্রকৃতপক্ষে। আজ প্রায় প্রতিটি ঘরেই প্রত্যক্ষে কিংবা পরোক্ষে আধিপত্য কায়েম করে চলেছে সরকার কিংবা হাইটেক ধর্মগুরুরা। শিশুমনেও ধর্মের ভূতকে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর প্রাপ্তবয়স্করা কেউ যদি ধর্মের বেড়াজাল ভেদ করে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়, তাহলে তাকে কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা চলছে। আসলে আমাদের ভারতীয় সমাজে সঠিক ভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানুষের বড়ো অভাব আজও।