শুধু আদালতেই নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আইনকে গুরুত্ব দিতে হয়। আমজনতা বহু ক্ষেত্রেই নিজেই বিচারকের ভূমিকাও পালন করেন। মনে রাখবেন, আদালতে শুধু সেই আইন চলে, যা সংবিধানে উল্লেখ করা রয়েছে কিংবা সংসদ এবং বিধান সভাতে সম্মতি পেয়েছে। কিন্তু সাংসারিক ক্ষেত্রে, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে, সম্পর্কে, শিক্ষা ক্ষেত্রে, ধর্মস্থানে, এমনকী শারীরিক সুখ ভোগের সময়ও কিছু আইন বলবৎ হয়ে আসছে পরম্পরাগত ভাবে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই যে, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও অনেক সময় এমন আইন প্রয়োগ করা হয়, যা আদালতে অপরাধীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আসলে জীবনটাই যেন এক মস্ত আদালত! আদালতের বাইরের এই আদালতেও সর্বদা চলতে থাকে বিচার। সমস্যা ছোটো হোক কিংবা বড়ো, আইনের কমবেশি প্রয়োগ চলছে সব ক্ষেত্রে। আইন যেন এক অদ্ভূত জীবন-দর্শন!
আদালতে চলা মামলায় বিচার চলে তথ্যপ্রমাণ, ঘটনা, সাক্ষী ইত্যাদির উপর নির্ভর করে এবং স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিচারক রায়দান করেন। এক্ষেত্রে বিচারক খুব সতর্ক থাকেন এবং ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু বাস্তব জীবনে যে আইন প্রয়োগ করা হয়, তা অনেক ক্ষেত্রে বড়ো একপেশে হয়ে ওঠে।
যেমন ধরুন স্ত্রী চাইছেন মাশরুম পনির খেতে কিন্তু এতে খরচ অনেক তাই কম খরচে বানানো যায় অথচ সুস্বাদু হবে এমন কিছু খাবার খাওয়ার প্রস্তাব দিলেন স্বামী। এক্ষেত্রে আপোশে সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে ভালো কিন্তু তা যদি না হয়, স্বামী কিংবা স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন যদি আদালতের মতো তার কথা অন্যকে মানতে বাধ্য করেন, তাহলে সেই আইনের প্রয়োগ খুব সুখকর হবে না বলেই মনে হয়।
আদালতে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষের কথা শুনে কিংবা তথ্য-প্রমাণ ও উকিলের জেরার পর বিচারক আইনি সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যক্তি প্রায় থাকে না বললেই চলে। এক্ষেত্রে যে দু'জনের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়, তারা নিজেরাই নিজেদের বিচারক।