আফগান মহিলারা যে দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তার জন্য গোটা বিশ্ব তাদের প্রতি সহানুভতিশীল। কিন্তু তাদের এই দুর্ভাগ্য থেকে নিষ্ক্রমণের পথ কি প্রবাসে থাকা আফগানি মহিলারা বের করতে সাহায্য করতে পারতেন না? দোষ কি তাদেরও নয়, যে-আফগানি মহিলারা আফগানিস্তানের পাহাড়ে ছোটো ছোটো গ্রামে আত্মগোপন করে আছেন এবং পর্দানশীন হয়ে নিয়ন্ত্রিত জীবন অতিবাহিত করাকেই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন বলে মেনে নিয়েছেন?
সাধারণ এক শ্রেণির মহিলা আছেন যারা পৃথিবীর যে-প্রান্তেই থাকুন না কেন, অত্যন্ত ধর্মভীরু প্রকৃতির। তারা ঈশ্বরবাদে বিশ্বাস করেন, এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু তারা পুজোপাঠ আচারবিচারের শৃঙ্খলে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে এমনই বেঁধে ফেলেন, যেখান থেকে তাদের মানসিক উত্তরণ আর ঘটে না।
এই মানসিকতার ধর্মভীরু দুর্বল মহিলাদের উপরে আজ চেপে বসেছে শরিয়তি আইন এবং এই দৃষ্টিভঙ্গি তাদের প্রায় ১২০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। হয়তো আধুনিক টেকনোলজি সামান্য পরিমাণে তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়েছে কিন্তু মানসিক ভাবে অনগ্রসরই রয়ে গেছেন তারা।
নারী-পুরুষের সমানাধিকার দাবি করা ইউরোপ-আমেরিকাতেও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর প্রচুর ঘটনা ঘটে।কিন্তু তারা মানবাধিকারের জন্য লড়েন। আফগান মহিলারা তাদের উপর অত্যাচার যাতে না হয়, তাই মুখ বুজে থাকাকেই সমাধান হিসাবে ধরে নিয়েছেন।
এই মুখ বুজে সহ্য করার শিক্ষাই মহিলারা চার্চে, মন্দিরে, মঠ-আশ্রমে পেয়ে আসছেন যুগ যুগ ধরে। বিবাহ পরম্পরায় মেয়েরা স্বামীর সম্পত্তি হিসাবে এক গৃহ থেকে অন্য গৃহে যান। কোনও কোনও জায়গায় তো বহুবিবাহ প্রথাও চলে। ১৯৫৬ সালের আগে হিন্দু পুরুষের বহু বিবাহ, বিধবা বিবাহ প্রভৃতি ন্যায়সঙ্গত ছিল। স্বামীর একাধিক স্ত্রী দ্বারা সন্তান উৎপাদনের অধিকার থাকলেও, কোনও স্ত্রী যদি পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের দরুণ সন্তানসম্ভবা হয়, তাহলে সেই সন্তান অবৈধ হিসাবে গণ্য হতো।
আফগানি শরিয়তি আইনে কোনও স্ত্রী যদি এই অপরাধ করে, তাহলে তার শাশুড়ি ও অন্যান্য সতীনরা তার স্বামীকেই সমর্থন জানায়। অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত স্ত্রীকে তার স্বামী গুলি করে মারলে, তারা মনে করেন স্বামী সমাজের রক্ষক, তাই এই অন্যায় তিনি মানতে পারেননি।