২০২২-এর ১ জানুয়ারিটা শুরু হয়েছিল অন্য ভাবে। নতুন বছরের সূচনা পর্বে কর্ণাটকের এক প্রিইউনিভার্সিটি কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে আসা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। প্রিন্সিপাল রুদ্র গৌড়া ওই ছাত্রীদের ক্লাস অ্যাটেন্ড করতে নিষেধ করেন। উদিপির এই কলেজে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থীরা পেট্রোল ছোড়া শুরু করে দিয়েছিলেন। মুসলিম মেয়েরা জানান, হিজাব পরা তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা। আর হিন্দু কট্টরপন্থীরা তখন স্কার্ফ পরার সমর্থনে আওয়াজ তোলেন।
এই আগুন ধীরে ধীরে নয়, দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দুই ধর্মের লোক নিজেদের যুক্তিকে সমর্থন করে জেদ দেখাতে থাকে। স্কুল-কলেজের প্রিন্সিপালরা অনেকেই বোঝাতে চাইছেন যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধর্মের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করবেন না। কিন্তু ধর্মের ঠিকাদাররা কারও কথায় কর্ণপাত করেননি। একই ক্লাস-এর ছাত্রীরা তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একদল হিজাব পরছে, একদল স্কার্ফ, আবার অনেকে মাথায় কিছুই পরছে না। তিন ধরনের মানসিকতার ছাত্রীরা পরস্পরকে বিদ্ধ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, পরস্পরের মধ্যে যেটুকু বন্ধুত্ব ছিল ছাত্রীদের মধ্যে, ধর্মের বুলডোজার সব নষ্ট করে দিয়েছে।
এমনিতেই এখনও অনেক জায়গায় লেখাপড়া করার অবাধ স্বাধীনতা পায় না মেয়েরা। তালিবানি আফগানিস্তানে মেয়েদের স্কুল এখনও খোলেনি। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, তালিবানি নেতারা তাদের মেয়েদের পাকিস্তানের প্রাইভেট মাদ্রাসায় পড়ানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কাতার, দুবাই, আবুধাবিও পাঠিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে সাধারণ মেয়েরা নিজেদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রেখে এখনও গৃহবন্দি থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
মুসলিম মেয়েদের যেমন কোনও অবস্থাতেই হিজাব পরে স্কুলে আসতে দেওয়া উচিত নয়, ঠিক তেমনই মাথায় তিলক, টিকা, গলায় ক্রুশ-লকেট কিংবা হাতের আঙুলে ধর্মীয় আংটি কোনও কিছুই পরে আসার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। স্কুল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কোনওরকম ভেদাভেদ, ধর্মান্ধতা থাকা উচিত নয়। শিক্ষাঙ্গনকে যারা কলুষিত করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সমস্ত অপচেষ্টা রুখে দেওয়া উচিত। কারণ, শিক্ষাক্ষেত্র ছাত্রছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার মাধ্যম, ধর্মের দোকানদারদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্র নয়। ধর্মীয় স্বাধীনতা যদি থাকে, তা ততক্ষণ পর্যন্ত থাকা উচিত, যতক্ষণ কোনও বিরোধ তৈরি না হয়। স্কুলের চৌহদ্দির মধ্যে শুধু যুক্তিতর্ক চলবে শিক্ষা বিষয়ক, ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে সেখানে কখনও অশুভ রাজনীতি ঢুকবে না।