কসবা অঞ্চলে মানবদের যেখানে বাড়ি, সেই পাড়াটা বেশ পুরোনো। কোনও বহুতল নেই, সকলেরই প্রায় নিজের বাড়ি। বেশ একটা পাড়া পাড়া কালচার। সবাই সবাইকে চেনে, উৎসব অনুষ্ঠানে হইহুল্লোড়ও করে একসঙ্গে। মানবের স্ত্রী সুমিতাও শ্বশুরবাড়ির পাড়ায় নিজেকে বেশ মিলিয়ে, মিশিয়ে নিয়েছে। শিবরাত্রি থেকে শুরু করে দুর্গোৎসব— সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও পাড়ার বউ-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে উদযাপন করতে বেশি পছন্দ করে।
এবারও সুমিতা ঠিক করেছে, শিবরাত্রির দিন উপোস করে, পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে গিয়ে একসঙ্গে শিবের মাথায় জল ঢালবে। তাই সে খুব ভোরবেলা উঠে স্নান করে নেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে মনে মনে।
মানবদের দোতলা বাড়িটার নীচতলায় থাকেন ওর মা-বাবা। মানব-সুমিতার পাঁচ বছরের ছেলে টুবাইও রাতে দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে শোয়। আর তাই দোতলার শোওয়ার ঘরে মানব এবং সুমিতা পরস্পরকে অনেকটা সময় পায় একান্তে। কিন্তু শিবরাত্রির দিন ভোরবেলা মানব শারীরিক ভাবে সুমিতাতে চাইলেও, তার সে ইচ্ছে আর পূরণ হল না। কারণ নিজেকে মানবের বাহুমুক্ত করে, বিছানা থেকে নেমে গেল সুমিতা। মানব তা বুঝতে পেরে ঘুম জড়ানো গলায় বলল— এ্যাই কী হল? কোথায় যাচ্ছ? শোনো, একটু এসো এদিকে।
—উহুঁ, তোমার মতলব আমি বুঝে গেছি। আজ ওসব হবে না। আজ আমার উপোস।
সুমিতার প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর ‘ধ্যাত' বলে পাশবালিশটা জড়িয়ে উলটো দিকে ঘুরে শুলো মানব। আর তা দেখে মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সুমিতা।
বছর সাতেক আগে মানবের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুমিতার। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ হলেও, বিয়ের আগে বার তিনেক দেখা করে, পরস্পরকে যাচাই করে নিয়েছিল তারা।
সুমিতার সঙ্গে মানবের বিয়ের সম্বন্ধটা এনেছিলেন মানবের বাবার বন্ধু আশুতোষ। গড়িয়াতে আশুতোষের যেখানে বাড়ি, তার ঠিক দুটো বাড়ি পরেই সুমিতাদের বাড়ি। মানবদের মতো ওদের বাড়িও দোতলা। সুমিতার বাবা ছিলেন কেন্দ্র সরকারি কর্মচারি, মা স্কুল শিক্ষিকা। কিন্তু মানবের মা লেখাপড়া জানলেও, তিনি সাধারণ গৃহবধূ। অবশ্য মানবের বাবা ছিলেন আর্মি অফিসার।