কলিংবেল টিপতেই ভিতর থেকে কুকুরের সে কী ভয়ংকর ঘেউ ঘেউ। কলিংবেলের শব্দ না শুনলেও কুকুরের কান ফাটানো এই চিৎকার তো কানে যাবেই। তাই দ্বিতীয়বার আর বেল টেপেনি তিন্নি। এরই মধ্যে সদর দরজা খুলে সামনে এসে যিনি দাঁড়ালেন, তাঁকে দেখেই তার মনে হল, ইনিই তিয়াসের মা।
খুব কম দিন হল না, তিয়াসের সঙ্গে ও মিশছে। কিন্তু এ পথ দিয়ে যেতে যেতে দূর থেকে একদিন দেখালেও, তিয়াস কখনও তাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসেনি। কিছুদিন হল তিয়াসের ছোটোখাটো নানান আচরণ নিয়ে তিন্নির মনের মধ্যে বেশ তোলপাড় হচ্ছিল। সন্দেহটা যখন মনের মধ্যে একেবারে গেড়ে বসেছে, তখনই সে ঠিক করেছিল, আচমকা একদিন তিয়াসের বাড়ি গিয়ে দেখবে সে যা ভাবছে সেটা সত্যি কি না।
কিন্তু প্রথম দিনই অযাচিত ভাবে কোনও মেয়ের পক্ষে তো হুট করে তার প্রেমিকের বাড়ি যাওয়া ঠিক নয়। বাইরের লোকের কথা না হয় বাদই দিলাম, ওর বাড়ির লোকেরা কী ভাববে! তাই খুব ছোটোবেলাকার বন্ধু রঞ্জনাকে সব কথা খুলে বলেছিল সে।
রঞ্জনা বলেছিল— সে নয় যাওয়া যাবে। কিন্তু তুই যে বলছিস, ও যখন বাড়ি থাকবে না তখন যাবি। তুই বুঝবি কী করে ও কখন বাড়ি নেই?
তিন্নি বলেছিল— ও বাড়ি ঢুকলেই মোবাইল অফ করে দেয়। আর যতক্ষণ না বাড়ির বাইরে বেরোয়, ততক্ষণ অফই থাকে। ফলে ফোন করে যখন দেখব ওর মোবাইল অন, তখন ও কোথায় আছে জেনে নেব। ওর বাড়ি তো বেশি দূরে নয়। যদি দেখি এক দেড় ঘণ্টার মধ্যে ওর বাড়ি ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই, তখন যাব।
—ও যদি মিথ্যে কথা বলে? কাছাকাছি থেকেও যদি বলে দূরে আছি?
—না না, অতটা মিথ্যে বলবে কি! ও জানবে কী করে যে, ওর বাড়ি যাওয়ার জন্য আমি এটা জানতে চাইছি। তা ছাড়া যে যাই বলুক না কেন, ও কিন্তু অতটা খারাপ না। আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। এই তো ক'দিন আগে আমার জ্বর হয়েছিল দেখে উপোস করে দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে পুজো দিয়ে এসেছিল, যাতে আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠি। আর ওর যদি খারাপ মতলবই থাকত, তা হলে সে দিন এমন সুবর্ণসুযোগ পেয়েও আমাকে ছেড়ে দিত না। এরই মধ্যে কবে যেন আমরা কোথায় একটা যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি সামনেই, কোনও বাড়িতে বোধহয় কোনও অনুষ্ঠান ছিল— রাস্তার পাশেই গাদাগুচ্ছের কী সব এঁটো পাতা-টাতা ফেলেছে। কতকগুলো কুকুর সেখানে তাড়াকাড়ি করে খাচ্ছে। তুই তো জানিস, ছোটোবেলায় আমাকে একবার কুকুরে কামড়েছিল। চোদ্দোটা ইনজেকশন নিতে হয়েছিল। তার পর থেকে কুকুর দেখলেই আমি একশো হাত দূরে থাকি।