বড়োজামাই বিজয়ের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে আত্মীয়-পরিজন মোটামুটি সবাই ওয়াকিবহাল। প্রতিপত্তির পাশাপাশি বদমেজাজের কারণে সমাজে তার একটা নামডাক ছিলই। মানুষকে হেয় করা, ছোটো নজরে দেখা, সবসময় কেমন যেন একটা দাম্ভিক আচরণ। বিশেষত শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ছোটো করতে পারলে সে যেন একটু বেশিই মজা পায়। শ্বশুরবাড়ির যে-কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে তার একটা গোল বাধানো চাই-ই-চাই।
সেসব এড়াতেই পিসিশাশুড়ি মুগ্ধা, ছেলের বিয়ের একমাস আগেই বিয়ের কার্ডের সঙ্গে একটি চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। শুধুমাত্র তাই নয় বহুবার ফোনও করেছিলেন, কিন্তু সংযোগবশত জামাই বাড়িতে না থাকায় ভাইঝি স্নেহা আর নাতি-নাতনির সঙ্গেই কথা হয়েছে প্রত্যেকবার। ব্যক্তিগত ভাবে জামাই বিজয়ের সঙ্গে কথা বলা হয়ে ওঠেনি মুগ্ধার।
বিয়ের এক সপ্তাহ আগে আবারও ফোন করেন মুগ্ধা। এইবার ফোনটা বিজয় নিজেই ধরেছিল। কোনও কিছু শোনার আগেই পিসিশাশুড়ির গলা পেয়েই খোঁচা মারল, ‘এখন আপনি বিয়েতে যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করছেন, যখন বিয়ের আর মাত্র চার-পাঁচ দিন বাকি। কী ভেবেছেন, আমরা কি অনাহুত? ভাইঝিকে বললেই দায়িত্ব শেষ। ভাবলেন কী করে আপনাদের বাড়ির মেয়েকে বললেই আমরা হ্যাংলার মতো চলে যাব। জামাইয়ের কদর যারা করতে পারে না, তাদের সাথে আমরা সম্পর্কও রাখতে চাই না।’ বলেই ফোনটা রেখে দেয় বিজয়।
জামাইকে তোষামোদ করার নানানরকম চেষ্টা করেন মুগ্ধা। কিন্তু কেউ যদি বুঝতে না চায় তাকে বোঝানো খুব কঠিন। শেষ পর্যন্ত বিজয় তার স্বভাবসিদ্ধ আচরণের কারণে শালার বিয়েতে নিজেও অনুপস্থিত থেকেছে, স্নেহাকেও পাঠায়নি।
একমাত্র ভাইঝি, ভাইঝি-জামাই না আসায় বিয়েবাড়িতে বেশ চর্চা হয়েছে। সবকিছু শুনেও না শোনার ভান করতে হয়েছে মুগ্ধাকে। কখনও বা স্নেহার অসুস্থতার দোহাই দিয়ে কাটাতে হয়েছে। শুধু বা তাকেই বলা কেন, মুগ্ধার দাদা প্রতাপবাবুকেও জামাইয়ের এই ব্যবহারের জন্য কম লজ্জিত হতে হয়নি।
বাবার মৃত্যুর পর দু’হাজার টাকা নিয়ে ফল্স পাড়ের বিজনেসে নেমেছিল বিজয়। আর আজ সে-ই শহরের সব থেকে বড়ো কাপড়ের ব্যবসায়ী। দিনের পর দিন যত উপার্জন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে অভিমান আর টাকা কামানোর দম্ভ। আর সেই দম্ভে চাপা পড়েছে সম্পর্কের রসায়ন।