বাইরের দিকে তাকিয়েই ছিলাম, হঠাৎ মনে পড়ল আমার সহযাত্রিণীর কথা। উনি ততক্ষণে আরাম করে বসে একটি স্থানীয় ইংরাজি সাময়িক পত্রে মনোনিবেশ করেছেন। নিতান্ত অভদ্র দেখায়, তাই হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে ইংরাজিতেই বললাম, “শুভ সন্ধ্যা, বোধকরি শেষ পর্যন্তই যাবেন! তাই এতক্ষণ কথা না বলে চুপ করে থাকা বোধহয় কারুর পক্ষেই সম্ভব হবে না। আমার নাম শোভন মিত্র, বেনারস পর্যন্তই যাব।'
ভদ্রমহিলা মুখের সামনে থেকে বইটা সরিয়ে স্মিত হেসে নমস্কার জানিয়ে বললেন, 'শুভ সন্ধ্যা। আমি আইরিন, আমিও বেনারস পর্যন্তই যাব।'
একটু পরে উনি হাতের ম্যাগাজিনটা বসার সিটের উপর রেখে স্মিত হেসে বললেন, “আমি সামান্য বাংলা বলতে পারি, অবশ্য যদি উচ্চারণের অপরাধ না নেন! আর বুঝতে পারি প্রায় সবটাই। আমার স্কুলের প্রিয় বান্ধবী ছিল চিত্রা বসু। ভারতীয় বাঙালি মেয়ে। ওর কাছ থেকেই আমার বাংলা শেখা।”
আমি জোরে জোরে হেসে উঠে বললাম, 'Oh dear God, বাঁচালেন মশাই, বাঙালি নিজের ভাষায় কথা বলতে না পারলে পেট ফুলে মরে যায়! সেজন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।'
আইরিন হেসে আমার হাসিতে যোগ দিয়ে বললেন, “তাই, ভালো! আপনি কথা-বার্তা না বলে গম্ভীর ভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে চেনা-জানা দৃশ্যকে নতুন করে উপভোগ করছিলেন। এদিকে আমি ভয়ে ভয়ে বসে ছিলাম। ভাবলাম, বুঝি কোনও চম্বল দস্যুর সঙ্গে একা ট্রেন যাত্রা করছি! কিন্তু ধন্যবাদটা কী কারণে সেটা বুঝলাম না।”
আমি আবার জোরে জোরে হেসে বললাম, “যেহেতু বললেন যে, আপনি বাংলা বোঝেন, তাই আর বাংলায় গালমন্দ করব না।” আমার হাসিতে যোগ দিয়ে আইরিনও খুব হাসল। পরে হাসি সামলে বলল, “সেটা কিন্তু আমার জন্য সত্যি না-ও হতে পারে।
কেন-না আমি আরও দুটো ভাষা ভালো জানি, যা সম্ভবত আপনি জানেন না। আর সে দুটো ভাষাতে গাল-মন্দ করলে আপনি ভাববেন, আমি আপনাকে খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করছি।