মাথার উপর হুকে ঝোলানো হাত ব্যাগটা নামিয়ে চশমা বের করে নাকের উপর লাগালাম। হ্যাঁ, সেই-তো। ছবির নীচে ছোটো অক্ষরে লেখা— ড. শুভঙ্কর পাণ্ডে, পিএইচডি, ডিএসসি, এফআরএস, আরও কত কী। পুরো দু’লাইন ব্যাপী ডিগ্রি আর পুরস্কারের বিবরণ।
আমি শুধু ছবিটার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। মুখটা অনেক চওড়া হয়েছে, চেহারাও সেই তুলনায় বেড়েছে কিন্তু মোটা বলা চলে না। চেহারায় বয়সোচিত গাম্ভীর্য আর একটা আভিজাত্যও চড়েছে মনে হল, সেটা খুব স্বাভাবিক। আমার মুখে এক চিলতে স্নেহের হাসি খেলে গেল। মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে বুদ্ধিদীপ্ত এক জোড়া অতি উজ্জ্বল চোখ যেন ফ্রেম ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। আরও কতকগুলো ছবিতে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের কাছ থেকে পুরস্কার নেবার ছবি। এমনকী আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং ভ্যাটিকানে পোপ-এর কাছ থেকেও পুরস্কার গ্রহণ করার ছবি।
আইরিন ‘গুড নাইট' বলে শুয়ে পড়ল। আমিও ‘গুড নাইট' জানিয়ে রিডিং লাইট জ্বালিয়ে ছাদের বড়ো আলোটা নিভিয়ে দিলাম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওঁর গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজ পাওয়া গেল। দুরন্ত গতিতে এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটে চলেছিল অন্ধকারের গভীর পর্দা ভেদ করে, আর বোধহয় সেই গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমার মনও কয়েক যুগ পিছনে বারাণসী থেকে একশো মাইল দূরের একটি গ্রামে উড়ে গেল। একবার যেতে হয়েছিল ওর জেদ রাখতে। আমারও অবশ্য সখ ছিল উত্তর প্রদেশের গ্রাম দেখার। একই সঙ্গে ট্রেনিং হোস্টেলে রুম-পার্টনার ছিলাম আমরা। আমি আর শুভঙ্কর পাণ্ডে। এক অলস সন্ধ্যায় বসে বলেছিল ওর ছেলেবেলার গল্প—
শহর বারাণসী থেকে অনেক দূরে ‘মাধোপুর' গ্রামে থাকত শুভঙ্করেরা। এক বোন আর দু'ভাই। নিজের জমিতে বাবা চাষবাস সামলাতেন আর মা সামলাতেন ঘরবাড়ি। বটগাছের নীচে টিনের চালার পাঠশালায় পড়ত শুভঙ্কর। পঞ্চাশ মাইলের মধ্যে কোনও স্কুল ছিল না। ছেলেবেলা থেকেই অঙ্কে ছিল অসাধারণ মেধা, তাই বাবা নাম রেখেছিলেন শুভঙ্কর। অতি সার্থক নাম।