‘একজন নারীর পুরুষবন্ধু থাকবে, এতে অপছন্দের কী আছে তোমার, তা তো বুঝতে পারছি না।’ অত্যন্ত বিরক্তির স্বরে অনুযোগ করে তমালিকা।
—কিন্তু তুমি একজন বিবাহিত মহিলা। তোমার স্বামী-সন্তান-সংসার আছে, সেটা মনে রাখা উচিত।
—তাই আমার কোনও পুরুষবন্ধু থাকতে পারবে না? ক্লাস টুয়েলভে পড়া তোমার মেয়েরও কোনও ছেলেবন্ধু থাকতে পারবে না বলছ?
—আহা, সে কথা আবার কখন বললাম আমি! অবাক কণ্ঠে বলে দীপেন, কী কথার কী অর্থ করছ।
—ঠিকই অর্থ করছি, জোর দিয়ে বলে তমালিকা, বন্ধু বন্ধুই। তার আবার নারী-পুরুষ পার্থক্য থাকবে কেন? একজন মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলে আমি যদি একটু আনন্দ পাই, তাতে তোমার এত জ্বলে কেন ঠিক বুঝলাম না। আমি আনন্দে থাকি, খুশিতে থাকি, তা তুমি চাও না? তোমার আর কী, সারাদিন বাড়ির বাইরে কাটাও। ঘরে থাকা মানুষটা সমস্ত দিন সংসার ঠেলে একা একা কীভাবে থাকছে সে ধারণা তোমার আছে? তুমি চলে যাও কাজে, মেয়ে স্কুলে— আমার দিন কীভাবে কাটে কখনও ভেবে দেখেছ তুমি? একটা বদমাশ, স্বার্থপর মানুষ!
একসঙ্গে এত কথার জবাব দীপেনের মতো ভোলেভালা মানুষের মুখে জোগাল না। সে কোনও মতে বলল, ‘সারাদিনের ব্যাপারটা না হয় বোঝা গেল কিন্তু রাত্রে? অত রাত অবধি তুমি তোমার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলো বারান্দায় বসে। তার অনেক কথাই তো আমার কানে আসে।'
—লজ্জা করে না তোমার অন্যের কথা আড়ি পেতে শুনতে? তুমি একজন শিক্ষক! ছিঃ, আমার ঘেন্না করে এসব ভাবতে।
দীপেন আর কথা বাড়ায় না। কোনওদিনই তমালিকার সঙ্গে তর্কে ও জিততে পারেনি। কোন কথা কোন প্রসঙ্গে টেনে শেষে কী উপসংহারে পৌঁছে দেবে, তা বহুবার চেষ্টা করেও কল্পনা করতে পারেনি সে। কথার লড়াইতে সব সময় ওর অদ্ভুত যুক্তির কাছে ওকে হার মানতেই হয়।
দীপেন উঠে পড়ে খাবার টেবিল ছেড়ে। বেরোতে হবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে।