তখন গ্রীষ্মকাল। কলেজের বার্ষিক পরীক্ষা সবে মাত্র শেষ হয়েছে। লেখাপড়ার দায়-দায়িত্ব নেই বললেই চলে। তাই অফুরন্ত অবকাশ। অম্লানের বাড়ির ছাদে বসে বিকেলের চা পান করতে করতেই ওরা দু'জনে একসঙ্গে বসে গল্প করছিল। তাঁরা একই কলেজে না পড়লেও এক সময়ের স্কুলের বন্ধু। শৈশবের বন্ধুত্বটা এখনও সজীব, সতেজ ও সবুজ হয়ে আছে— শুকনো পাতার মতো হলুদ হয়ে যায়নি।
কথা প্রসঙ্গে অম্লান হঠাৎ বলে ওঠে— তোর তো এখন ভারি মজা। চুটিয়ে গল্প লেখার সুযোগ পেয়েছিস। তাছাড়া তুই নিজেও বলিস গ্রীষ্ম ও বর্ষা ঋতু দুটো তোর খুব প্রিয়। তোকে গল্প লেখায় অনুপ্রাণিত করে। তোর বিচারে ভীষণ প্রেরণাদায়ক। তোর গল্প লেখার পক্ষে নাকি উপযুক্ত ও আদর্শ সময়। আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে পুঞ্জিভূত মেঘ অলকাপুরীর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া মাত্র অভিশপ্ত যক্ষের ন্যায় তুইও রোমাঞ্চিত হয়ে গল্প লেখায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠিস তাই না? বর্ষা ঋতু আসন্ন। তোর সুদিন এল বলে!
শোভন জবাবদিহি করে— হ্যাঁ, লোকে যেমন বলে, তার নাকি সময় কাটে না। আমার কিন্তু কখনও সেরকম মনে হয় না। গল্পের কথা ভাবতে ভাবতেই আমার সময় কেটে যায়। তারপর থাকে লেখার পালা। হাতে যখন গল্প থাকে তখন প্রায়শই মনে হয় কেন আটচল্লিশ ঘণ্টায় দিন-রাত্রি হয় না? অম্লান শোভনের কথায় বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে অন্য প্রসঙ্গ উত্থাপন করে।
—জানিস, পিসেমশাই চিঠির উত্তরে কী লিখেছেন? শোভনকে বলে রেখো সে যেন তার স্বরচিত বাছাই করা গল্পগুলো আলাদা করে গুছিয়ে রাখে। আমি আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছেলের বিয়েতে দিল্লি আসছি। প্রথমে তোমাদের বাড়ি উঠব। পরের দিন যাব বিয়েবাড়ি। তারপরের দিন নতুন বউকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনে উঠব।
শোভন দ্বিধাজড়িত স্বরে বলে ওঠে— ছিঃ! তুই আবার পিসেমশাইকেও আমার গল্পের কথা লিখে জানিয়েছিস? অতবড়ো রাঘববোয়াল সদৃশ ব্যক্তিত্বের কাছে আমার মতো ত্যালাপিয়া গোছের গল্পকারের তারিফ করেছিস? সত্যি, তোর বিদ্যা বুদ্ধি দিনে দিনে নিম্নগামী হয়ে পড়ছে দেখছি। তারপর একটু থেমে রসিকতা করে বলে, অবশ্য তোর কোনও দোষ নেই। কেমিস্ট্রি-পড়ুয়া দুনিয়ার সব ছাত্রদেরই একই অবস্থা। মাথায় একটু দোষ হয়েই যায়। করার কিছু নেই।