পুঁটিকুমার আমার সামনে ভাতের থালাটা খটাস করে নামিয়ে লম্বা করে নাক টানল।
এগারো বছরের পুঁটিকুমার সবসময়েই নাক টানে। তার বারোমাসই সর্দি। এই কারণে তার আর-একটা নাম হল সর্দিকুমার। অবশ্য পুঁটিকুমার বা সর্দিকুমার কোনওটাই এই ছেলের ওরিজিনাল নাম নয়। ওরিজিনাল নাম কান্তি। রেস্টুরেন্টে বয় বেয়ারার এই কাজ পাওয়ার পর সে নতুন নাম পেয়েছে। এই রেস্টুরেন্টে এরকমই নিয়ম। যারা কাজ করতে আসে তারা একটা করে নতুন নাম পায়। কর্মচারীরা সবাই মিলে এই কাণ্ড করে। বলতে লজ্জা করছে, গত কয়েক বছর হল নামকরণের গুরুদায়িত্ব আমার ঘাড়ে পড়েছে। কী ঝামেলা! আমি কি এদের কর্মচারী? একেবারেই না। আমি এদের খদ্দের। কাস্টমার। তাও জেন্টলম্যান কাস্টমার নয়, ধারবাকির কাস্টমার। তবু কোনও এক রহস্যময় কারণে এখানকার কর্মচারীরা আমাকে অতিরিক্তরকম পছন্দ করে। সম্ভবত ওদের সঙ্গে প্রাণখুলে মেলামেশার কারণে। কে জানে। জেনে বিশেষ লাভ নেই।
অর্থনীতির নানান ধরনের মডেল আছে। কেইন্স মডেল, মার্কস মডেল, সেনস্ মডেল। কিন্তু ভালোবাসার ব্যাপারে কোনও মডেল নেই। কে কেন ভালোবাসে বোঝা দূরূহ। আমার বিশ্বাস একটা দিন আসবে যখন, নিশ্চয় এই বিষয়েও ফর্মুলা তৈরি হবে। সেই ফর্মুলাতে লাগিয়ে বুঝতে পারব রাঁধুনি, জোগানদার, বয়-বেয়ারা, বাজারসরকার, গ্যাস সাপ্লাইয়ের ছেলে, সাফাইকর্মী এমনকী গড়িয়াহাটা মোড়ের যে- ভিখিরি পরদিন গুছিয়ে বাসি এঁটোকাঁটা নিয়ে যায় তারা সকলে কেন আমাকে পছন্দ করে?
এরা একদিন আমাকে চেপে ধরল।
‘সাগরদা, নাম ঠিক করবার ভার এবার থেকে আপনার। না বললে হবে না। আমাদের দেওয়া নাম মোটেও জুতের হচ্ছে না। বক্বাস, ফক্বাস, খট্টাসে গিয়ে আটকে যাচ্ছি। এগুলো কোনও নাম হল? ভদ্রলোকদের সামনে বলা যায়? আমরা তাই ঠিক করেছি, এবার থেকে আপনি এই কাজ করবেন।’
আমার মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল। বললাম, ‘সে কী! আমি কী করে করব! আমি কি তোমাদের এখানে কাজ করি?’
‘কাজ করতে হবে না। কাজ না করলেও আপনি আমাদের লোক।’