সোনালি আর দাঁড়ায়নি। একছুটে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গিয়েছিল। সারারাত কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিল। বেশ কিছুদিন ঝুনুদির দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারেনি। ঝুনুদির রাগ হওয়া স্বাভাবিক। অন্ধকার ছাদে প্রায়ই ঝুনুদি আর পার্থদার মধ্যে একটা নিষিদ্ধ খেলা চলত। ঝুনুদি ইশারা করলেই পার্থদা ছাদ ডিঙিয়ে তাদের ছাদে চলে আসত। ব্যাপারটা সোনালি ছাড়া কেউ জানত না। একদিন গরমের সন্ধেতে গা ধুয়ে সে ছাদে উঠেছিল, পার্থদা হয়তো ভুল করেই তাকে ঝুনুদি ভেবে এপাশে চলে এসেছিল। তারপর জাপটে ধরে…
এখনও সোনালির সারা শরীর বিবশ হয়ে ওঠে। সেই পার্থদা, যাকে সবাই ভালো ছেলে বলে জানত, সে কিনা নিজের দোষ ঢাকার জন্য ক্লাস নাইনের একটা মেয়ের উপর কাপুরুষের মতো সব দোষ চাপিয়ে দিল? খুব রাগ হয়েছিল সেদিন সোনালির। কিন্তু পরে বুঝেছে এ ছাড়া ঝুনুদির কাছে বাঁচার উপায় ছিল না। মনে মনে পার্থদাকে সে ক্ষমাই করে দিয়েছে।
এইসময় কে আবার ফোন করল? কলিগ অহনাদি। ‘অফিসে কেউ কিছু বলছিল নাকি? বসকে যাব না জানাতে যা একখানা এক্সপ্রেশন দিলেন, সামনে না থাকলেও বুঝতে পেরেছি।”
অহনাদি দু'দিন আসেনি। সোনালি খবর নেবে ভেবেছিল কিন্তু ভুলে গেছে একদম।
—না, না কে আবার কী বলবে! তোমার ছুটি তুমি নিয়েছ। আসছ না কেন? শরীর ঠিক আছে তো?
—আর বলিস না, আমি কি তোর মতো ভাগ্য করে এসেছি! ননদের মেয়ের শখ হয়েছে পুজোর শপিং কলকাতায় করবে, অতএব ওরা তিনজন তো এসেইছে সঙ্গে আবার আমার শাশুড়ি ঠাকরুণ হাজির। সবার সেবা করে মাজা টনটন করছে রে। একটু কষ্ট হচ্ছে ঠিকই তবে সবাই মিলে শপিং, বাইরে খেতে যাবার মজাই আলাদা। ওটুকু কষ্ট তাই মানিয়ে নিচ্ছি। যাইহোক কাল অফিস যাব। টিফিন আনিস না, আমি নিয়ে যাব।
ওদের কথায় সুখ উপচে পড়ে, নাই বা হল নিজের সুখ। এই ঢেউয়ে ভিজতে সোনালির ভালোই লাগে। সোনালি একা মানুষ, তার একলা জগত, বারান্দার গাছ, ঘর ভর্তি বই তার সঙ্গী- - এসব নিয়েই সে ভরে আছে। অন্যকে হিংসা করার মতো নীচতাকে স্থান দেবার মতো সময় তার নেই।