থাক আর আমার মাথা টিপতে হবে না। আমার পাশে বসে থাকো। অন্ধকারেও আমি তোমাকে বেশ দেখতে পাচ্ছি। তুমি আজ দারুণ সেজেছ। কী মিষ্টি গন্ধ তোমার শরীর থেকে ভেসে এসে আমার নাকে লাগছে। তোমার নরম সুগন্ধী চুলের অরণ্যে আমার অনেকক্ষণ মুখ ডুবিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। পৃথিবীর কোথাও যদি আমার শান্তি বলে কিছু থাকে, তা তোমার ওই সুগন্ধী রেশমি চুলের অরণ্যে। ওখানে আমার মরেও সুখ। কী হল, রাগ করলে। ঠিক আছে আর আমি মরার কথা বলব না। জানো, তোমাকে বিয়ে করার আগে আমার অনেকবার মরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল। আর এখন তোমার পদ্মপলাশ ডাগর চোখের দিকে তাকালে, আমার হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে। বিশ্বাস করো, একবর্ণও মিথ্যে বলছি না। আমার অনেক সময় মনে হয়, তোমাকে আমি সুখে রাখতে পারিনি। তোমাকে সুখে রাখার মতো আমার অর্থবল নেই।
জানো, শুভদৃষ্টির সময় আমার দারুণ মজা লাগছিল। চন্দনের ফোঁটায় তোমাকে বেশ ভালো লাগছিল। ঠিক যেন রাজকন্যার মতো৷ তোমার পরনে ছিল টকটকে লাল বেনারসী। তুমি উপোস করেছিলে, তবু তোমাকে সেদিন দারুণ দেখাচ্ছিল। আসলে বিয়ের সময় সব মেয়েকেই সুন্দর দেখায়। আমার বন্ধুরাও তোমার রূপের প্রশংসা করেছিল। শুভদৃষ্টির সময় আমি লজ্জার মাথা খেয়ে সরাসরি তোমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিলাম। আর তুমি বহুক্ষণ পর নিঃশব্দে ফোটা পদ্মের পাপড়ির মতো শুধু একবার চোখ মেলে একপলকে আমাকে দেখেছিলে। আর ঠিক তখনই নারীকন্ঠের উচ্চকিত উলুধ্বনিতে এবং শঙ্খের শব্দে আমার পৃথিবী মুখর হয়ে উঠেছিল। সে দিনের সেই মুহূর্তটার কথা ভাবলে আনন্দে আজও আমার চোখ ফেটে জল আসে। বিবাহের স্মৃতি বড়ো মধুর।
আচ্ছা তোমার মনে আছে সম্প্রদানের সময় তোমার হাত যখন আমার হাতে ছিল, তখন আমি তোমার ফুলের মতো নরম আঙুলে চিমটি কেটেছিলাম। তুমি হাসছ? আসলে সে দিন তোমার চন্দনচর্চিত করুণ গম্ভীর মুখটা আমাকে ভীষণ ভাবিয়ে তুলেছিল। ভাবছিলাম এ বিয়েতে তুমি হয়তো খুশি নও। তোমার মা-বাবা হয়তো তোমাকে জোর করেই আমার সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছেন। আমি তোমাকে হাসাবার জন্যই তখন চিমটি কেটেছিলাম। তুমি হাসোনি। বরং আরও গম্ভীর হয়ে উঠেছিলে। সে সময় মনে হয়েছিল আমি হয়তো তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।