মাঝরাতে মা-মেয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। —তুমি আবার মাঝরাতে উঠে চান করতে শুরু করলে মা?
—আমার যা খুশি তাই করব, তুই আমায় বাধা দিতে আসিস না।
—কিন্তু তোমার যে ঠান্ডা লেগে আবার নিউমোনিয়া হয়ে যাবে, সেটা কেন বুঝতে পারছ না?
—আমি নিউমোনিয়া হয়ে মরলে তোর কী অসুবিধে? তুই তো স্বাধীন হয়ে যা খুশি করতে পারবি।
শ্বেতা বিরক্ত হয়ে একসময় নিজের বিছানায় ফিরে গেল। ও জানে মাঝরাতে এই স্নানপর্ব প্রমিলার এক অদ্ভুত প্রতিবাদ যা শুরু হয়েছিল শ্বেতার প্রথম কলেজে যাবার দিন থেকেই। প্রমিলা মেয়ের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে ওকে নিষেধ করেছিলেন কলেজে ভর্তি না হতে। ওঁর ইচ্ছা শ্বেতা করেসপন্ডেন্স কোর্সেই বিএ-টা করে নিক। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো নম্বর পেয়ে শ্বেতা কেন ঘরে বসে ডাকযোগে শিক্ষা লাভ করবে? প্রমিলা মনে করেন ভিড়ের মধ্যে ডিটিসি বাসে চেপে রোজ লম্বা জার্নি করে কলেজে যাওয়া-আসা খুবই বিপজ্জনক। যা দিনকাল পড়েছে, যদি বাসের মধ্যে কখনও কিছু ঘটে যায়?
শ্বেতা মাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল চোদ্দো বছর আগে একরাতে প্রমিলার জীবনে যে-অন্ধকার নেমে এসেছিল তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না ওর জীবনে। কেন-না আজকালকার মেয়েরা পথেঘাটে চলার সময় অনেক সতর্ক হয়ে গেছে! মাঝরাস্তায় অপরিচিত কেউ লিফ্ট দিতে চাইলে মেয়েরা নেয় না। তাছাড়া উইমেনস হেল্পলাইনে ফোন করলে দশ মিনিটের মধ্যে পুলিশের রোমিং স্কোয়াডের গাড়ি চলে আসে ঘটনাস্থলে। কিন্তু প্রমিলা ওর কথায় আশ্বস্ত হননি। এসবের পরেও তো দিল্লির রাস্তায় প্রায় প্রতি রাতেই রেপ হয়ে যাচ্ছে। দুনিয়ায় দিল্লি এখন রেপ সিটি নামেই পরিচিত! পুলিশ ধর্ষণ থামাতে পারছে কোথায়?
—ওগুলো অন্য ধরনের কেস মা, শ্বেতা মাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল। রাত দশটার সময় সদ্য গ্রাম বা ছোটো শহর থেকে আসা কোনও মহিলা যদি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে হাবার মতো এদিক ওদিক তাকায় আর কী করে পালামগাঁও কিংবা মদনগির যাবে— একে ওকে জিজ্ঞেস করে, তবে তার কপালে দুঃখ থাকবে না তো কী থাকবে? ওদের কাছে তো স্মার্ট ফোনও থাকে না। প্রমিলা এত সহজে দমে যাবার পাত্রী নন। তিনি দৈনিক পত্রিকাটি খুটিয়ে পড়েন। তাই মেয়ের সঙ্গে লড়ে গেলেন।