দুই
চোদ্দো বছর আগে, নভেম্বরের এক সন্ধ্যায় সরোজিনী নগর বাসস্টপে দাঁড়িয়ে পাঁচশো চুয়াল্লিশ নম্বর বাসের প্রতীক্ষা করছিলেন প্রমিলা। উনি তখন লোদি রোডে একটা প্রাইভেট স্কুলের প্রাইমারি সেকশনে পড়াতেন। শনিবার স্কুল ছুটির পরে এক সহকর্মী কৃত্তিকার সঙ্গে সরোজিনী নগরের খোলা বাজারে হেতার জন্য সস্তায় কিছু কাপড় জামা কিনতে গিয়েছিলেন প্রমিলা। বাজার সেরে বাবু মার্কেটে কৃত্তিকার সঙ্গে পাপড়ি চাট খেয়ে ওরা দুজন যখন বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালেন, তখন রাত প্রায় আটটা। কৃত্তিকার কপাল ভালো। মোতিবাগের বাসটা পাঁচ মিনিটের মধ্যে পেয়ে উনি বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু প্রমিলা পাঁচশো চুয়াল্লিশের জন্য আধঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন।
রাতের দিকে একা অটোতে উঠতে তাঁকে নিষেধ করেছিলেন ওঁর স্বামী প্রতীক। না হলে খালি অটো তো বেশ কয়েকটা পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। বাজারে তখন সবে মোবাইল আসতে শুরু করেছে কিন্তু দামটা একটু উপরের দিকে থাকায় প্রমিলা তখনও মোবাইল কিনে উঠতে পারেননি। তাই বাসস্ট্যান্ডের পিছনে একটা পিসিওতে গিয়ে প্রতীককে ফোন করলেন প্রমিলা। সরোজিনী নগর বাসস্ট্যান্ডে আধঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি, মনে হচ্ছে ট্যাক্সি ধরেই বাড়ি ফিরতে হবে আজ, প্রমিলা জানিয়েছিলেন ওঁর স্বামীকে। শ্বেতা এখন কী করছে?
—ও এখন ঠাম্মির ঘরে খেলা করছে, ওর জন্য চিন্তা করতে হবে না তোমাকে, প্রতীক ওকে আশ্বস্ত করলেন। প্রতীক কনট প্লেসে একটা বিদেশি ব্যাংকে চাকরি করেন, বাড়ি ফিরতে ওঁর রোজই রাত আটটা বেজে যায়। কাজেই প্রমিলার কোনওদিন ফিরতে দেরি হলে দুপুরে প্লে স্কুল থেকে ফিরে শ্বেতাকে ঠাম্মির কাছেই অনেকটা সময় কাটাতে হয়।
ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন প্রমিলা আর ঠিক সেই সময়ই একটা সাদা প্রাইভেট গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল ওঁর পাশে।
—কাঁহা জানা হ্যায় আপকো, ম্যাডাম?
—সিআর পার্ক।
—দোশো রুপেয়া লেঙ্গে, আইয়ে।
প্রমিলা তাকিয়ে দেখল গাড়িতে আরও দু'জন মোটামুটি ভদ্র চেহারার লোক বসে আছে। ‘ইনলোগ কালকাজি অউর গোবিন্দপুরী যা রহে হ্যায়', ট্যাক্সি ড্রাইভার জানাল।