শেষ পর্ব
দিন দশেক ভালোই কাটল অন্বেষা আর শুভর। পুরীতে জগন্নাথ দর্শন, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, চিল্কা সঙ্গে সমুদ্রস্নান। চিন্তা, টেনশন থেকে একেবারে দূরে। পুরী থেকে ঘুরে আসার পরে ওদের একদিন নিমন্ত্রণ করলাম বাড়িতে। মা বিভিন্ন পদ রেঁধেছে ওদের জন্য। ওদের বিয়ের পর থেকে খেতেও বলা হয়নি একদিনও। তাই ওদের পছন্দমতো মাছ-মাংস নিয়ে এসেছিলাম। কেন জানি না, ওরা ভালো আছে দেখে আমার মনটাও ভীষণ ভালো হয়ে গেছে। হয়তো আমি একটা অপরাধবোধে ভুগছিলাম। হাজার হোক আমার হাত ধরেই তো ওদের আলাপ। কথা ছিল অন্বেষা আগে আমাদের বাড়িতে চলে আসবে, আর শুভ অফিস ফেরত।
সেইমতো অন্বেষা আসার মিনিট পঁয়তাল্লিশের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল শুভ। তখন মা আমি আর অন্বেষা জমিয়ে গল্প করছি। শুভ আসতেই মা ওর জন্য চা বানাতে চলে গেল। মা ভিতর ঘরে চলে যাওয়ার পরেই একগাল হেসে বলল, 'শোন শোন দারুণ খবর আছে। আজ অফিসে রেজিগনেশন জমা দিলাম!'
আঁৎকে ওঠে অন্বেষা, কী বলছ কী? পাগল-টাগল হলে নাকি। এটাকে তুমি দারুণ খবর বলছ?'
‘আরে আগে পুরো কথাটা তো শোনো,' বলে শুভ।
আমিও বলে উঠলাম, 'শুনবে আবার কী? কী শুনবে? আজকের বার্তা-র মতো হাউস তুই ছেড়ে দিলি! পাবি আর এরকম চাকরি?'
‘পাব আবার কী, পেয়ে বসে আছি বুঝেছিস।' জোর গলায় বলে উঠল শুভজিৎ।
অন্বেষা বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে শুভর দিকে। বলে, 'মানে?'
‘মানে একটা নতুন ডেইলি থেকে দারুণ অফার পেয়েছি। আজকের বার্তায় যা পাচ্ছি তার ডাবল দিতে রাজি হয়েছেন পত্রিকার মালিক। তবে কাজের সূত্রে মাঝেমাঝে বাইরে যেতে হতে পারে। আর প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট-ই মুম্বইয়ের ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। প্রায় মাস খানেকের ধাক্কা।
‘মাস খানেক!' অজানা আশঙ্কায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে অন্বেষার কপালে। বিস্মিত হয়ে আমিও বলে বসলাম, ‘এতদিন? অন্বেষার কী হবে?'
হাসতে হাসতে শুভ জবাব দেয়, 'আরে কটা তো দিন, দেখতে দেখতে কেটে যাবে। না হয় কিছুদিন বাপের বাড়িতেই কাটিয়ে আসবে। ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কভার করার সুযোগ তো সবসময় আসে না, তাই হাতছাড়া করতে চাইছি না।'