শাশুড়িমার কাছেই শুনেছিল রিমা— এই বাড়িটা অনেক শখ করে দু'জনে মিলে করেছিলেন যাতে ভবিষ্যতে নাতি-নাতনিরা হেসে খেলে বেড়াতে পারে। নানান দেশের নানা রকমের ফল-ফুলের গাছ সংগ্রহ করে সাজিয়েছিলেন মনের মতো করে। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বাড়িটায়, সময় পেলেই বলেন রিমাকে।
সেই বাড়ি যদি আজ বিক্রি করে দেয় বাবি, তাহলে শাশুড়িমা খুবই কষ্ট পাবেন। হয়তো বেশিদিন আর বাঁচবেন না! এই শাশুড়ি যে কতখানি তার মনের বল, তা বুঝিয়ে বলা যাবে না কাউকে। কিছুই বলবেন না নিজের মুখে, অনেক ভাগ্য করে এইরকম শাশুড়ি পেয়েছে রিমা। যবে থেকে বউ হয়ে এসেছে এ বাড়িতে, তবে থেকে দেখে আসছে কী অদ্ভুত এক মহিলা! ওনার সবকিছুই যেন রিমার পছন্দের মতো। রিমা যেটা ভাবে উনি ঠিক সেটাই বলেন। সবাই খুব হিংসা করে সেই জন্য।
আজকালকার দিনে শাশুড়ির কথামতো সংসার চলছে শুনলে বন্ধু-বান্ধবরা সব টিক্স-টিপ্পনি মারে। সবাই তো খালি শাশুড়িদের দোষই দেখে। সেখানে রিমা যদি তাদের বলে যে, “দ্যাখ, দোষ কখনও একতরফা হয় না। কষ্ট করে ছেলে মানুষ করেছেন, ওনাদের না হয় একটু দাবিদাওয়া থাকুক না। আমরা মডার্ন যুগের মেয়েরা একটু ওনাদের সেন্টিমেন্টকে সাপোর্ট করি, তাতে তো ক্ষতি কিছু নেই বরং দেখিস লাভ বেশি। আমাদেরও তো একদিন শাশুড়ি হতে হবে, ভেবে দেখেছিস সেটা?'
বন্ধুরা হেসে বলে— তুই পাগল নাকি? কী ভাবছিস আমরা ছেলে বউ-এর কাছে থাকব নাকি বার্ডেন হয়ে? তোর মতন না। রিমা নিজের শাশুড়িকে প্রাণের চেয়েও ভালোবেসে ফেলেছে। উনি যে ভালোবাসার মানুষ।
তাই এই বাড়ি ভেঙে দেবে শুনে অবধি মনে প্রাণে যেন বড্ড কষ্ট পাচ্ছে। এই কষ্ট-টা যেন নিজের অন্তর দিয়ে অনুভব করছে রিমা, আর দুচোখ জলে ভরে যাচ্ছে। রাতে সারা বাড়ি যখন নিস্তব্ধ, সেই সময় জলভরা দু'চোখ নিয়ে পায়ে পড়ার উপক্রম বাবি-র। কিন্তু গোঁয়ারগোবিন্দ ছেলের এক কথা....